somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: রাজশাহীর বধ্যভূমি (২য় পর্ব), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পুরোটাই যেন বধ্যভূমি!

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির জন্য এক গর্বিত ইতিহাস। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লক্ষ শহীদ, সাড়ে ৪ লক্ষ নির্যাতিত মা-বোন, এক কোটি শরনার্থী এবং হাজার হাজার গৃহহীন মানুষের ত্যাগ ও কষ্টের ফসল আমাদের এই দেশ, আমাদের স্বাধীণতা। কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গত ৪২ বছর ধরে অনেক লুকোচুরি চলেছে! মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহচরদের নারকীয় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুঠতরাজ ও অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ খুব কমই প্রকাশিত হয়েছে। আর এর সুযোগ নিয়ে অনেকেই এই ইতিহাসকে বিকৃত করার সাহস পেয়েছে। তাই বর্তমানে একাত্তরের পরাজিত শক্তি স্বাধীণতা বিরোধীদের তৎপরতা লক্ষ্য করে মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছি। এই পোস্ট তারই একটি প্রয়াস। আপনাদের সুবিধার্থে দুই পর্বে পোস্ট করলাম, আজ ২য় পর্ব। যারা ১ম পর্ব পড়েননি তারা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন:

* মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: রাজশাহীর বধ্যভূমি (১ম পর্ব), একশটি গণকবর থেকে দশ হাজার মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়!

ড. সুকুমার বিশ্বাস, স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের অন্যতম গবেষক। বাংলা একাডেমীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তিনি সারা দেশে ঘুরেছেন এবং একাত্তরের বধ্যভূমি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর সংগৃহীত বধ্যভূমির তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এবং স্বাধীণতা যুদ্ধের দলিল পত্রে। একাত্তরের বধ্যভূমি সম্পর্কে তার প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে রাজশাহীর বধ্যভূমির বিবরণ জানাবো আজ।



বস্তুত ১৪ই এপ্রিলের মধ্যে রাজশাহী শহর পাকিস্থানীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পাকিস্থানীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুদৃঢ় ঘাঁটি গড়ে তোলে। পাকসেনারা ১৩ই এপ্রিল রাজশাহীতে প্রবেশ করার পথে সড়কে দু’ধারে প্রায় সমস্ত বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। শত শত লোককে তারা হত্যা করে। তারা কাটাখালি, মাসকাটা দীঘি, চৌদ্দপাই, শ্যামপুর, ডাশমারী, তালাইমারী, রানীনগর এবং কাজলার বাড়িঘর জ্বালিয়ে ধ্বংস করে, নির্যাতন চালিয়ে সমগ্র এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

পাকসেনারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে পাকাপাকিভাবে ঘাঁটি গড়ে তোলে। এখান থেকেই তারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। পাকিস্থানীরা প্রথমে জোহা হল, আবদুল লতিফ হল, জিন্নাহ হল, কলাভবন, রসায়ন বিদ্যা ভবন, বিজ্ঞান বিভাগ, এক্সপেরিমেন্টাল স্কুল ভবন এবং বেশ কিছু স্টাফ কোয়ার্টারে শিবির স্থাপন করেছিলো। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তারা জোহা হলকেই মূল ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। পাকসেনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।


ছবি: বর্তমান শহীদ মিনার, ডিজাইন করেছেন মুর্তজা বশির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন সমূহ, ছাত্রাবাস, শিক্ষক-কর্মচারীদের বাসভবনে ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। এমনকি বিজ্ঞান গবেষণাগারে যন্ত্রপাতি ও গ্রন্থাগারের বইপত্র পর্যন্ত ধ্বংস করে।


ছবি: বর্তমান লাইব্রেরী ভবন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিব ব্যাংক শাখার যাবতীয় অর্থও লুট করে। পাকবাহিনি পরিসংখ্যান বিভাগের কাজী সালেহ, গণিত শাস্ত্রের প্রভাষক মুজিবর রহমান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের ড: রকীব এবং বাংলা বিভাগের ড: আবু হেনা মোস্তফা কামালকে ধরে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন অমানুষিক নির্যাতন চালায়। অসংখ্য নারী তাদের লাঞ্চনার শিকার হয়। এমনকি একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর ১২ বছরের কন্যাও পাক হায়েনাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এসব ধ্বংসযজ্ঞে তৎকালীন উপাচার্য সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন পাকিস্থানীদের সঙ্গে সরাসরি সহযোগীতা করেছিলেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধাণদের একটি তালিকাও পাক সেনাদের হাতে তুলে দেন। এই তালিকায় নানা ধরণের শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছিলো। এসময় মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড: মতিয়ুর রহমান, দর্শন বিভাগের প্রধান ড: জামিল, ভূগোল বিভাগের রিডার ড: শামসি এবং আইন বিভাগের ডীন শাহ জিল্লুর রহমান বিপুল পরিমাণ মালামাল লুট করে এক পর্যায়ে পাকিস্থানে পালিয়ে যায়।

সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষার সহকারী অধ্যাপক। সাদাসিধে সরল সুখরঞ্জন সমাদ্দার কারো সাতেপাঁচে থাকতেন না। কোন রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলেন না। নির্ভেজাল নির্বিরোধী একজন শিক্ষক হিসাবেই তিনি ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন। ১৩ই এপ্রিল পাকসেনারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তিনি ঘর ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেননি। বেগে এসে ঢোকে ৫/৬ জন পাকসেনা। সন্ধান চালায় ইপিআর বাহিনীর। সেনারা ইপিআর না পেয়ে যকন চলে যেতে উদ্যত হয় ঠিক তখনই মনোবিজ্ঞান বিভাগের অবাঙালী অধ্যাপক ড: মতিয়ুর রহমান সমাদ্দার বাবুকে দেখিয়ে বললেন, ‘ইয়ে তো হিন্দু হ্যায়।‘ এ কথাই যথেষ্ঠ ছিলো। সাথে সাথে পাকসেনারা তাকে জীপে তুলে নেয়। সেই শেষ যাওয়া। এ বিষয়ে ‘পূর্বদেশ’ প্রতিনিধি ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন:

‘১৪ই এপ্রিল দুপুরেই শ্রী সুখরঞ্জন সমাদ্দারকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখের গ্রাম কাজলার একটি পুকুর পাড়ে। এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে পুকুরের ধারে কাজলার জনগণ সমাদ্দার বাবুর দেহটিকে মর্যাদার সাথে সমাহিত করেছিলো। কাজলার আবদুল হাকিম, হারান মন্ডল, জয়েনউদ্দিন, আসগর আলী, কানুবসন্ত, ফজলু নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেদিন ঝুঁকি নিয়েছিলো মৃত অধ্যাপকের লাশটি সমাহিত করার। এ বছরের (১৯৭২) ২৫শে ফেব্রুয়ারী সেই লাশের দেহাবশেষ আবার সমাধিস্থ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।’

রাজশাহীর কাজলার ছেলে জয়নুদ্দিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি রংপুর ক্যাডেট কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে তিনি ঢাকা এসেছিলেন। তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন কাজলার পুকুর পাড়ের একটি গর্ত থেকেই পাওয়া যায় সমাদ্দার বাবুর লাশ। তিনি সে সময় লাশ দেখেছিলেন। জয়নুদ্দিন সেদিন কাজলা-ঘোষপাড়ার গণকবর-বধ্যভূমির হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরেছিলেন। এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিলো মানুষের কংকাল, মাথার খুলি। বিভিন্ন স্থান থেকে বাঙালীদের ধরে এনে কাজলা-ঘোষপাড়া এলাকায় হত্যা করা হত। আর এ কাজটি নিখুঁত ভাবেই করেছিল আলবদর-রাজাকাররা।

সংবাদ প্রতিনিধি মলয় ভৌমিক আমাকে জানিয়েছেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ সীমানায় রাজশাহী নাটোর সড়কের পাশে কাজলায় আবিষ্কৃত হয় আর একটি গণকবর। এখানে পাওয়া যায় শতাধিক শহীদের মাথার খুলি, হাড়, কংকাল। রাজশাহীর কোর্ট এলাকার গৃহবধূ নয়ন বানু কংকালের হাতে বাঁধা ঘড়ি দেখে সনাক্ত করেন তার নিখোঁজ স্বামীকে। শহীদের রক্তে সিক্ত এই গণকবরটি আজ অবহেলিত উপেক্ষিত। কোন পক্ষ থেকেই কোন রকমের সংরক্ষণের ব্যবস্থা আজো হয়নি। রাজশাহীর পদ্মার চরে বাবলা বনে পাওয়া গেছে আর একটি গণকবরের সন্ধান। এই গণকবরেই পাওয়া গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মীর আবদুল কাইয়ুমের লাশ।

