১৯৭১ সালের প্রথম স্বাধীনতার পর ২০২৪ সালে এটি আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। ৭১ এর পটভূমি আর ২৪ এর পটভূমি পুরোপুরি সম্পূরক। একাত্তরেও আমাদের পাকিস্তানিদের সাথে সিরাজ সিকদারের তথা দেশের সকল সাধারণ জনগনের বেশ কয়েকটি দফা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। সেটি একপর্যায়ে এক দফার দ্বারায়, যেটি হয় স্বাধীনতা। ২০২৪ সালেও একই প্রেক্ষাপট।
একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যেসব রাজনৈতিকবিদরা বা রাজনৈতিক দল আমাদের দেশে ক্ষমতায় ছিল, তারা সকলেই ছিল স্বার্থন্বেষী। শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং বাম জোট গুলো সকলেই স্বার্থন্বেষী। তারা কেবল নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবেছে। দেশ ও দেশের মঙ্গলের কথা কখনো ভাবেনি। সকলেই ছিল ভয়াবহ ক্ষমতার লোভী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কেবলই মুদ্রার এ্যাপিড ওপিঠ। বাংলাদেশে রাজনীতি দলগুলো যখনই তাদের ক্ষমতায় ছিল তখনই তারা নিজেদের লোক বসিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। সকল ক্ষেত্রে তারা দলীয়করণ করেছেন। দেশের সাধারণ জনগণের কথা তারা কখনোই বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনি।
বর্তমান ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামল। যেটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে স্বৈরাচার শাসন। তারা এতটাই স্বৈরাচার ছিল যা ফেরাউনের শাসনামলের সমতুল্য। দেশের বিগত ১৫ বছর স্বাধীনতার কোনো ছিটাফুটাও ছিল না। গণতন্ত্রকে পুরোপুরি গলা চেপে হত্যা করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনে প্রধানত যারা সমন্বয়ক ছিল, তারা তারা মূলত গণধিকার পরিষদের এবং ডাকসু সাবেক ভিপি নূরের গাঘেঁষা মতদর্শি শিক্ষার্থী গুটি কয়েকজন ছাড়া। আপনারা সকলেই জানেন, ভিপি নূর মূলত বিএনপি পন্থী একজন । একটি বিষয়, হতে পারে এই আন্দোলনটি ভিপি নুরের নির্দেশ সুসংগঠিত করা হয়েছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ তথা তাদের শরিক দলগুলো ছাড়া দেশের সকল রাজনীতিক দলগুলো এই আন্দোলন ব্যাপারে অবগত ছিল শুরূ থেকেই। কোন রকম দলীয় ব্যানার ছাড়া বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলীয় ব্যানারে আন্দোলন করার পরিকল্পনা মূলত সাধারণ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিশ্বাস স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল । সমন্বয়ক তারা নিজেরাও কখনো কল্পনা করতে পারেনি দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের পক্ষে চলে আসবে । তাই তারা সাধারণ শিক্ষার্থী রূপে আন্দোলন করতে বাধ্য হয় ।
আওয়ামী লীগের বিরোধী দলগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে কোন কারণ খুজছিল, যার মাধ্যমে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটানো যায়। সেটি মূলত কোটা। বিগত কয়েক মাস ধরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ লীগের পতন শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দুর্নীতি, আমলাদের দুর্নীতি তথা, প্রশ্ন ফাঁসের মতো ভয়াবহ সহ অন্যান্য বিষয় আমাদের সামনে উন্মোচন হয়ে গিয়েছিল। মূলত দেশের সকল মানুষের মধ্যে চাপা এক প্রকার খোপ কাজ করছিল স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। কোটা আন্দোলন কেবলই প্রতীকি মাত্র। এখানে যদি যেকোনো সুশৃংখলব্যক্তিবর্গ আন্দোলন ডাক দিত তাহলে সাধারণ জণগণ তাদের পক্ষেই আন্দোলন করতো। এই বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলন থামাতে গিয়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল এবং তাদের তখন থেকেই ছন্দপতন শুরু হয়ে যায় মূলত। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজাকার, তাদের পেটো বাহিনী ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়াসহ সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা এইসব বিষয়গুলির দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেনি। দেশের সকল সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক দফা আন্দোলন শুরু করে। সেটি ৩৬ জুলাই ২০২৪ এ সফলতার মুখ দেখে। বাংলাদেশের যতবার স্বাধীনতা এসেছে, যতবার আন্দোলন সফল হয়েছে তার একমাত্র ভাগীদার দেশের সর্বস্তরে সাধারণ জনগণ।
