#উপকারের আশা করবেন না।
মাসুদ সাহেবের বাড়ীর প্রবেশদ্বারে এই লেখাটি বড় করে লেথা।
কতটা ত্যাক্ত বিরক্ত হলে এরকম ছেলেমানুষী লেখা দড়জায়
লিখতে পারে সেটা বুঝতে ফিলোসপির ছাত্র হতে হয় না।
ঘটনা: ১- মাসুদ সাহেবের ভাইপো রুস্তম। গ্রামের জমিজমা দেখভালের
দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছে। গরীব মানুষ, তার উপরে দিন এনে দিন খায়।
নিজেদের জমিজমা বলতে কিছু নেই। অন্যের জমিতে হাল চাষ করতো।
ভূস্বামীকে ফসল দিয়ে নিজের চলতে কষ্ট হতো। ভাইপোর এই দুরাবস্থায়
নিজের জমিটুকু বর্গা দেয়। বিনিময়ে কিছুই চায় না।
জমিগুলো পতিত ছিল, এখন আত্মীয়ের ভিতরে কারো উপকারে এসেছে।
ভূমি কর এবং অন্যান্য সরকারী কাজের দায়িত্বটাও ভাইপো বুঝে নিয়েছে।
মাঝে মধ্যে সহি স্বাক্ষর লাগলে ঢাকায় এসে নিয়ে যায়।
যার দু’ বেলা ভাত জোগাতে কষ্ট হত। সেই ভাইপো তার সাথে বেইমানীটা করলো।
বলেছিল , জমির দলিল দেখিয়ে কিছু টাকা লোন করবে। ছোটখাটো একটা ব্যবসা
করতে চায়। কয়েক টি কাগজে স্বাক্ষর দিয়েছিল।
যা অঘটন ঘটার তা ঘটেই গিয়েছে। জমিগুলো নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে।
ঘটনা জানতে পেরে মাসুদ সাহেব অনেক হেসেছে। যেখানে তার মন খারাপ
হওয়ার কথা। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে সে বোকার মত কাজ করেছে।
বিশ্বাসের উপর স্বাক্ষর করেছিল, তার মাশুল হিসেবে পৈতৃক মাটি হাতছাড়া হলো।
ঘটনা: ২- যে ঢুশ খায় তার হুশ হয়। মাসুদ সাহেবের হুশ হয়নি।
একদিন হন্তদন্ত হয়ে তার বাসায় একজন লোক প্রবেশ করলো,
মাসুদ সাহেব প্রথমে ভয় পেয়েছিল, লোকটি বললো তাকে তার
ভাইয়েরা মারার জন্য গুন্ডা ভাড়া করছে, প্রাণভয়ে সে তার বাসায় উঠেছে।
সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ আর সেই বিরোধের জেড় ধরেই তার এই
দূরাবস্থা। রাতটুকু থেকেই চলে যাবে।
হ্যা! এই লোকের সাথে সাড়ারাতই গল্প করলো, সুখ দু:খের অনেক কথাই
বলা হলো। কিন্তু এই লোক যে বাস্তবে এতটা খারাপ প্রকৃতির মাসুদ সাহেবের
কল্পনাতেই আসে নাই।
বাসার সামনে পুলিশ, মাসুদ সাহেব গেট খুলে দিলেন। পুলিশ তল্লাশী চালিয়ে
তাদের কাঙ্খিত ব্যক্তিকে পেয়ে গেছে। কুখ্যাত কিলার জব্বর তার বাসায়
আত্মগোপন করেছেন। আশ্রয়দাতা হিসেবে মাসুদ সাহেবকেও থানায় যেতে হলো।
মাসখানেক জেলেও থাকতে হলো।
হ্যা এবার হুশ হয়েছে।
ঘটনা-১: মাসুদ সাহেব পণ করেছেন তিনি আর কারো উপকার করবেন না।
যার প্রথম ধাপ শুরু পাশের বাসার আক্কাস সাহেবকে নিয়ে । আক্কাস সাহেব ৫০,০০০ টাকা
ধারের জন্য এসেছে। মাসুদ সাহেবের কাছে ৫০,০০০ টাকা কোন ব্যাপাড় না।
সে চাইলে আরো বেশী টাকা ধার এমনকি সাহায্য করার মত মানসিকতা রয়েছে।
