somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেটির কথা কি মনে পড়ে এখনো?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন একটি মেয়ে সকালে উঠে হাত মুখ ধুয়ে চুলের খোপাটা বাধে। মায়ের সাথে কথা বলে কি খেতে মন চাইছে আজকে কি করবে এই ছুতোনাতা! তারপর চোখে কাজল দিয়ে বেরিয়ে পড়ে অফিসের দিকে। হঠাৎ একদিন মনে হলো এভাবে একঘেয়ে জীবন কতদিন, আর ভালো লাগে না। চাকরিটা ছেড়ে দিলে কেমন হয়? মনে হয় সে কারনেই দিলো চাকরীটা ছেড়ে।

তবু সকালে উঠে আবার সেজে গুজে মাকে বলে কি খাবে না খাবে। অসুস্হ মা প্রতিদিনের মতো কিছুই বলে না খালি মেয়ের মাথার চুলটা নেড়ে বলে,"তোর যা ইচ্ছা!" মার চোখ এভাবে প্রতিদিন ভিজে যায়। মেয়েটা প্রতিদিন এসব দেখে বেশ অভ্যস্ত। যেই না চোখে কাজল লাগাতে যাবে তখনই মনে হলো আজকে থেকে তো ওর অফিসে যাবার কোনো দরকার নেই, তাহলে?

মেয়েটা তবুও চোখে কাজল দেয়, ভাবে আজকে একটু অন্যভাবে তার দিনটা শুরু করবে। কিন্তু কিভাবে? এই ব্যাস্তময় শহরে কোনো কিছুই আর আগের মতো রোমান্ঞ্চে ভরা নেই। পূর্নিমা রাতের জ্যোছনায় হারিয়ে যাবার নেই সেই উৎসব অথবা উদাস বিকেলে চুল উড়িয়ে বসে থাকার তাড়না আশুলিয়ার বিস্তর প্রান্তরে। মেয়েটার কাছে মনে হয় এই অন্যরকমটাও আর ভালো লাগছে না।

মেয়েটার খুব মনে পড়ে সেই ছেলেটার কথা। ছেলেটা বয়সে ছোট থাকলেও তাকে প্রান দিয়ে ভালোবাসতে। সে শুধু বলতো ওকে সে খুব ভয় পায়। ছেলেটা বলতো কেন ভয় পায়? ও তো কোনোদিন ওকে মারবে না অথবা আঘাত করার কথা ভাবতেও পারে না। সারা জীবন বুকের মধ্যে ওর ছবি নিয়ে ঘুরবে। মেয়েটি তখন বলেছিলো যখন আসলেই বুঝতে পারবে এ সম্ভব না তখন সে কি করবে এই ভেবে! ছেলেটি বলে হাসতে হাসতে সে তার নিয়তিকে বরন করে নেবে আর অপেক্ষায় থাকবে শুধু এটা জানার জন্য আসলেই ওর সত্যিকার ভালোবাসার কি কোনো মুল্য আছে কিনা!

মেয়েটির এখন খুব ইচ্ছে হয় ছেলেটির খবর জানার, ছেলেটি কি বিয়ে করে ফেলেছে, নাকি এখনো ওর আশায় বসে আছে? এখনও কি শালের বনে গাছের গায়ে লিখে রাখে নিজের নামের সাথে ওর নাম, এখনও কি পূর্নিমার রাতে চাদ দেখে ভাবে ওর কথা, অথবা ওর জন্য নামাজ শেষে হাত পেতে মোনাজাত করে কিনা প্রতিটা জুম্মাবার!

মেয়েটি হেসে ওঠে আপনমনে, ভাবে কি সুন্দর জীবন ওর। ছোটবেলা ওর গায়ের রং দেখে সবাই বলতে কাচা হলুদের রং। ওর রুপ দেখে পাগলপাড়া হতো সকল ছেলেরা। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবার সময় রিক্সা দিয়ে যখন গলিটা পার হতো তখন এলাকার ছেলেগুলো নানা ছল ছুতোয় কথা বলতে চাইতো, বলতো কিছু লাগবে কি না..সবাই বলতে চাইতো ওর সাথে কথা! নিজেকে মনে হতো এক রাজ্যবিহীন রাজকুমারী।

এই রাজকুমারীর জীবনে একদিন এলো এক ছেলে, গুণ ঝরে পড়ে থরে থরে। চারিদিকে তার গুণের গুনগান, যেনো লাখে একটা। ভেবেছিলো এক সুন্দর ঘর হবে ওদের, সেখানে ওরা প্রতিদিন চোখে চোখ রেখে শুরু করবে প্রতিটা সুন্দর সকাল। প্রতি জোছনায় যখন আকাশ ভরা চাদর আলোয় তারার মুখ লুকোবে তখন ওর মুখ দেখে কবিতা লিখবে সেই ছেলেটি। অথবা ওকে নিয়ে খুজতে বেরুবে সেই নীল দিগন্তে যেখানে প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়ে বিশাল সূর্য্যটা। হলো না ঘর করা সেই ছেলেটির সাথে, সামান্য ভুল বুঝাবুঝি আর আত্মসম্মানবোধটা একটু প্রবল বলেই একদিন ভেঙ্গে যায় সম্পর্কটা।

তারপর এভাবেই প্রতিবছর চলে যায় পুরোনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে। অথবা আনমনে খুজতে থাকে ঐ ছেলেটির মতো লাখে একটা কেউ কি আছে যে ওকে ভালোবাসবে পাগলের মতো?

আজকেও আকাশে বিশাল পূর্নিমা চাদ, আজকেও তারারা মুখ লুকিয়েছে শুভ্র আলোয়, ও জানে চাদের আলোয় ওকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে, মনে হয় এক ডানা কাটা পরী আটকে আছে এই চারদেয়ালে মোড়া ঢাকা শহরে। সে এখান থেকে আর বেরুতে পারছে না, অমৃত পান না করার বদৌলতে বিসর্জনে চলে গেছে তার অমরত্ব অথবা সেই অচ্ছুৎ রাজকুমারী যাকে যে ছুবে সে পাথর হয়ে যাবে সহসা, তবে যে সত্যিকার ভালোবেসে দেয় চুম্বন তাহলে তার অভিশাপ গুলো হারিয়ে যাবে কালের অতল গহ্বরে! চোখ দিয়ে এক ফোটা দু ফোটা বেরিয়ে পড়তে থাকে মুক্তোর মতো অশ্রগুলো, এমন কেউ কি নেই ওর মুক্তাগুলো মুঠো বন্দী করুক, চোখ দুটো মুছে বলে দিক,"আর কান্না নয়, রাজকুমারী, এখন চল আমার সাথে সুখ নগরে!"

অচ্ছুৎ রাজকুমারীর খুব মনে পড়ে সেই ছোট ছেলেটিকে, জানতে ইচ্ছে করে এখনও কি বসে আছে ওর পথ চেয়ে?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯
৪৩টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×