পাঁচশত কোটির বেশী মানুষ বিশ্বাস করে দু’জন মনব-মানবী থেকে মানবজাতি বিস্তৃত। কিছু সংখ্যক বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ মনে করে এক দল বিবর্তীত প্রাণী থেকে মানবজাতি বিস্তৃত।
দু’জন মনব-মানবীর নাম কেউ বলে, মনু-শতরূপা, কেউ বলে এডাম-ইভ, কেউ বলে আদম-হাওয়া। এদের দাবীর স্বপক্ষে আছে ঐশি বাণী এবং বিপরীত পক্ষে আছে জীববিজ্ঞান। একপক্ষ বলছে, ঐশিবাণী বলতে কিছু নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া কথা এবং অপর পক্ষ বলছে, বৈজ্ঞানিক তথ্যেও ভুল থাকে। কারণ এসব মানুষের আবিষ্কার। আর মানুষ মাত্রই ভুল থাকায় মানুষের আবিষ্কৃত তথ্যেও ভুল থাকে।
ঐশিবাণী কোরআন যিনি প্রচার করেছেন তিনি সত্যবাদী খেতাব প্রাপ্ত। সত্যবাদী হওয়া কিছু মানুষের খাচিয়ত। কথায় বলে খাচিয়ত যায় না মরলে। সেজন্য সত্যবাদী খেতাব প্রাপ্ত মোহাম্মদের (সা.) প্রচারিত কোরআনকে ঐশিবাণী হিসাবে বিশ্বাস করে প্রায় দুইশত কোটি মানুষ। কোরআন বলে, আদম (আ.) খলিফা বা স্থলাভিষিক্ত। স্থলাভিষিক্ত সাধারণত তাঁর মত কারো স্থলাভিষিক্ত হন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এটা মৃত্যু জনিত কারণে হয়। কোরআনের ভাষ্য মতে মহাজগতের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ বিশৃঙ্খলা জনিত কারণে আদম (আ.) যাদের স্থলাভিষিক্ত হন তাদেরকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করে ফেলেন। তারপর পৃথিবীর বাইরে থেকে আদমকে (আ.) পৃথিবীতে এনে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন।বিদ্যমাণ মানব জাতি সেই আদমের বংশধর।
আদম (আ.) যাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন তারা পৃথিবীতে কিভাবে বিদ্যমাণ ছিল সেই বিষয়ে কোরআনে কোন বক্তব্য নেই। তারা যদি মানুষের মত দেখতে কোন বিবর্তীত প্রাণী হয়ে থাকে তাতে কোরআনের সাথে এর কোন বিরোধ নেই। কারণ তাদের উদ্ভবের বিষয়ে কোরআনে কোন বিবরণ নেই। আর পৃথিবীর বাইরে থেকে কেউ পৃথিবীতে আসেনি এবং মানুষের মত দেখতে যারা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে তারা বিলুপ্ত হয়নি এমন কথা বিজ্ঞান বলেনি। সুতরাং আদম (আ.) তথ্যের সাথে বিবর্তীত মানব তথ্যের মূলত কোন সংঘাত নেই।
বিশৃঙ্খলার স্থলে শৃঙ্খলা ফিরাতে আল্লাহ পৃথিবীর বাইরে থেকে আদমকে (আ.) পৃথিবীতে আনলেন এবং বিশৃঙ্খলার স্থলে শৃঙ্খলা ফিরাতে আল্লাহ তাঁর বিধান দিলেন। আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবানের বিধান সম্বলিত বাণীকে ঐশিবাণী বলে। কোরআন এমন একটি ঐশিবাণীর সংকলন। কোরআনে মানুষের চিরস্থায়ী জীবন কাল হিসাবে মানুষের একটা পরকালের কথা বলা আছে। কোরআনের বিধান মানলে মানুষ পরকালে সুখে থাকবে এবং কোরআনের বিধান না মানলে মানুষ পরকালে দুঃখে থাকবে বলে কোরআনে বলা আছে। কোরআনের ঘোষণা মতে যারা পরকালে সুখে থাকতে চায় তারা কোরআনের কোন কথা বেঠিক বলে না। বিজ্ঞানের দোহাই দিয়েও তাদের এ বিশ্বাস বদলানো যায় না। সুতরাং আদম (আ.) ও হাওয়ার মাধ্যমে মানব জাতি বিস্তৃত এটাই কোরআন বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করবে। বিবর্তীত মাবব সম্পর্কে তাদের মত হলো তারা এখন বিলুপ্ত।
