somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রোহের আগুন

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পেরিয়েই চোখের সামনে পড়লো মায়ের দোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। যদিও একটা ছাপড়া ঘরে থাকার কোনো জায়গা না থাকলেও এ দেশে রেস্টুরেন্টকে হোটেল বলার চল যে কোন মহাগুনী শুরু করেছে সেটা কারো জানা নেই। মায়ের দোয়া হোটেলের (?) সাইনবোর্ডের ডানে গরুর মাথার সাথে খাসীর বডি লাগানো ছবি দেখে হাসি আসলেও প্রায় ১ যুগ পর মশলা দিয়ে খাসীর তরকারী আর পরোটার কথা মনে পড়তেই শাহেদের জিভে জল এলো। কোনার একটা নির্জন বেঞ্চে বসে ওয়েটারকে ইশারা করতেই হাজির,"লটপটি, পরোটা, আলু ভাজি, ডিম ভাজি, ভাত গরু খাসি মুরগী ঝাল ভুনা কি খাইবেন!"
: দম নে রে ভাই। খাসির একটা প্লেট আর ৫ টা পরোটা।
: ৪ টা লন আগে। তারপর লাগলে ডাক দিয়েন।
: নাম কি?
: শামছু।
: কোপা শামছু। চারটা দিয়াই শুরু করি।

শামছু যেমন ঝড়ের বেগে উদয় হয়েছিলো তেমনি ঝড়ের বেগে হারিয়ে গেলো। এখনো বাইরে কিছুটা আলো আছে। বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকার বাসটা ধরতে পারলে রাতটা বাসেই কাটানো যাবে। তারপর আসল কাজ। কাধের ব্যাগটা খুলে রেখে পিঠটা দেয়ালে হেলান দিতেই সামছু এক হাতে ধোয়া তুলা তরকারীর বাটি আর আরেক হাতে ৪ টা পরোটার প্লেট। শাহেদ বাটিতে তাকিয়ে দেখলো বিশাল একটা হাড্ডির গায়ে লেগে আছে কিছু মাংস আর তার পাশে একটা বিশাল আলু ওর দিকে তাকিয়ে অম্লান বদনে খিল খিল করে হাসছে। ঝোলে ডুবে আছে ছোট্ট আরেকটা নান্না মুন্না পিস যার অর্ধেক সাদা চর্বি। মেজাজ গরম হবার বদলে গরম মসল্লার ঘ্রানে ওর আর তর সইলো না। একটা পরোটার অর্ধেক ছিড়ে ঝোলে ডুবিয়েই মুখে তুলে আবার ওয়েটারকে ইশারা। গরম খাবার একবারে মুখে দিয়েই জ্বালা পোড়ায় শাহেদের চোখ আধার। কিন্তু শামছুর খবর নেই। কারন শামছু পানি দিয়ে যায়নি।

৪টা পরোটা নিমিষে শেষ কিন্তু শাহেদ এখনো গোস্তটা টাচ করেনি। কারন ঝোলের এমন স্বাদ। নরওয়েতে এত বছর থেকেও দেশী খাবারের স্বাদের ফ্যাসিনেশন ওর মনের মধ্যে তীব্র আকার ধারন করছিলো দিনদিন। যদিও অসলো বার্গেন স্ট্যাভেন্জারে বাঙ্গালী ইন্ডিয়ানদের বেশ কিছু ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে কিন্তু ঐ যে চিনি আর ঘনদুধের মিশেলে কারীটা ওর একদম পছন্দ না। শামছু আরও ৪ টা পরোটা নিয়ে আসলো। শামছু চোখ বড় বড় তাকিয়ে বললো,"ভাইজান কি ভারত থাকেন?"
: না, থাকি তিব্বত।
: হেইডা কই?
: কাজাখিস্তানের পাশে।
: হেইডা কই?
: ভূটানের পাশে।
: আইচ্ছা। তরকারী আরেক বাটি নিবেন? গরু ভূনা কেবল চুলা থিকা নামছে।
: নিয়ে আসো বৎস এক বাটি, আজকে হবে।

এবার শাহেদ প্রথম পরোটা দিয়ে খাসীর বড় পিসটা ধরলো। ভাবলো এর পর আলুটা শেষ করবে। এমন সময় শাহেদের কানে আসলো মিইয়ে পড়া একটা সুর। পাশে তাকিয়ে দেখে পুরোনো ফিন ফিনে শাড়ি পড়া বেঢপ পেটওয়ালা কালো এক মহিলা। শীর্নকায় শরীরের এই মহিলা পেটে বাচ্চা নিয়ে কিভাবে দাড়িয়ে আছে দেখেই শাহেদের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। পাশে আবার ৬-৭ বছরের মেয়ে, দুজনেই হাত পেতে আছে শাহেদের দিকে "ভাইজান, দুইটা টাকা দিলে কিছু খাইতাম।"

