somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসা দিবসের প্রতীক্ষায় (গল্প)

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালবাসা দিবসের প্রতীক্ষায়
------------------------------
এক
------
জনমানবহীন এক ধু-ধু বালুচরে চিৎ হয়ে শুয়ে আছি, কাঠফাটা রোদ্দুর, হাত-পা বাঁধা, তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে, কাছেই হিংস্র একদল কুকুর "ঘেউ ঘেউ " করে ডাকছে, হাত-পা খোলার প্রাণ-পন চেষ্টা করছি, তাতে হীতে বিপরীত হচ্ছে, বাঁধন আরও শক্ত হচ্ছ, সারা শরীর ঘামে ভিজে জবজব করছে, কুকুরগুলো এগিয়ে আসছে, বাঁচার জন্যে জোরে চিৎকার দিতে গিয়ে দুঃস্বপ্নটা ভেঙ্গে গেলো। জেগে দেখি ফ্যান বন্ধ, ইলেক্ট্রিসিটি নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা বাজে।
প্রতিদিন চেষ্টা করি তাড়াতাড়ি শুয়ে যেতে কিন্তু হয়ে উঠে না। কাজ নিয়ে বসলে শেষ না করা পর্যন্ত উঠতে ইচ্ছে করেনা। বিছানায় যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যায়। আর শুলেই ঘুম আসে না, নানা চিন্তা মনের মাঝে এসে ভিড় করে। সবচিন্তা শেষ পর্যন্ত একটা বিন্দুতে এসে মিলিত হয় তা হলো এতো বছরের জীবনে প্রেম করতে না পারার বেদনা।
দেয়ালঘড়ির ঢং ঢং শব্দে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি, সকাল আটটা বাজে, তার মানে সাতটার শব্দ শুনতে পাইনি। বুঝলাম আজও অফিসে যেতে দেরী হয়ে যাবে। প্রায়শই যেতে দেরী হয়, এর জন্য অফিসে আমি "লেট হাসান " নামে পরিচিত।
সকালের প্রাত্যহিক কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে নাস্তা না করেই বের হয়ে পড়ি অফিসের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় নেমে প্রতিদিনকার মতো কর্মস্থলে ধাবমান জনস্রোতের সাথে মিশে যাই।
মতিঝিলে অফিস, বাসা থেকে খুব দূরে না, হেঁটে যেতে লাগে ত্রিশ মিনিট আর রিক্সায় এক ঘন্টা। তাই নিজের দু'পাকে কাজে লাগাই বেশীরভাগ সময়। যাওয়ার পথে রাস্তার ডানদিকে যখন তাকাই তখন মনে হয় উন্নত কোন দেশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, নবনির্মিত পাঁচশত শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, আবার বামদিকে তাকালে নিজের ভুল বুঝতে পারি। এরপর কমলাপুর ওভারব্রিজ পার হয়ে কিছুদূর গেলেই অফিস।
কমলাপুর ওভারব্রিজের উপর দিয়ে যখন উর্ধ্বগতিতে অফিসে যাচ্ছি তখন এক অন্ধ ফকির আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল, একটু অদ্ভুত লাগলো। প্রথমে তার দিকে তাকাই - দেখি একটা চোখ পিটপিট করছে, এরপর নিজের পায়ের দিকে তাকাই - দেখি নতুন ফ্যাশন। তাড়াতাড়ি করার এই ফল।
আজও অফিসে "লেট হাসান " হিসাবে কার্ড পাঞ্চ করে নিজের আসনে গিয়ে বসি, বুক কাঁপছিলো বড় সাহেবের চোখ রাঙানি খেতে হবে কিনা এটা ভেবে। ডাক না পড়াতে মাথা নীচু করে কাজে মনোনিবেশ করি। হঠাৎ মনে হলো দূর থেকে জুতার একটা খটখট শব্দ ক্রমাগত কাছে আসছে, কিছুদূর এসে শব্দটা থেমে গেলো, চোখ তুলে দেখি অবাক দৃষ্টিতে একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই মিষ্টি হাসি দিয়ে সে বাঁক ঘুরে ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলো। ওই ডিপার্টমেন্টে যেতে হলে আমার পাশ দিয়ে যেতে হয়। মেয়েটিকে আগে কখনো দেখি নাই, সম্ভবত নতুন জয়েন্ট করছে।
মেয়েটির বেশভূষায় ঝলমলে একটা দিপ্তী রয়েছে। বিশেষ করে চোখ দুটো- যেনো হরিণের মায়াবী দুটো চোখ ভুলে তার মুখে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
মিষ্টি হাসির মেয়েটির সাথে প্রায়ই চোখাচোখি হয়-দেখা হয় কিন্তু কোন কথা হয় না। ভাবলাম ভাগ্য বুঝি এবার আমার প্রতি সদয় হয়েছে। ভিতরে ভিতরে রোমাঞ্চিত হতে
