somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক উৎভ্রান্ত বালিকার মন

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত একটি ছোটগল্প)

ছবি (ছদ্মনাম) যেন ছবির মতই সুন্দরী, দূরন্তপনা, লাস্যময়ী, সদালাপী, ছন্ছল একটি আদর্শ শিক্ষিত পরিবারের সবচেয়ে আদুরী মেয়ে। ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। বাবা জনাব আলতাফ সাহেব একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কর্মরত। মা অত্যন্ত পর্দানশীল ধার্মিক মহিলা। বাব মা দূজনেরই সকল স্বপ্ন তাদের ছেলেমেয়েদের ঘিরে। তাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবে ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তুলবে। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য আলতাফ সাহেব তার পক্ষ্যে সম্ভবপর সব চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সন্তানরা যাতে ভাল পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে, ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারে তাই গ্রাম ছেড়ে মফস্বল শহরে বাসা নিয়ে থাকেন। দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাকে সার্বক্ষনিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী। বড় দুই ছেলে স্কুল ও কলেজে ভাল রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে স্কলারশীপ নিয়ে বিদেশে অধ্যয়নরত। আলতাফ সাহেবের স্বপ্ন যেন সত্যি হতে লাগলো ঠিক যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন। বড় মেয়েটাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বড় মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী ঠিক তেমনি পর্দানশীল, পাঠে মনযোগী, ক্যারিয়ার সচেতন এবং বাবা মায়ের মত রক্ষণশীল যার কারনে তাকে নিয়ে আলতাফ সাহেব দম্পতিকে যেন কোন টেনশনই স্পর্শ করে না। বিপত্তিটা হল ছোট মেয়েটিকে নিয়ে। ছবি খুবই ছন্ছল প্রকৃতির মেয়ে, কখন কি করে বসে এই নিয়ে আলতাফ সাহেবদের টেনশন। ছবি যখন নবম শ্রেণীতে পড়তো তখন হঠাৎ করে 'ন' অধ্যক্ষরের দশম শ্রেণীর এক সুশ্রী ছেলের প্রেমে জড়িয়ে যায়। আর কিছুদিনের মধ্যেই আশেপাশের মানুষের নিকট বিষয়টি জানাজানি হতে লাগলো। এতে করে আলতাফ সাহেবের পরিবারের ভাবমূর্তি মারাত্নভাবে ক্ষুন্ন হতে লাগলো। পাশের বাসার জমির সাহেব বিষয়টি শুনে অবাক হয়ে বললেন আলতাফ সাহেবের মেয়েটি এমনটা করতে পারলো? আসলে আজকাল কোন পরিবারের ছেলেমেয়েকেই বিশ্বাস করা কঠিন।
আলতাফ সাহেব গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি কি নিজের চাকুরী করবেন, সন্তানদের পড়াশুনায় সময় দিবেন, নাকি মেয়েকে পাহারা দিবেন, কি করবেন তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। মেয়েকে কঠোর শাসনের মধ্যে রাখলেন। এমনকি মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছেন বেশ কয়েকবার। আলতাফ সাহেব অবশ্য এক্ষেত্রে অবশ্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তিনি এতটা কঠোর না হয়ে মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করে তাকে সুন্দর করে বোঝাতে পারতেন তাহলে বিষয়টি বেশি ইফেক্টিভ হতো। এটা না করাতে মেয়ে আরো বেশি বিগড়ে গেলো। এ দেখে আলতাফ সাহেব আরো ভেঙ্গে পড়লেন। কি করবেন কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। মেয়েকে এ সম্পর্ক থেকে দূরে রাখার জন্য আলতাফ সাহেব চিন্তা করলেন 'ন' ছেলেটির বাসায় যাবেন, ছেলের বাবা মাকে সতর্ক করবেন। যেভাবেই হোক ছেলে এবং মেয়ে দু'জনের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। এই ভাবনা থেকে আলতাফ সাহেব একদিন এলাকার পূর্ব পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বিশ্বস্ত আবির নামে (ছদ্মনাম) এক ছেলের সাথে ফোনে কথা বলেন। আবির ছেলেটি অত্যন্ত মিশুক, আড্ডাপ্রিয়, মিষ্টভাষী ও কিছুটা উদাসিন প্রকৃতির, তবে যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব বজায় রেখেই ছলাফেরা করতে চেষ্টা করে। ছবি যখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ে তখন থেকেই আবির ছবিকে মনে মনে পছন্দ করে। একদিন আমি আবিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা তোর এমন অদ্ভুত পছন্দ কেনো? এতো ছোট বয়সের একটা মেয়েকে তোর পছন্দ কি করে হল? সে উত্তরে বলল এর কোন ব্যাখ্যা নেই। তাকে কেনো যেন আমার অসম্ভব ভাল লাগে। আবির তার এ চুপিচুপি ভাললাগা কখনোই কারো সাথে শেয়ার করেনি শুধু মনে মনে ভাবে ছবি যখন বড় হবে, বিশ্ববিদ্যালয় গন্ডিতে পা রাখবে তখন তাকে তার ভাললাগা প্রকাশ করবে অথবা আলতাফ সাহেবের ফ্যামিলিতে বিয়ের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে। যার কারনে আবির অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে। আলতাফ সাহেবের মেয়েরা যখন প্রাইমারী শেষ করে হাই স্কুলে উঠলো তখন থেকেই আবির আলতাফ সাহেবের বাসায় আগের মত আসা যাওয়া বন্ধ করে দেয়। যেন ছবির প্রতি দূর্বলতা কখনো প্রকাশ হয়ে না যায়, যেন কেউ কখনো কিছু বুঝতে না পারে।
যাহোক আলতাফ সাহেব সেদিন চরম উৎকন্ঠিত মনে আবিরের সাথে দেখা করেন এবং বিষয়টি নিয়ে করণীয় আলোচনা করেন। আলতাফ সাহেবের উৎকন্ঠা সাথে আবিরের ছবির প্রতি নিজের দূর্বলতা সব বিবেচনা করে আবির আলতাফ সাহেবেকে নিয়ে 'ন' দের বাসায় গিয়ে ছেলের বাবা মা'র সাথে বিস্তারিত কথা বলে এবং তাদের ছেলেকে সংযত রাখার কথা বলেন। তাদেরকে যথেষ্ট শাসানো হয়, ছেলেকেও শাসানো হয় এমনকি হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়। আবির দূপক্ষের গাইডিয়ানকেই এ ব্যাপারে কার্যকরী সচেতনতা অবলম্বনের কথা বলেন।
পরের দিন আবির ছবির সাথে ফোনে কথা বলে এবং ছবিকে বোঝানোর চেষ্টা করে। আলতাফ সাহেবের ফ্যামিলির সাথে আগে থেকেই ভাল পরিচয় এবং সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে ছবির সাথে আবির খুব সহসাই খোলাখুলিভাবে এ বিষয়ে আলাপ করে। আবির নানাভাবে ছবিকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ছবিকে বোঝানো হয় 'ন' মাত্র একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। 'ন' ছেলেটির পড়াশুনা কবে শেষ হবে, কি তার ভবিষ্যৎ তার কোন নিশ্চয়তা নেই, কেনো তুমি এমন উদ্দ্যেশ্যহীন সম্পর্কে জড়ালে? এটা তোমার ভালবাসা নয়, এটা তোমার আবেগ। তুমি প্লীজ এ অসম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসো, পরিবারের সম্মান রক্ষা করো। তোমার জন্য অবশ্যই তোমার যোগ্য ভাল কেউ অপেক্ষা করছে। কিন্তু আবেগের ঘোরে যে মত্ত আর অমন অবুঝ বয়সের প্রেমে যে অন্ধ সে কি আর এসব কথা গ্রহন করবে? আবির আলতাফ সাহেবকে পরামর্শ দেয় কিছু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। যেমন ছবিকে যথাসম্ভব নজরে রাখা, বাসার মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করা আর সম্ভব হলে বাসা পরিবর্তন করে অন্যত্র বাসা নেওয়া। হ্যাঁ আলতাফ সাহেব তাই করলেন, চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখলেন না।
এভাবে চলে গেল প্রায় সাড়ে তিন বছর। ছবি বেশ বড় হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে এমন সময় ছবি আবিষ্কার করলো যে ছেলেকে সে কোনকিছুকেই পরোয়া না করে পাগলের মত ভালবাসে সে ছেলেটি আসলে তার সম্পর্কের বিষয়ে মোটেই সৎ নয়। তার সাথে আরো একাধিক মেয়ের মেলামেশা ও সম্পর্ক রয়েছে। ছবি ভাবে যার জন্য সে ফ্যামিলিতে একঘরে হয়ে আছে, অনেক নির্যাতন সয্য করতেছে, পরিবারের সদস্যরা ঠিকমতো তার সাথে কথা পর্যন্ত বলে না আদৌ সে ছেলে তার আবেগের মূল্য কি দিতে পারবে? ছবির চিন্তার জগত খুলে গেল, সে ভাবতে লাগলো। ছবির ছোট ভাইয়ের বন্ধুর মত করে বোঝানো কথাগুলো তাকে খুব নাড়া দিল। অবশেষে ছবি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলো। সে 'ন' এর সাথে সম্পর্কের ইতি টানলো এবং পড়াশুনায় মনযোগী হবার চিন্তা করলো। প্রথম বছর অবশ্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হলো না তাই পরবর্তী বছরে ভর্তির জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলো। ছবির ভাবনায় শুধুই পড়াশুনা কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যাবে। সে লক্ষ্যে ছবি ভালভাবে পড়াশুনা শুরু করলো। