দেশপ্রেম ঈমানের অংশ। নষ্ট-ভ্রষ্টরা কখনও মুক্তিযুদ্ধ করে না। পৃথিবীর সর্বত্র সর্বকালে দেশপ্রেমিক ঈমানদাররা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। নষ্ট-ভ্রষ্টরা হাইজ্যাক করে, লুটতরাজ করে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে। গণজাগরণ মঞ্চের নেতা, আপনার মুখ সামলে কথা বলা উচিত। দেড়-দু’মাসে লাউগাছ হয়, তিন মাসে ফল দিয়ে ঝরে পড়ে। এ যাবত্কালে আর কেউ কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের এত খারাপ কথা বলতে সাহস পায়নি। এটা আপনার সাহস নয়, এটা নির্বুদ্ধিতা। অনতিবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। আপনি ইতিহাস জানেন না। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কায়েদে মিল্লাত লিয়াকত আলী খান লাহোরে এক জনসভায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন। আততায়ী বা ঘাতককে জনতা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেছিল। পঞ্চাশের দশকে ইরাকের বাদশাহ নুর-ই-সাঈদ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। জনসাধারণ তার প্রাসাদ আক্রমণ করে তাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। আক্রান্ত হয়ে বাদশাহ ভয়ে পেশাব-পায়খানা করে দিয়েছিল। রাজপ্রাসাদে তার পেশাব-পায়খানাও থাকতে দেয়নি, নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছিল। মথুরার মহারাজা উগ্রসেনের পুত্র কংস বড় অত্যাচারী ছিলেন। কংসের কারাগারে বসুদেবের ঔরসে দেবকীর গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। গোকূলে মা যশোদার কোলে লালিত পালিত হয়েছিলেন তিনি। কংসরাজ শক্তিমান অমর ছিলেন। টুকরো টুকরো করে ফেললেও মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপনা আপনি জোড়া লেগে জীবিত হতেন। এ গোপন তথ্য কারও জানা ছিল না। একমাত্র হিন্দুদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া। তাই কংসের দু’পায়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন এবং তার দেহ ভূমিতে পড়তে দেননি। দেশের মানুষ বর্তমানে অনেকটাই অনুভূতিহীন। তা না হলে আপনার কী দশা হতো বলতে পারি না। তাই সময় থাকতে অতিকথন বন্ধ করুন। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করতে শিখুন। লেখাটা প্রায় শেষ করে প্রেসে পাঠাব পাঠাব সময় গণজাগরণ মঞ্চের অমন ন্যক্কারজনক বক্তব্য সম্পর্কে দু’কথা না লিখে পারলাম না। তাই লিখলাম নষ্ট-ভ্রষ্টরা মুক্তিযুদ্ধ করে না, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশপ্রেমিকরা।
গতকাল ১৭ মার্চ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৩তম জন্মদিন। জাতির মহান নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যতটা আলোচনা, যতটা উন্মাদনা থাকা উচিত এখন আর ততটা নেই। জাতিগতভাবে কেমন শতধাবিভক্ত হয়ে পড়েছি; সবাই মিলে এখন আর ভালোকে ভালো, কালোকে কালো, সাদাকে সাদাও বলতে পারি না। অপেক্ষায় থাকি উপর থেকে কখন কী নির্দেশ আসে। বিবেক দ্বারা আজকাল কেউ পরিচালিত হই না। পরিচালিত হই নানা স্বার্থে নেতা-নেত্রীদের নির্দেশে। গত পর্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সঞ্চয়ী হিসাব নং-৭৭৫৪, অগ্রণী ব্যাংক, শ্যামলী শাখা এবং ০১৮৫০৬৬৬২১১ বিকাশ নম্বর দিয়েছিলাম। যাতে যাদের ইচ্ছে আমার দলকে দু’চার পয়সা সাহায্য করতে পারে। লেখার সবটুকু ছাপা হয়েছে, শুধু ব্যাংক হিসাব এবং বিকাশ নম্বর ছাপা হয়নি। যিনি সম্পাদনা করেছেন তিনি হয়তো মনে করেছেন ব্যাংকের হিসাব নম্বর ছাপলে প্রচার হবে। তাতে হয়তো আমার দলের সুবিধা হবে। অন্য যেসব পত্রিকায় দিয়েছি তারা সবই ছেপেছে। কিন্তু আমার দেশ কেঁচি চালিয়েছে। সম্পাদনা করারও তো ধরন-ধারণ থাকে। যিনি সম্পাদনা করেছেন তিনি আমার খুবই স্নেহধন্য। স্বাধীনতার পর এমন কোনো যত্ন নেই যা তিনি পাননি। কেউ অফুরন্ত স্নেহ পেলে এমনই হয়। আমার দেশ’র কত কঠিন সময় সাহায্য করলাম আর আমার দলের সাহায্য হবে এই চিন্তা থেকে কেউ যদি বাদ দিয়ে থাকেন তাহলে তো অকৃতজ্ঞতার কাজ করেছেন। এই সেদিনও হালাল-হারাম নিয়ে দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত যে রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল তেমন কেউ তার সমর্থনে লিখেনি, আমি লিখেছি। স্কাইপ নিয়ে যখন চারদিক অন্ধকার করে মারাত্মক ঝড় এসেছিল, জাতীয় দায়িত্ব পালনের জন্য সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শ্রেষ্ঠ সম্মাননা বা পুরস্কার দেয়ার সুপারিশ করেছি। সেজন্য পক্ষে-বিপক্ষে ভালো-মন্দ অনেক শুনেছি। গত পর্ব প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই কর্তৃপক্ষকে ফোনে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা বলেছেন সম্পাদনার সময় অসাবধানতাবশত ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি বাদ পড়েছে। পরবর্তী পর্বে অবশ্যই ছেপে দেব। নিশ্চয়ই এ সংখ্যায় নম্বরগুলো আর বাদ দেয়া হবে না।
