ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত লাল ইটের উদয়ন সবাই চিনে। একটা সময় ছিল দেশের সেরা ১০টা স্কুলের মধ্যে উদয়ন ছিল একটা, আমি সেই উদয়নের ছাত্র। বর্তমানে উদয়নের সেই নাম পড়তির দিকে... পড়তির দিকে কেন এটা নিয়ে পরে বলবনে... আগে আমাদের জাউশেদ স্যারের রেসলিং এর কাহিনী শুনাইয়া নেই
প্রিন্ট মিডিয়ার বদৌলতে খবর অনেকেরই জানা, এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে! দায়িত্ব নিয়ে বলছি, জাউশেদ স্যর কে আমরাও আড়ালে ডাকতাম "জাউড়া" স্যর!! আমি নিজেও উনার কাছে মাইর কম খাই নাই। ক্লাস টেন এও আমাদের জেনারেল ম্যাথ ক্লাস নিত... তো হইসে কি, যখন কারো ক্ষমতা বাইড়া যায় তখন সে কাউকে মাপতে জানে না... আমরা আগে থেকেই জানতাম যে স্যার এর "পলিটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড" অনেক স্ট্রং, যেটাই হোউক, ছেলেটা নাকি আড়ালে স্যর কে টেম্পু বা সিএনজি কিছু একটা ডেকেছিল!! এরপরই ছেলেটাকে ৪র্থ পিরিয়ডে একবার ধোলাই দেয়া হয়। উদয়নে ৫ম পিরিয়ডের পর টিফিন হয়। ৬ষ্ট পিরিয়ডে ৬তলায় নিয়ে তাকে নাকি মাটিতে ফেলে মারা হয়... মারার ফলে তার কান দিয়ে রক্ত ও বের হয়... কিন্তু আমাদের প্রিন্সিপাল এখনো জাউশেদ স্যারের পক্ষেই আছেন... এটার একটা প্রমান দেখে নেই বর্তমানের একজন ছাত্রের স্ট্যটাস দেখে ঃ-
"...আজকে নাকি উদয়নে সালেমা আপা জাউশেদের পক্ষে জনমত নিসে। জনমতের নাম, 'Justice for Jaushed'। জাউশেদের পক্ষে নাকি সবাইকে সাক্ষর করতে হবে। কেউ বিপক্ষে সাক্ষর করতে পারবে না, এমনকি কেউ নিরপেক্ষ ও থাকতে পারবে না।
'নিরপেক্ষ বা বিপক্ষ - যেকোন একটা থাকলেই তোমাদের টিসি দেওয়া হবে।' - উম্মে সালেমা বেগম
জাউশেদের পক্ষে কথা বলার জন্য ক্লাস এইট থেকে কিছু মেয়েকে আনা হইসে, তারা আজকে মিডিয়ার সামনে কিছু ভাল ভাল বক্তব্য দিসে। জাউশেদ ভাল শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে খুব জনপ্রিয়, নৈতিক দিক দিয়ে অনেক ভাল - ইত্যাদি ইত্যাদি। জাউশেদকে বাঁচানোর জন্য সালেমার কত আকুতি!!!আহা!!!প্রাণটা জুড়িয়ে যায়!!!"
উলেখ্য উম্মে সালেম আমাদের প্রিন্সিপাল এর নাম। উনাকে আমরা আড়ালে USB ডাকি
উনি উদয়নে আসার পর কি হইসে বলি?
উদয়ন কে উনি ৫তলা থেকে ৬তলা বানাইসেন, উদয়নের ছিল বিশাল করিডোর, ঢাকার স্কুল গুলার মধ্যে আলো-বাতাস সবচেয়ে খাইয়া বড় হইসি আমরা, উনি এখন উদয়ন কে বানাইসেন চিপা গলি... উনার বিখ্যাত ডায়লগ শুনবেন?? "তোমরা তোঁ উদয়ন কে নিষিদ্ধ পল্লি বানিয়া দিলা..."
উদয়ন এ এখন উনি লিফট লাগাইতেসেন... যাক গা এগুলা বাইরের মানুষের গায়ে লাগবেনা, শরীর টায় এখনো উদয়নের গন্ধ করে, তাই এই উদয়ন দেখলে কান্না পায়... আমাদের উনি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এর ফেয়ারওয়েল না দিয়ে বের করসেন
তো স্যর যে ছেলেটাকে মারসেন, এর পক্ষে নাকি সবাই মতামত দিসে... স্যার কিছু করে নাই... উদয়নের প্রতি তালায়, প্রতি চিপায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তদন্তে ঐগুলার ব্যাবহার হচ্ছে না কেন???? বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে উদয়ন, গভর্নিগ বডির সদস্য রাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তারা ছেলেটার বাবা কে হুমকি দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকতে না দেওয়ার!!
আমি বলে রাখি, আমাদের প্রিন্সিপাল এর হাত অনেক লম্বা... কিন্তু এভাবে আর কত???
আমি আমার স্যার কে নিয়ে এভাবে বলতে চাইনি। আমি নিজেও একবার ব্যাপক প্রহারের শিকার হয়েছিলাম, আমার বাবা বলেছিলেন এর জোরে হয়ত আমি অনেক বড় কিছু হব... কিন্তু আর কত??? আমার কথা জাউশেদ স্যারের বিপক্ষে না, আমার কথা ক্ষমতার বিপক্ষে , আমার কথা হচ্ছে আমাদের উদয়ন কে কেন এভাবে কলুষিত করা হচ্ছে????
আমি যখন উদয়নে পড়তাম, আমার মা-বাবা খুব গর্ব করে বলতো "আমার ছেলে উদয়নে পড়ে"। কিন্তু এখন কেউ এই কথা বলতে পারেনা... খুব দুঃখ হয় ফুলার রোডে ঢুকলেই লাল ইটের উদয়ন যেন আমাদের ডাকে, তার অস্তিত্ব ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে...
-fajlupedia
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৫