পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে অনেক নাটকের পর বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন যখন সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতে অস্বীকার করে তখনই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পদ্মা সেতুর ভাগ্য। ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প থেকে গত জানুয়ারি মাসে মূল অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংক এবং অন্য দাতারা সরে যায়। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে একেক সময়ে একেক কথা বলা হয়েছে। কখনও বলা হয়েছে চীন অর্থায়ন করবে, কখনও বলা হয়েছে মালয়েশিয়া এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। আবার কখনওবা এসেছে ভারতের নাম। গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হবে। এ বিশাল অঙ্কের টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা হবে সে ব্যাপারে একটি পরিকল্পনার কথাও বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। হঠাত্ গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২৩০ কোটি ডলার অর্থায়ন করবে মালয়েশিয়া। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে এক রহস্যের জালে বন্দি হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। সত্যিকার অর্থে পদ্মা সেতুর ভাগ্য ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউই জানে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মূল হোতা যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, ওই খবরটি আবারও এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। দুর্নীতি তদন্ত বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ২২ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল’ পত্রিকা জানিয়েছে, কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-নাভালিনকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেন-দেনের বিষয়টি সৈয়দ আবুল হোসেন নিজেই আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করেছিলেন।
দুর্নীতি আর রহস্যের জালে বন্দি হয়ে পড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশ জনসাধারণের দৃষ্টি এখন কানাডার আদালতের দিকে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার খুব শিগগির শুরু হতে পারে। কানাডা পুলিশের তদন্ত এখন প্রায় শেষপর্যায়ে ।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে একের পর এক রোমাঞ্চকর গল্পের অবতারণা হচ্ছে। দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়া পদ্মা সেতু কখনও নিজস্ব অর্থায়নে, কখনও চীনের অর্থে, কখনওবা মালয়েশিয়ার বিনিয়োগে নির্মাণের জমজমাট গল্প ছাড়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে ।
বিশ্বব্যাংকের তদন্তে কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি-নাভালিনের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এখন কানাডা পুলিশের তদন্তে এদের বাইরে বাংলাদেশ সরকারের আরও কোনো শীর্ষ কর্তাব্যক্তির নাম বেরিয়ে আসে কি না তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে সবার মাঝে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তা রমেশ সাহা এবং মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেফতার করে কানাডীয় পুলিশ। এরই মধ্যে তাদের কয়েকবার কানাডার আদালতে হাজির করা হয়েছে। এদিকে কানাডীয় পুলিশ এ দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে কানাডা পুলিশের তদন্ত প্রায় শেষপর্যায়ে। তদন্ত শেষ হলেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে বিচার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কানাডা পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে সবার মাঝে। বিশ্বব্যাংকের তদন্তে দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় কানাডা পুলিশের তদন্তে নতুন কোনো কর্তাব্যক্তির নাম আসে কি না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




