somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজোড়া চোখ

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাল রংয়ের টয়োটা করোলা গাড়ীটা যখন গাছপালা বেষ্টিত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করলো তখন তাতে বসা শাম্মীর কাছে মনে হলো সে যেনো এক জ্যোৎস্না রাজ্যে চলে এসেছে। কোলাহলময় ঢাকার এজায়গাটায় জ্যোৎস্না রাতে এর মায়াবীরূপ ভালোভাবে ফুটে উঠে। শাম্মী চিন্তা করছিলো বসুন্ধরা সিটি থেকে সদ্য কেনা স্মার্ট ফোনটা উপহার হিসাবে হাতে পেলে তার মনের মানুষের কি অবস্থা হবে, সে কি তাকে জড়িয়ে ধরবে? নাকি ফোনটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এসব এলোমেলো চিন্তার মধ্যে হঠাৎ গাড়ীটা বড় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুপাশ থেকে দুজন ছেলে এসে ড্রাইভারকে চেপে ধরলো, ঝিলিক দিয়ে উঠলো তাদের হাতে থাকা চাকু। শাম্মী বাহিরে তাকিয়ে দেখলো ভিসির বাসভবনের সামনে গাড়ীটা থেমেছে। চাঁদের আলোয় পিস্তল ধরা একটা হাত পরিচিত মনে হলো, তার মুখের দিকে চোখ যেতেই সে এত অবাক আর বিস্মিত হলো যেনো এমুহূর্তে জ্ঞান হারাবে।
গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে উঠে আসা টগবগে জোয়ান ছেলে হাসান। চোখে তার রঙিন স্বপ্ন, বুকভরা আশা, ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে একজন সত্যিকারের মানুষ হবে সে। আশা বিফল হয়নি তার। ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয় কঠোর পরিশ্রম করে।
গ্রামীণ পরিবেশ থেকে হঠাৎ বিশাল পরিসরে এসে সবার সাথে খাপ খাওয়াতে বেশ কিছুদিন সময় লাগলো তার, কিন্তু সে ছিলো মেধাবী আর ব্যবহার ছিলো অমায়িক। তাই অল্পকিছুদিনের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। প্রথম বছর ভালো মেধার পরিচয় দিয়ে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উঠলো।
কৃতিত্বের সহিত পাশ করায় কিছু সিনিয়র ছাত্রনেতার নজরে পড়লো সে, বিভিন্ন মিছিল মিটিং-এ ডাক পড়লো তার, সবজায়গায় সমাদর বেড়ে গেলো, নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভাবা শুরু করলো সে। এভাবেই শুরু হলো তার রাজনীতিতে পথচলা। ভার্সিটির সূর্যসেন হলের একটি পুরো কক্ষ দখল করে নিলো সে, ক্যান্টিনে খাওয়া ফ্রি হলো তার, চেলা-পেলা যুক্ত হলো তার সঙ্গে, সবমিলিয়ে একটা নেতাভাব চলে আসলো তার মধ্যে।
ছয়ফুট উচ্চতার সুঠাম শরীরের অধিকারী স্মার্ট হাসানের কিছু বিশেষ গুনের কারণে ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়র সুন্দরী মেয়ের নজর কাড়লো সে। একসময় তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নিলো। মেয়েটা চাইতো হাসান রাজনীতি ছেড়ে পড়াশুনায় মনযোগ দিক,যাতে ভালোভাবে পাস করে সন্মানজনক একটা চাকুরী পায়। কিন্তু হাসান ধীরে ধীরে রাজনীতির কালো জগতে প্রবেশ করতে থাকলো। এরমাঝে সে ড্রাগস নেওয়াও শুরু করলো, ড্রাগসের টাকা জোগাতে চাঁদাবাজি আর ছিনাতাইয়ের মতো কাজ করাও আরম্ভ করলো।
সেদিন সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো, এমন দিনে তার নেশাটা পেয়ে বসে বেশী। ক্যান্টিনে নাস্তা সেরে নিলো বিনে পয়সায়, কিন্তু নেশার জন্য টাকার দরকার, পকেট একেবারে শূন্য। তাই সে সঙ্গীদের সাথে প্ল্যান করলো রাতে কিছু একটা করার। বিকালের দিকে আকাশ একেবারে পরিস্কার হয়ে গেলো। সন্ধ্যার দিকে চারিদিক আলোকিত করে বিশাল চাঁদ উঠলো। সে তার সঙ্গীদের নিয়ে ভিসির বাসভবনের সামনের ফাঁকা জায়গাটায় ওত পেতে থাকলো। জ্যোৎস্নার আলো বার বার তার মনকে গ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। মাঠের শেষে তাল গাছের মাথায় যখন চাঁদ উঠতো তখন সে আর ঘরে থাকতে পারতনা, দৌড়ে স্কুলের বারান্দায় যেয়ে সেই চাঁদের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকত। হঠাৎ গাড়ীর ব্রেক করার আওয়াজে তার ভাবনায় ছেদ পড়লো, দেখলো তার সঙ্গীরা একটা লাল গাড়ী থামিয়ে ড্রাইভারকে চেপে ধরছে। আর দেরী না করে সে গাড়ীর পিছনে বসা টার্গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। পকেট থেকে পিস্তল বের করে গাড়ীতে বসা যাত্রীর দিকে তাক করা মাত্রই অবাক বিস্ময়ভরা দুটো চোখের দিকে নজর পড়লো তার।
সেরাতের পর অনেক চেষ্টা করেও সে আর শাম্মীর সাথে যোগাযোগ করতে পারলোনা। বিস্ময়ভরা চোখজোড়া তাকে প্রচন্ডভাবে ঝাঁকুনি দিল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনেক সাধনা করে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো কিন্তু শাম্মীকে হারিয়ে ফেললো।
ব্যবসায়িক কাজে হাসানকে প্রায় ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যেতে হয়। ভ্রমণে সে বাসের চেয়ে ট্রেনকে প্রাধান্য দেয় বেশী। সেদিনও সে ট্রেনের টিকেট কেটে নির্ধারিত আসনে যেয়ে বসে। নিজের জীবনের একাকীত্বের কষ্টের ভাবনার মাঝে সামনের সীটের দিকে দৃষ্টি যেতেই তার চোখ আটকে যায় তিন বছর আগে এক রাতে দেখা বিস্ময়ভরা একজোড়া পরিচিত চোখের উপর যে চোখজোড়াকে পাহারা দিচ্ছে পাশে বসা আরেকজোড়া অপরিচিত শীতল চাহনির চোখ।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×