থাকি, অফিসের কাজ করতে থাকি দ্বিগুণ উৎসাহে আনন্দের সহিত। নিজের অজান্তেই আমার চুলের স্টাইল, পোশাক এগুলো পরিবর্তিত হতে লাগলো। বুঝলাম গায়ে প্রেমের বাতাস লাগছে, ঘষা লাগছে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপে। এখন বাতাসে গাছের পাতা একটু নড়লেই আমার গলা দিয়ে গানের সুর বের হয়। স্বপ্ন দেখতে থাকি বিয়ে, সংসার আর একজোড়া ছেলে-মেয়ের।
সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটিকে আমার ভালবাসার কথা জানাবো। কিন্তু কিভাবে জানাবো সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়ি। শেষপর্যন্ত ঠিক করি আগামী ভালবাসা দিবসে একটা গিফট নিয়ে তার কাছে আমার আবেদন নিবেদন করবো।

দুই
---------
কপালে হাত পড়তেই হালকা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। অফিস থেকে এসে এতো ক্লান্ত থাকি যে একটু শুলেই ঘুম চলে আসে। মা ইদানীং আমাকে নিয়ে অনেক টেনশানে থাকে। মেয়ে হয়ে জন্মানোর এই এক সমস্যা। অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরী হলেই মার চিন্তার শেষ থাকে না। এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকে আমার প্রতি মায়ের এই চিন্তা আরও বেড়ে গেছে।
সেদিন ছিলো শুক্রবার, সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। মা,আমি আর ভাইয়া গ্রামের বাড়ী থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম, ভাইয়া ড্রাইভ করছিলো। গাড়ীর ভিতরের হালকা মিউজিকের তালে চোখটা একটু বুঁজে আসছিলো। হঠাৎ ভাইয়ার ডাকে চমকে তার দিকে তাকাতেই দেখি তার
মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটের ময়নামতি পার হয়ে আরেকটু সামনে গেলে যে বাঁক পড়ে সেখানে এসে আমরা একটা রডবোঝাই ট্রাকের পিছনে পড়ি কিন্তু ব্রেক কাজ করছিলো না, বিপরীত দিক থেকে আসছিলো আরেকটা বাস। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের গাড়ী রডবোঝাই ট্রাকের পিছনে আছড়ে পড়লো। আমি আর মা খুব আঘাত না পেলেও একটা রড ভাইয়ার কপাল দিয়ে ঢুকে মাথার পিছন দিকে বের হয়ে গেলো। সেই দৃশ্য মনে হলে এখনো আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। ভাইয়াকে হারানোর বেদনা আমার জীবন এলোমেলো করে দিলো।
প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসার পর আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি, তারপরও গাড়ীতে চড়া নিয়ে একটা ভীতি কাজ করত। এই ভীতি থেকে আমি গুলশান অফিস থেকে বাসার কাছে মতিঝিল অফিসে ট্রান্সফারের চেষ্টা করে সফল হই।
নতুন অফিসে নতুন কলিগদের সাথে কাজ করতে হবে ভেবে টেনশন কাজ করছিলো। "কি ছুঁবেন নাকি আকাশটাকে" -কিছুদিন আগে টিভিতে মতিঝিলের যে ভবনের বিজ্ঞাপন দেয়া হত সে ভবনের অষ্টমতলায় গেলাম জয়েন্ট করতে। প্রবেশদ্বারে গার্ডকে ক্যাশ ডিপার্টমেন্ট জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলো। ওখানে যেতে হলে আরেক সেকশানের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। নতুন অফিসের বিশালতা আর প্রাণচাঞ্চল্য দেখে মন ভরে গেলো।
বড় একটা দম নিয়ে আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কিছুদূর যেতেই চেয়ারে বসা মাথা নীচু করে কাজে ব্যস্ত একজন ভদ্রলোককে দেখেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। আল্লাহ! কি অদ্ভুত মিল! কি চোখ! কি নাক! এমনকি চুল পর্যন্ত ব্যাক ব্রাশ করা, ঠিক যেনো আমার বড় ভাই কবর থেকে উঠে এসে আমাকে স্বাগতম জানানোর জন্য বসে আছে। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানিনা, সম্বিৎ ফিরলে লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি আমার সেকশানে চলে গেলাম।
দুর থেকে প্রায়ই লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকি আর মনে মনে তাকে আমার ভাইয়ের আসনে স্থান দিই, উপায় খুঁজতে থাকি কিভাবে বলা যায়, কিন্তু উপায় না পেয়ে অস্থির হতে থাকি, অস্থিরতার মাঝে দিনগুলো যেতে থাকে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×