somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতি আনকমন নামের সুফল!! /:) /:)

১১ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় আছে--নামে কি আসে যায়?!

এই কথাটা অনেকাংশে সত্য হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নয়!! আমার নাম নিয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কাহিনী বলব আজকে আপনাদের।:|:|

আমার মায়ের অনেক সখ ছিল তার ছেলে-মেয়ের নাম হবে আনকমন টাইপের। তো আমার জন্মের পর আমার ডাকনাম কি হবে- এটা নিয়ে আমার পুরো পরিবারেই হলস্থুল লেগে গেল। পরিবারের প্রথম ছেলে সন্তান বলে কথা!;) সবাই নিজ নিজ পছন্দ মত নামে আমাকে ডাকা শুরু করল।কিন্তু আমার মায়ের সাফ কথা-—ডাকনাম হতে হবে একদম আনকমন এবং সেই সাথে সুন্দর! :D

তো বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও আমার ডাকনাম আর রাখা হয় না! /:) শেষে মা আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্নীয় এক সাংবাদিকের (যিনি এখন একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক) আশ্রয় নেন। তিনি সব শুনে বসে যান আমার জন্য একটি “আনকমন এবং সেই সাথে সুন্দর” নাম সার্চ দা খোঁজ করার কাজে!:P:P

অবশেষে ৩-৪ দিন পর আমার জন্য একটি অসাধারন নাম খুঁজে বের করার কাজে সফল হন তিনি! :D

আমার বাবা দুইটি খাশি জবাই দিয়ে আমার নাম রাখেন তূর্য!!B-)B-)

অতি আনকমন একটি নাম!:D আমার মা অনেক খুশি! তার মনের ইচ্ছা যে পূরন হয়েছে!! আমার কত আত্নীয় যে এই আনকমন নাম উচ্চারন করতে গিয়ে দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন তার হিসাব দেয়া মুশকিল!:-/ অনেকের কাছে আবার আমার মা-বাবাকে “ছেলের হিন্দুয়ানী নাম কেন রাখা হল”-এই প্রশ্নের জবাব দিতে হত!! ছোটবেলায় বেশ অসুস্থ থাকতাম মাঝে মাঝে, অনেকে বলত এমন “হিন্দুয়ানী” নামের জন্যই নাকি আমার এই অবস্থা!! অবশ্য আমার মা-বাবা এসবে কান দেননি। :-< :-<

এই ফাঁকে বলে নেই যে বাংলা একাডেমীর ডিকশনারী অনুযায়ী “তূর্য” শব্দটির অর্থ রণসিংগা, প্রাচীন ভারতের যুদ্ধে ব্যবহ্রত বাশি। :#)

এই আনকমন নামের সুখ আমার কপালে বেশিদিন সইলো না!! আমাদের পাশের বিল্ডিং-এ যে নতুন ভাড়াটিয়া এল তাদের ছেলের নামও তূর্য!! আমার মা যথেস্টই হতাশ হলেন!! কিন্তু কি আর করা! এলাকায় ২টি তূর্য এসে গেল......... /:) /:)

মা ভয়ানক হতাশ সেদিন হলেন যেদিন শুনলেন যে আমাদের পাশের বাসার নতুন ভাড়াটিয়ার ছেলের নামও সেই একই!! :|| এতদিন নাহয় পাশাপাশি বিল্ডিং-এর দুই ছেলের নাম ছিল ছিল এক, এখন তো পাশাপাশি দুই ফ্লাটের ছেলের নামই এক!! বুঝুন অবস্থা!! /:)

বেশি সমস্যার শুরু হল তখন থেকেই। সেইসময়ে সবার বাসায় ফোন থাকত না, আমাদের এবং আমাদের পাশের ফ্লাটেও ফোন ছিল না। আমাদের ফোন আসত আমাদের বাড়িয়ালার বাসায়। তো কেউ যখন বলত “তূর্যর আম্মাকে ডেকে দিন” এবং ফোন যদি ধরত বাড়িয়ালার কাজের মেয়ে তাহলেই হয়েছে!! কোনবারই সেই মেয়েটি সঠিক “তূর্য”র আম্মাকে ডেকে দিতে পারেনি!! /:) এমনও হয়েছে অনেক্ষন কথা বলার পরেও আমার আম্মা বুঝতে পারেননি এটি তার ফোন নয়, এটি তূর্য নাম্বার-২ এর আম্মার ফোন!! :|

