somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলন কেন "নিরাপদ বাংলাদেশ চাই" আন্দোলনে পরিবর্তন হবে না?

০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দেশে থাকতে ছুটির দিন খুব বেশী কাজ থাকতো না। যদিও ছুটির দিন ট্যুরে থাকলে ওভার টাইমের টাকা অনেক বেশী থাকতো। আর ট্যুরে খুব বেশী কাজও থাকতো না। দু তিন ঘন্টার কাজের পরই পুরো দিনটা ফাঁকা। তো ভালো ভালো হোটেল খুজে মন মতো খেয়ে রুমে এসে দে ঘুম। তো যখন বাসায় থাকতো হতো তখন তো সে দু তিন ঘন্টার কাজও থাকতো না। দু্পুর বেলা খাবার খেয়ে জোরসে একটা ঘোষনা দিতাম,"ঘুম ভাংলা ডাক দিস!" এটা অবশ্য বোনের উদ্দেশ্যে বলা। কারন আমি ঘুমাইলে কি কারনে জানি না তার বেশ সমস্যা হতো। যদিও টিভি বা গান ফুল ভলিউম বা রুমে সকল কাজিনরা তাস নিয়ে ধুম আড্ডা দিলেও আমার মরার ঘুমে তেমন ব্যাঘাত ঘটতো না কিন্তু তারপরও সমস্যা। যদি ৩ ঘন্টার বেশী ঘুমাই তাহলে গ্লাস বা বালতী ভর্তি পানি পুরো মুখে ঢেলে দিতো। মজার ঘুম তড়াক করে উঠে যেতো। ঘুম ভাংলে একেক জনের ডায়লগ,"তুই কি ডাইল খাস?", "তুই কি নেশাপানি করস?" ইত্যাদি প্রশ্ন।

হলে থাকতেও আমার একই ঘটনা ঘটতো। সবুজ তার ভাঙ্গা রেডিও, যে রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর জন্য কখনো ব্রীজ ক্যাপাসিটর বা বিভিন্ন কয়েল চ্যান্জ করে নানা এক্সপেরিমেন্ট করতো, যদিও একেকটা এক্সপেরিমেন্টের পর মিলার গান হয়ে যেতো কাপা কাপা গলার ক্রন্দরন রত শাহনাজ রহমাতুল্লাহ, সেই রেডিও বাজতে থাকতো। ওদিকে মুনিমের তাবলীগের দাওয়াতে বদেমাল ওরফে জামাল, বশীর থেকে শুরু করে সবার মজমা বসে যেতো। একদিনে মিলার কন্ঠে শাহনাজ রহমাতুল্লাহ আরেকদিকে তাবলীগের গুরু গম্ভীর মারফতী বয়ানের মাঝেও আমার দিব্যি ঘুম হতো। মাঝে মাঝে বশীর বলতো,"পাঠাডা কি মরছে? জানাযা কি ক্যাম্পাসে দিবা নাকি? জানাযা ক্যাম্পাসে দিলে কিন্তু আমি হলে থাকুম না!"

মানুষের দিলে দয়া নাই।

যখন দয়ার কথা আসলো তখন মনে হলো এই যে সড়কে পুচকে পুচকে পোলাপান আন্দোলন করছে তারা সবাই ঢাকার প্রথিতযশা স্কুলের ছাত্র ছাত্রী। এখানে শুধু আমজনতার বাচ্চাকাচ্চাও না, দেখা গেলো যে পুলিশ রমনা থানা বা মিরপুর থানার চার্জে আছেন বা যে স্বরাস্ট্রসচিব অফিসে বসে পুলিশি একশনের তদারকী করছেন তার ভাই বা ছেলে মেয়ে বা বোন বা ভাগ্নী ওসব স্কুলে পড়ছে এবং তারাও রাস্তায়। এসব ছাত্র ছাত্রীদের গায়ে টোকা মারা মানে তাদের বুকে টোকা মারা। তাই সরকার যে পিটানির অর্ডার দিবে সেটা অনেক চিন্তা করেই দিতে হবে।

সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগ একটা সেফ পান্ডার দল। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি করা হলেও এখনো অনেক জায়গার কমিটি ঘোষনা করা পেন্ডিং। আর এখন যেসব ডেসপারেট নেশাখোর পোলাপান এসব দলে ভিড়ছে তারা টাকার জন্য নিজের বাপের গায়ে হাত তুলতে পারে। আর যেহেতু ছাত্র বা বয়স কম তাই এদের বিয়েশাদী সন্তান নিয়ে খুব মাথাব্যাথা নাই। তার ওপর আরেকটা পান্ডাদল আছে সেটা হলো পরিব হন শ্রমিক লীগ। স্বীকার করতে দ্বিধা নাই দারিদ্র্যের বিকৃত কষাঘাতে এরা আর মানুষ নাই। তার ওপর আমরা শিক্ষিট সমাজও যখন ১-২ টাকা ভাড়ার জন্য এদের সাথে যে রূঢ় ব্যাব হার করি সে হিসেবে সমাজের প্রতি এদের যে দায়বদ্ধতা এটা তাদের নেই।

এই অসুস্থ সমাজ গড়তে আপনার আমার সবার হাত আছে এবং এর ফল ভোগ করছে আমাদের সন্তান ভাই বোনেরা। এরা যা করার চেস্টা করছে সেটা হলো আমাদের ঘুমন্ত মুখে পানি ঢালছে। কাজ কি হচ্ছে? আন্দোলন আজকে থামুক এক সপ্তাহ পর যে লাউ সে কদু। সরকার নিয়ম ভঙ্গ করার আগে আমরা ভঙ্গ করবো।

অবশ্য জন গনকে দোষ দিয়েই বা কি হবে? সরকার হচ্ছে রাস্ট্রের রক্ষক এবং জনগন হচ্ছে রাস্ট্রের মালিক। যেখানে সরকারের কাজ ছিলো জন গনের অভিভাবক হয়ে থাকা সেখনাে পাহাড় সম দুর্নীতি এবং দলীয় সন্ত্রাসের কাছে জন গন অতীষ্ট। সরকার যদি ঠিক থাকতো, যদি সত্যি আমাদের সাথে অভিভাবক সম আচরন করতো তাহলে ছাত্ররা ঠিকই রাজপথ ছেড়ে আসতো। সরকারের আহ্বানকে সম্মান জানাতো। ধীরে ধীরে আন্দালন ভয়াব হ রূপ নিচ্ছে। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া প্রহসনের নির্বাচন দেখে জন গন আগেই বুঝতে পেরেছে এই সরকার আরেকটা প্রহসনের নির্বাচনের করবে জাতীয় নির্বাচন। জন গন তার পুঞ্জিভূত ক্ষোভের ব হিঃপ্রকাশ ঘটাবে। বিএনপি জামাতের ফায়দা লোটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। বিএনপি জামাতের জায়গায় লীগ থাকলে তারা এটাকে আরও বেগবান করতো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পঙ্গু বিএনপি লীগের ভূমিকাটাও ঠিক মতো নিতে পারছেন না।

কথা হলো ধরেই নিলাম এই সরকারের পতন হলো তাহলে কে আসবে? বিএনপি-জামাত? তখন কি বাংলাদেশের অবস্থা আরো শোচনীয় হবে না?

৭৯ পর্যন্ত ইরানের বাদশা যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন দেশ আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে ছিলো। ৭৯ এর গনঅভ্যুথথানে তার পতন ঘটলো। সবাই আসলে সমৃদ্ধ ইরানের স্বপ্ন দেখেছিলো। পেলো কি? এখন বর্বর ধর্মের নামে যে অরাজকতা বিরাজ করছে, সেটা তো দুর্নীতির সাথে সাথে জঙ্গিবাদের রাস্ট্রিয় ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। যেখানে দক্ষিনের দুর্গম অঞ্চলে সামান্য পানির অভাবে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে সেখানে তারা টাকা খরচ করছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। মানুষের হাতে যে টাকা আছে তার কোনো মূল্য নাই অথচ কিছু মোল্লা স হ সরকারী লোক ঠিকই দামী গাড়ী প্রসসাধন হাকাচ্ছে, তাদের সন্তানেরা ইনস্টাতে তাদের বিলাসী জীবনের ন গ্ন চর্চা করছে। বর্বর মিথ্যা কুৎসিত শরীয়া আইন তাদের বেলায় অকার্যকর।

এই সরকারের পতনের ফলে হয় আমরা ইরানের মতো একটা উচ্ছিষ্ট জঙ্গি ভাগাড়ে পরিনত হবো অথবা একটু সচেতন হলে আমরা মালদ্বীপ বা খুব নিদেপক্ষে ভিয়েতনামের মতো কিছুটা উন্নত হবো। সিঙ্গাপুর জাপান ব হুদূর এখনো। তবে অসম্ভব না।

কিন্তু আমার মনে হয় ইরান ভিন্ন অন্য কিছু আমাদের ভাগ্যে লেখা আছে। একসময় ইরান থেকে নারীদের মধ্যে ভালো ভালো বিজ্ঞানী পাওয়া যেতো কিন্তু বছর কয়েক আগে সরকারী ভাবে ডিক্রি জারী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ টি বিষয়ে মেয়েদের ভর্তি নিষিদ্ধ করে সে পথটা রুদ্ধ করা হয়। বর্বর ধর্মের নামে ইরানের মেয়েরা দিন দিন নিস্পৃহ হচ্ছে এই প্রতিবাদে বাতিল হয়ে যাওয়া ধর্ম জুরুস্থ্রিয়ান ধর্মে ধর্মান্তর হচ্ছে ইসলাম থেকে। সেই ৩৯ বছর পর দেশের অর্ধেক জন গোষ্ঠিকে ইসলামী ক্রিতদাস বানানো হচ্ছে সিস্টেমেটিক ভাবে।

আর তাছাড়া কি হতে পারে? এই যে ঘটে গেলো মেয়র নির্বাচন, সেখানে মনীষা নামের একজন মেয়ে দাড়িয়েছিলো ইলেকশনে। পরে শুনলাম ভয়াব হ জালি্যাতীতে এরা প্রতিবাদ স্বরূপ মাঠে বসে ছিলো। আমরা ২০০৯ এ গোখড়া সাপ তাড়াতে অজগর সাপকে ক্ষমতায় এনেছিলাম। এখন এই অজগরকে তাড়াতে আবার বিষধর গোখড়ার কবলেই ফিরে যাবো?

ওয়েল গাইজ, আমার কি চিন্তা? একটু পর দুপুরের খাবার খেয়ে আবার শান্তির ঘুম। এখন আর কেউ পানি ঢালতে পারবে না আমার মুখে যখন আমি ঘুমিয়ে থাকবো! সন্ধ্যার পর সাগরের ঢেউ দেখবো নতুবা পুলে যাবে। একটা পুলের ছবি দিলাম উপ্রে। দেখেন, কি মজা! লাইফ ইজ বুটিফুল!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×