somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্র্যাঙ্ক উইলিয়াম এবাগ্নেল : বিস্ময়বালক নাকি সাধারণ কোন জালিয়াত ???

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন বিস্ময়বালকের গল্প বলি। ১৯ বছর বয়সে এই বালক রীতিমত মিলিওনিয়ার হয়ে যান । অন্তত ৮ টা পরিচয় ছিল তাঁর । যার মধ্যে পাইলট, ডাক্তার, আইনজীবী, ভার্সিটির লেকচারার, U.S. Bureau of Prisons agent উল্লেখযোগ্য । যারা বেশ অবাক হয়ে চিন্তা করছেন ,একটা মানুষ এতো ট্যালেন্টেড হয় কিভাবে ? তাঁদের জন্য বলে রাখি ,ইতিহাসের জনপ্রিয় (!) চেক জালিয়াতের সম্পর্কে গল্প করতে যাচ্ছি আমরা । যিনি ২১ বছর বয়সের মধ্যে চেক জালিয়াতি করে ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলারের মালিক হয়ে যান । এই বয়সের মধ্যেই পুলিশ কাস্টডি থেকে দুই বার পালিয়েছিলেন তিনি । যেখানে বর্তমানে তাঁকে জেলে থাকার কথা, সেখানে তিনি FBI একাডেমির লেকচারার এবং FBI এর অন্যতম কন্সাল্টেন্ট হিসাবে নিযুক্ত আছেন ।


গল্পের প্লটটা ইতিমধ্যে বেশ পরিচিত লাগছে ? হ্যাঁ , গল্পটা পরিচিত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক । কারণ , এই লোকটার জীবনীর উপর ভিত্তি করে খুব জনপ্রিয় একটা মুভি আছে হলিউডে । স্পিলবার্গের Catch Me If You Can ...
আমাদের গল্পের নায়কের নাম ফ্র্যাঙ্ক উইলিয়াম এবাগ্নেল (জুনিয়র) , ১৯৪৮ সালে এমেরিকার নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন তিনি । চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় । তাঁর বাবা রিপাবলিকের রাজনীতির সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন । পাশাপাশি ব্যাবসাও করতেন । যথারীতি তাঁর মা একসময় খেয়াল করলেন, তাঁর হাজবেন্ড তাঁকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না এবং এটার জন্য তারা ডিভোর্স নিয়ে আলাদা হয়ে যান । এবাগ্নেলের বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর । বাবার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ।
এবেগ্নেলের প্রথম অপরাধ শুরু হয় ১৫ বছর বয়সে । এবেগ্নেল তাঁর বাবার কাছ থেকে একটা ট্রাক এবং গ্যাসোলিন কেনার জন্য ক্রেডিট কার্ড পান । তাঁর বাবা ভেবেছিলেন ছেলেটা তাঁকে পার্ট টাইম বিজনেসে সাহায্য করবে । কিন্তু ডেটিং এর টাকা ম্যানেজ করতে গিয়ে এবেগ্নেল ক্রেডিট কার্ডটা ব্যাবহার করেন । যেহেতু এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শুধু ট্রাক সম্পর্কিত জিনিসপত্র কেনা যেত । সেহেতু তিনি একটা গ্যাস স্টেশন থেকে ট্রাকের জন্য টায়ার, ব্যাটারি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র কিনলেন ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এবং গ্যাস স্টেশনের একটা কর্মচারীকে রাজি করালেন , এই জিনিসপত্রগুলা কম দামে তাঁর কাছ থেকে কিনে নেয়ার জন্য । মাস শেষে এবেগ্নেলের বাবা দেখেন ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত ৩,৪০০ ডলারের বিল আসছে ।
এবাগ্নেলের মা তাঁর ছেলের এই অধঃপতনে হতাশ হয়ে তাঁকে “বিপথগামী ছেলেদের স্কুলে” ভর্তি করিয়ে দেন । মোটামুটি আশেপাশে ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলোর উপর হতাশ হয়েই এবেগ্নেল ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং আর কখনই তাঁর বাবা মায়ের সাথে দেখা করেননি ।