বিবর্তীত মানবের ক্ষেত্রে লক্ষ-কোটি বছরের হিসাব রয়েছে, আর আদমের (আ.) হিসাব মাত্র দশ হাজার বছরের হিসাব। আদমকে (আ.) যারা অস্বীকার করে তারা প্রমাণ করুক দশ হাজার বছর পূর্বে বিবর্তীত মানুষ বিলুপ্ত হয়নি এবং তখন আদম (আ.) নামে কেউ আসেনি। বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তারা এমন প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে আদম (আ.) বিশ্বাসীরা তাদের কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য নয়।
আদম (আ.) যাদের স্থলাভিষিক্ত তাদের জন্য কোন বিধান না থাকায় তাদের পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের হিসাব নেই।মানুষের মত দেখতে হুর ও গেলমান রয়েছে জান্নাতে। যারা পৃথিবীতে আসেনি। আদম (আ.) যাদের স্খলাভিষিক্ত তারা এবং হুর ও গেলমান মানুষের মত দেখতে তবে তারা আদম (আ.) সন্তান নয়। আদম (আ.) যাদের স্খলাভিষিক্ত তাদের ইহকাল ছিল পরকাল নেই। হুর ও গেলমান ইহকালে আসেনি। আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের ইহকাল ও পরকাল উভয় আছে। বিজ্ঞান তার কাজ করে করুক। তবে মানুষের মত দেখতে সব প্রাণীকে যেন তারা একত্রে গুলিয়ে না ফেলে। বিড়াল জাতীয় বহুপ্রাণী আছে, তাদের সবাইকে বিড়াল নামে অভিহিত করা হয় না। বিড়াল জাতীয় প্রাণীদে রমধ্যে শুধু মাত্র একটা প্রাণী বিড়াল নামে অভিহিত। বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের প্রত্যেকের মাঝে আলাদা বৈশিষ্ঠ রয়েছে। অনুরূপ মানব জাতীয় প্রাণীদের মাঝেও রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট। এরমধ্যে আদম (আ.) সন্তান মানুষ বেশী উন্নতমানের। কারণ এদেরকে উন্নতমানের করেই পৃথিবীর বাইরে থেকে এখানে আনা হয়েছে।
কোরআন মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রকের বাণী। মহাবিশ্বের অবস্থা দৃষ্টে এর একজন নিয়ন্ত্রক থাকাই প্রতিয়েমেয়। কেমন গাঁজাখুরী কথা! সবকিছুই নাকি এমনি এমনি হয়েছে, শুধু এ নিয়ন্ত্রক নাকি এমনি এমননি হননি। সবকিছু এমনি এমনি হতে পারলে নিয়ন্ত্রক কেন এমনি এমনি হতে পারবেন না? নিয়ন্ত্রক বলেছেন, তিনি প্রথম। তারমানে একদা তিনি দেখেছেন তিনি ছাড়া আর কিছু নাই এবং তিনি ছাড়া আর কিছু এমনি এমনি হচ্ছে না। সুতরাং তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। লোকেরা বলছে তিনি নাকি সবকিছু সৃষ্টিকরেন নাই। তো তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেন নাই, লোকেরা এটা দেখেছে কি? অহেতুক কারো কথা অস্বীকার করার কি দরকার? তাঁর কথা স্বীকার করব কেন? তাঁর কথা স্বীকার করব কারণ তাঁর কথা স্বীকার না করলে তিনি শাস্তি দিবেন বলেছেন। তাঁর যদি শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা থাকে তবে তাঁর কথা বিশ্বাস না করে বিপদে পড়তে যাব কোন কারণে? মহাজগত দেখে এর নিয়ন্ত্রকের বিশ্বাস সহজবোধ্য বিষয়। আমরা সহজ পথে থাকতে চাই। অহেতুক কঠিন শাস্তির ঝুঁকির মধ্যে পড়তে চাই না। এ বিষয়ে আমরা রাজীব নুরের কথা শুনতেও চাই না এবং মানতেও চাইনা। তার কথার জবাবে আমরা শুধু ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