দীপান্বিতার হারিয়ে যাওয়া অনির্বাণ
লিখেছেন - কামরুল আরেফিন
পাঠে - ফারহা মৌরিন মৌ
আবৃত্তি ও সার্বিক সম্পাদনায়
ফারহা মৌরিন মৌ
কামরুল আরেফিনের ফেসবুকের পাতা থেকে নেয়া
#দ্বিপান্বিতার_হারিয়ে_যাওয়া_অনির্বাণ।
আমি দ্বিপান্বিতা। অনির্বাণ আমার বন্ধু। খুব কাছের বন্ধু।
আসলে শুধু বন্ধু, কাছের বন্ধু বলে ওকে পরিচয় করিয়ে দিলেও, ও এরচে বেশি কিছু।
কিন্তু সে আবার আমার প্রেমিকও নয়। প্রেমিক বলতে কেমন যেন বাধোবাধো ঠেকে।
কিন্তু অনির্বাণ নামটি আমার মনে হলেই কেমন যেন বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।
আমি আসলে বুঝতে পারছি অনির্বাণ আস্তে আস্তে আমার মন ছুঁয়ে যাচ্ছে।
অনির্বাণ আমাকে ক্রমাগত জড়িয়ে নিচ্ছে তার মায়াজালে৷
আমি যেদিন অনির্বাণের প্রেমে পড়লাম, সেদিন খুব কেঁদেছিলাম৷
নিজেকে ওর মাঝে হারানোর জন্য নয়, আমি অনির্বাণকে নিজের ভেতর দেখতে পাচ্ছিলাম।
একটা মায়াবী চেহারার নিষ্পাপ নিষ্কলুষ শিশুর মত,
প্রভূ কি আমায় ভুল করে অনির্বাণকে আমায় দিলেন!
এতটা সুখ কি আমার একজীবনে সইবে?
অনির্বাণ, কবি হতে চাইতো। আমি নাকি ওর সবচে প্রিয় কবিতা৷
অনির্বাণ, পাখি হতে চাইতো। বলতো আমি নাকি ওর উড়ার ইচ্ছেডানা।
নদী হতে চাইতো অনির্বাণ, আমি যেন তার ঢেউ হই,
সে খুব করে চাইতো আমাকে।
আমি তখনো অনির্বাণের হতে পারিনি।
অনির্বাণের মুখে সবসময় একটা প্রচ্ছন্ন হাসি লেগে থাকতো, কথা বলার সময় মনে হত সে হাসছে। ওর চোখটাও কি হাসে?
আমি খুব করে দেখতে চাইতাম।। কী অসম্ভব সুন্দর ছলছল দুই চোখ!
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখা হলেই ওর চোখে তাকিয়ে থাকতাম, আমার সবটুকু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেই শেষ হয়ে যেত।
মনে হত সময় আমাকে নিয়ে উড়ে উড়ে চলে এসেছে৷ যখন অনির্বাণের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় হত, খুব কান্না পেত।
কিন্তু অনির্বাণ সে ছিল ভীষণ খেয়ালি।
আমাকে ভালোবাসার কথা বলে বলে পাগল করে দিত,
আমাকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভাসিয়ে নিয়ে যেত।
অনির্বাণ বলতো, আমাকে নাকি একজোড়া ডানা এনে দেবে,
বলতো, আমাকে নাকি সে চোখ বন্ধ করে দেখতে পায়।
আমার শরীরে সুবাস পায়, আমার পদশব্দ চিনতে পারে,
আমার চুলে নাকি গোলাপের সুবাস আছে।
হয়তো আছেও, দেখা হলেই অনির্বাণ, লম্বা শ্বাস টেনে আমার চুলের ঘ্রাণ নিতো।
অনির্বাণের সেই লম্বা দম টানা মায়াময় মুখটা আমার চোখে ভাসতে থাকে।
এত মায়া লাগতে থাকে যে, আমার ভীষণ কান্না পায়।
আমার চোখে ভীষণ সহজে জল গড়িয়ে পড়ে। অনির্বাণ খুব খুব হাসতে থাকে।।
সেই অনির্বাণ একদিন হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে আমায় বললো, বিয়ে করবে,
আমি অবাক হয়ে অনির্বাণের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
অনির্বাণের মুখে ঠোঁটে ভাষায় অসম্ভব অস্থিরতা। এই অনির্বাণকে আমি কখনো দেখিনি।
এই অনির্বাণ, আমার দেখা অনির্বাণের সাথে কোন মিল নেই। এই অনির্বাণ খানিকটা বেপরোয়া।।
হঠাৎ অনির্বান ঠোঁট নামিয়ে আনলো আমার ঠোঁটে।
আমি সাড়া দিতে না দিতেই ঠোঁট সরিয়েও নিল, কিছু না বলেই অনির্বাণ যেমন এসেছিল তেমনি চলেও গেল।
তারপর অনির্বাণের সাথে আমার আর দেখা হয়নি। অনেক খুঁজেও আমি আর অনির্বাণের দেখা পাইনি।
এরপর অনেকদিন পর কানে এলো অনির্বাণ আর নেই।
আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার কয়েকদিন পরেই একদিন রাস্তা পাড় হবার সময় একটা ঘাতক ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে গেছে৷
স্পটডেড। চিকিৎসার কোন সময়ই দেয় নি অনির্বাণ। যেমন সহজে অভিমান করতো, তেমনি করেই আরও বড় কোন অভিমান নিয়ে আমার অনির্বাণ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে৷
অনির্বাণ ঠিকই কবি হয়েছিল, ওর বুক পকেটে আমাকে নিয়ে ১৩৫টি কবিতা ছিল।
আমি কবিতা হতে পারিনি।
অনির্বাণ আমাকে ছেড়ে অনন্তকালের পথে পাখি হয়েছিল,
আমি ডানা হয়ে তার সাথে জুড়ে থাকতে পারিনি।
অনির্বাণ রাস্তায় ট্রাক চাপায় রক্তে ভেসেছিল, নদীও হতে পেরেছিল,
আমি পারিনি তার বুকের ঢেউ হতে।।
আহ্, অনির্বাণ, যদি জানতে, যদি জানতে আমি তোমার কাছ পাওয়া হঠাৎ ঠোঁটে ধরা সেই মুহুর্তটুকু বুকে জমিয়ে রেখেছি।
অনির্বাণ একদিন আমিও সেই ঠোঁটে ধরা মুহুর্তটুকু তোমাকে ফেরত দিব।
অনির্বাণ সেদিন তুমি নিশ্চিত একজন কবি আর আমি তোমার লেখা সবচেয়ে সুন্দর কবিতা হব।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২২