সে অনেক কাল আগের ঘটনা । পুরাণের যুগ , গ্রীক পুরাণ । গ্রীসের থিবেসের রাজা তখন , রাজা লাইয়েস । বিশাল বীরত্ব তার । তার বাবা লাবদাকাস । বড় হয়েছেন লাইকাসের কাছে । বিয়ে করেছেন জোকাস্তা কে । জ্যোতিষীরা ভবিষ্যৎবানী করলেন থিবেসের কল্যাণেই তার সন্তান হওয়া উচিত নয় । সবচেয়ে ভালো হয় যদি তিনি সন্তানহীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । কিন্তু এক রাতে মাতাল অবস্থায় তিনি মিলিত হলেন তার স্ত্রীর সাথে । ফল হিসেবে পৃথিবীতে আগমন ঘটল এক পুত্র সন্তানের । রাজা তার নাম রাখলেন ইডিপাস । রাজা রানী দুই জনই খুব খুশি তাদের সন্তানকে নিয়ে । কিন্তু রাজ জ্যোতিষী ছুটে আসলেন হন্তদন্ত হয়ে ।
-মহারাজ , থিবেসের আকাশে প্রলয়ের তারা উদিত হয়েছে ।
-কি বলছ এসব , আমার সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখল , কোথায় সবাই আনন্দ করবে ? তা না করে দুঃসংবাদ দিতে এসেছ ।
রাজ জ্যোতিষী যা বললেন , তাতে রাজার চোখ পানিতে ভরে উঠলো । কিন্তু তিনি তার মন শক্ত করে নিলেন । একটি প্রাণের জন্য , তিনি তার প্রজাদের বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারেন না , পারেন না এই রাজ বংশের মান-সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিতে ।
রাজা হুঙ্কার দিলেন-
কোথায় জল্লাদ ? নিয়ে যাক এই অপবিত্র শিশুকে । হত্যা করুক একে ।
রানী কেঁদে উঠলেন ,
“প্রাণের স্বামী , তুমি আমার বুকের ধনকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? কেনই বা হত্যার নির্দেশ দিলে ?”
রাজা খুলে বললেন সব , রানীকে । রানী তার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না । আচ্ছা এসব মিথ্যা না তো ।
- না , মিথ্যে নয় । সত্য যে তেতো ।
রানী মেনে নিলেন রাজার আদেশ ।
অনেক দূরে এক গ্রামের ধারে এক জঙ্গল । সেখানেই নিয়ে যাবে জল্লাদ এই শিশুকে । আচ্ছা , এই ফুটফুটে শিশুকে মারা কোন অর্থে সঠিক । জল্লাদ হলেও তার মনে মায়া দয়া আছে । এক কৃষকের কাছে রেখে গেলেন শিশুকে । আর রাজাকে শূকরের রক্ত নিয়ে দেখালেন , প্রমাণস্বরূপ ।
সেই কৃষকের বাড়িতে হেসে খেলে বড় হচ্ছিল ইডিপাস । পরিপুর্ন যুবক হয়ে রাজ্য জয় করার ইচ্ছে জেগে উঠলো । আক্রমন করলেন থিবেস । সে ছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । যুদ্ধে তার বিপরীতে যুদ্ধ করছিলেন কে জানেন ? তারই বাবা রাজা লাইয়েস । যুদ্ধে পরাজিত হলেন রাজা লাইয়েস । ইডিপাস না জেনেই হত্যা করলেন তার বাবাকে । রানী বানালেন জোকাস্তাকে । এটাই হল ইডিপাস কমপ্লেক্স এর পিছনের ঘটনা । আর এই ঘটনাকে নাটকে রুপ দিয়েছিলেন সফোক্লিস । ও আরেকটা কথা , ইডিপাস কিন্তু হত্যা করেছিলেন স্ফিংস কে । স্ফিংস হল মানুষের মত চেহারা , গ্রিফিনের পাখা , সিংহের শরীর । স্ফিংস কোন মানুষকে পেলেই একটা প্রশ্ন করত , সেটার উত্তর না পেলে , তাকে হত্যা করত । ইডিপাস এর উত্তর দিয়েছিলেন । প্রশ্নটি সবার জানা , উত্তরটাও ।
“কোন প্রাণী সকালে চার পায়ে
দুপুরে দুই পায়ে
আর বিকালে তিন পায়ে হাটে”
কি আজব প্রাণীরে বাবা ।