এবাগ্নেলের ব্যাংক একাউন্টে খুব কম টাকা ছিল এবং একই সাথে তাঁর কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না । দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য এবাগ্নেল চেক জালিয়াতি করা শুরু করেন সেই বয়সে । শুরুর দিকে নিজের একাউন্টের চেক ব্যাবহার করে ব্যাংক থেকে বাকিতে টাকা তোলা শুরু করেন । কিন্তু কিছুদিন পর তাঁর এ ট্রিক আর কাজ করে না । যেহেতু একাউন্টে অনেক কম টাকা জমা ছিল, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর একাউন্টে overdraw (বাকি) এর পরিমান এতই বেশি হয়ে যায় যে ব্যাংক তাঁকে আর টাকা দিতে রাজি হয় না । কাজেই তিনি অন্য ব্যাংকে নতুন একাউন্ট খোলেন মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এবং একই ভাবে বাকিতে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা শুরু করেন । এইসময়ে তিনি তৎকালীন ব্যাংকিং এর অনেক ফাঁক ফোঁকর খুঁজে বের করেন । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নিজের হাতে জাল চেক ( Payroll Check ) তৈরি করা । এই “পে রোল” চেক জমা দেয়ার সময় তিনি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতেন তাঁকে অগ্রিম ক্যাশ দেয়ার জন্য এবং তিনি সেটা পেতেনও ।
একই সাথে তিনি তাঁর ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার খালি ডিপোজিট স্লিপে প্রিন্ট করতেন এবং সেগুলাকে রিয়েল ব্ল্যাংক স্লিপের উপর আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতেন । ঐসব ব্যাংকের স্লিপে যে ডিপোজিটগুলা জমা হতো, সেগুলা জমাকারীর একাউন্টের পরিবর্তে সরাসরি তাঁর ব্যাংক একাউন্টে চলে যেত ।
এবেগ্নেল খেয়াল করলেন এয়ারলাইন এবং গাড়ির ব্যবসায়ীরা এয়ারপোর্ট প্রাঙ্গণে একটা ড্রপ বক্সে তাঁদের প্রতিদিনের কালেকশনের টাকা চেইন টানা ব্যাগে করে ডিপোজিটের জন্য জমা করে আসতো । লোকাল কস্টিউম শপ থেকে একটা সিকিউরিটি গার্ডের ড্রেস ম্যানেজ করে তিনি এয়ারপোর্ট প্রাঙ্গনে সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে প্রবেশ করেন । তিনি ড্রপবক্সের উপর একটা চিহ্ন লাগালেন যার অর্থ এই দাড়ালো , “বক্সটি ব্যাবহারের অনুপযোগী , ডিপোজিটগুলা কর্তব্যরত গার্ডের মাধ্যমে এখান থেকে সরানোর জন্য বলা হচ্ছে ।” তারপর তাঁকে কেউ কোন বাঁধা দেয়নি টাকাগুলো নিয়ে আসার সময় ।
তিনি নিজেও ভাবেননি তাঁর এই আইডিয়াওটা ঠিকমত কাজ করবে । পরবর্তীতে নিজের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম মানুষকে বিশ্বাস করতে দেখে যে, একটা ড্রপবক্স ব্যাবহারের অনুপযোগী হতে পারে !!!”


এভাবে কিছুদিন চলতে চলতে এবাগ্নেল ভাবলেন, তাঁর এমন কিছু করা উচিত যেটা দিয়ে সহজেই মানুষকে ইম্প্রেস করা যায় । সাথে চেক জালিয়াতির ব্যাপারটা তো আছেই । এয়ারলাইন পাইলটদের সম্মান তখন আকাশচুম্বী । তাছাড়া এই পেশায় থাকলে বিনামূল্যে পৃথিবী ভ্রমন করা যাবে । চিন্তা ভাবনা করে ফোন দিলেন Pan American World Airways (Pan Am)-এ । নিজের পরিচয় দিলেন কো-পাইলট হিসাবে এবং জানালেন তাঁর ইউনিফর্ম পরিষ্কার করার সময় হোটেল থেকে হারিয়ে গিয়েছে । এয়ারলাইন্সের লোকজন তাঁর কথা বিশ্বাস করে তাঁকে জানালেন কিভাবে নতুন ইউনিফর্ম পাওয়া যাবে । পরবর্তিতে “ফেইক এমপ্লয়ার আইডি” ব্যাবহার করে তিনি ইউনিফর্মটা ম্যানেজ করেন । কিছুদিনের মধ্যে তিনি একজন স্কুল ছাত্র হিসাবে Pan Am এর অফিসে গেলেন এবং স্কুলের জার্নালে একটা আর্টিকেল পাবলিশের কথা বলে ফ্লায়িং সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করলেন । একজন পাইলট আরেকজন পাইলটের সাথে কোন ধরণের কথাবার্তা বলে, কি প্রশ্ন করে এইসব যাবতীয় তথ্য তিনি খুব সহজেই পেয়ে যান । এরপর জাল পরিচয়পত্র তৈরী করে শুরু হয় তাঁর পাইলট লাইফ । Pan Am এর মতে, এবেগ্নেল ২ বছরে ১,০০০,০০০ মাইল ( ১৬০০,০০০ কিমি ) পাইলট হিসাবে আকাশে ওড়েন । ২৫০ এর বেশি ফ্লাইটে এইসময় তিনি ২৬ টির মত দেশ ঘুরেছিলেন । তাঁর খাবার খরচ, হোটেল খরচ থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ এয়ারলাইন্স কোম্পানির কাছে বিল হিসাবে চলে যেত ।


মাঝে মধ্যেই পাইলটরা এবেগ্নেলের হাতে প্লেনের কন্ট্রোল তুলে দিতেন । এবার ৩০,০০০ ফুট উপরে পাইলটরা তাঁকে প্লেনের কন্ট্রোল নিতে বলেন । এবেগ্নেল প্লেনের কন্ট্রোল নিয়েই সেটাকে অটোপাইলট মুডে নিয়ে যান । এ সম্পর্কে তিনি পরবর্তিতে বলেন, “আমাকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়েছিল ঐ সময়টাতে। আমার হাতে ১৪০ জনের জীবন, নিজেরটা সহ এবং প্লেন দূরের কথা, আমি ঘুড়ি উড়াতেই জানতাম না ।”
এভাবে চলার পর এবাগ্নেল যখন বুঝতে পারলেন, তিনি খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বেন এয়ারলাইন্সের হাতে । তখন তিনি প্রফেশন চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেন । জর্জিয়াতে বাসা ভাড়া নেবার সময় নিজের নামের সাথে যুক্ত করেন ডাক্তার পদবী । পাইলট লিখলে বাড়ির মালিক এয়ারলাইন্সে খোঁজ নিতে পারে , এর জন্যই নতুন পরিচয় । যাই হোক, যে বাসাতে তিনি উঠেছিলেন সেখানে আগে থেকে একজন ডাক্তার থাকতেন । ডাক্তার ভদ্রলোক এবাগ্নেলকে অফার দিলেন জর্জিয়া হস্পিটালের ইন্টার্নদের সুপারভাইজার হিসাবে যোগদান করতে । এবেগ্নেল অফারটা লুফে নিলেন ।কারণ, সুপারভাইজারকে কোন মেডিকেলের কাজ করা লাগে না বললেই চলে । এইসময় তাঁর কাছে কোন রোগী আসলে, তিনি ইন্টার্নদের হাতে রোগী দেখার দায়িত্ব তুলে দিতেন । এখানে ১১ মাস চাকরী করার পর ,একদিন ইমার্জেন্সীতে আসা একটা বাচ্চাকে চিকিৎসার দায়িত্ব পান তিনি, অক্সিজেনের অভাবে বাচ্চাটা নীল হয়ে গিয়েছিল । এবেগ্নেল বুঝতে পারছিলেন, এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে খেলার কোন মানে হয় না । এর পর তিনি চাকরী ছেড়ে দেন ।
আইনজীবী হবার ব্যাপারটা সে সময়ে বেশ কঠিনই ছিল । এবাগ্নেল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটা জাল সার্টিফিকেট তৈরী করে ফেললেন । কিন্তু সমস্যা হলো “লুসিয়ানা বার এক্সাম” , যেটা বাধ্যতামূলক ছিল আইনজীবী হতে চাইলে । তিনি সব বাদ দিয়ে এই পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা শুরু করেন এবং প্রথম ২ বার পরীক্ষাতে ফেল করেন । পরবর্তীতে টানা ৮ সপ্তাহ পড়ালেখা করে তিনি ঐসময়ের কঠিনতম পরীক্ষায় পাস করে গেলেন এবং লুসিয়ানা স্টেট এটর্নী জেনারেলের অফিসে চাকরী করা শুরু করলেন । ঐ অফিসে একজন হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট চাকরী করতেন এবং তিনি এবাগ্নেলের সাথে ক্যাম্পাস লাইফ নিয়ে কথাবার্তা বলতে চাইলেন । এবাগ্নেলের পক্ষে অসম্ভব ছিল হার্ভার্ডের লাইফ স্টাইল সম্পর্কে জানা । লোকটা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতেন এবাগ্নেলকে । এভাবে ৮ মাস থাকার পর এবাগ্নেল বুঝলেন, তাঁর সহকর্মি তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে খোঁজাখুঁজি করা শুরু করেছেন । ধরা পড়ার ভয়ে তিনি চাকরীটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ।
