somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউ নাই কপালে

২৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনটা আজ খুব ভালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কর্মরত রায়হানের। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরও ক্লান্তির পরিবর্তে তার মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। নিজস্ব কম্পিউটারটা বন্ধ করে শীষ দিতে দিতে ব্যাংক থেকে বের হয়ে এলো রায়হান সন্ধ্যার একটু পর পর। আনন্দের আতিশয্যে স্থান ভুলে তার মুখ দিয়ে শীষ বের হয়ে গেছে। গতকাল যে পাত্রীটি সে দেখত গিয়েছিল মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে আজ সে মেয়ে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে।
সন্ধ্যার এইসময়টাতে অফিস ফেরত যাত্রীর ভিড়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরটা গমগম করে - বাসে উঠা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রায়হান মোহাম্মাদপুরগামী এ.টি.সি.এল বাসের কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে লম্বা লাইনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। একসময় এই রুটে সব বাসই কাউন্টারভিত্তিক চলাচল করত কিন্তু এখন একমাত্র এই বাসটিতে টিকিটের ব্যবস্থা আছে- তাও আবার ঢিলেঢালা।
বেশী সময় দাঁড়িয়ে থাকলে রায়হানের কোমরে ব্যথা করে,বিয়ের পরেও যদি এই ব্যথা থাকে তাহলে উদ্ভূত সমস্যার কথা চিন্তা করতে করতে মোবাইলে ম্যাসেজ এলো মেয়েটির যাকে গতকাল মামা আর খালাতো ভাইসহ দেখতে গিয়েছিল। খুব সুন্দরী না হলেও বেশ ঢলঢলে চেহারা মেয়েটির, বিশেষ করে চোখ দুটো -যেন এখনি ঝর্ণাধারা শুরু হয়ে যাবে। এটি ছিল রায়হানের এগারতম মেয়ে দেখা। অবশ্য সবক্ষেত্রে যে সে মেয়ে পছন্দ করেনি তা নয়, অনেকক্ষেত্রে মেয়েরাই তাকে পছন্দ করেনি। এই মেয়েটিকে দেখতে যেতে প্রথমে সে রাজী ছিলনা, অনেক অনুরোধের পর তার মতি হয়েছিল। এখন বুঝতে পারছে, না গেলে মস্ত ক্ষতি হয়ে যেত।
বাস আসামাত্র লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেল, ব্যস্ত হয়ে গেল সবাই উঠার জন্য। রায়হানও বাসে উঠে একটা খালি আসন পেয়ে বসে গেল, ঠিক তার সামনের আসনটিতে বসল দুজন যুবতী আর একজন বৃদ্ধ মহিলা।
রায়হান সীট পেয়ে স্বস্তির সাথে সাথে কিছুটা অস্বস্তিও অনুভব করল, তার লম্বা পা দুটোকে বাঁকিয়ে রাখতে হল। বেশী ব্যবসায়ের আশায় বাস মালিকরা সীট বসানোর ক্ষেত্রে কোন নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। মানুষরূপী যাত্রীরা তাদের কাছে যেন একেকটা গরু, একে সীটগুলো সংকীর্ণ তার উপর গাদাগাদি করে যাত্রী উঠানো হয়।
ভ্যাপসা গরম,ঘামের গন্ধ আর মানুষের বকবকানিতে বাসের ভিতরটা ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠল,কিন্তু রায়হানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই - সে ব্যস্ত মেয়েটির সাথে মোবাইলে ম্যাসেজ আদান প্রদানে। এই আদানপ্রদানের মাধ্যমে দুজনের ভাবাবেগ যখন চরমে ঠিক তখনই বাসটা করল ব্রেক আর তাতে রায়হানের বাঁকা হয়ে থাকা পা গিয়ে লাগল সামনে বসা যুবতীর শরীরে।
মানুষের বাহিরের রূপটা নকল, আসল রূপ লুকিয়ে থাকে হৃদয়ের গভীরে, যখন রাগ উঠে তখন ব্যবহারের মাধ্যমে তা মুখায়বে এসে ধরা দেয়। সামনের যুবতীর কদর্য আক্রমণ সেটাই প্রমাণ করল। রায়হান অবাক হয়ে দেখল সুন্দরী যুবতীটি তার কোন কথা না শুনে কিভাবে হিংস্র হয়ে উঠল, সঙ্গে যোগ দিল সাথের আরও কয়েকজন। লজ্জা, অপমান আর ঘৃণায় সে মাথা নীচু করে রইল।
"আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে? "- কোলের উপর রাখা মোবাইলের পর্দায় এর মধ্যে আসা অনেকগুলো ম্যাসেজের মধ্যে এই লাইনের উপর চোখ পড়ল ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল রায়হানের। মেয়েদের উপর প্রচণ্ড ঘৃণার উৎপত্তিতে মুহূর্তেই বিয়ে না করার চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে এর উত্তরে "না" লিখে দিল গতকাল দেখে আসা মেয়েটিকে।
বাসটি ছিল পুরাতন, অধিকাংশ জায়গায় স্টিলের ধারালো কোনা বের হয়েছিল। মানসিক কষ্টকে শারিরীক যাতনা দিয়ে লাঘবের জন্য রায়হান স্টিলের বেরিয়ে থাকা অংশে আঙুল বসিয়ে দিল এক টান - সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে এল। হৃদয়ের সব কষ্ট রক্তের রূপ নিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়তে লাগল চলন্ত বাসের জানালার বাহিরে মেলে ধরা হাতের আঙুল দিয়ে।


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×