somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতের এক বিকেল

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হীমশীতল ঠান্ডা পানি, তার মধ্যে ডুব দিয়ে খুঁজছি সহপাঠি শামীমাকে। দম বন্ধ হয়ে আসছে, হঠাৎ দেখতে পেলাম লালজামা। দ্রুত যেয়ে চুল ধরতেই অন্ধকার দেখলাম। আর কিছু মনে নেই। পরদিন নিজেকে আবিস্কার করলাম হাসপাতালের বিছানায়।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্যজেলার একটি হলো রাঙ্গামাটি। দেশের দক্ষিণ-পূর্বদিকে এটি অবস্থিত। নয়নাভিরাম দৃশ্য,পাহাড় আর লেক বেস্টিত এই জেলা। আর এই জেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় । এই প্রতিষ্ঠানের শীক্ষার্থী থাকাকালীন আমরা কজন সহপাঠী এস.এস.সি টেষ্ট পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেই পিকনিকে যাওয়ার।

শীতের এক সকালে আমরা সবাই একটি ইঞ্জিনচালিত বোট ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ি কর্ণফুলী লেক-এ অজানার উদ্দেশ্যে। নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য ছিলনা। যে জায়গাটা ভাল লাগবে সেখানেই আমরা নেমে পড়ব । দু”ঘন্টা চলার পর আমরা এমন একটা জায়গায় এসে পরলাম যেটা শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়। চমৎকার একটা জ়ায়গা। এটা একটা দ্বীপের মত, চারিদিকে টলটলে স্বচ্ছ পানি, মাঝখানে দ্বীপটা । আমরা সবাই হৈ চৈ করে দ্বীপটাতে নেমে পড়লাম। নেমেই যার যার কাজে লেগে পড়লাম। আমরা বিশজনের মত ছিলাম, এর মধ্যে পাঁচজন মেয়ে ছিল। প্রত্যেকের কাজ ভাগ করা ছিল। সাথে বাবুর্চি নিয়েছিলাম। যার যার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খাবার তৈরী হয়ে গেলো। এরপর লেকের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতে নেমে পরলাম। যারা সাঁতার জানত তারাই শুধু নামলাম, কারন পানির গভীরতা অনেক বেশী ছিলো। যারা সাঁতার জানতনা তারা শুধু চেয়ে রইল। আমরা তাদের ক্ষেপাতে লাগলাম। গোসল শেষ করে খাবার খেতে বসে পড়লাম।

খাবার শেষ করার পর আমরা দলবেঁধে দ্বীপটা ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে ছোট মনে হলেও এটা আসলে মোটামুটি বড় ছিলো। আমলকি,লেবু আর তেঁতুল গাছের বিপুল সমাহার ছিলো দ্বীপটাতে। আমরা ইচ্ছামত সেগুলো নিলাম। কিছু বানর আর কাঠবিড়ালীও দেখতে পেলাম। এগুলো কিভাবে দ্বীপে আসল বুঝতে পারলামনা। এটাকে দ্বীপ মনে হলেও আসলে এটা ছিলো একটা পাহাড়ের চূঁড়া।

কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই নামক স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৬২সালে বাঁধ দেওয়ার ফলে এই লেকের সৃষ্টি হয়। ৬৭০মিঃ লম্বা এবং ৪৫.৭মিঃ চওড়া বাঁধের ফলে উজানের সবকিছু পানির নীচে চলে যায়। বর্তমান যে রাঙ্গামাটি শহর তার পুরোটাই পাহাড়ের উপরে, অথচ আগে বসতি ছিলো পাহাড়ের নীচে। এখন নীচের অংশ তলিয়ে যাওয়ায় পাহাড়ের উপর সবার বসতি।

অনেক আনন্দ করতে করতে একসময় ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকা সম্ভব ছিলোনা। সবার মনে “শান্তিবাহিনী”-এর ভয় ছিলো। তাই দেরী না করে বিকেলের আগেই আমরা সবাই বোটে উঠে গেলাম। শীতকাল ছিলো বলে তখনই চারিদিক কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেলো। বোট চলা শুরু করলে বোটেই আমরা বিকেলের নাস্তা সেরে নিলাম। শামীমা আর পারুল তখনো ছবি তুলছিলো। শামীমার একটি ছবি তুলতে যেয়ে তাকে বোটের একেবারে কিনারে নিয়ে আসলো পারুল। আরেকটু পিছাতে যেয়ে অসাবধানতাবশতঃ হঠাৎ করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে শামীমা পানিতে পড়ে গেলো। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। সাঁতার জানতনা বলে সে ডুবে যাওয়া শুরু করলো। তাকে উদ্ধারের সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে কিছু সময় পার হয়ে গেলো। আমি অন্যকিছু আর চিন্তা না করে সোজা পানিতে ঝাঁপ দিলাম।

হাসপাতালে আমার বেডের পাশেই শামীমা ছিলো। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলো। তার জীবন বাঁচানোর জন্য সে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলো। শীতের সেই বিকেলের কথা আজও ভুলতে পারিনা। আজও মনে পড়ে শামীমাকে। কোথায় তুমি শামীমা।



১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×