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে। দ্বিতীয়বার ভর্তির প্রস্তুতির জন্য মনযোগ সহকারে পড়াশুনা করছে। কিন্তু কিছুদিন পরই ছবির জীবনে আসে দ্বিতীয় সুদর্শন যুবকের প্রেমের অফার। যে ছবি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর কখনো প্রেমে জড়াবে না সে যেন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারছে না। একেতো ছেলে সুদর্শন তার উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েটেড সবমিলিয়ে ছবি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলো না। সে আবারো প্রেম সাগরে ডুব দিল তারই কোচিংয়ের শিক্ষক শাহীন এর প্রেমে। শুরু হল ছবির দ্বিতীয় প্রেমের অধ্যায়। প্রেম এবং পড়াশুনা দুটোই চলতে থাকলো সমান তালে। কোচিং শেষে শাহীনের সাথে একান্তে কিছু সময় ব্যয় করা এবং রাত জেগে কথা বলা যেন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়াছে। এ যেন জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া। আসলে ২য়, ৩য়, ৪র্থ আর ৫ম প্রেম বলে কিছু নেই সবই প্রথম প্রেম। যাক ভাগ্য ভাল যে প্রেমের মাঝে পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি, পড়াশুনাটাও ধরে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করলো এবং দেশের প্রথম সারির একটা পাবলিক ভার্সিটিতে ছবি চান্স পেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস ফিরে ফেল ছবি এবং পড়াশুনায় মনোনিবেশ করার নতুন করে অনুপ্রেরণা পেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ শুরু হল, ছবি হলে উঠল, অল্প সময়ে বেশ বন্ধুবান্ধবও জুটিয়ে ফেলল। ক্লাশ, পড়াশুনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘুরাঘুরি এভাবেই কাটতে লাগলো ছবির বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি দিন। একই সাথে চলতে থাকলো নয়াপ্রেমিক শাহীনের সাথে রাত জেগে মোবাইলে কথোপকথন। কিছুদিন পর শাহীন ছবির সাথে দেখা করার জন্য ছবির বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। তার সাথে দেখা করে, ক্যাম্পাস থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ধা পর্যন্ত সারাদিন একসাথে থাকে এবং অসাধারণ কিছু মুহুর্ত অতিবাহিত করে। সন্ধার পর ছবি ক্যাম্পাসে ফিরে না ঘিয়ে ওর এক কাজিনের বাসায় থাকে। ওর শয়নে স্বপনে শুধুই শাহীনের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো অন্তরচোক্ষে ভেসে বেড়াতে থাকে। শাহীনকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ সংসার জীবনের পরিকল্পনা এসবই যেন ছবির চিন্তার জগতকে সবসময় ব্যস্ত রাখে। ছবি এসব ভেবে আলাদা একটা সুখ অনুভব করে। এভাবে চলার মাঝেই কিছুদিন পর শাহীন হঠাৎ করে একদিন ছবিকে বলল তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, সত্যিকার অর্থে তোমার সাথে আমার প্রেমের অভিনয় চালিয়ে যাওয়াটা আর সম্ভব নয়। এ কথা শুনে ছবির যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। শাহীন এসব কি বলছে। তাদের সেদিনকার কথোপকথন:
ছবিঃ তুমি এটা কি বলছো শাহীন?
শাহীনঃ দেখো আমার মনে অনেক দুঃখ, আমার একাকীত্বের সময়গুলোতে আমি তোমাকে পেতে চেয়েছই, পেয়েছিও বটে।
ছবিঃ কি দুঃখ তোমার মনে?
শাহীনঃ কনা নামে একটা মেয়ের সাথে আমার রিলেশন ছিল প্রায় দুই বছর। আমি ওকে অনেক ভালবাসতাম কিন্তু কোন কারন ছাড়াই সে আমাকে ছেড়ে চলে যা্য। আমি খুব একা হয়ে যাই, নিজেকে কোনভাবেই মানাতে পারিনি।
ছবিঃ আমার সাথে এমন করলা ক্যান?