পদ্মা তীরের বধ্যভূমি-গণকবর প্রসঙ্গে মলয় ভৌমিক আমাকে জানিয়েছেন-
রাজশাহী মহানগর বোয়ালিয়া ক্লাবের পাশে পদ্মা তীরের বাবলা বনে রয়েছে একটি গণকবর। অবহেলিত এই স্থানটি বাঁশের বেড় দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী রাজশাহর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ধরে এনে পদ্মা তীরের এই বাবলা বনে হত্যা করেছে। এখানে যাদের হত্যা করে মাটি চাপা তিয়ে রাখা হয়েছিলো, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন রাজশাহীর বুদ্ধিজীবি। অনেক লাশ মাটি চাপা না দিয়ে পদ্মার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহেও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করা হয় এই বাবলা বনে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হারিয়ে গেলেন। ১৫ই এপ্রিল বিকেল ৪ টায় একদল পাকসেনা তাকে ধরে নিয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার আসলাম এবং কর্ণেল তাজের অতিথি ভবনের ছাদে। এরপর তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি।

পাকিস্থানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের নিষ্ঠুরতা-বর্বরতা-ধ্বংস-ক্ষয়ক্ষতি, হত্যাযজ্ঞ বিষয়ে ১৯৭২ সালে রাজশাহীতে ৭ জন শিক্ষক ও ৫০ জন ছাত্র সমন্বয়ে গঠিত দল ‘চল গ্রাম ঘুরে’ কর্মসূচীর মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী এক জরিপ চালান। সে সময় রাজশাহী জেলার ২৫ টি গ্রামের প্রায় প্রতি ঘরে জরিপ চালানো হয়েছিলো। শেষদিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড: খান সরওয়ার মুরশিদ, বেগম নূরজাহান মুরশিদ, স্থানীয় এমসিএ এবং রাজশাহী অঞ্চলের কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা বেশ কয়েকটি স্থানে যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্যও রেখেছিলেন।

এই জরিপ কাজ চালানোর সময়ই গণকবাড়িয়া ও জগীশ্বর গ্রামে আবিষ্কৃত হয় গণকবর আর বধ্যভূমি। গণকবর দু’টির মধ্যে গগনবাড়িয়ার গণকবর ছিল বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে। এখানকার বধ্যভূমি থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী জেলে সে সময়ের হত্যাযজ্ঞের যে বিবরণ দিয়েছেন তা যেমন ভয়াবহ তেমনি বেদনাদায়ক। বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী এই জেলে জানিয়েছেন-
পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ হবে। দফায় দফায় ধরে আনা হলো গগনবাড়িয়ার মানুষদের। হয়তো অন্য গ্রামেরও মানুষ ছিলো। প্রায় ৫০০ লোককে দাঁড় করানো হল সারিবদ্ধ ভাবে। রাত ছিল আঁধার। হঠাত করেই আমাদের উপর চালানো হলো গুলি। প্রায় পাঁচশো লোকের আর্তচিতকারে গগনবাড়িয়া প্রকম্পিত হল! মৃত্যু যন্ত্রণায় তখনও কেউ কেউ কাতরাচ্ছিলো। কিন্তু রেহাই পেল না তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব নিস্তব্ধ নিথর হয়ে গেল। প্রাণে বেঁচে যাওয়া জেলে জানিয়েছেন, পাকসেনারা চলে যাবার অনেক পরে আমার মনে হলো আমি বেঁচে আছি। তারপর আস্তে আস্তে রক্তের সাগর আর লাশের পাহাড় পেরিয়ে ছুটলাম যেদিকে দু’চোখ যায়। আমি বেঁচে গেলাম।

একাত্তরের মে মাস। পাক হানাদার বাহিনী জগীশ্বর গ্রামে এসে ফরমান জারি করলো শান্তি গঠন করা হবে, সবাইকে আসতে হবে। একে একে ২৭ জন গ্রামবাসী হাজির হলো। আর কাউকে না পেয়ে পাক সেনারা ২৭ জনকেই সারিবদ্ধভাবে পিছনে হাত রেখে দাঁড়াবার হুকুম দিল। সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালো। আর তারপরই ঝাঁক ঝাঁক ঘুলি এসে পড়লো তাদের ওপর। মাত্র কিছুক্ষণ্ তারপরই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নামক প্রাণী ধ্বংস নিষ্প্রাণ হয়ে গেল সবাই। এখানেই শেষ নয়, গ্রামে চালানো হলো অকথ্য নির্যাতন-ধ্বংস। ৫৫ জন মহিলা নির্যাতিতা হলেন পাক দস্যুদের হাতে।