ভাষার মাস স্বাধীনতার মাসে কেউ যদি নির্যাতিত, নিপীড়িত হয় তাহলে বড় খারাপ লাগে। গত ক’দিন সংখ্যালঘুদের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন হয়েছে তাতে সভ্য সমাজে মুখ দেখানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু বা হিন্দু সমাজ কেন শঙ্কায় থাকবে? কেন তারা নির্যাতিত হবে? এ দেশ তো কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মিলিত গুলবাগ এই বাংলা। এখানে সবাই সমান। দেশের নাগরিক হিসেবে কেউ ছোট কেউ বড় নয়। প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণী বলে বাংলাদেশে কোনো শ্রেণীবিন্যাস নেই। নাগরিক হিসেবে উঁচু-নিচু কোনো ভেদাভেদ নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবার জান-মাল, ইজ্জতের হেফাজত করা। যে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে, একজন আরেকজনের প্রতি অভিযোগ এনে পার পাওয়া যাবে না। পুরো দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলছেন, এভাবে কোনো স্বাধীন দেশে কোনো মন্ত্রিপরিষদের সদস্যের মুখে আগে কখনো শুনিনি। বড় দুর্ভাগ্যের, গত ৯ ফেব্রুয়ারি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তানের সেবাদাস ছিলেন, পাকিস্তান হানাদারদের দোসর ছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করতে আহ্বান জানিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম সরকার তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করে একজন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করবে। কিন্তু এখনও কেন করল না, বরং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন ভেবে পাচ্ছি না।
কিছুতেই বুঝতে পারি না বর্তমান সরকার আদৌ প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় কিনা। হানাদারদের নৃশংসতা নিয়ে কোনো চিন্তা করে কিনা। রাজাকারের বিচার চাই, ফাঁসি চাই এটা যদি শুধু বুলি হয় তাহলে এক রকম, আর যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে আঁতুরঘরে বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছে, যারা মা-বোনের সম্মান, সম্ভ্রম নষ্ট করছে বা হত্যা করেছে তাদের বিচার চান তাহলে এক কথা। আর রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে অথবা যে বিপক্ষে আছে, পা ধরে না, কথা শুনে না তাকে বাগে আনতে কোনো অভিনয় বা নাটক হয়ে থাকে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কোর্টে যাচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি রাজাকারকে রাজাকার বলেছি, স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি সেবাদাসকে জনসম্মুখে চিনিয়ে দিয়েছি। টেবিলে বসে আলাপ-আলোচনা করে যদি বাংলাদেশ হতো তাহলে ব্যাপারটা ছিল এক রকম। বক্তৃতা-বিবৃতি, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়নি, রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে আনতে হয়েছে। যারা আমরা দেশ আনলাম তারা হানাদারকে হানাদার বলায়, দালালকে দালাল বলায় পাকিস্তানের অনুগতকে পাকিস্তানের অনুগত বলায় হলাম অপরাধী। আর যারা পাকিস্তান রক্ষায় জান কোরবান করল, পাকিস্তানের সুনজরে থাকল তারাই আজ সুনাগরিক। ভাবতে কেমন যেন অবাক লাগে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি ছিল পাকিস্তান, অন্যটি বাংলাদেশ। আমার জননী জন্মভূমি বাংলাদেশকে পাকিস্তান দখল করে রেখেছিল। পাকিস্তান তার দখল টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। আমরা মুক্ত হতে জীবনপাত করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধটা কোনো খেলা ছিল না, ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। সেই লড়াইয়ে আমরা ছিলাম বাংলাদেশের পক্ষে। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। আমার রাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশ, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের রাষ্ট্র ছিল পাকিস্তান। আমার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন আয়ুব-ইয়াহিয়া খান। এখানে বনিবনার পথ কোথায়? ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে আজও যদি পাকিস্তান থাকত আর যুদ্ধরত অবস্থায় আমি যদি পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়তাম তাহলে আমার পরিণতি কী হতো? আমরা পাকিস্তানিদের পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি বলেই বীর উত্তম খেতাব পেয়েছি, দেশপ্রেমিকের মর্যাদা পেয়েছি। পাকিস্তানের দৃষ্টিতে আমি যদি দেশদ্রোহী হই, তাহলে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের দোসর ’৭১ সালে পাকিস্তানের কর্মচারী শত শত হত্যা, ধর্ষণ, খুন, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের দায়ে অভিযুক্ত মহীউদ্দীন খান আলমগীর কেন দেশদ্রোহী নয়? কেন তার বিচার হবে না? কেন একজন পাকিস্তানি হানাদার দোসরের গাড়িতে আমার রক্তভেজা পতাকা উড়বে। জাতির কাছে এ বিচার চাই। এ বিচার চাইতেই আজ আমি রক্ত দিয়ে গড়া আমার দেশের মহান বিচারালয়ে যাব। দেশবাসীর কাছেও বিচার চাই, যেহেতু বাংলার মাটিতে রাজাকারের ঠাঁই নাই, সেহেতু যারা রাজাকার বানিয়েছে সেসব রাজাকার কমান্ডারদের ঠাঁই হয় কী করে? এর একটা ফয়সালা অবশ্য-অবশ্যই এখনই হওয়া দরকার।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