শাহীনঃ আমি মানসিকভাবে প্রচন্ড ধাক্কা খাওয়াতে আমার একটা সঙ্গ দরকার ছিল তাই তোমার সাথে কথা বলতাম। বিষয়টি ঠিক হ্য়নি আমি জানি কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমাকে ভুলে যাও প্লীজ।
শাহীনের এরকম কথা শুনে ছবি যেন অন্তপ্রাণহীন হয়ে গেল। কোচিংয়ের অন্যান্য মেয়েদের প্রতিও শাহীনের নজর ছিল, মেলামেশা ছিল এটা জেনেও তার প্রতি শাহীনের অতিরিক্ত আবেগ, যত্নশীল মনোভাব ছবিকে শাহীনের প্রতি দূর্বল করে দেয় অথচ আজ শাহীন তাকে দূরে ঠেলে দিল এটা কোনভাবেই সে মেন নিতে পারছে না। মনে মনে শাহীনের উপর অনেক রাগ করলো। বান্ধবীরা শুনে তাকে সান্তনা দেয়, পড়াশুনায় মনযোগী হয়ে এসব প্রেম ট্রেম ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মনের উপর তার যেন কোন নিয়ন্ত্রণই নেই। সে কোনভাবেই শাহীনকে ভুলতে পারছে না। প্রতিদিনই ফেইসবুকে লগইন করে শাহীনের ওয়াল চেক করে। শাহীন কি স্ট্যাটাস দিল, কি ছবি পোষ্ট করলো এসব কিছু চেক করেই যেন মনের অজানা এক কৌতুহল মেটানোর অব্যর্থ প্রয়াস চালায় নিত্যদিন। এভাবে চলে গেল আরও কয়েক মাস। অবশ্য দিনে দিনে তার পাগলামো মনোভাবেরও কিছুটা পরিবর্তন আসে। কিন্তু একটা বিষয় সে কোনভাবেই মন থেকে পুরোপুরি মুছতে পারেনি। তা হল একজনের সঙ্গ, কেয়ারিং, মোটকথা একজন মনের মানুষ যার সাথে সব কিছু শেয়ার করবে, রাত জেগে কথা বলবে ইত্যাদি। মনে মনে সে নিজেকে খুব একা অনুভব করতে থাকে। ঠিক এমনই সময়ে ছবির সাথে যোগাযোগ হয় পূর্ব পরিচিত আবিরের সাথে। প্রথমে ভালমন্দের খোঁজখবর দেয়া নেয়া এসব নিয়ে কথা হতো। এভাবে নিয়মিত কথা বলার একপর্যায়ে আবির তার দীর্ঘদিনের ভাললাগার কথা, ছবির প্রতি তার দূর্বলতার কথা প্রকাশ করে। ছবিও পজিটিভলি আবিরের আহ্ববানে সাড়া দেয় এবং নতুন করে আবিরকে নিয়ে তার স্বপ্নের জগত সাজাতে শুরু করে। প্রতিদিনই কথা হতে থাকে দূজনার মধ্যে। পরস্পরের ভাল লাগা মন্দ লাগা, পছন্দ অপছন্দ, সংসার জীবন ক্যামন হবে ইত্যাদি সর্বোপরি সব বিষয় নিয়ে তাদের দূজনার মাঝে কথা চলতে থাকে প্রতিনিয়ত। ছবি আবিরের নিকট নিজেকে শতভাগ সৎ রাখার জন্য তার অতীত সম্পর্কে আবিরকে সব খুলে বলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশেষকরে 'ন' অধ্যক্ষরের ছেলের সাথে ছবির প্রেমের বিষয়টি যেহেতু আবির ভালভাবেই জানে তো সে বিষয়ে আবিরকে সবকিছু বুঝিয়ে বলাটা জরুরী মনে করল। সেদিনকার তাদের কথোপকথনের কিছু অংশ:
ছবিঃ আচ্ছা 'ন' সম্পর্কে তোমার কিছু জানার নেই?
আবিরঃ এ কথা বলছো কেন?
ছবিঃ তুমিতো সব জানতে এ বিষয়ে কিছু জানতে চাওনা যে?
আবিরঃ আচ্ছা বলতো 'ন' এর জন্য এত পাগলামো কি জন্য করলা আর ব্রেক-আপ কেনইবা হলো?
ছবিঃ আমি সত্যি ওকে অনেক ভালবাসতাম, ওর জন্য অনেক পাগল ছিলাম। তাইতো বাসায় অনেক নির্যাতন সয্য করেও সম্পর্কটা ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করলো, আমার ভাইয়াদের সম্পর্কে বাজে কথা বলতো তাছাড়া যখন দেখলাম সে বিভিন্ন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা মেইনটেইন করে চলে তখনই ব্রেক-আপ করে ফেলি।
আবিরঃ ও আচ্ছা।
ছবিঃ আচ্ছা আমারতো সম্পর্কটা অনেক দিনের ছিল তারপরও তুমি আমাকে ভালবাস কেন?
আবিরঃ হ্যাঁ তোমাকে আমি ভালবাসি। তোমার প্রতি আমার ভাললাগাতো সেই তোমার ছোটবেলা থেকেই। আমি অপেক্ষায় ছিলাম তোমার বেড়ে উঠার। কিন্তু এর মাঝেই তুমি সাড়ে তিন বছরের জন্য অন্যত্র হারিয়ে গিয়েছিলে।
ছবিঃ আমাকে তুমি কতটুকু ভালবাস?