এবেগ্নেল দাবী করেন যে জীবনের একটা সময়ে তিনি Brigham Young University তে সোশিওলজির টিচিং এসিস্টেন্ট হিসাবে ১ সেমিস্টার ক্লাস নিয়েছিলেন । এ সময় তাঁর নাম ছিল ফ্র্যাঙ্ক এডামস ।
পরের ২ বছর এবেগ্নেল একটার পর একটা চাকরী করেন এবং চেক জালিয়াতি করতে থাকেন । যখন দেখলেন তিনি ২.৫ মিলিয়ন ডলার জমিয়ে ফেলেছেন চেক জালিয়াতি করে , তখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ারে পাড়ি জমান । কিন্তু সেখানে তাঁর এক্স গার্লফ্রেন্ড তাঁকে একটা “WANTED” পোস্টারে দেখে চিনতে পারেন এবং তাঁকে ফ্রান্স পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন । ফ্রান্স পুলিশ যখন তাঁকে ধরে ফেলে তখন ১২টা দেশের প্রশাসন এবেগ্নেলকে শাস্তি দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে । ২ দিনের ট্রায়ালের পর প্রথমে “পারপিগ্নান” জেলে ৬ মাসের জন্য কারাবাস করতে হয় এবেগ্নেলকে । সেখানে তাঁকে নগ্ন অবস্থায় একটা ছোট –অন্ধকার- নোংরা রুমে সারাদিন আঁটকে রাখা হতো । ঐ রুমে টয়লেটের জন্য কোন ব্যাবস্থা ছিল না এমনকি খাবার বা পানি খুব কম দেয়া হতো তাঁকে সেসময় ।
৬ মাস পর সুইডেনের মালমোতে আরো ৬ মাসের জন্য কারাভোগ করতে হয় তাঁকে । যদিও এই ৬ মাস আগের মত বাজে ছিল না । এখানে মানবিক সব সুযোগ সুবিধা পান এবাগ্নেল । ঐ সময়ে একজন সুইডিশ জজ U.S. State Department এর একজন অফিসারকে বলেন, এবাগ্নেলের পাসপোর্ট জব্দ করতে । সুইডেনে যেহেতু আসল পাসপোর্ট ছাড়া থাকা সম্ভব না সেহেতু তাঁকে এমেরিকাতে পাঠিয়ে দেয়া হয় । এমেরিকাতে তাঁকে বিভিন্ন অপরাধের জন্য ১২ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় ।
নিউ ইয়র্কের একটা এয়ারপোর্ট থেকে জীবনে প্রথমবারের মত পুলিশের হাত থেকে পালান তিনি । পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে তিনি একটা ব্যাংকে যান এবং ২০,০০০ ডলার সেফ ডিপোজিট থেকে তোলেন । এই টাকা নিয়ে ব্রাজিলে যাবার প্ল্যান করছিলেন এবাগ্নেল । কিন্তু ব্যার্থ হয়ে ধরা পড়েন ।
১৯৭১ সালে এটল্যান্টার Federal Detention Center থেকে আবার পালিয়ে যান এবাগ্নেল । ঐসময় সেখানে একজন প্রিজন ইন্সপেক্টার ছদ্মবেশে ইনফরমেশন কালেকশনের জন্য বন্দী সেজে ছিলেন । কারারক্ষীরা ভুলে এবাগ্নেলকে ঐ প্রিজন ইন্সপেকটার ভাবতো এবং এবাগ্নেলকে অন্যান্য বন্দীদের তুলনায় ভালো খাবার এবং সুবিধা দিতো । এবাগ্নেল এ সুযোগটা লুফে নিলেন । তিনি জিয়ান সেবরিং নামে এক বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করলেন । তাঁর এই বান্ধবী তাঁকে প্রিজন ইন্সপেকটার C.W. Dunlap এবং Sean O'Riley নামে দুইজনের বিজনেস কার্ড সরবরাহ করেন । এই Sean O'Riley ছিলেন “জোসেপ শিয়া” নামে একজন FBI এজেন্ট , যিনি এবেগ্নেলের কেসের চার্জে ছিলেন । এই কার্ডটা এবেগ্নেলের বান্ধবী একটা স্টেশনারী থেকে প্রিন্ট করিয়ে আনেন । এবেগ্নেল কারারক্ষীকে বলেন তিনি C.W. Dunlap এবং প্রমান হিসাবে বিজনেস কার্ডটা কারারক্ষীকে দেখান । তিনি আরো বলেন Sean O'Riley নামে একজন FBI এজেন্টের সাথে আর্জেন্ট মিটিং করা লাগবে তাঁর ।এইসময় Sean O'Riley এর কার্ডে যে নাম্বার ছিল সেটাতে কারারক্ষীরা ফোন দিলেন (যেটা আসলে তাঁর বান্ধবীর নাম্বার ছিল) এবং এবেগ্নেলকে জেলের বাইরে Sean O'Riley এর সাথে দেখা করার সুযোগ দিলেন !!!