শাহেদের মাথাটা বিগড়ে দিলো এ দৃশ্য। পেটের ক্ষিধেটাও মরে গেলো।"আপনারা কিছু খান নাই?"
মহিলা মাথা নাড়লো। শাহেদ তাদেরকে সামনের বেঞ্চে বসতে বলে শামছুকে ইশারা করলো। শামছু শাহেদের দিকে আসতেই ঐ মহিলার দিকে তাচ্ছিল্যের দিকে তাকালো। শাহেদ শামছুকে বললো,"বিরিয়ানী দুই প্লেট আর এক গ্লাস দুধ এই মহিলার জন্য আর এই মেয়েটার জন্য একটা কোকের বোতল।"
শামছু শুনে হেসে দিলো।"ভাইজান, এরা চীটার বাটপার। এই বেডি কুকাম কইরা পেট বাধাইছে। এর জামাই ঘর থিকা বাইর কইরা দিছে। অখন ভিক্ষা কইরা খায়"
: খাওয়া শেষ হলে যে ২০ টাকা টিপস পাইতি, ঐটা চাস কি চাস না?
শামছু দিলো এক দৌড়। ৫ মিনিটের মধ্যে বিরানীর প্লেট এসে হাজির। পিচ্চি মেয়েটা বিরানী দেখেই চোখ বড় করে ফেলছে। মায়ের দিকে একবার তাকিয়েই প্লেটের ওপর হামলে পড়লো। কিন্তু মহিলা এখনো খেলো না। শাহেদ তাকে বললো,"খাচ্ছেন না কেন? খেতে ইচ্ছে করছে না?"
মহিলাটা কেঁদে ফেললো,"কিছু মনে কইরেন না। পেটে ক্ষিধা ছিলো কিন্তু এখন কেন জানি খেতে মন চাইতাছে না।"
: আমি জানি। আমারও স্ত্রীও ৮ মাসের গর্ভবতী ছিলো। একদিন সকালে তার খুব শখ হলো খিচুড়ী আর ইলিশ মাছ ভাজা খেতে। আমি কাজ কর্ম বাদ দিয়ে বাজারে গেলাম ইলিশ মাছ আনতে। যাও ইলিশ পেলাম দাম ২ হাজার টাকা। আমার কাছে সেই টাকাটাও ছিলো না। অফিসে ধার করে মাছ কিনে বাসায় ফিরে মাছটা কাটি, রাধি। তারপর ওর সামনে দিতেই গন্ধে প্লেটের ওপর বমি করে ফেলে। পরে আচার দিয়ে বন রুটি খেয়ে শুয়ে পড়ে।
: উনি এখন কেমন আছেন?
: ও মারা গেছে অনেকদিন আগে। বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হবার কিছুদিন পরেই।

মহিলা শাহেদের চোখের দিকে তাকালো। শাহেদের চোখটা টল টল করছে। মহিলা বেশ রুচি নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। শাহেদ আরও দুই প্যাকেট অর্ডার দিলো শামছুকে আর ওর পাওনা ২০ টাকা টিপসও দিয়ে দিলো।ওদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো ভেতরেই অপেক্ষা করলো। যাতে করে শামছু বা হোটেলের কেউ ওদের সাথে বেয়াদবী না করে। ওদের খাওয়া শেষ হলে শাহেদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকা গামী বাসের কাউন্টারে জানতে পারলো ঢাকার শেষ বাসটা আধা ঘন্টা আগে ছেড়ে গেছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো এখানে একটু আগেও যে দিনের আলোতে ঝকঝক করতো এখন যেনো নিকষ আধারে ডুবে গেছে। বহু দূর থেকে দুয়েকটা পিদিমের আলোর মতো কি যেনো জ্বলছে। মনে হয় ঘর বসতি। কিন্তু দিনের বেলা চারিদিকে কত ঘর বাড়ি কত মানুষ চারিদিকে। আকাশটা গাছপালা আর কারেন্টের তারে ঢেকে গেলেও তাতে কোনো ইলেক্ট্রিসিটি নেই এখন। এ এক রসিকতা!

২.