আবিরঃ আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি তার কোন সীমারেখা নেই। আমি তোমাকে যতটা যত্নসহকারে আমার হৃদয়ে লালন করেছি ততটা ভালবাসা বোধ হয় কেউ কাউকে বাসে না কিংবা কেউ কোনদিন বাসেওনি।
ছবিঃ আমার এ সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কটাকে তুমি কিভাবে দেখছো?
আবিরঃ দেখো তুমি যদি আমাকে ভালবাস, অতীত স্মৃতি ভুলে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোল তবে তোমার কোনকিছু নিয়ে আমি কখনো প্রশ্ন করবো না।
ছবিঃ আমি সত্যি ভাগ্যবতী।
আবিরঃ কেন?
ছবিঃ তোমার মত একজন মানুষ পেয়ে আমি সত্যি হ্যাপী যে মানুষটা আমাকে এত্ত ভালবাসে। আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসবো, তোমার পছন্দ অপছন্দের গুরুত্ব দিব। কখনো তোমাকে কষ্ট দিবনা। আমাকে আমার অতীতের বিষয়গুলো ক্ষমা করো প্লীজ।
আবিরঃ ঠিক আছে অতীত নিয়ে আমিতো বলেছি কখনোই কিছু বলবোনা। আমি নিজেই সেসব মন থেকে মুছে দিতে চাই। তুমিও ভুলে যাও সেসব।
ছবিঃ আমি সেসব ভুলে যেতে চাই কিন্তু কেন যেন পারিনা। তবে তুমি যদি পাশে থাকো আমাকে ভালবাস আমি নিজেকে নতুন করে সাজিয়ে নিব। আচ্ছা আমি কি পারবো তোমাকে সুখী করতে?
আবিরঃ কেন পারবা না?
ছবিঃ আমি বাড়ী গাড়ী, অনেক টাকা পয়সা এসব কিছুই চাইনা। শুধু মনের মত একজন ভালবাসার মানুষ চাই যে আমাকে অনেক ভালবাসবে। আমার প্রতিটি চাওয়া আবেগ অনুভূতির গুরুত্ব দিবে। তাতেই আমি হ্যাপী থাকবো। আশা করি তার পুরোটাই আমি তোমার থেকে পাবো। আমি থাকবো সারাজীবন তোমার পাশে তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে।
আবিরঃ তোমার প্রতি এই বিশ্বাসটুকু আমি রাখতে চাই। অনেক দিনের জমানো ভাললাগা তোমাকে প্রকাশ করতে পেরে, তোমাকে পেয়ে সত্যি আমি আবেগাপ্লুত। তোমার প্রতি আমার একটাই চাওয়া আমার ভালবাসার মর্যাদা রক্ষা করতে তুমি সচেষ্ট থাকবা।
ছবিঃ হ্যাঁ থাকবো। আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি যদি কিছু মনে না করো?
আবিরঃ হ্যাঁ করো।
ছবিঃ সানজিদা আপুর সাথে তোমার প্রেম ছিল?
আবিরঃ হ্যাঁ একটা সম্পর্ক ছিল তবে সেটাকে ঠিক প্রেম বলা যাবে কিনা আমি জানিনা। সময়টা ছিল এইস.এস.সি পরীক্ষার পর, সবেমাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম কিন্তু ক্লাশ শুরু হয়নি। বাসায় সময় কাটতো না তাই সারাদিন বন্ধুদের সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে সময় পার করতাম। তখন প্রায় সব বন্ধুরাই প্রেম করতো। ওরা আমাকে নিয়ে প্রায় সময় দুষ্টামি করতো আর বলতো তোর নিশ্চয়ই পছন্দ আছে বাট আমাদেরকে বলছিস না। বিষয়টা এমন যেন প্রেম না করে থাকাটা বড় একটা অযোগ্যতা! আমি বললাম না আমার কোন পছন্দ নেই তবে সানজিদা মেয়েটা দেখতে সুন্দর। এটা শুনেই বন্ধুরা ৪/৫ জন মিলে সানজিদাকে গিয়ে আমার জন্য প্রপোজ করে বসল। সানজিদাও কোন সময় না নিয়ে সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল যেন সে এটার অপেক্ষায় ছিল। আচমকা এ বিষয়টি এভাবে হয়ে যাবে আমি নিজেও ভাবিনি।
ছবিঃ তারপর এভাবে কতদিন?
আবিরঃ না বেশিদিন নয়। আড়াই থেকে তিন মাস হবে। মাঝে মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা করতাম এবং মাত্র ২ দিন ওদের বাসা্য় গিয়ে দেখা করেছি মাত্র।
ছবিঃ মোবাইলে কথা হতো?
আবিরঃ না, কারন তখন মোবাইল ছিল না।
ছবিঃ এরপর?