আক্কাস সাহেব তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো, তার ছেলের জন্য বিদেশের টাকা জমা দিতে
হবে। জমি বন্ধক আর ধার কর্জ করে ৪,৫০,০০০ টাকা ম্যানেজ হয়েছে। আর কোনোভাবেই
৫০,০০০ টাকা সে ম্যানেজ করতে পারছে না। কমিটমেন্ট ছিল ৫,০০,০০০ টাকা পরিশোধ করে
ভিসা গ্রহণ করবে। ফার্মটি ভিসা আটকে দিছে।
মাসুদ সাহেবের খারাপ লাগছে, সে সাড়াজীবন মানুষের উপকারে এসেছে।
আজ তার কাছ থেকে কেউ বিমুখ হয়ে ফিরে গেল।
ঘটনা-২: মাসুদ সাহেবের ড্রাইভার বাড়ী যাবে, ড্রাইভারের মা অসুস্থ
মাসুদ সাহেব বেতন পরিশোধ করেছেন, ড্রাইভার কিছু টাকা অগ্রীম চেয়েছে।
অগ্রীমের টাকাটা জরুরী। না হলে বাড়ী যাওয়া সম্ভবনা । বাসের টিকিটও
কাটা হয়েছে। রাত এগারোটায় বাস ছেড়ে যাবে। মাসুদ সাহেব টাকাটা
দেয় নি।
সকাল থেকে মাসুদ সাহেবের মনটা খারাপ। কেন জানি মনে হচ্ছে
তাকে দ্বারা এ কাজ সম্ভব নয়।
ঘুম থেকে উঠেই ড্রাইভার কে ডেকেছে , ভেবেছে ড্রাইভারের মন খারাপ মুখটা দেখতে
হবে। সেখানে উল্টো রিঅ্যাক্ট পেলো। ড্রাইভার তার পা জড়িয়ে ধরে সালাম
করলো। মাসুদ সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলো। ড্রাইভারের ভাষ্যমতে- চাচা কাল
টাকাটা পেলে আজ আর আমি নিজেই বাচতাম না। যে বাসের টিকিট কেটেছিলাম
সে বাসটি রোড এক্সিডেন্টে প্রত্যেক যাত্রীই মারা যায়। বাচা মরার মালিক আল্লাহ
আর আপনার উসিলায় বেচে গেলাম।
ড্রাইভার কে টাকা দিয়ে আক্কাস সাহেবের উদ্দেশ্যে বের হলেন।তাকে
৫০,০০০ টাকা দিবেন। ৫০,০০০ টাকাটা সে সাথে নিয়েই এসেছে।
আক্কাস সাহেব এর মনটা কেনো যেনো প্রফুল্ল দেখাচ্ছো। এই প্রফুল্লতা হয়তো
কোনো সুসংবাদের বার্তা বহন করছে। হ্যা! আক্কাস সাহেবও সুসংবাদ দিলেন
আক্কাস সাহেবের ভাষ্যমতে- সেদিন টাকাটা না পেয়ে ভিসা হাতছাড়া হয়ে যায়।
তার পরদিন খবর পাই - যারা টাকা জমা দিছিল তাদের প্রত্যেকের টাকা নিয়ে প্রতারক চক্র
পালিয়েছে। আপনি টাকাটা দেননি, তাই টাকাটা জমা দিতে পারিনি। ফলে
আমার টাকাটা এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে রেহাই পায়। আর আমিও অনেক টাকা
ঋণের হাত থেকে বেচে যাই।
মাসুদ সাহবের চোখে পানি , এটা আনন্দের । সে সাড়াজীবন মানুষের উপকার করে
আসছে। সে চাইলেও মানুষের অপকার করতে পারেনি। বিধাতা তার নাম উপকারী
ব্যক্তিদের খাতায় লিখে রেখেছিল।
#পরের উপকারে নেই যার মন,
কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।
দড়জার আগের লেখাটা আজ নামিয়ে নতুন লেখাটা সংযোজনের কাজ নিজ হাতেই করছে।
এটা অন্য রকম এক ফিলিংস। সবাই তা গ্রহণ করতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৪