মগবাজারের এই হোটেলটার খোজ বার্গেনে থেকে আওরঙ্গ ভাই দিয়েছিলেন। আওরঙ্গ ভাই একসময় ঢাকার বেশ বড় এক ত্রাসের নাম ছিলো। ঢাকা শহর এখনো তার নখদর্পনে। ৯০ এর দিকে সুইডেনে এসাইলাম নিয়ে সেখানকার অধিবাসী হয়ে যান। পরে নরওয়ে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট খোলেন। শাহেদের অফিসটা ছিলো তার পাশেই। সেখান থেকেই সখ্যতা। মগবাজারের এই হোটেলের বিশেষ গুন হলো পরিচিত মানুষদের জন্য বেনামে কাগজপত্র তৈরী করার কারখানা। আর কোনো মাল যদি উধাও করতে হয় এখানকার মিজানের জুড়ি নেই। মিজান ভাইকে আওরঙ্গ ভাইয়ের নাম বলতেই সে অজ্ঞান। বললো জান কখন হাজির করতে হবে। খুব রসিক মানুষ। শাহেদও আড্ডাখোর, দুজনে খুব দ্রুতই মিলে গেলো। তার ওপর পুরান ঢাকার সবচেয়ে সুস্বাদু রেস্টুরেন্টের খাবারের সব খবর মিজানের হাতের ডগায়। আজ ওরা এসেছে পুরান ঢাকার একটা হোটেলে। এই হোটেলে পুরো একটা আস্ত খাসীর গ্রীল হয় এবং সাথে একটা ঝোল দেয় যেটা নাকি খাসির তেল আর মশলা জাল দেয় পুরো রাত তারপর সকাল বেলা তা জমিয়ে পরিবেশন করা হয়। ঘ্রান শাহেদের নাকে আসতেই অজ্ঞান হবার দশা।
মিজান শাহেদের খাওয়া দেখেই নিজের ভাই বানিয়ে ফেলেছে,"ভাই, তাইলে আজকাই হোটেল ছাড়বেন?"
: হুম।
: আরেকবার ভাবেন।
: আরেকটা পায়ার অর্ডার দেন।
: আপনি এত খান খাওয়া যায় কই?.............. চারিদিকে এত সিকিউরিটি, এত ক্যামেরা। দেশে আর ফিরতে পারবেন না।
: আজকের পর থেকে আমাকে আর চিনেন না। ভাই বলছে, আপনার জন্য সে ব্যাবস্থা করছে। দুয়েকদিনের মধ্যেই আপনার খবর আসবে।
: ধুরু, আমি এখানেই ভালো আছি। আমারে নিয়া তারে টেনশন করতে মানা করেন। আমি যামুনা।
: ফাইজলামী কইরেন না। ঐ কাগজ বানাইতে আমার অনেক দৌড়াইতে হইছে।


শাহেদ খেতে খেতে পকেটের নোকিয়া ১১০০ মোবাইলটা বের করে প্রথমে সিমটা খুললো। সিমটা ভেঙ্গে দু টুকরো করে ফেললো এবং মোবাইলটা মেঝেতে ফেলেই পায়ের নীচে গুড়িয়ে দিলো। ওদের মোবাইল ভাঙ্গাটা যেনো কারো চোখেই পড়লো না। এখানে যেনো সব অদ্ভুত লোক খাওয়া দাওয়া করছে। কেউ কারো চোখে তাকাচ্ছে না। এমনকি মিজানও বাইরে তাকিয়ে আছে শাহেদ খাবারের দিকে তাকিয়ে কপাকপ গিলছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো এই রেস্টুরেন্টের নামও মায়ের দোয়া। কিন্তু এর সাইনবোর্ডে আস্ত গরু ওয়ালা খাসীর ছবি নেই আছে খাসীর পায়ের ছবি। মিজান উঠে দাড়িয়ে বললো,"আমার নম্বরটা মনে রাইখেন। যত রাতই হোক, আমারে ফোন দিয়েন। কোনো সমস্যা হইলে আমি আছি।"
শাহেদ খাবার মুখে নিয়ে বললো,"আমি জীবনে কিছু ভুলি না। আমার মাথাটা একটু অন্যরকম।" মিজান মুচকি হাসলো। মিজান তাকে ভাই বললেও সে ভয় পায় এই মানুষটাকে। মানুষটার মোবাইলে কোনো ফোন নম্বর নাই। এত মানুষকে ফোন দিলো সব মুখস্থ। এমনকি ঢাকার কোন গলিতে কি কি আছে সবই যেনো নখোদর্পনে। যেন মিজান নয়, শাহেদই ঢাকার পুরোনো বাসিন্দা। কিন্তু এরকম একজন মেধাবী মানুষ এমন কাজ করবে ভাবতেই তার খারাপ লাগছে। মিজান হোটেল থেকে বেরিয়ে এক দৌড়ে উধাও হয়ে গেলো।

৩.

