somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজের সংবিধান

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আলমারি থেকে নতুন শাড়িটা বের করলো রাবেয়া। ঘরের বাইরে থেকে ওর স্বামী চেঁচিয়ে বললো, কই গো, হলো তোমার!
রাবেয়ার মুখে হাসি ফুটলো। হাসতে হাসতেই বললো,
“আজ একটু সময় লাগবে। বেশি তাকাদা দিও না তো। এই দিনের জন্য তো আর কম কষ্ট করিনি।”
কিছুক্ষণ পরেই বাইরে থেকে টিভির শব্দ পেয়ে সে সাজগোজে মন দিলো। বুঝলো আজ ওর স্বামী ওকে বিরক্ত করবে না।

সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়াটা রাবেয়ার কখনই দোষের মনে হয় নি। তবে বয়স বেরে যাওয়ার দরুন তার এটা বুঝতে কষ্ট হয়নি যে, দোষটা হলো তার এ সমাজে জন্ম নেওয়াটা। এ সমাজের মানুষগুলো অনেকটা দুষ্ট মস্তিষ্কের। যে সমাজ মেয়েদেরকে অবহেলার চোখে দেখে সেই সমাজের মানুষেরাই আবার কোন মায়ের পেট থেকে জন্ম। আজ রাবেয়ার বোন তাদের উপজেলার হাসপাতালে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে আসছেন। এজন্যই তাদের গ্রাম থেকে সবাই যাবে তাকে বরন করার জন্য। ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাবেয়াও আসবে ওর শ্বশুরবাড়ি থেকে। এজন্যই এতো সাজগোজ।

উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর রাবেয়ার ইচ্ছে ছিলো ডাক্তারি পড়া। বন্ধুদের সাহায্যে নিজেকে প্রস্তুত করতেও শুরু করেছিল সে। কিন্তু সহ্য হলো না এই সমাজের মানুষগুলোর। হঠাৎ একদিন বাড়িতে ঘটক চলে আসলো। বাবা মা হয়তো এখনও হয়তো তার বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করে নি তবে ঘটক যেভাবে বোঝালো তাতে তারাও রাজি হয়ে গেলো। এর দুদিন পর আবার পাশের বাসার এক চাচী এসে তার ভাইয়ের ছেলের কথা বলছে। বাবা মা তখনও কি বলবে বুঝতে পারে নি তবে চাচীর আসা যাওয়া বেড়ে গেলো। সেদিন রাতেই বাবা মা রাবেয়াকে বিয়ের ব্যাপারে বললে রাবেয়া না করে দেয় আর বলে সে ডাক্তারিতে পড়তে চায়। কিন্তু মা বাবার কানে সে এই কথাটা কোন ভাবেই বোঝাতে পারছে না।

অন্যদিকে রাবেয়ারা দুবোন। ওর বাবার একটা আক্ষেপ যে ছেলে নেই তার। মেয়েদের বিয়ের পর তারা কাদের নির্ভর হবে এটা ভেবেই যেনো সময় যায়। তাই তারাতারী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে নিজেদের শেষ জিবনে দুমুঠো খেয়ে যেনো জিবনটা পার করা যায়, এরকমটাই চিন্তভাবনা তাদের। অন্যদিকে আশেপাশের প্রতিবেশিরাও যেনো মায়ের কানে বারবার ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে, মেয়ের তো বয়স হচ্ছে। এবার তো বিয়ে দেওয়া উচিৎ। বেশি পড়াশুনা করিয়ে কি লাভ তাদের? পরে তো ওই শ্বশুরবাড়িই কপালে জুটবে। এরকমি একদিন রাস্তায় কিছু বখাটে ছেলের দারা উত্যক্তও হয় রাবেয়া। বাসায় ব্যাপারটা জানালে, বাবা মা আবারও ওই বিয়ের কথাই বলে। বিয়ে এখন যেনো সবকিছুর সমাধান।

