somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবধান! শিশু ছিনতাইকারীর অভিনব ছিনতাই

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" "দ্যাখ্ দ্যাখ্ ! পোলাটা কেমন ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে তোর দিকে "
-"দুর ভাবী! এইসব পোলা একদম হারামী "
"পোলাটা কিন্তু সুন্দর "
-"বাইরে সুন্দর, ভিতরটা পুরাই কয়লা, যতই দুইবা ময়লা যাইবো না "।
রিমা আর তার ভাবী - একজন আরেকজনের সাথে একদম ফ্রি, একেবারে গলায় গলায় ভাব, কি কথা হয়না তাদের মধ্যে! -ছেলে, মেয়ে, প্রেম, ভালবাসা আদর সব, কোন কিছুই বাদ যায়না। তবে কঠিন বিষয়ে কথা হয় কম, রসের কথাই বেশী। মাঝে মাঝে ভাবী এমনসব কথা বলে রিমা পুরাই লাল হয়ে যায়।
শপিং করাটা অনেকের কাছে নেশার মত, আবার অনেকের কাছে বিষের মত মনে হয়। সেই বিষের দলে আছে রিমা, কিন্তু তারপরও এই জঘন্যতম কাজটা তাকে দিয়ে সারানো হয়। আজও রিমা শপিং শেষে ভাবীসহ বাসায় ফিরছে রিক্সা করে। মৌচাকের মোড়ের জ্যামে আটকে আছে অনেকক্ষণ ধরে।
রিমা আজ পরেছে লাল জামা, বুকের মাঝে আকাঁ আছে বড় একটা কালো গোলাপ যা বুকের সৌন্দর্যকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফর্সা রংয়ে লাল জামা মানায় ভালো, তাকে আজ লাল পরীর মত লাগছে। লাল ওড়নাতে মাথা ঢাকা থাকায় শুধু মায়া ভরা মুখটা দেখা যাচ্ছে। শাড়ীপরা ভাবীও মাঝেমাঝে মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে।
একটা সময় জ্যাম ছেড়ে রিক্সা মালিবাগ রেলগেইটের দিকে এগোতে থাকে। মালিবাগ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলতে থাকায় রাস্তা ধুলোময় আর উঁচুনিচু। বুড়ো রিক্সাওয়ালা কায়দা করে কম ঝাঁকুনি দিয়ে রিক্সার প্যাডেল মারছে। রিক্সাওয়ালা খুব খুশী, অনেক সময় পর সে ভালো একটা খ্যাপ পেয়েছে। মৌচাক থেকে আহমেদবাগ পর্যন্ত পঞ্চাশ টাকার ভাড়া আশি টাকাতে যাত্রী রাজী হয়ে গেছে। বিকালের ফুরফুরে হাওয়াতে রিক্সা চালাতে তার খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না। বিশ্বরোডের খিলগাঁও ফ্লাইওভার যেখানে শেষ হয়েছে এর কিছু আগে মেরামতের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে রিক্সাওয়ালাকে ভিতরের গলিতে ঢুকতে হয়েছে।
( ২)
"পাইছি! পলো মি"
-"মাইনে কি?"
"ইংরাজি বুজোছ্ না, আমার পিছে পিছে আয়"
-"আইতাছি ওস্তাদ"
"তাকাইয়া দ্যাখ্, রিসকায় বহা লাল মাইয়ার কানে"
দুই কিশোর - কিশোর বলা যাবে কিনা সন্দেহ, একজনের বয়স সাত,আরেকজনের আট বছর - গলির রাস্তায় বল খেলছে বস্তির আন্যান্য ছেলেদের সাথে। এই মুহূর্তে বল খেলা তাদের প্রধান কাজ না, তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে বল খেলার ছলে এই গলিপথে রিক্সায় বসা যাত্রীদের দিকে নজর রাখা। গলির শেষ মাথায় ফুটপাতের চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসা আছে বড় ভাই, সে নজর রাখছে ছেলেদুটোকে, কোন বিপদে পড়লে তাদের উদ্ধারের দায়িত্ব তার। দিনের ঠিক সেই পড়ন্ত বেলায় রিমাদের রিক্সা যাচ্ছিল এই গলিপথ ধরে। দুই কিশোরের একজনের চোখ পড়ল রিমার বামকানের ঝুলন্ত সোনার দুলের উপর। তারা বল ছেড়ে রিক্সার পিছনে দৌড়াতে লাগল, কখনও রিক্সার পিছনের নীচু রডে উঠছে - আবার নামছে, দুজনে হাসাহাসি করছে। এতে আশেপাশের পথচারীদের মনে কোন সন্দেহের উদ্রেক হলো না। এমনকি রিক্সাওয়ালাও দু'একবার বারণ করে চুপ করে রইল। সবাই এটাকে দুরন্ত ছেলেদের দুরন্তপনা ভেবে এদিকে আর মনোযোগ দিলনা।
"মামু, চিনি বেশী কইরা আরেক কাপ চা দেন"
-"দিতাছি"
বেঞ্চিতে বসা বড় ভাই চার অর্ডার দিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখল জিনিষটা ঠিক আছে কিনা। বেশী সমস্যা হলে জিনিষটা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করতে হয়। চা-টা হাতে নিয়ে শিষ্য ছেলেদুটোর দিকে নজর দিল সে, তাদেরকে রিক্সার পিছনে দৌড়াতে দেখে চা রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।
রিমা আর তার ভাবীকে বহনকারী রিক্সাটা গলির শেষ মাথায় যখন পৌঁছল তখন মনে হলো সন্ধ্যার অন্ধকারটা একটু বেশী ঘনিয়ে এলো। কিশোর ছেলে দুটো এখন একেবারে রিক্সার পিছনে ঝুলে আছে। হঠাৎ রিমা তার কানে একটা ঝাপটা অনুভব করল, সাথে সাথে হাত দিয়ে দেখল তার দুলটা নেই। মুহূর্তের ঘটনায় সে হতভম্ব হয়ে পিছনে ফিরে দেখল ছেলেদুটো দৌড়ে পালাচ্ছে। তাদেরকে ধরার জন্য সে সজোরে চিৎকার দিল কিন্তু তার আগেই তারা ম্যাজিকের মত হাওয়া হয়ে গেল।
দুলজোড়া ছিল রিমার খুব প্রিয়। তিন বছর আগে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় বাবা তাকে এটা উপহার দিয়েছিলেন। দুলগুলো তার এতটা প্রিয় ছিল যে এক মুহূর্তের জন্যও সে তা কান থেকে খুলে রাখেনি।
দুলটা হারিয়ে রিমা যতটা কষ্ট পেয়েছে তার চেয়ে বেশী পেয়েছে এই কোমলমতি শিশুদের দুষ্কৃতিকারীদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হতে দেখে। একসময় এইসব শিশুদের থেকে বেরিয়ে আসবে বড় বড় দুষ্কৃতিকারী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×