তোফায়েল সাহেবের বয়স হয়েছে তবু রাতের বেলা জগিং করাটা যেনো অভ্যাস। আর্মিতে থাকাকালে সে দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন ছিলো। কমান্ডার ট্রেনিং এ তার সাথে কেউ দৌড়ে পারতো না। এখন ডিজিএফআই এর এত বড় দায়িত্বে কিন্তু রাত ১০ টার পর গুলশান ক্লাবের মাঠে ১০ টা চক্কর তার দিতেই হবে। এই বয়সেও এমন শক্তপোক্ত সাজানো ফিগার, জুনিয়র মেয়ে অফিসার গুলোও তাকে টিজ করে। বাসার সবাই পার্টিতে গেলেও তোফায়েল সাহেব এখন আর সেগুলোতে তেমন যান না। জগিং এর সময় তিনি তেমন কোনো প্রোটোকলও নেন না, নিজের ওপর যেনো তার অগাধ আত্মবিশ্বাস। পায়ে হেটেই মাঠের দিকে এগুতে থাকলেন। রাতের এসময়টা নিয়ন বাতির আলোয় গাছের সবুজ পাতাগুলো অদ্ভুত রং ধারন করে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ফেলার পরে অনুভব করলেন পিছে কেউ একজন। পিছনে না তাকিয়ে প্রথমে ডানে আড়চোখে তাকালেন। কারন পেছনের ল্যাম্পপোস্টের লম্বা ছায়াটা তাকে ছুয়ে যাবার কথা। কিন্তু সেরকম কেউ নেই। তোফায়েল সাহেব হাটার গতি বাড়ালেন। অনুভব করলেন পেছনের ব্যাক্তিটার সেই হাটার শব্দটা নেই। কিন্তু সে আছে। তার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দটা যেনো শুনতে পাচ্ছেন। সে যতই গত বাড়ায় ততই ঐ ব্যাক্তির শ্বাসপ্রশ্বাসটা নিকটতর হতে থাকে। তোফায়েল সাহেবের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো। সন্দেহ হলো বিলাই নাতো। হঠাৎ পিছনে ঘুরলেন। দেখলেন আসলেই একটা বিলাই। দেখেই বড় একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হেসে দিলেন। তারপর আবার সামনে ঘুরতেই আচমকা কিছু একটা তার গলার বা দিকের আর্টারী ভেদ করে সোজা ফুসফুস ছেদ করলো। তোফায়েল সাহেব বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ডান হাতের রিফ্লেক্সে প্রথমে কোমরের হোলস্টারের দিকে নিলেন কিন্তু মনে পড়লো জগিং এ আসার সময় নিজের রিভলবারটা আনেন না। এমন সময় শাহেদ তার মুখের সামনে ফিসফিসিয়ে বলে গেলো,"কর্নেল সাহেব, মনে পড়ে ১২ বছর আগে একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে ক্রশফায়ারে দিতে চেয়েছিলেন। ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন ১ মাস পর, মনে পড়ে? তার কিছুদিন আমার স্ত্রীর মিসক্যারেজ হয় আপনার হাতের ধাক্কা খেয়ে। এর ৬ মাস পরে সে মারা যায়। আপনাকে গলার মাঝের ফ্যামোরাল আর্টারীর মধ্যে ৬ ইঞ্চি স্ক্রু ড্রাইভার ঢুকিয়েছি। এটা যদি বের করে ফেলেন আপনার মৃত্যু ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে হবে। আর যদি বের না করেন তাহলে ১০ মিনিট সময় পাবেন। আপনার ফুস ফুস ফুটো করেছি ইচ্ছে করেই। যাতে করে যদি বেচেও থাকেন তাহলে ৬ মাসের বেশী না বাচেন। আমি সেই শাহেদ।"

