somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর দু’টি, এর একটিকে ফারসিতে শবে বরাত বলে (পোষ্টটি শুধুমাত্র শবে বরাত পালনকারীদের জন্য)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সূরাঃ ২ বাকারা, ১৮৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৮৫। রমযান মাস যাতে বিশ্বমানবের জন্য হেদায়াত এবং সুপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও পার্থক্যকারী কোরআন নাযিল হয়েছে। অতএব তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি সেই মাসে (নিজ আবাসে) হাজির থাকে সে যেন রোজা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির সে অপর কোন দিন গননা করবে। তোমাদের জন্য যা সহজ সাধ্য আল্লাহ তাই ইচ্ছা করেন। আর তোমাদের জন্য যা দুঃসাধ্য তিনি তা’ চান না। আর তোমরা যেন নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং আল্লাহর তাকাব্বরী প্রকাশের জন্য তিনি তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন সে কারণে। আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

* রমজান মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে একত্রে। কারণ একটু একটু করে কোরআন নাযিল হয়েছে তেইশ বছরে। আর তা’ অন্য মাসেও নাযিল হয়েছে এবং তা’ দিনেও নাযিল হয়েছে। রমজান মাসের কোন তারিখ কোরআন একত্রে কোথায় নাযিল হয়েছে?

সূরাঃ ৯৭ কদর এর অনুবাদ-
১। নিশ্চয়ই আমরা কোরআন নাযিল করেছি কদরের রাত্রিতে।
২। তুমি কি জান কদরের রাত্রি কি?
৩। কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
৪। সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রুহ নাযিল হয় প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে।
৫। শান্তিই শান্তি সে রাত প্রভাত উদয় হওয়া পর্যন্ত।

# সূরাঃ ৯৭ কদর, ১ নং আয়াতের তাফসির – তাফসিরে ইবনে কাছির
১। ইবনে আব্বাস (রা.) প্রমুখ সাহাবী হতে বর্ণিত আছে যে, লাইলাতুল কদরে সমগ্র কোরআন লাওহে মাহফুয হতে প্রথম আসমানে নাযিল হয়। তারপর ঘটনা অনুযায়ী দীর্ঘ তেইশ বছরে ধীরে ধীরে রাসূলুল্লাহর উপর নাযিল হয়। উবাই ইবনে কাব (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে রয়েছে, রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, এটি (লাইলাতুল কদর, রমজানের) সাতাশতম রাত- (মুসলিম-২/৮২৮)।

সূরাঃ ৪৪ দুখান, ২ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
২। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।
৩। আমরা তো এটা নাজিল করেছি এক মোবারক রাতে; আমরাতো সতর্ককারী।
৪। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত হয়।

# সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৩৮৮ নং হাদিসের (নামাজ কায়েম করা ও তার নিয়ম পদ্ধতি অধ্যায়) অনুবাদ-
১৩৮৮। হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসবে, তখন তোমরা এ রাতে নামাজ পড়বে এবং এ দিনে রোজা রাখবে। কেননা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন। তারপর বলেন,আমার কাছে কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোন জীবিকার সন্ধানী আছে কি? আমি তাকে রিযক দেব। কোন রোগগ্রস্থ্য আছে কি? আমি তাকে নিরাময় দান করব। এভাবে তিনি বলতে থাকেন, অবশেষে ফজরের সময় হয়ে যায়।

* লাইলাতুল কদর কোরআন নাযিলের রাত। কিন্তু সুরা কদর ও সূরা দোখানের কোরআন নাযিলের রাতে ভিন্নতা রয়েছে।কারণ দোখানের রাতকে মোবারক রাত বলা হয়েছে। বুঝা যাচ্ছে তাতে আলোর বরকত ছিলো।নেছফে শাবান আলোর বরকত থাকায় এটিকে কোরআন নাযিলের একটি রাত ধরা যায়। হাদিসের নেছফে শা‘বান বা শাবান মাসের ১৫ তারিখের বিবরণের সাথে সূরাঃ ৪৪ দুখান, ২ নং থেকে ৪ নং আয়াতের বিবরণ মিলে যায়। সেজন্য দৃঢ়ভাবে বলা যায় এটি কোরআন নাযিলের একটি রাত। তবে এটি সম্পূর্ণ কোরআন নাযিলের রাত নয়। তাফসির অনুযায়ী রমজানের সাতাশতম রাত কোরআন লাওহে মাহফুয হতে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হওয়ার রাত। কদর মানে ভাগ্য। দু’টি রাত কদরের রাত বিধায় দু’রাতেই ভাগ্য নির্ধারণের রাত। অপরিবর্তনীয় ভাগ্য রমজানের সাতাশতম রাতের কদরের রাতে লেখা হয়েছে।কে কোথায় কার সন্তান হিসাবে জন্মাবে এটা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য। এটা একবারই লেখা হয়েছে। কিন্তু রিযিকের ভাগ্য প্রতি বছর লেখা হয় এবং তা’ শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে লেখা হয়। পারসিকরা এরাতের নাম দিয়েছে শবে বরাত।

সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন

সহিহ বোখারী, ৩ নং হাদিস (কিতাবুল ওহী) এর অনুবাদ-
৩। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট প্রথমে যে ওহী আসত, তা’ ছিল নিদ্রাবস্থায় তাঁর সত্য স্বপ্ন। তিনি যে স্বপ্নই দর্শন করতেন, তা’ দিবালোকের মত প্রকাশ প্রকাশ পেয়ে যেত। কিছুদিন অতিক্রান্তের পর তাঁর নিকট নির্জন জীবন প্রিয়তর হয়ে উঠে। তাই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় গমণ করে নির্জন বাস শুরু করলেন। তখন তিনি নিজ পরিবারের নিকট না থেকে কয়েক রাত পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। এ উদ্দেশ্যে সাথে কিছু খাবার নিয়ে যেতেন।এভাবে হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট প্রকৃত সত্য (ওহী) আগমন করল।

হযরত জিবরাঈল ফেরেশতা তাঁর নিকট আগমন করে বললেন, ইকরা (পড়ুন)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। তিনি বলেন, তখন ঐ ফেরেশতা আমাকে এত জোরে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন যে, তাতে আমার কষ্ট বোধ হলো। পরে তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। তিনি বললেন, আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। তখন তিনি দ্বিতীয় বার আমাকে সজোরে আমাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন যে, তাতে আমার কষ্ট বোধ হলো। পরে তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। তিনি বললেন, অতঃপর ফেরেশতা তৃতীয়বার আমাকে ধরে দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন যে, আমি ভীষণ কষ্টবোধ করলাম। তারপর তিনি আমাকে আলিঙ্গনমুক্ত করে দিয়ে পাঠ করলেন, ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খালাক। খালাকাল ইনসানা মিন আলাক। ইকরা ওয়া রাব্বুকাল আকরামুল্লাযি আল্লামা বিল কালাম। আল্লামাল ইনসানা মা লাম ইয়ালাম - পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে।পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত।যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াত সমূহ মুখস্ত করে ঘরে ফিরে আসলেন। তাঁর অন্তর কম্পমান ছিল। তিনি খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদের নিকট এসে বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক। তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অতঃপর কিছুটা প্রকৃতিস্থ হয়ে তিনি সব ঘটনা হযরত খাদিজার (রা.) নিকট বর্ণনা করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি আমার জীবন সম্পর্কে সংশয়বোধ করছি। হযরত খাদিজা তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, না ভয়ের কোন কারণ নেই। আল্লাহর কসম তিনি কখনই আপনাকে অপদস্থ করবেন না। কেননা আপনি আপনার আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করেন, দুঃস্থ্য দুঃখীদের সেবা করেন, বঞ্চিত ও অভাবগ্রস্থ্যদের আয়ের ব্যবস্থা করে দেন, অতিথি আপ্যায়ন করেন, সত্য পথের বিপন্ন পথিকদের সাহায্য করেন।

অতঃপর হযরত খাদিজা তাঁকে সাথে করে তাঁর চাচা ওরাকা বিন নওফেলের নিকট গেলেন। তিনি জাহেলি যুগে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় কিতাব লিখতেন। আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক ইঞ্জীলের অনেকাংশ ইবরানী ভাষায় অনুবাদ করতেন। তিনি এক অধিক বার্ধক্যে পৌঁছেছিলেন যে প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।খাদিজা (রা.) তাঁকে বললেন, হে চাচা, আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওরাকা ইবনে নওফেল তাঁকে বললেন, হে ভাতিজা! কি দেখেছ? রাসূলুল্লাহ (সা.) সব ঘটনা তাঁর নিকট বর্ণনা করলেন। ওরাকা তাঁকে বললেন, ইনি সেই রহস্যময় জিবরাঈল ফেরেশতা। যাঁকে আল্লাহ হযরত মুসার (আ.) নিকট প্রেরণ করেছিলেন। আহা! যদি আমি সেসময় যুবক থাকতাম যে দিন আপনি আল্লাহর বাণী প্রচার করবেন। হায়! যদি আমি সেসময় জীবিত থাকতাম, যে সময় আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনাকে দেশান্তরিত করবে।

