২০ এপ্রিল ২০১৮, রাত ১১:৩০ মিনিট। সবে মাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি ফোন, একটু অবাক হলাম। এতো রাত আবার কে ফোন দিল?
ফোন ঘেটে দেখি আরো অনেক গুলো কল এসেছে। বড় মামির কল। ফোন বেক করবো এই মুহুর্তেই আবারো কল আসলো। ফোন রিসিব করলাম আর যা শুনলাম তাতে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের একজন আমার শ্রদ্ধেয় নানা ভাই দুনিয়ার সকল মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহর দরবারে পাড়ি দিয়েছেন। তখন কার সময়টা এমন ছিল যে, আমার মামাদের মধ্যে সব চেয়ে রাগি মেঝ মামা যিনি চিৎকার দিয়ে কাঁদছিলে যা দেখে আমরা সকলে আরো ভেঙ্গে পড়ি।
ও একটা কথা বলা হয়নি্। আমার মেঝ মামা চট্টগ্রামে তার পরিবার নিয়ে থাকেন্।সেখানে তিনি নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান। আমি মামার বাসায় থেকে পড়া লেখা করছি প্রায় তিন বছর। এতো গুলো বছরে ও মামাকে কখনো দেখিনি এতটা ভেঙ্গে পড়তে । যতটা ভেঙ্গে পড়েছিলেন নানা ভাই এর মৃ্ত্যুর সংবাদে।
আমরা আর একটু ও সময় নেইনি। নানার বাড়ী যাওয়ার জন্য মামার নিজস্ব গাড়ী দিয়েই রাত ১:৩০ মিনিটের দিকে রওনা হলাম। ওইদিন ছিল শুক্রবার রাত্। এর আগের দিন আবার মামার অফিসে ডাকাতি হয় তাই মামার হাতেও তেমন ক্যাস টাকা ছিলনা আমরা অনেক গুলো বুথ চেক করে একটি বুথ থেকে অল্প কিছু টাকা নিয়ে রওনা দিলাম। মাঝে পড়লো আরো তিন ঘন্টা ট্রাফিকজ্যাম। মরার উপর খড়ার ঘা পড়ার মত অবস্থা।
আমরা সকাল ৭ টা বাজে বাড়ী পৌঁছালাম্।……….
এরপর……
এরপর আমরা নানা ভাই এর মৃত্যু কার্যক্রম শেষ করে ২৩ শে মাচ আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কারো মনই তেমন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলনা এবং থাকার কথা ও নায়। তার মধ্যে আমার মনে একটা ভয় খুব বেশি কাজ করছিলো। তাহলো, এর আগে কখনো আমরা দূরগামী জার্নিতে প্রাইভেট কার এ কখনো উঠিনি। আমার মামি, আমি ও আমার মামাতো বোন হাইস এ করেই সব সময় বাড়ী যেতাম। আর আমার মামা ও মামাতো ভাই যেত মামার কার এ করে। কিন্তু দুরভাগ্য বসত এবার হাইস না পেয়ে সকলে একই গাড়ীতে রওনা হলাম। যা আমার মনে ভয় এর সঞ্চার করছিল। অবশ্য কাউকে তা বুঝতে দেই নি। আমরা বাড়ী থেকে ফেনী আশা পর্যন্ত বিভিন্ন সুরা শুনলাম। কিন্তু একটা পর্যায় এসে আমরা সবাই একদম নিশ্চুপ হয়ে যাই। জানি না কেন……..।
আমরা দুপরে একটা রেস্তরায় নামার কথা ছিল। কিন্তু সেইদিন তাও বন্ধ ছিল। যার কারন আমরা যাত্রায় অবসর না নিয়েই আবার রওনা হলাম। এর মাঝে আমাদের ড্রাইভার ১০০ ত্রিশ কিলোমিটার বেগে গাড়ী চালাচ্ছিল।মামা তাকে তাড়াহুড়ো না করার কথা বার বার বলছিলেন।
ড্রাইভার ও যেন আজ ভাগ্যের মত আমাদের বিপক্ষে চলতে চাইছে।……
আর তখনি ঘটলো সেই মৃত্যু থেকে ফিরে আশার ঘটনা….
আমরা সিতাকুন্ডু চলে আসলাম তখন ও আমরা সবাই চুপচাপ বসে আছি। হঠাৎ….হঠাৎ একটা কাভার্ট ভ্যান আমাদের গাড়ীকে ধাক্কা দিলো। আল্লা আমাদের রক্ষা করুন….আমরা সকলে কিছু বুঝতে পারলাম না। আমি শুনতে পারছিলাম মামা মানি বলছেন আল্লা আমাদের রক্ষা করুন……. এর পর বিকট একটা শব্দ তার পর কিছু বুঝার ক্ষমতা আমার ছিলনা। পরে মামা বলছিলেন আমাদের গাড়ী তিন বার পাল্টি খেয়ে রাস্তার ওপাশে চলেগেছে। আমাদরে গাড়ী কাথ হয়েছিল। আমার এবং সকলের জীবন খুব অল্পের জণ্য বেঁচে গেলাম……।
হয়তো সেদিন সব কিছু আমাদের বিপক্ষে থাকলে ও আল্লা আমাদের পক্ষে ছিলেন।…….
অতপর আল্লাহ তালার অসীম মেহের বাণীতে আমি সকলের মাঝে আবার ফিরে আসতে পারলাম।
সকলে আমার জণ্য দুআ করবেন।