অতঃপর এবাগ্নেল আবার পালিয়ে গেলেন । কিন্তু, ২ সপ্তাহ পর FBI এর গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি ।

সময়টা ১৯৭৪, ততদিনে ১২ বছর শাস্তির মধ্যে ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে তাঁর । এমন সময় ইউএস ফেডারেল গভার্মেন্টের কাছ থেকে একটা সুযোগ পান তিনি । কোন বেতন ছাড়া প্রতিসপ্তাহে ১ দিন তাঁকে FBI অফিসে কাজ করা লাগবে এবং FBI কে জালিয়াতির কেসগুলা সল্ভ করার জন্য সাহায্য করা লাগবে ।
অফারটা গ্রহণ করে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান এবং বিনা পারিশ্রমিকে FBI কে সাহায্য করা শুরু করেন । তিনি যখন বুঝতে পারেন তাঁর পক্ষে ছোটখাটো কাজ করে চলা সম্ভব না তখন একদিন তিনি একটা ব্যাংকে যান এবং ব্যাংকের কর্মচারীদের একটা অফার দেন । তিনি তাদেরকে ব্যাংকিং সিস্টেমের কিছু ভুল ধরিয়ে দিবেন এবং বেশ কিছু জালিয়াতির ট্রিক্স দেখাবেন , বিনিময়ে ব্যাংক তাঁকে ৫০০ ডলার দেয়া লাগবে এবং অন্যান্য ব্যাংকের কাছে সিকিউরিটির ব্যাপারে তাঁর নাম সাজেস্ট করা লাগবে । এভাবেই একজন সিকিউরিটি কন্সাল্টেন্ট হিসাবে তাঁর নতুন পরিচয় শুরু করেন এবেগ্নেল ।
পরবর্তীতে তিনি Abagnale & Associates নামে নিজস্ব কনসালটেন্সি ফার্ম খুলে ফেলেন । যার কাজ বিভিন্ন ব্যাংককে চেক জালিয়াতির ফাঁক ফোঁকর গুলা ধরিয়ে দিয়ে সেগুলার সিকিউরিটি বাড়াতে সাহায্য করা । সাথে সাথে তিনি FBI তে উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করতে লাগলেন বিনা পারিশ্রমিকে । ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ব্যাংক জালিয়াতি সম্পর্কিত অনেক কেস সল্ভ করতে FBI কে সাহায্য করছেন । একই সাথে তিনি FBI Academy তে লেকচারার হিসাবে নিযুক্ত আছেন । ১৪,০০০ এর বেশি প্রতিষ্ঠান জালিয়াতি ঠেকানোর জন্য এবেগ্নেলের মেথডগুলা ফলো করে ।
তিনি বর্তমানে স্বস্ত্রীক সাউথ ক্যালিফর্নিয়াতে বাস করেন । এবেগ্নেলের ছেলে স্কট বর্তমানে FBI এ কর্মরত ।

২০০২ সালে স্টিফেন স্পিলবার্গ এই জনপ্রিয় চেক জালিয়াতের জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মান করেন Catch Me If You Can । যেখানে এবেগ্নেল রোল প্লে করেন লিয়োনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এবং জোশেপ শিয়ার রোল প্লে করেন টম হ্যাংস ।


ফুটনোট – জোশেপ শিয়া যখন এবেগ্নেলের কেস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেন তখন তিনি ভাবতেন, এবাগ্নেল বোধহয় মধ্য ৩০ বছরের একজন প্রোফেশনাল ফ্রড , যে কিনা নির্ভুল ভাবে ব্যাংকের চেক তৈরী করতে পারে । কিন্তু টিন এজার এবাগ্নেলকে যখন প্রথমবারের মত দেখলেন জোশেপ শিয়া , হইতো অনেকবেশি অবাক হয়ে ভেবেছিলেন “সাধারণ কোন জালিয়াত নয় রীতিমত বিস্ময়বালকের খোঁজে মাঠে নেমেছিলেন তিনি ।”
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×