ভয়
ফয়সাল রকি
১.
ঝিক ঝিক - ঝিক ঝিক। ট্রেন চললে অনবরত যেরকম শব্দ হতে থাকে, ঠিক সেরকমই মাথার ভেতর কেউ যেন ঢ্রিম ঢ্রিম করে হাতুড়ি মারছে। মুক্তি মিলছে না কিছুতেই। সকাল হতে এখনো খানিকটা বাকী। পূর্ব আকাশে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ঘড়িটা দেখা দরকার। চারটা উনিশ। ঊনিশ আর চার যোগ করলে তেইশ, আবারো সেই তেইশ। তেইশ একটা মনো বৈজ্ঞানিক সংখ্যা, এটা দিয়ে অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করা যায়। কে যেন আবিস্কার করেছিল সংখ্যাটা; মনে করতে পারছি না। ফ্রয়েড? না, ফ্রয়েড না। উফ্, আবারো বাড়ছে মাথা ব্যাথাটা। বাসায় প্যারাসিটামলও নেই। শেষ দুটা খেয়েছি সোয়া দুটা সময়। আর কত প্যারাসিটামল খাব? কবে যেন পুরো শরীরটাই প্যারাসিটামল হয়ে যাবে! অসুস্থ মানুষজন এসে হাতের একটা একটা আঙ্গুল খুলে নিয়ে ভাগাভাগি করে কয়ে ফেলবে।
না, আজ আর ঘুমানো সম্ভব না। একটা রবীন্দ্র সংগীত শুনলে মন্দ হতো না। কিন্তু উঠে গিয়ে সিডি প্লেয়ারটা চালাতে যে অনেক কষ্ট। তারচেয়ে মটকা মেরে পড়ে থাকি। তিনা’র আসার কথা দশটার দিকে। আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে আসলেই পারে। পাঁচটা-ছয়টার দিকে। এসে একটা রবীন্দ্র সংগীত চালিয়ে দেবে। এক সাথে খানিক্ষণ জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকবো। থাক, জেগে জেগে স্বপ্ন না দেখে বরং একটা ফোন দিই, দেখি ওর ঘুম ভাঙ্গলো কি না।
কিন্তু মোবাইলটা কোথায়? বালিশের চারপাশে হাতড়ালাম। পাওয়া গেল না। তাহলে কি পায়ের দিকে? ফোনটা তো ঘুমানোর সময় মাথার কাছেই রাখি। আজ কোথায় গেল? উফ্ পাগল হয়ে যাবো নিশ্চিত। হাত বাড়িয়ে বেড সুইচটা অন করা মাত্র, এক ঝাঁক রোদের মতো সাদা আলো এসে চোখে পড়লো। কয়েকবার চেষ্টা করার পর চোখ খুললাম।
পাওয়া গেল। সাধের মোবাইল ফোনটাকে বেড সাইড টেবিলে ইলেকট্রিক আধান গ্রহনরত অবস্থায়। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে না, অন্ততপক্ষে উঠে বসতে হবে। উঠে বসার চেষ্টা করতেই কে যেন জোড়ে জোড়ে হাতুড়ী মারতে লাগলো আবারো!
মোবাইলটা অনেক কষ্টে হাতে পেলেও লাইন পেতে সমস্যা হলো না মোটেও। রিং হচ্ছে।
২.
দূর থেকে একটা মিষ্টি সুর ভেসে আসছে। কে যেন গান গাইছে অনেক দূরে। ধীরে ধীরে কাছে আসছে। খুবই পরিচিত সুর। চিনতে পারছি না। আরো কাছে, একেবারে খুব কাছে। দুম করে ঘুম ভাঙ্গা মাত্রই বুঝলাম আনিসের ফোন। রিংটোনটা খুবই পরিচিত।
- হ্যালো।
- একটু সিডিটা চালিয়ে দাও না।
- কী?
- একটু সিডিটা চালিয়ে দাও না। রবীন্দ্র সংগীত শুনতে ইচ্ছা করছে যে খুব।
- আহা রে সোনা আমার!
- খুব মাথা ব্যথা করছে।
- আহা রে সোনা, ঘুমাও। ক’টা বাজে? এখনো তো সকাল হয়নি। ঘুমাও। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
- আচ্ছা।
- প্যারাসিটামল খাবা?
