বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে অধিকাংশ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দলীয় বিবেচনায়।
জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা শিক্ষকসহ অন্যান্য নিয়োগ, টেন্ডারবাজি, কেনাকাটা, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মসাৎ ও ফল জালিয়াতির পাশাপাশি ছাত্র খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ম“ দেয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তেও ভিসিদের অনিয়ম-দুর্নীতি, মাস্তানি ও অযোগ্যতার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। ২৫টির মধ্যে যে ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ৮ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছিল, সেগুলোর ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের শিক্ষক আন্দোলনভীতি, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির একশ্রেণীর কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজদের বহুমুখী তৎপরতার কারণে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দুর্নীতি বেপরোয়া রূপ লাভ করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের নির্লিপ্ততা মোটেই কাম্য নয়।
এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিল। দুঃখজনক হল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনকিছুই আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এর কারণ সম্ভবত এই যে, অতীতে যেসব মহৎপ্রাণ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতেন, তারা পাঠদান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষণার বাইরে অন্য কিছু করা দূরে থাক, চিন্তাতেও ঠাঁই দিতেন না। দলের প্রয়োজনে মাননীয় শিক্ষকরা লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেও আজকাল দ্বিধা করেন না। ফলে শিক্ষাঙ্গন থেকে এখন ‘বিদ্যার দেবী’ সরস্বতী একপ্রকার নির্বাসিতই বলা চলে। সেখানে এখন প্রবল প্রতাপের সঙ্গে সহাবস্থান করছেন মহিষাসুর ও লক্ষ্মী। আমাদের শিক্ষকরা বর্তমানে লক্ষ্মী বন্দনায় এতটাই ব্যস্ত ও পারঙ্গম হয়ে উঠেছেন যে, তারা একজন শিক্ষকের নীতি-আদর্শ ও কর্তব্যবোধ জলাঞ্জলি দিতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। বরং নির্লজ্জভাবে অর্থ ও বিত্তের পানে ছুটছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতির অবসানকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষকসহ সব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