রাসূলুল্লাহ বললেন, তারা কি সত্যি সত্যি আমাকে দেশান্তরিত করবে? হ্যাঁ, আপনি যা নিয়ে এসেছেন, এরূপ সত্য যিনি নিয়ে এসেছেন, তাঁর সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। যদি আমি আপনার যুগ পাই তবে আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করব। তার কিছু দিন পরেই ওরাকা ইন্তেকাল করলেন এবং ওহীও কিছু দিন বন্ধ থাকলো।

ইবনে সিহাব যুহরী বলেন, আবু সালমাহ ইবনে আব্দুর রহমান বলেছেন, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) ওহী বন্ধ থাকা অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, একদা আমি পথ চলার সময় উপর দিকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি উপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হেরা গুহায় যিনি আমার নিকট আগমণ করে ছিলেন, সেই ফেরেশতা আসমান ও জমিনের মাঝখানে এক কুরসিতে বসে আছেন। এতে আমি ভতি হয়ে বাড়ীতে চলে এলাম এবং বললাম, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক।তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন, ইয়া আইয়্যূহাল মুদ্দচ্ছিরু কুম ফাআনযির ওয়া লাব্বাকা ফাকাব্বির, ওয়াছিয়াবাকা ফাত্বাহহির ওয়াররুজজা ফাহজুর – হেস চাদর আবৃত ব্যক্তি! উঠ, আর তুমি সতর্ককর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। তোমার কাপড় পবিত্র কর। অপবিত্রতা পরিহার কর। -সূরা মুদ্দাসসিরঃ ১-৫ আয়াত। এরপর থেকে ওহী একের পর এক অবতীর্ণ হতে লাগল।

# শবে কদর ও শবে বরাত সংক্রান্ত মতভেদের সমাধান-

সূরাঃ ৪ নিসার ১১৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরন করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা’কত মন্দ আবাস।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-
৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।

* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল রমজানের ২৭ তম রাতে শবে কদর এবং শাবানের ১৫ তম রাতে শবে বরাত পালন করে। যারা এর বিরোধীতা করে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে দগ্ধ করবেন।উম্মতের সর্ববৃহৎ দলের বিরোধীরা বলছে আল্লাহ অধিকাংশের বিরোধীতা করেছেন, কিন্তু হাদিসে অধিকাংশের কথা বলা হয়নি, বরং সর্ববৃহৎ দলের কথা বলা হয়েছে। অধিকাংশ হবে ৫০% এর বেশী, কিন্তু ২০% হলেও সর্ববৃহৎ দল হতে পারে। আর আল্লাহ অধিকাংশ মুসলিমের বিরোধীতা করেননি।

সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৪৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪৯। কিতাব নাযিল করেছি যাতে তুমি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী বিচার নিষ্পত্তি কর, তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরন না কর এবং তাদের সম্বন্ধে সাবধান হও যাতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তার কিছুহতে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়েনেয় তবে জেনে রাখ যে, তাদের কোন কোন পাপের জন্য আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিতে চান। আর মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ফাসিক।

* আয়াতের ‘আর মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ফাসিক’ অনুযায়ী অধিকাংশ মানুষ ফাসিক অনধিকাংশ মুসলমান ফাসিক নয়। অন্তত এ আয়াতে সে কথা বলা হয়নি।

সূরাঃ ৬ আনআম, ১১১ নং ও ১১৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
১১১। আমি তাদের নিকট ফিরিশতা প্রেরণ করলেও এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে হাজির করলেও যদি না আল্লাহ ইচ্ছ করেন তবেতারা ঈমান আনবে না। কিন্তু তাদের অধিকাংশ জাহেল।

সূরাঃ ৬ আনআম, ১১৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
১১৬। যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরন করে: আর তারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।

* সূরা আনআমের উভয় আয়াতে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি।

সূরাঃ ৭ আ’রাফ, ১০২ নং ও ১৩১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০২। আমি তাদেরকে অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি; তাদের অধিকাংশকে সত্যত্যাগী পেয়েছি।
১৩১।যখন তাদের কোন কল্যাণ হত তারা বলত, এটা আমাদের প্রাপ্য, আর যখন তাদের কোন অকল্যাণ হত তখন তারা মূসা ও তার সংগীদিগকে অলক্ষুণে গণ্য করত। তাদের অকল্যাণ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন; কিন্তুতাদের অধিকাংশতা’ জানে না।