আবিরঃ তারপর বিষয়টি তোমার আম্মু কিভাবে জানি জানতে পারে। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি দেখা করি তোমার আম্মুর সাথে। তিনি অত্যন্ত স্নেহশীল মনে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন সানজিদার সাথে তোমার নামে একটা কথা শুনলাম, কথাটা কি সত্যি? আমি বললাম এমনি কথা হয় আন্টি। আন্টি আমাকে বুঝিয়ে বললেন এটা ঠিক নয় আবির। আমি তোমাকে যেরকম জানি তাতে আশা করি বিষয়টি নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবা। আমি আন্টির কথায় সায় দিয়ে চলে আসি।
ছবিঃ তারপর কি সানজিদা আপুকে না করে দিছো?
আবিরঃ হ্যাঁ তার দুই দিন পরই না করে দিয়েছিলাম। তোমার আম্মুর কথাগুলো আমাকে খুব ভাবালো তার উপর আমার আম্মুও আমাকে অনেক বোঝালো যে তুইতো মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হইছিস। কবে পড়াশুনা শেষ করবি কবে কি, এসব বাদ দে। এসব কিছু ভাল দেখায় না। তারপর দিন সানজিদাকে কলেজে ডেকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।
ছবিঃ ও আচ্ছা। ভার্সিটি লাইফে কাউকে পছন্দ ছিল?
আবির: না। ভার্সিটির ক্লাস শুরু হওয়ার পর গোছালো লাইফ লিড শুরু করি। সংগত কারণেই কোন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ানো সম্ভবপর ছিল না। তবে সানজিদাকে না করার পর থেকে খুবই একাকীত্ব অনুভব করতাম। ঠিক সে সময়টা থেকে তোমাকে নিয়ে খুব বেশী ভাবতাম। তোমাকে সবসময়ই অনুভব করতাম, তুমি সবসময় ছিলে আমার অন্তর জুড়ে।

এরকম প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছবি আর আবিরের মাঝে আলাপ হতো। এভাবে চলার মাঝেই কিছুদিন পর রাত ১২ টার পর প্রায় ছবির মোবাইল ওয়েটিং-এ দেখতে পায় আবির। আবির এ বিষয়ে ছবিকে জিজ্ঞেস করলে ছবি বলতো তার ভাইয়েরা বাইরে থেকে ফোন দিয়েছে বা কোন বান্ধবী ফোন দিয়েছে কিন্তু আবির তার কথাগুলো পজিটিভলি মেনে নিত। কোন প্রকার সন্দেহ প্রকাশ করতো না যদি আবার ছবির সাথে জগড়া হয় বা সম্পর্কে চিড় ধরে এই ভয়ে। একদিন রাতে এরকম একটি বিষয় নিয়ে আবিরের খুব মন খারাপ হয়। এজন্য ১ দিন কথা বন্ধ থাকে তাদের মধ্যে। আবির রাতে ঘুমুতে যায় কিন্তু তার ঘুম আসেনা। ছবিকে সে এত্ত ভালবাসে, এত অনুভব করে যে সারাক্ষণ শুধু তাকে নিজের মত করে পেতে চায়। নির্ঘুম আবির ভোর সাড়ে চারটায় তার ফেইসবুকে লগইন করে। ছবিকে উদ্দ্যেশ্য করে আল মাহমুদের লেখা আবিরের প্রিয় একটি কবিতা তার ওয়ালে পোষ্ট করে। তা হল:
কেনো জানি মনে হয়
আমি যেভাবেই যাই
শেষ পর্যন্ত তোমার কাছেই পৌছাবো..
সবাই যেমন বলে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত।
তুমিই আমার মঞ্জিল
কী হবে তখন?
যখন আমার দিশেহারা চোখ তোমাকে দেখতে পাবে....
হাসপাতালে চোখের রোগীদের দেখেছি,
অপারেশনের ব্যান্ডেজ খুলতেই তাদের সেকি কাঁপুনি,
সত্যি যদি চোখ মেলে কাউকে না দেখে!
আমিও ভয় পাই
না পৌছুতে পারি,
ধরো পৌছেও যদি তোমাকে না পাই!
কিংবা আছো কিন্তু আমার সাথে কোন অজ্ঞাত কারণে দেখা করলেনা,
ভাবো তখন আমার আর কী থাকবে?
যা ফেলে এসেছি তা কোন দিনই যেমন ফিরে পাবনা...
তেমনি সামনে থাকবে না পাওয়ার অন্ধকার, না ফেরার এক দীর্ঘ পথ, আর যাপনের অনুপযোগী এক অসহনীয় আয়ুস্কাল....
দেখো আমি যা ফেলে এসেছি এর নাম দূঃখ,
আমি যা বহন করে এনেছি এর নাম জ্বালা,,,
আমার ভার নামাবার জন্য তুমি ছাড়া কেউ কি আছে?