রাজশাহী উপশহরে সপুরা কলোনী। এই এলাকায় ছিলো পাকিস্থান সেনাবাহিনীর মিনি ক্যান্টনমেন্ট। তবে বেশ সুরক্ষিত। রাজশাহী সদরের এসডিও, পবা থানার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক দল ও অন্যরা মিলে গোটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে একশ’টি গণকবরের সন্ধান পান। এই একশটি গণকবর থেকে দশ হাজার মানুষের কংকাল উদ্ধার করা হয়। এই ভয়াবহ দৃশ্যে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সেদিন এই সংবাদে অশ্রুসজল নয়নে মানুষের ঢল নেমেছিলো, কাফেলা ছুটছিলো গণকবর গুলোর দিকে।

উপরের ইতিহাস থেকে এটা সহজেই বোঝা যায় যে স্বাধীণতার জন্য রাজশাহীর মানুষ কিভাবে আত্মত্যাগ করেছিলো। এটা কিন্তু পুরো ইতিহাস নয়, ইতিহাসের কিছু অংশমাত্র। এটুকু থেকেই পাকবাহিনীর হিংস্রতা, বর্বরতা ও বাঙালী বিদ্বেষ কতটা ভয়ঙ্কর ছিলো অনুভব করা যায়। নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো পাক হায়েনারা। আর এই হায়েনাদের সহচর ছিলো দেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামসের মতো নিকৃষ্ট বাহিনী গুলো। যাদের বেঈমানীর কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে, নির্যাতিত হয়েছিলো শত শত নারী-শিশু। এতকিছুর পরও কি কেউ এদের পক্ষে কথা বলতে পারে? আর যদি বলে আমরা ঘৃণা ভরে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করি!!

রাজশাহীর বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগই এসব ইতিহাসের কিছুই জানে না। কোন সরকারই এই সব গণকবর-বধ্যভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়নি। কোন কোনটা আবার বেদখল হয়ে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে! যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭১ এ পুরোটাই বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিলো সেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ই আজ শিবিরের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি! আজো ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিবির! সাধারণ ছাত্রদের কাছে বধ্যভূমিগুলো যেন আড্ডা দেওয়ার জায়গা! কোন দায়বদ্ধতা নেই, জানার আগ্রহ নেই! এই কি তবে হাজারো মানুষের আত্মত্যাগের প্রতিদান? এই কি তবে বুদ্ধিজীবিদের আত্মত্যাগের ফসল?

আর এভাবে চলতে দেওয়া যায় না! আসুন, আমরা সচেতন হই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানি, অন্যকেও জানাই। শুধু ব্লগে পড়লেই হবে না। আশে পাশের মানুষকে এই ইতিহাস জানান, তাহলে বাংলার বুকে আর কোন হায়েনার দল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

আমার অন্যান্য পোস্ট:
* মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: বাঙালী নারীদের উপর পাকবাহিনীর নির্যাতন (ধারাবাহিক পোস্ট)
* সফল ব্লগার নয়, সত্যবাদী ব্লগার হ্ওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য। (বোনাস: পাকবাহিনীর নির্যাতনের সহযোগী রাজাকাররাও যেসব নির্যাতনের ভাগ বাধ্যতামূলকভাবেই পেয়েছিলো!)
* ইতিহাস সাক্ষী যারাই ইসলামকে নিয়ে খেলতে চেয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে।
* পাক বাহিনী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস এর গঠন ও কার্যপদ্ধতি

পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য অংশে পাকবাহিনী ও রাজাকারদে কুকর্মের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবো, সাথে থাকবেন নিশ্চয়?

[পোস্টের বিষয়বস্তুর বাইরে কেউ কোন মন্তব্য করবেন না। তর্কের খাতিরে, সম্পূর্ণ পোস্ট না পড়ে বা অহেতুক তেনা পেচানোর জন্য মন্তব্য করলে কঠোর ভাবে প্রতি উত্তর দেওয়া হবে। অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য মুছে ফেলতেও আপত্তি নাই]
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×