- নাই।
- প্যারাসিটামল রাখো না কেন?
- রাখি তো, শেষ হয়ে গেছে।
- আচ্ছা। আমি নিয়ে আসবো। এখন ঘুমাও, চোখ বন্ধ কর।
- হুম।
এরপর আর কথা বেশি দূর এগোলো না। আনিস ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার তো ঘুম ভেঙ্গে গেল। আজ আনিসের জন্মদিন। সারাদিন অনেক কাজ। অনেক প্ল্যান। সকালে এক গোছা লাল গোলাপ নিয়ে যাব ওর বাসায়। তারপর চারুকলার আড্ডা। দুপুরে নবীর দোকানের স্পেশাল তেহারী। তারপর আজিজ থেকে খুব সুন্দর একটা পাঞ্জাবী কিনে দেবো ওকে। বিকেলে শিল্পকলায় নাটক। ওফ্ কত আনন্দময় ব্যস্ত একটা দিন কাটবে; ভাবতেই মনটা ভরে যাচ্ছে।
৩.
আনিসের সাথে তিনার পরিচয়টা খুবই অদ্ভুত ও ঘটনাময়। একা একা ভার্সিটিতে ভর্তি ফরম জমা দিতে গিয়ে চারুকলার এই ছেলেটির সাথে তার পরিচয়ের সূত্রপাত। ফরম জমা দিতে গিয়ে অনেক লম্বা লাইনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তিনাকে। এই ফাঁকে দক্ষ শিকারীর মতো টিএসসির বারান্দার এক কোণে বসে তিনার মায়াবী মুখখানার একটা স্কেচ করে ফেললো চারুকলার থার্ড ইয়ারের ছাত্র আনিস। এরপর ফরম জমা দিয়ে ফেরার পথে তিনার হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিল। কাগজটা হাতে নিয়ে তিনা যখন বুঝতে পারলো- এটা তারই চাঁদবদন; ততক্ষণে উধাও হয়ে গিয়েছে পাগল ছেলেটা। তার চেহারাটাও দেখা হলো না তিনার।
এরপর অনেকদিন কাটলো। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ক্লাশ করতে লাগলো তিনা, আর মনে মনে খুঁজতে লাগলো পাগল ছেলেটাকে। হঠাৎ একদিন দুপুরে ময়লা সাদা পাঞ্জাবী পরা একটি ছেলে তিনার সাথে কথা বলতে চাইলো, তিনা তখন বন্ধুদের মধ্যমণি।
- আপনার সাথে একটু কথা ছিল। একটু আসবেন?
বন্ধুদের দিকে এক নজর বুলিয়ে উঠে এলো আগুন্তকের সাথে কথা বলার জন্য।
- বলুন।
- আমার কাগজটা ফেরত দিন।
- আপনার কাগজ? আমি তো আপনাকে চিনিই না।
- কথা ঠিক। কিন্তু অনেকদিন আগে আপনাকে একটা স্কেচ দিয়েছিলাম। মনে পড়ে?
তিনা কোনো কথা বলতে পারলো না। বাকরুদ্ধ।
- ওটা আমার লাগবে। একটা প্রদর্শনীতে জমা দিতে চাই। আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন?
- হুম। কি-কি-কিন্তু ওটা তো আমি হারিয়ে ফেলেছি।
- মিথ্যে কথা বলবেন না। ওটা আপনার কাছেই আছে। প্লিজ, কাল নিয়ে আসুন।
তিনা কোনো কথা বলতে পারে না। আসলে সে বুঝতে পারছে না, কী বলবে। যে মানুষটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে, দেখা হলে কী বলবে, কী করবে- সব জানা; সেখানে তিনা নিরব।
- আমি আনিস। থার্ড ইয়ারে পড়ি। ছবি আঁকি।
- আমি তিনা। ফার্ষ্ট ইয়ার।
- কাল তাহরে দেখা হবে। চলি। কাল কিন্তু অবশ্যই নিয়ে আসবেন, এখানেই অপেক্ষা করবো আমি।
মিষ্টি একটা হাসি দেবার চেষ্টা করলো তিনা। হলো না মনে হয়। আনিস চলে যাবার পর বন্ধুদের আড্ডায় ফিরতেই প্রথম যে প্রশ্নটার সম্মুখিন হলো-
- কি রে, লজ্জায় লাল হয়ে আছিস কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর তিনা তখন জানে না। শুধু জানে, এই মানুষটাকে সে অনেক ভালবাসে। একবার যখন পেয়েছে, তখন আর হারিয়ে যেতে দেবে না। তাকে নিয়ে যে তিনার অনেক স্বপ্ন! আর এই বয়সটাই তো স্বপ্ন দেখার।
৪.