তুমি সব জানো, সব বোঝ।
আমাকে পরিত্যাগ করার কথা হয়তো তোমার কাছে মহা ঠাট্টার ব্যাপার,,,
তবুও আমার ভয় জানিনা কেনো,,,
তুমিতো জানো তোমার কাছে পৌছুনোর পথ বা গন্তব্য সম্বন্ধে আমার কোন ধারণাই নেই,,,
শুধু জানি তুমি সেখানে আছো আমার পরম আত্নীয়, আমার পরিসমাপ্তির বিশ্রাম, আমার তৃষণার ঠান্ডা শরবত, আমার উপবাসের অন্ন, রুচির ব্যঞ্জন......


পরদিন সকালে ছবি আবিরের ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখতে পায়। ছবি বুঝতে পারে আবির সত্যি তাকে কত ভালবাসে। ছবিকে ছাড়া আবির নিজেকে কতটা অসহায় মনে করে তা ছবি বুঝতে পারে। তারপর ছবি আবিরের সাথে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে কথা বলে। সে বলল যে মানুষটা তাকে এত ভালবাসে সে কখনো এই মানুষটাকে ভুলতে পারবে না। ছবির এমন আবেগঘন কথোপকথনে ছবির প্রতি আবিরের সব রাগ অভিমান মুহুর্তে মন থেকে মুছে যায়।
ছবি ও আবিরের সম্পর্ক ভালভাবে চলছিল। দিনে দিনে তাদের সম্পর্ক যেন আরও পরিনত হতে লাগলো। কিন্তু আবির একটা বিষয় লক্ষ্য করলো ছবি প্রায়ই হঠাৎ করে আনমনা হয়ে যায়। আবির ছবির প্রতি খুবই যত্নশীল হয়। ছবিকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যেন সে পড়াশুনায় মনযোগী হয়, ফ্যামিলীর অন্যান্য সদস্যদের মত নিজেকে আদর্শ চরিত্রবান তথা পর্দানশীল করে গড়ে তোলে। ছবিও আবিরের কথায় সায় দেয় কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভুলে যায়। আরেকটি বিষয় আবির খুব লক্ষ্য করলো ছবি প্রায় হতাশায় ভোগে এবং নিজে নিজে কনফিউজড থাকে। তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে স্থির চিন্তার দেখতে পায় না আবির। আবির যা বুঝতে পারে সেটা হল ছবি তার অতীত স্মৃতিগুলো থেকে নিজেকে বের করতে পারেনি। ছবি প্রায়ই সেগুলো নিয়ে ভাবে, একদিন রাতে তাই কথোপথনের এক পর্যায়ে আবির ছবিকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে তোমার ছবি? তোমার মানসিক অবস্থা সবসময় এমন আনমনা থাকে কেন?
ছবিঃ জানিনা।
আবিরঃ কেন জানোনা?
ছবিঃ আচ্ছা আবির আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দিবা?
আবিরঃ কি?
ছবিঃ মানুষ নাকি প্রথম প্রেম ভুলতে পারেনা কথাটা কি ঠিক?
আবিরঃ এটা আসলে একটা আপেক্ষিক বিষয়।
ছবিঃ মানে?
আবিরঃ দেখো পরিণত বয়সের প্রেম আর অবুঝ বয়সের প্রেম এক নয়, দূটোর অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা। কেউ যদি ম্যাচিউরড বয়সে সবকিছু বিবেচনা করে কাউকে ভালবাসে আর কোন কারনে তাকে হারায় তাহলে সেক্ষেত্রে মানুষ সহজে সেটা ভুলতে পারেনা। আর যদি কেউ অবুঝ বয়সে কোন কিছু না বুঝেই আবেগের বশে প্রেমে জড়ায় এবং পরবর্তীতে বুঝতে পারে যে এটি তার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নয় ও এ সম্পর্ক থেকে সরে আসে সেক্ষেত্রে এমন অনুভূতি হওয়ার কথা নয়।
আচ্ছা তুমি কি 'ন' কে ভুলতে পারছো না?
ছবিঃ আসলে বিষয়টা তা নয়। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কে অনেক কিছুইতো হয়। সবকিছু কি চাইলেই ভুলে থাকা যায়?
আবিরঃ যদি মিছু মনে না করো আমি এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানতে চাই। কি হয়েছিল তার সাথে তোমার, আমার সাথে শেয়ার করা যাবে?
ছবিঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) সব, সব কিছু।
আবিরঃ সবকিছু মানে? তুমি ওর বাসায় গিয়েছিলে?
ছবিঃ হ্যাঁ।
আবিরঃ (কিছুটা অপ্রস্তুত ও জড়তার সাথে জিজ্ঞাসা) ওর সাথে বিছানায় গিয়েছিলে?
ছবিঃ (কাঁদো কাঁদো স্বরে) হ্যাঁ।
আবিরঃ কয়বার?
