বইয়ের নাম : "ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে"
লেখিকা : তসলিমা নাসরিন
বইটি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যম প্রকাশনী থেকে কলকাতা বইমেলা ২০১৩'তে প্রথম প্রকাশিত হয়। অবশ্য এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। এই যেমন একুশে বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে।
লেখিকা একজন অতিবিতর্কিত এবং ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবেই সমধিক পরিচিত। তার ব্যাপারে আমারও মূল্যায়ন তাই। কিন্তু এর বাইরেও একজন সাহিত্যিক হিসেবে তার লেখনীর উদ্দ্যেশ্য জানা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়। ইতোপূর্বে তার যে বইগুলো পড়েছি তার সবগুলোতেই ইসলাম বিদ্বেষ ও যৌন সুড়সুড়ি বিদ্যমান ছিল। তবে এই বইটি কিছুটা ব্যতিক্রম! এই বইয়ের লেখিকা তসলিমা নাসরিন না হয়ে যদি হুমায়ুন আহমেদ বা ইমদাদুল হক মিলন হতো তাহলে উপন্যাসটি অনেক বাহবা পেত। বইটি না পড়লে হয়তো আমি জানতাম না যে তসলিমার মত একজন লেখিকার লেখা পাঠকের চোখে জল আনতে পারে!
মূলত দুই বোন যমুনা ও নুপুরের শৈশব থেকে একসাথে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বেড়ে উঠা, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত খুন করে যমুনার সন্তানসহ দেশত্যাগ, বিয়ের পর নুপুরের স্বামীসহ আমেরিকায় প্রবাসযাপন, নুপুরের একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যু ইত্যাদি ঘিরে উপন্যাসটির গল্প সাজানো। বইটিতে ফুটে উঠেছে ঢাকা শহরের উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর পুরুষের গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে ও পরকিয়া প্রেমের গল্প যা বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র। ভাই কতৃক বাবার সম্পত্তির পুরোটাই জোর করে দখল করে নেয়া, অতিরিক্ত আদর আর উদাসীনতার দরুণ সন্তান কিভাবে মাদকের প্রতি আসক্ত হয় এবং মৃত্যুমুখে পতিত হয় তা সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। যমুনা ও নুপুরের পরস্পরের প্রতি ভালবাসা, আবেগ, অনুভূতি, নানান ঘটনা যেকোনো পাঠককেই নাড়া দিবে। যমুনার পাশা নামক ছেলের সাথে সম্পর্ক ও এর পরিণতি এবং সবশেষে যমুনার নাস্তিকতা ও একপর্যায়ে সমকামিতার স্বভাব পাঠককে দারুণভাবে আঘাত করবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত একজন লেখক/লেখিকা ব্যক্তিগত জীবনে যে চিন্তা চেতনারই অধিকারী হোক না কেন সাহিত্যিক হিসেবে তার লেখনিতে সমাজের কিছু বাস্তব চিত্র উঠে আসতে পারে নিশয়ই! সবশেষে এটুকু বলতে পারি নাস্তিকতা এবং সমকামিতার মতো স্পর্শকাতর ও নিকৃষ্ট প্রসঙ্গ এভোয়েড করলে উপন্যাসটির সৌন্দর্য ও গ্রহণযোগ্যতা উভয়ই বৃদ্ধি পেত!!