এই বলে তাকে পিছে ফেলে হাটতে শুরু করলো রাস্তার আড়াআড়ি। ও জানে এই রাস্তায় তিনটা ক্যামেরা কিন্তু তিনটা ক্যামেরার ব্লাক স্পট এখানেই। তোফায়েল সাহেব হাটু গেড়ে কাপতে কাপতে বসে পড়লো। তার মাথার রক্ত সব ঐ আর্টারী দিয়ে বাইরে ঝরে পড়ছে, সাথে ফুসফুসেরও।কিন্তু মাথায় কোনো রক্ত জমা হচ্ছে না। চোখের দৃস্টি খানিকটা ধোয়াশা। বা হাতে স্ক্রু ড্রাইভারের হ্যান্ডেলটা ধরে ডান হাতটা মুস্টিবদ্ধ করলো। দাতে দাত খিচে স্ক্র ড্রাইভারটা টেনে বের করতেই রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হতে শুরু করলো। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তোফায়েল সাহেব দাড়িয়ে সমস্ত শক্তি নিয়ে শাহেদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ওমনি শাহেদ তার দিকে সোজা মুখ বরাবর একটা কিক। তোফায়েল সাহেবের চোয়াল বরাবর কিকটা পড়তেই পিছে গিয়ে ছিটকে পড়ে। এর একটু পর তোফায়েল সাহেবের দেহটা স্তব্ধ হয়ে যায়। শাহেদ সেদিকে না তাকিয়ে দৌড়ে গিয়ে একটা দেয়াল টপকালো। ভিলা বাড়িটা ভেঙ্গে উচু এ্যাপার্টম্যান্ট হবে। তার ওপাশেই রাস্তা। খুব সহজেই ওখান থেকে চলে যেতে পারবে। দূর থেকে পুলিশের সাইরেনের আওয়াজ শাহেদের কানে ভেসে আসলো।

৪.

প্রচন্ড ঠান্ডা বার্গেনে। -২৫ হবে। চারিদিকে সাদা, তার ওপর তুষার পাত। শাহেদ অলস বসে কাজ ফেলে জানালা দিয়ে সে তুষার দেখছে। এমন সময় একটা অজানা নম্বর থেকে কল,"জানের ভাই, আপনে কৈ?
: কে?
: আমারে ভুইলা গেলেন? আপনে নাকি কিছু ভুলেন না?
: আমি তো আগেই বলছি সেদিনের পর আপনারে আর চিনি না।
: (মনোক্ষুন্ন আওয়াজে) ও আচ্ছা।
: আওরঙ্গ ভাই আপনার কথা বলছেন। অসলোর বাসাটা পছন্দ হইছে?
: এই বাসাটাও আপনে ঠিক করছেন?
: আমার কাজটা কি করছিলেন?
: ভাই ব্যাপক বেগ হতে হইছে। আসেন সাক্ষাতে বলি? তবে এটা জেনে রাখেন কাজটা হইছে।

কাজটা ছিলো বাংলাবান্ধার সেই মহিলা। নাম মর্জিনা। ক্লাস নাইনে থাকতে পাশের বাড়ীর এক ছেলের প্রেমে পড়ে। বিয়ে করে পালিয়ে যায়। কথা ছিলো ভারতে গিয়ে সংসার শুরু করবে। কারন ছেলেটা হিন্দু। কিন্তু এক রাতে ওকে রেখেই ছেলেটি চলে যায়। তখন ঐ পিচ্চি মেয়েটির জন্ম হয়। নাম হাসিনা। শেখ হাসিনার নামে নাম। খুব স্বপ্ন ছিলো মেয়ে একদিন প্রধানমন্ত্রী হবে। পরের বার গর্ভবতী হয় যখন তাকে এলাকার এক মদ্যেপ বাস ড্রাইভার ধর্ষন করে হাসিনারই সামনে। মিজান ঐ ড্রাইভারের ব্যাবস্থা করে। হাসিনাকে মিরপুরের এসওএসে ভর্তি করায়। হাসিনার মা কে একটা গার্মেন্টসে দেবার কথা ছিলো বাচ্চাটা প্রসব হলেই। কিন্তু সে পালিয়ে যায়। মিজান তন্ন তন্ন করে খুজেও পায়নি। এমন সময় মিজানেরও ডাক এসে যায় এম্বাসী থেকে। শাহেদ একটু আগে ভারত যাবার টিকেট দেখলো। বেশ কস্টলি এখন। তারওপর ডিজিএফআই....বাংলাদেশে এরাই এখন রাজা।

শাহেদ কফির কাপে সীপ দিয়েই আবার টিকিটের সাইটে ঢুকলো। মাল্টিপল ভিসা নেয়া ভারতের। দেশটাও অনেক সুন্দর। ভালোই লাগে দেখতে। ব্রুড কফির ঘ্রানে পুরো অফিসটা মৌ মৌ!



বিঃদ্রঃ: এই গল্পটি কাল্পনিক এবং প্রতিটা চরিত্রই অবাস্তব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:৩০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×