যাক, ভর্তি হলাম স্কুলে।

প্রথমদিন ক্লাস করে এসে সবাই খুব এক্সাইটেড থাকে। আর আমি হলাম বিমর্ষ!! কারন ক্লাসে যে আমার সাথে আরো ২জন তূর্যের দেখা হয়েছে!! একই ক্লাসে তিন তিনজন তূর্য!! কপাল আর কাকে বলে!! :( :( :(

স্কুলে পুরো ১০টা বছর আমাকে নাম সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এতো বেশি ঝামেলা হয়েছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব বুঝতে পারছি না!! কতবার যে অন্য তূর্যর দোষে আমি মার খেয়েছি বা আমার দোষে অন্যরা মার খেয়েছে এর কোন ইয়াত্তা নেই!! :|

একবার রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার আগেই রটে গেল তূর্য ফার্স্ট হয়েছে!! আমার বন্ধুরা তো আমার পকেট ফাঁকা করে টিফিন খেয়ে নিল। পরে দেখা গেল আমি না, ফার্স্ট হয়েছে অন্য তূর্য!! মাথার চুল ছিড়ব নাকি অন্যকিছু ছিড়ব বুঝছিলাম না!! X(X(

স্কুল লাইফ শেষ করলাম অনেক কস্টে......

কলেজে ভর্তি হয়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে আমার সেকশনের পূরো ১২০ জন স্টুডেন্টের মধ্যে আমি একাই তূর্য!!!

আমার খুশি দেখে কে!! ;);)

তবে বরাবরের মত আমার এই সুখ বেশিদিন সইলো না!!

এক স্যারের কাছে কেমেস্ট্রি পড়তাম প্রাইভেট। ওনার ওখানে আরেক তূর্য জুটে গেল!! তবে এটা আমার গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল, অতি আনকমন নামের সুফল!! /:) /:)

তো আমি ঐ স্যারের ব্যাচের একটি অতি রুপবতী মেয়ের প্রেমে পড়লাম!! :P

সাহস করে একদিন মেয়েটিকে একটি চিঠিতে মনের কথা লিখে চালাকী করে ওর বইটা নিয়ে ওটার মাঝে গুজে দিলাম। ;)এমনভাবে দিলাম যাতে ও এখন টের না পেলেও বাসায় গিয়ে দেখতে পায়। এবং এখানেই জীবনের অন্যতম বড় ভুল করলাম!! :((

কয়েকদিন পরে সেই তূর্য নাম্বার– ২ আমাকে হঠাৎ করে ডেকে নিয়ে বলে,

--দোস্ত আমার তো লটারী লাগছে!!
--কিভাবে?
--তুই কি সাথীকে কোন চিঠি দিছিলি?
--তোকে কে বল্লো??!!
অবাক হলাম আমি!!:-/
--আরে সাথী তো তোর চিঠি পড়ে ভাবছে আমি ওইটা লিখছি। আমাকে ও কালকে রিপ্লাই দিছে। এই দেখ।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল!!
সাথী লিখেছে যে
তোমার চিঠিটা পড়ে নিজেকে আর বেধে রাখতে পারলাম না!! আই লাভ ইউ টু! :((:((

--এটা তো ঠিক না। চিঠি তো আমি লিখছি। তুই তো আর লিখিস নাই। আমি এখনি সাথীকে গিয়ে সব জানায় দিব।
--প্লিজ দোস্ত আল্লাহর কসম লাগে এমন করিস না!!! আমি আর তুই না মিতা!! প্লিজ সাথীকে আমার জন্য সেক্রিফাইস কর দোস্ত!!

কি আর বলব! করে দিলাম সেক্রিফাইস!:(
অতি আনকমন নামের সুফল!! X(X(


এই জীবনে কত তূর্যের সাথে যে দেখা হল তা গুনে শেষ করা যাবে না!!! বাংলাদেশের মা-বাবারা যে সন্তানের জন্য খালি আনকমন নেমই খোঁজেন, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছি আমি নিজে ও অন্য সকল তূর্যরা!! /:) /:)

--------------------------------------------------

বাই দা ওয়ে, যাওয়ার আগে আরেকটা নিউজ দেই। পরে ঐ তূর্য নাম্বার -২ আর সাথীর ব্রেকআপ হয়ে যায়। সাথী নাকি ওকে বলেছিল, "চিঠি পড়ে তোমাকে যতটা রোমান্টিক ভেবেছিলাম আসলে তুমি ততটা রোমান্টিক না!!" :|:|

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৩
৯৪টি মন্তব্য ৯৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×