এরকম বাড়িতে, বাইরে নানারকম কথা শুনতে শুনতে অনেকটা বিদ্ধস্থ হয়ে পরেছে রাবেয়া। মা বাবাও আর এতো ঝামেলা চাচ্ছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিলো। শুধু ওর মনে গেথে গিয়েছিলো সাদা এপ্রোনটা। যেটা এই সমাজের সাথে অনেক সংগ্রাম করেও সে পেলো না। তার সংগ্রামের ওই জিবনটা দরজার পর্দা জড়িয়ে দেখেছিলো শুধু ওর ছোট বোনটা।

ওর বিয়ের পর দিন পেরিয়েছে অনেক গুলো। ওর স্বামী একজন স্কুল শিক্ষক। উচ্চ মাধ্যমিক পার করেছে বলে রাবেয়াও শ্বশুরবাড়িতে দু-চারটে প্রাইভেটও পড়ায়। এদিকে রাবেয়ার ছোট বোনটাও এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে। ওর মতো ওর বোনের ওপরও যখন সবার চোখ গেলো তখন রাবেয়া আর ভুল করেনি। ওর বোনকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। বাবা মাও এবার কিছু বলতে পারে নি। রাবেয়া নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিজের বোনকে পড়িয়েছে। সমাজের ওই কলুষিত চোখগুলো যেনো রাবেয়ার মতো ওর বোন রাইমাকে আর আটকাতে না পারে। এরপর সেই ফল তো আজ সবার সামনে। রাইমা আজ একজন বড় ডাক্তার।

সাজগোজ শেষ হলে রাবেয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। দেখলো ওর স্বামী মুখ হা করে ঘুমোচ্ছে। হেসে ফেললো ও। ওর স্বপ্ন সত্যি করার পেছনে এই মানুষটার হাত তো আর কম ছিলো না। ঘুম থেকে ওর স্বামীকে উঠিয়ে দুজনে একসাথে ওদের উপজেলার হাসপাতালে এলো। ওদিকে অনুষ্ঠানে রাইমার দুচোখ যেনো ওর বোনকে খুজছে। রাবেয়াকে দেখতে পেয়ে রাইমা স্টেজ থেকে নেমে আসলো। রাবেয়া ওর বোনের গায়ে শাড়ির ওপর সাদা এপ্রোনটা দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললো। একমাত্র সেই জানে এই সাদা এপ্রোনের ওপর কতটা টান ছিলো তার। রাইমা এসেই রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরলো। ও তো জানে এই স্বপ্নটা ওর নয়, ওর বোন রাবেয়ার।

আজ এখানে ওই গ্রামের সবাই আছে। ওর বাবা মাও আছে। খুব জোরে ওর বাবা মা কে বলতে ইচ্ছে করছে রাবেয়ার যে, মা বাবা, মেয়েরাও তাদের বাবা মার দেখাশোনা করতে পারে। শুধু ছেলেরাই নয়। মেয়েরাও বড়কিছু করতে পারে। তাদেরও স্বপ্ন থাকে। এই উপস্থিত লোকগুলোকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে যে, অন্যের দিকে চোখ না দিয়ে নিজেকে মানুষ করে তুলুন। কোন বাড়ির মেয়েকেই আর আগাছা মনে হবে না। আর হলেও অন্যের কানে নিজের ছোট মন মানষিকতার প্রকাশ করবেন না। কিন্তু না, এসব বলা হলো না। নিজের স্বপ্ন পুরন হলে যেনো নিজের অজান্তেই এইসব মানুষদের হিসেবে নেওয়া হয় না। দিন চলে যায় আর আমরাও ভুলে যাই তাদের দোষগুলোকে।

রাবেয়া বোনকে জড়িয়ে শুধু এটুকু ভাবছে, আজ যদি ওর মতো একটা বড় বোন থাকতো তাহলে আজ অন্যরকম কিছু একটা হতে পারতো। এই সাদা এপ্রোনটা তারও হতে পারতো। রাইমার কপালে চুমু দিয়ে সে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলো। তাকিয়ে দেখলো ওর মা বাবা চর ওর স্বামী ওদের দিকে প্রশান্তির চোখে তাকিয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×