১. বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষিত নাগরিক সমাজ ও সচেতন ব্যক্তি মাত্রই খুবই উদ্ভিগ্ণ। অনেকেই ধারণা করেছিলেন বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলী্য জোটের সর্বাত্বক আন্দোলনের মাধ্যমে অনির্বাচিত সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। দৃশ্যত সে অবস্থা এখন আর নেই। সরকার(অনির্বাচিত) দমন পীড়ন, ঘুম, খুনের মাধ্যমে আতংক ছড়িয়ে, মামলা হামলা করে এবং মিডিয়া নি্যন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা। সারা বিশ্বের কোন ক্ষুদ্র রাষ্টও এখন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে নয়, এমনকি ইচ্ছে করলেও এই বলয়ের বাইরে থাকা সম্ভবপর নয়!
২. অনির্বাচিতভাবে দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখার থিওরিটি নতুন নয়। যার বাস্তব উদাহরণ হলো লিবিয়া, ইরাক,তিউনিশিয়া, মিশর, সিরিয়া, চীন, জিম্বাবুয়ে ইত্যাদি। তবে সবকিছুরই একটা শেষ রয়েছে। দীর্ঘ সময় পরে হলেও একটা করুণ পরিণতি এসে সবকিছুর ইতি টেনে দেয়। যেমন লিবিয়া, ইরাক, মিশর, তিউনিশিয়া। একেকজন প্রতাপশালী শাসক যুগের পর যুগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। যাদের শাসনামলে কেউ কল্পনাও করতে পারতো না তাদের পতন হবে, একটা করুণ অধ্যায়ের মাধ্যমে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটবে। তারও আগে বাংলাদেশের ৭১-৭৫ শেখ মুজিবুর রহমান এর শাসনামলেও কেউ ভাবতে পারেনি এমন বর্ষিয়ান রাজনীতিক, প্রতাপশালী শাসক, একটি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতার করুণ পরিসমাপ্তি।
৩. বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া কর্মকান্ড, ঘুম, খুন, নৈরাজ্য, ভীতিকর পরিস্থিতি ও সবকিছুতেই ক্ষমতাসীনদের "এভরিথিং ইজ আন্ডার কন্ট্রোলড" অবস্থা দেখে অনেকেই হতাশায় ভোগেন এবং বলে থাকেন এদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা আদৌ সম্ভব নয়। বিষয়টির সাথে আমিও একমত তাদের সাথে। কারণ আন্তর্জাতিক মুরুব্বিদের মুরুব্বিয়ানা ব্যতীত শুধু আন্দোলন করে ক্ষমতাচ্যুত করা সহজ নয়। যেমন সিরিয়ার বাশার আল আসাদ। নিজ দেশের লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করে দিব্বি ক্ষমতায় বসে আছে। জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে নির্বাচনে হেরেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাছার সাথে ফেভিকল আঠা লাগিয়ে ক্ষমতার গদির সাথে নিজের পাছা আটকিয়ে রেখেছে।
৪. বর্তমান সরকার(অনির্বাচিত) ভারত, চীন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক বলয়ের সাথে মিত্রতা করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রেখেছে। সেখানে যুক্ত হয়েছে খোদ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। ৫ জানুয়ারী ২০১৩ বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব সময়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত তারানকো বান কি মুনকে বাংলাদেশের সুষ্ঠু গণতন্ত্র রক্ষার্থে ৪টি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন অথচ বান কি মুন আমলে নেননি। ধারণা করা হয় ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রভাবেই মুন সাহেব বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামনো প্রয়োজন মনে করেননি।
৫. সবকিছুরই শেষ আছে এটা যেমন চিরসত্য ঠিক তেমনি বর্তমান পরিস্থিতিরও একটা ইতি নিশ্ছয়ই রয়েছে সেটাও তেমন সত্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন কোন জাতির যখন নৈতিক অধঃপতন ঘটে তখন সে জাতির উপর তিনি অত্যাচারী জালিম শাসক চাপিয়ে দেন। আর শাসকের পাপের বোঝা যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোটা জাতির উপর গজব নাযিল হয়। যেমনটি হয়েছিল আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। আমার ভয় ঠিক সেখানে। আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সমস্ত জাতির উপর কঠিন গজব আপতিত হবে, জালিমরা সমূলে ধ্বংস হবে তাদের সাথে সাথে ধ্বংস হবে একটি জাতি, একটি জাতিসত্বা। ইতিহাসের ধারাবাহিক এই ক্রান্তিকাল কখন এসে দাঁড়াবে তা সময়ই বলে দেবে।
হে রাব্বুল আলামীন আমরা অত্যন্ত দূর্বল জাতি। আমদেরকে তোমার শাস্তি থেকে রক্ষা করো, তোমার রহমতের চাদরে আমাদেরকে ডেকে রাখো, শুধু এই পরিয়াদটুকু করি।
ফকির মজুমদার শাহ
২৪.০৩.২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩৩