somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ কি ধরনের ভূমিকা পালন করছে ?

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আদালতে ভুয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করে জামিন নিয়ে পালিয়েছিলেন গুলশানের ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী রোমানা নার্গিস হত্যা মামলার দুই আসামি। প্রধান আসামি মো. রুবেল ও তাঁর বন্ধু মিথুন চন্দ দুই বছর ধরে পুলিশের খাতায় পলাতক।

তবে রুবেলের বাসায় গিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে তিনি বিয়ে করেছেন। তাঁর যমজ সন্তানদের বয়স এখন এক বছর। শোনা যায়, মিথুন এখন কানাডায়।

পুলিশের তথ্য ও মামলা-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৪ মার্চ গুলশানের কালাচাঁদপুরে ব্যবসায়ী সাদেকুর ও তাঁর স্ত্রী রোমানাকে ঘরে ঢুকে গুলি করে খুন করেন রুবেল, সঙ্গে ছিলেন মিথুন। নিহত দম্পতির ছোট মেয়ের সঙ্গে রুবেলের বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। ওই বছরের ২৮ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঝালকাঠির গাবখানে দুলাভাইয়ের বাড়ি থেকে রুবেল, মিথুন ও রুবেলের দুলাভাই মহিউদ্দীন আজাদ ওরফে রাব্বীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর হাইকোর্টে ভুয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করে জামিন নিয়ে ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি কারাগার থেকে বেরিয়ে যান রুবেল ও মিথুন। ২০১১ সালের ৬ জুন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ আসামি মো. রুবেল ও মিথুন চন্দকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু এখনো পুলিশ তাঁদের খুঁজে পায়নি।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রুবেলের নর্দ্দা এলাকার বাসায় গিয়ে দেখা হয় তাঁর মা ও বোনের সঙ্গে। মা হালিমা খাতুন জানান, রুবেলের এক বছর বয়সী যমজ সন্তান রয়েছে। কিন্তু পলাতক অবস্থায় বিয়ে করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামিনে বের হওয়ার পরপরই রুবেলের বিয়ে হয়। কিন্তু এখন ছেলের সঙ্গে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ নেই। রুবেলের স্ত্রী তাঁর সন্তানদের নিয়ে কখনো রুবেলদের নর্দ্দার বাসায় আবার কখনো বাবার বাসায় থাকেন।
গুলশানের কালাচাঁদপুর ও নর্দ্দাবাজার এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রুবেলকে প্রায়ই এলাকায় দেখা যায়। সন্তান হওয়ার সময় রুবেল এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করেছেন। অনেককে বাবা হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন নিজ মুখে।
প্রসঙ্গত, ফাঁসির এই দুই আসামির মতো যে চক্রটি এঁদের জামিন পেতে সাহায্য করেছিল, তারাও এখন জামিনে মুক্ত।
নিহত দম্পতি সাদেকুর রহমান ও রোমানা নার্গিসের বড় মেয়ে ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, খুনিদের ভয়ে তাঁরা লুকিয়ে থাকেন। ছোট বোনটি স্কুল শেষ করতে পারেনি। বড় ভাই স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকা ছেড়েছেন। কিন্তু রুবেল ও তাঁর বন্ধুরা ভালো আছেন। জোড়া খুন করার কারণে এলাকায় রুবেলের বেশ নামডাকও হয়েছে। মিথুন চন্দ কানাডায় চলে গেছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

তবে গুলশান থানার উপপরিদর্শক শেখ সোহেল রানার ভাষ্য, অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি এই দুজনকে ধরতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটে চষে বেড়িয়েছেন। র‌্যাব এবং ডিবিও কাজ করছে। মো. রুবেলের দুলাভাই রাব্বীকে আটক রাখা হয়েছিল, তার পরও এঁদের ধরা যায়নি।

সুবিচার না পাওয়ার আশঙ্কা: আসামি ধরা হয়েছিল, পালিয়ে গেছে, আবার ধরার চেষ্টা চলছে—এই হলো পুলিশের ভাষ্য।
সরকারি কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য হলো, ‘রায় তো হয়েছে। পলাতক আসামি ধরতে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। এখন তো আর করার কিছু নেই।’ ভুয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করে রুবেল ও মিথুনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না বলে জানান তিনি।

নিহত দম্পতির মেয়ে ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমি শুধু জানতে চাই, কার কাছে গেলে আমার বাবা-মায়ের খুনিদের বিচার হবে? পুলিশ, আইনজীবী কেউই এখন আর মামলাটি নিয়ে কথা বলতে চায় না। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে বিচার হবে না, আর পুলিশ খুনিদের খুঁজে পায় না। আমরা তাহলে এখন কী করব?’

কথা বলে জানা যায়, মো. রুবেল যখন সাদেকুর রহমান ও রোমানা নার্গিসের ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে চান, তখন সে দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পরিবারের সিদ্ধান্তে হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের মাথায় ছোট মেয়ের বিয়ে হয় স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। আরেক মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আগেই, এখনো শেষ হয়নি। ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর বিমানবন্দরের কাছে সাদেকুর রহমান-রোমানা নার্গিসের বড় ছেলে শিহাবুর রহমান বিমানের টিকিট আনতে যাওয়ার পথে মো. রুবেল ও মিথুন চন্দের বন্ধুদের আক্রমণের শিকার হন। পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি আর কর্মস্থলে ফিরে যাননি। সন্তানসহ ঢাকা ছেড়েছেন।

জাল কাগজপত্র উপস্থাপন: পুলিশ জানিয়েছে, মো. রুবেল ও মিথুন চন্দকে বেরিয়ে যেতে যারা সাহায্য করেছিল, তাদের সবাই এখন জামিনে মুক্ত। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে তাঁরা জামিন জালিয়াতচক্রটি খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। বাড্ডা এলাকা থেকে প্রথমেই ধরা হয় মহিউদ্দীন আজাদকে। মো. রুবেল ও মিথুনের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম ও মনির হোসেনকেও ধরা হয়েছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দিন-তারিখ ঠিক রেখে এজাহারে মিথ্যা তথ্য দেন এবং সেই তথ্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়।
মামলার মূল এজাহারে লেখা রয়েছে, ২০১০ সালের ২৪ মার্চ রুবেল ও মিথুন নিহত ব্যক্তিদের বাসায় ঢোকেন। রুবেল সাদেকুর রহমানের কাছে তাঁর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে রুবেল সাদেকুর রহমানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন। এরপর সাদেকুরের স্ত্রী রোমানাকে মাথায় গুলি করেন মিথুন। মূল এজাহারে নিহত দম্পতির ছেলের শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়েছিলেন।

অন্যদিকে দিন-তারিখ ঠিক রেখে হাইকোর্টে উপস্থাপিত এজাহারের কপিতে জালিয়াতচক্র বাদীর নাম লেখে কামাল হোসেন, আসামি অজ্ঞাতনামা। বলা হয়, বাদীর বড় ভাইকে গত ২৪ মার্চ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। দরখাস্তকারী আসামিদের সন্দেহজনকভাবে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের গত ২২ এপ্রিল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলায় কোনো সাক্ষী নেই। কোনো আসামি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করেননি।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মো. রুবেল ও মিথুন চন্দের জামিন বাতিলের আরজি জানিয়েছিলেন হাইকোর্টে। তিনি জানান, রুবেল ও মিথুনের জামিন আবেদনকারী আইনজীবী মনিরুল ইসলাম ও মনির হোসেন মামলার নথিপত্রে বারের যে তালিকাভুক্তির নম্বর দিয়েছেন, সেটিও ছিল ভুয়া।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×