ছবিঃ কয়েকবার।
আবিরঃ হুম। এমন করেছিলে কেন ছবি?
ছবিঃ ওর সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে না এটাতো আমি কখনোই ভাবতে পারতাম না। আমিতো ওকে বিয়ে করবো ডিটারমাইন্ড ছিলাম।
আবিরঃ ও আচ্ছা (দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে)।
ছবিঃ দেখো আজকাল যেসব ছেলেমেয়েরাই প্রেম করে প্রায় সবাইতো পিজিক্যাল রিলেশান করে থাকে। আমি সব সত্যই তোমাকে শেয়ার করেছি, কোন কিছু লুকাইনি, তুমি আমাকে এসব ক্ষমা করো প্লীজ।
আবিরঃ চুপ করে শুনলো কিন্তু কিছু বললো না।
ছবির একথাগুলো শুনে আবির অত্যন্ত বিমূর্ষ হয়ে গেল। সে ছবির এসব কথাগুলো শুনার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না। সে কখনোই ছবিকে এই পর্যায়ে ভাবতেই পারতো না। আজ ছবির মুখে সে যা শুনলো তাতে ছবির প্রতি তার ধারণা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল। আবির এ বিষয়ে আর কোন কিছু শুনতে না চেয়ে ছবিকে স্বান্তনামূলক কিছু কথা বলল। ছবিকে বলল দেখো মানুষের জীবনে কতকিছুইতো ঘটে, সব কিছু মনে রাখলে কি আর জীবন চলে? জীবনের প্রয়োজনে ভুল, ত্রুটি, অন্যায় মন থেকে মুছে দিতে হয়। সবকিছু ভুলে নিজেকে নতুন করে তৈরী করো দেখবে জীবনটা অনেক সুন্দর। ছবি মন দিয়ে কথাগুলো শুনলো কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন করে গড়ে তোলার দৃঢ়সংকল্পের কথা ব্যক্ত করে। তারপর আবির ছবির সাথে আরও প্রায় ১ সপ্তাহ কথা বলে। ছবিকে অনেক মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলে ছবির মানসিকতাকে নিজের মত করে ডািভার্ট করার চেষ্টা করে আবির। কিন্তু ছবির মাঝে কার্যকর কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। ছবি কখনো খুবই আবেগী হয়ে কথাবার্তা বলে আবার কখনো খুব আনমনা হয়ে থাকে। উদাসীন মনে জানালার পাশে বসে আলাশপানে চেয়ে থাকে আর অতীতের স্মৃতিতে ডুব দেয়। সে নিজেই খুব অবাক হয় কারণ তার মাঝে যেটুকু অনুশোচনা আসে তার চেয়ে বেশী পেছনের স্মৃতিগুলো তাকে নাস্টালজিক করে দেয়। ছবির এই উৎভ্রান্ত মানসিক অবস্থা আবিরকে খুব কষ্ট দেয়। আবিরের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে। আবির এখান থেকে নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ছবির সাথে শেষবারের কথোপকথনঃ
আবিরঃ হ্যালো।
ছবিঃ হ্যালো ক্যামন আছো?
আবিরঃ জানিনা ক্যামন আছি তবে সামনের দিনগুলোতে ভাল থাকার চেষ্টা করবো।
ছবিঃ কেন কি হয়েছে আবার?
আবিরঃ কিছু হয়নি। ছবি আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো আশা করি শুনবে।
ছবিঃ হ্যাঁ শুনবো বলো।
আবিরঃ ছবি তুমিতো জানো তোমাকে আমি কতটা পছন্দ করি, কতটা ভালবাসি। কিন্তু আমার দূঃখ আমার কল্পনার ছবি আড় বাস্তবের ছবির মাঝে অনেক তফাৎ। আমি তোমাকে আর কিছু বলতে চাইনা, তোমাকে হার্ট করতেও চাইনা। তবে যেনে রেখো যে ছবি আমার হৃদয়ে ছিল, যে ছবিকে আমি ভালবাসতাম, সে ছবিকে আমি ভালবাসবো সারাজীবন। বাস্তবের ছবি থাকুক তার মত করে যেখানে খুশি যেভাবে। তোমার সাথে আমার আর কখনো হয়তো কথা হবে না, যোগাযোগও হবে না । ভাল থেকো সবসময়।
ছবিঃ (চুপ করে থাকলো, কোন কথা বলল না)
ফোন সংযোগ কেটে হয়ে যায় দূজনার যোগাযোগও সারাজীবনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এদিকে আবির অনেক চেষ্টা করে ছবিকে সম্পূর্ণভাবে ভুলে যেতে কিন্তু মন থেকে ছবির ভাবনাগুলো আবির ভুলতে পারে না এই দূঃসহ যন্ত্রণা তাকে কুকড়ে কুঁকড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×