মুখখানা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সারারাত ঘুমাতে পারেনি মানুষটা। অনেক কষ্ট যাচ্ছে ওর ওপর দিয়ে। বাসায় কেউ নেই, হোটেলে খাচ্ছে। আজ কি কিছু রান্না করে দেব? না, আজ না। আজ সারাদিন অনেক কাজ।
- কী হলো, ভেতরে আসবে না?
- হ্যাপি বার্থ ডে।
- হুম। ভেতরে এসো।
- মাথা ব্যথা কমেছে?
- অনেকখানি।
- ভেতরে এসো না।
- সর না। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলে ভেতরে যাবো কিভাবে?
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম, খেয়েছো কিছু?
- নুডুলস।
- পারো বাবা। এতো নুডুলস মানুষ খায়!
- কী করবো বলো, আর তো কিছু রাঁধতে পারি না।
- ভাল। নাও, এবার দু’টা প্যারাসিটামল খাও।
- না, এখন খাব না। ব্যথাটা এখন কম। বাড়লে খাব।
বেডরুমে ঢুকতেই বেশ অবাক হলাম, খানিকটা রাগও হলো। দু’দিনেই কী অগোছারো করে রেখেছে রুমটা। ও বাবা, একটা ক্যানভাসও রেডি করে রেখেছে রুমটা। ও বাবা, একটা ক্যানভাসও রেডি করে রেখেছে। স্যার কি আজ ছবি আঁকতে বসবেন? সব প্ল্যান, প্রোগ্রাম মাঠে মারা গেল বোধ হয় আজ। ওই প্রসঙ্গ তোলা যাবে না। আনিস দেখি শুয়ে পড়লো বিছানায়।
- এই, কী অবস্থা করে রেখেছো ঘরটার!
- তুমি আসবে বলেই তো এই অবস্থা।
- জ্বী স্যার। আমার তো কাজই হলো আপনার ঘর গোছানো।
- আহা গোছাও না একটু।
- সারা জীবন তো তাই করতে হবে।
- থাক। আজ গোছাতে হবে না।
- সর। তুমি চেয়ারে বস। একটা সুন্দর গান ছাড় তো। রোমান্টিক।
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। এই সুযোগে হাত লাগাই বিছানাটায়। কী অবস্থা করে রেখেছে বাবা!
- কী গিফট দেবে আজ?
- কী গিফট চাও?
- যা চাইবো, তাই দেবে?
- আমার আর সাধ্য কতটুকু বলো? পারলে দেবো। যাও বিছানায় বসো। একদম এলোমেলো করবে না।
- আমি তোমার আজ একটা ছবি আঁকবো।
সব শেষ। আজ তিনি ছবি আঁকবেন। সারাটা দিন বাসায় বসে থাকো এখন। বললাম, সে তো তুমি রোজই আঁকো।
- হুম। কিন্তু আজ অন্যরকম একটা ছবি আঁকবো।
- অন্যরকম মানে?
- অন্যরকম মানে হলো, তোমার একটা নগ্ন ছবি আঁকবো।
ঠিক বুঝতে পারলাম না বিষয়টা। সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম। না, নির্লিপ্ত। ওর এই দৃষ্টিটা আমি বুঝতে পারি না। তবে এটুকু বিশ্বাস আমার আছে যে, শরীরের প্রতি কোনো লোভ ওর নেই। কিংবা নগ্ন শরীর দেখার নোংরা মানসিকতাও নেই। শরীরের প্রতি কোনো লোভ থাকলে সে অনেক আগেই জোড় করতে পারতো, আমিও হয়তো নির্দ্বিধায় নিজেকে সঁপে দিতাম ওর হাতে।
- কী, কথা বন্ধ হয়ে গেল যে!
- না, হঠাৎ এরকম ইচ্ছা হলো যে?
- জানি না। ইচ্ছাটা খারাপ জানি। তবে কেবলমাত্র তুমি যদি সম্মতি প্রদান করো; ভেবো না, তোমার কোনো ক্ষতি আমি করতে চাই না।
ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম, সেটা ভাবলে তো তোমার ফাঁকা বাসায় আসতাম না।
- আমিও সেটা জানি। আরেক বার ভেবে দেখো। রাজি থাকলে শাড়ি-টাড়ি খুলে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়।
- এরকম অশ্লীলভাবে না বলে একটু সুন্দর ভাবেও তো বলতে পারো।
- তা পারি। দেবে তাহলে আমার জন্মদিনে তোমার নগ্ন ছবি আঁকার সুযোগ? মোটেও অশ্লীল হবে না, কথা দিচ্ছি।
রাজি হওয়া উচিত কি না ভাবছি।
৫.
খুব বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না তিনাকে। প্রিয় মানুষটির ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মেনে নিল আনিসের অন্যায় আবদার। ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে একে একে কাপড় খুলে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তেই বাতি জ্বাললো আনিস। জীবনে প্রথমবারের মতো কোন পুরুষ মানুষের সামনে নগ্ন হয়ে অনেকক্ষণ চোখ মেলতে পারলো না তিনা।
- খুব লজ্জা লাগছে?
- খুবই।
- এত লজ্জা পেলে চলবে?
আনিস কাছে এগিয়ে আসতেই তিনা বললো, কাছে আসবে না একদম। দূরে থাক।
- একটু কাছে আসি না। এখনো তো অনেক কাজ বাকী আছে।
- মানে?
হঠাৎ তিনা আবিস্কার করলো, আনিসের হাতে কয়েক টুকরো দড়ি। ওর কথার জবাব না দিয়েই হাতদুটো পেছনে এনে আলতো করে বেঁধে ফেললো আনিস; এরপর পা জোড়া। বিস্ময়ভরা কন্ঠে তিনা বললো, এসব কী হচ্ছে আনিস?
- তোমার হাত পা বাঁধলাম। এবার ছবি আঁকবো।
- কিন্তু কেন?
- ছবির থিমটাই তো এরকম। হাত-পা বাঁধা নগ্ন তুমি। চোখে মুখে ভয়।
- এখন কি আমাকে ভয় পেতে হবে?
- একটু ভয় পাবার চেষ্টা কর, তাহলেই হবে।
ছবি আঁকতে বসে পড়লো আনিস। অনেকক্ষণ ধরে ভয়ের এক্সপ্রেশন দেবার চেষ্টা করলো তিনা। এখন আর হচেছ না, ঘুম ঘুম পাচ্ছে। এটা নিয়েই খানিকটা চিন্তিত সে। কারণ ছবি আঁকার সময়টাতে আনিস অন্য মানুষ হয়ে যায়, কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। এই আনিসকে পছন্দ করে না সে। এই মানুষটা হলো একজন শিল্পী, তার ভালবাসার মানুষটি নয়। আবারো ভয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার চেষ্টা করতে লাগলো।
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে একটা সিগারেট জ্বাললো আনিস। এর অর্থ হলো ছবি আঁকা শেষ। তিনা ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করতেই আনিস এসে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিল। আনিসের চোখের দিকে তাকিয়ে তিনার রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। চোখ দুটো টকটকে লাল। সাধারণত এরকম হয় না।
বিছানা থেকে নেমে ছবিটার সামনে চলে গেলো তিনা। তার অবাক হবার পালা যেন এখনো শেষ হয়নি। জল রঙে আঁকা সাদা ক্যানভাসে যে ছবিটা সে দেখলো সেখানে কেবলমাত্র একটা নগ্ন নারীদেহ, কোনো মুখমন্ডল নেই। তারমানে কি ছবিটা এখনো শেষ হয়নি?