সমন্বয়কারীদের অন্তঃস্থ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তারা এখন মূলত কেবলই সাধারণ শিক্ষার্থী। রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের শুরুতে কাজ করলেও বর্তমানে দেশের সর্বস্তরের জনগণের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা কেবলই সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য বিষয় নিয়ে ভাবছেন। যেটি আমি সাধুবাদ জানাই। ডক্টর ইউনুস বলা যায় মোটামুটি সর্বস্তরের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। যদিও তাকে সামান্য মুষ্টিমেয় কিছু লোক পছন্দ করেন না। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে তার থেকে বিচক্ষণ ব্যক্তি কেউ নেই এদেশের হাল ধরার জন্য। উনি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে সম্পর্ক আমাদের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে আরে এমনকি হতে পারে তাদের সাথে আমাদের সব রকম বৈদেশিক সম্পর্ক ছিন্ন হতে।
কিন্তু আশার আলো হলো এই যে, পশ্চিমা বিশ্ব সহ ইউরোপের দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা খুবই ভালো হতে পারে। যা কিনা আমাদের দেশের অর্থনৈতিকে শক্তিশালী করে তুলবো। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অল্প সময় না থেকে সামান্য দীর্ঘায়িত করে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূলত দেশের এই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে স্থিতিশীল অবস্থায় নেওয়ার পর জাতীয় নির্বাচন দেওয়াটা হবে সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। আর বর্তমানে দেশে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ চায় দেশে নতুন দল তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আসুক। বিশেষ করে তরুণ তথা সমন্বয়কদের মধ্যে থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতায় আসুক। আমরা সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ চাই, আমাদের দেশ একটি সমৃদ্ধি শালী দেশে রূপান্তরিত হোক। দেশে সকল প্রকার মৌলিক, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসুক। দেশে সকল প্রকার দুর্নীতি, দলীয়করণ চিরতরে বন্ধ হোক। কেবলই প্রাধান্য দেয়া হোক সর্বস্তরের সাধারণ জনগণকে।
তবে ক্ষমতায় একক একটি রাজনৈতিক দল না আসাই শ্রেয়। সম্মিলিত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসা উচিত। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসা সবাইকে জনগণের কাছে সর্বদা সকল বিষয়ে জবাবদিহি দেওয়া উচিত। অন্যদিকে অনেকে ভাবতে পারেন, ইসলামিক শাসনব্যবস্থার কথা। কিন্তু এটিও আমাদের দেশের জন্য সমীচিন নয়। ধর্ম ও রাজনীতি, দেশ একসাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এ দেশে ভবিষ্যতে নারী-পুরুষ সম অধিকার প্রয়োজন। সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে কোন শব্দ থাকা উচিত নয়। এটি আমাদের জন্য অপমানিত। আমরা সবাই বাঙালি এবং বাংলাদেশী এটিই আমাদের বড় পরিচয় হওয়া উচিত। সবাই আমাদের ভাই, সবাই আমাদের বোন এবং আমাদের নিকট পরমপ্রিয় আত্মীয় বাঙালি এবং বাংলাদেশী। ভবিষ্যতে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি একটি নতুন বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা। ধন্যবাদ।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