ঠিক এই মুহূর্তে পেছনে দাঁড়ানো আনিস তিনার পিঠে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিল। ব্যথায়-বিস্ময়ে তিনার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হলো না। আনিসের দিকে ফিরে তাকানোর চেষ্টা করতেই পেছন থেকে ওর কোমরে একটা লাথি মারলো আনিস। সাথে সাথে মেঝেতে পড়ে গেল তিনা। পিঠে বুকে আরো কয়েকটা সিগারেটের ছ্যাঁকা দিল আনিস। ওর শরীরে যেন অসুরের শক্তি এসে গেছে। সম্ভবত সে নিজেও অসুর হয়ে গেছে। কোলে করে তুলে নিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো তিনাকে। আবারো বেঁধে ফেললো হাত-পা। এবার মনে হয় একটু বেশি জোড়েই বাঁধলো। ব্যথায় কেমন যেন একটা ভোঁতা আওয়াজ বের হলো তিনার মুখ থেকে; বাঁধা দেবার মতো কোন ক্ষমতাই তার মধ্যে নেই এই মুহূর্তে। সে বুঝতেই পারছে না, কী হচ্ছে এসব! ধীরে ধীরে অনুভূতিশূণ্য হয়ে যাচ্ছে সে।
সেলফে রাখা দুটো মোমবাতি এনে জ্বাললো আনিস। বিছানার পাশে এসে তিনার কোমর বরাবার আরেকটা লাথি চালালো। কঁকিয়ে উঠলো তিনা। চিৎকার করার মতো শক্তিও তার শরীরে অবশিষ্ট নেই।
দু’হাতে দুটো জ্বলন্ত মোমবাতি নিয়ে বিছানায় বসলো আনিস। তিনার মেরুদন্ড বরাবর গলিত তরল মোম ফেলতে লাগলো একহাত উঁচু থেকে। যতবার গলিত তরল মোম পড়ছে তিনার নগ্ন পিঠে, ততবারই কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীরটা।
বাম হাতের মোমবাতিটাকে ডান হাতে চালান করে দিয়ে বাম হাত দিয়ে তিনার এলোমেলো চুলগুলো মুঠো করে ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দিল আনিস। তিনার কানের কাছাকাছি মুখ এসে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, আমার সাথে প্রেম করতে এসেছিস? আমাকে চিনিস? তোকে আজ মেরেই ফেলবো!
মোমবাতি দুটো শেষ হবার আগেই তিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের মুহূর্তে তিনার মুখমন্ডলের স্ন্যাপশট গেঁথে নিল মাথায়; তারপর অজ্ঞান তিনার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো, কী করবো বলো? তুমি তো ভয় পাচ্ছিলে না!
এরপর সময় নষ্ট না করে একটানে ছবিটা শেষ করলো আনিস।
৬.
দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে আছে আনিস। অনেক সাহস করে একহাত সরিয়ে একবার ছবিটার দিকে তাকালো, একবার তিনার দিকে তাকালো। ছবিটায় ভয়ার্ত তিনা এখনো জীবিত এবং জীবন্ত। কিন্তু বিছানায় বিধ্বস্ত তিনা এখনো বেঁচে আছে কি না সে জানে না। কাছে গিয়ে দেখার সাহস হচ্ছে না। বুঝতে পারছে না, এটা সে কী করলো? শুধুমাত্র একটা ছবির জন্য প্রিয় মানুষটাকে এভাবে কষ্ট দিল সে! হয়তো এখনো বেঁচে আছে; কিন্তু কাছাকাছি যাবার সাহস হচ্ছে না। অথচ ওকে হাসপাতালে নেয়াটা খুবই জরুরী এখন।
কেমন যেন শীত শীত করতে লাগলো আনিসের। এটাকে কী বলে? ভয়? কষ্ট? শূণ্যতা? নাকি কি অন্য কিছু?
হঠাৎ আনিসের মনে হলো, বিছানায় নগ্ন শরীরটা একবার কেঁপে উঠলো যেন!
[বি.দ্র.: এই গল্পটির নামকরণটি সাময়িক; কেউ চাইলে নতুন নাম প্রস্তাব করতে পারেন, সাদরে গ্রহণ করা হবে।]
অন্যান্য গল্প:
- বৃষ্টিস্নান
- কথপোকথন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