* সূরা আ’রাফের উভয় আয়াতে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি।

সূরাঃ ১০ ইউনুস, ৩৬ নং ও ৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৬। তাদের অধিকাংশ অনুমানের অনুসরনকরে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না, তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সব জানেন।
৫৫। সাবধান! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা’ আল্লাহরই। সাবধান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না।

* সূরা ইউনুসের উভয় আয়াতে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি।

সূরাঃ ১১ হুদ, ১৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
তারা কি উহাদের সমতুল্য যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর,যার অনুসরন করে তাঁরপ্রেরিত সাক্ষী এবং যার পূর্বে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহ স্বরূপ? তারাই এতে বিশ্বাসী। অন্যান্য দলের যারা এটা অস্বীকার করে, অগ্নিই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। সুতরাং তুমি এতে সন্দিহান হবে না। এটাতো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না।

* সূরাহুদের ১৭ নং আয়াতের, ‘কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না’ অনুযায়ী এখানে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি।

সূরাঃ ১২ ইউসুফ, ২১ নং, ৪০ নং, ৬৮ নং ও ১০৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২১।মিসরের যে ব্যক্তিতাকে ক্রয় করে ছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, এর থাকার সম্মান জনক ব্যবস্থা কর। সম্ভবত সে আমাদের উপকারে আসবে, অথবা আমরা তাকে পুত্র রূপেও গ্রহণ করতে পারি। আর এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্ন ব্যখ্যা শিক্ষা দেবার জন্য। আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পদনে অপ্রতিহত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।
৪০। তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদতকরছ। যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ। এগুলো কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি।বিধান দেবার অধিকার শুধু আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন অন্যকারো ইবাদত না করতে কেবল তাঁর ব্যতীত। এটা চিরায়ত দীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
৬৮। যখন তাদের পিতা তাদেরকে যেভাবে আদেশ করেছিলেন তারা সেভাবে প্রবেশ করল,তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তা’ তাদের কোন কাজে আসল না। ইয়াকুব কেবল তাঁর মনের একটি অভিপ্রায় পূরণ করেছিলেন এবং তিনি অবশ্যই জ্ঞানী ছিলেন। কারণ আমিতাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।
১০৬। তাদের অধিকাংশ লোক আল্লাহতে বিশ্বাস করে কিন্তু তারা মুশরিক।

* সূরাইউসূফের সকল আয়াতে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি।

সূরাঃ ২৫ ফুরকান, ৪৪ নং ও ৫০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪৪। তুমি কি মনে কর যে তাদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে। তারা তো পশুর মতই; বরং তারা তারচেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট।
৫০। এবং আমি এ পানি তাদের মধ্যে বিতরণ করেছি যেন তারা যিকির করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফুরী করে।
* সূরা ফুরকানের উভয় আয়াতে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি।


সূরাঃ ২৬ শুয়ারা, ৮ আয়াতের অনুবাদ
৮, ৬৭, ১০৩, ১২১, ১৯০। নিশ্চয়ই এতে আছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশ মু’মিন নয়।
১৩৯। অতঃপর তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলো এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করলাম। নিশ্চয়ই এতে আছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশ মু’মিন নয়।
১৫৮। অতঃপর শাস্তিতাদেরকে গ্রাস করলো।নিশ্চয়ই এতে আছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশ মু’মিন নয়।
২২৩। তারা কান পেতে থাকে, এবং তাদের অধিকাংশ মিথ্যাবাদী।

* সূরা শুয়ারার সকল আয়াতে অধিকাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুসলিমের কথা বলা হয়নি। সংগত কারণে অধিকাংশ মুসলমান পথভ্রষ্ট হওয়ার আহলে হাদিসীয় দাবী সর্বাংশে মিথ্যা।


সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬৭ থেকে ৬৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭।দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবির উচিত নয়। তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর। আল্লাহ চান পরকালের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
৬৮। আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ সেজন্য তোমরা মহাশাস্তিতে আক্রান্ত হতে।
৬৯। যুদ্ধে যা লাভ করেছ তা’ বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর। আর আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

# আয়াতের শানে নজুল-
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, বদরের বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের সাহাবীগণের সাথে পরমর্শ করেন।তিনি তাদেরকে বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ বন্দীদেরকে তোমাদের অধিকারে দিয়েছেন, বল তোমাদের ইচ্ছা কি? ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তাদেরকে হত্যা করা হোক। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, এরা কাল পর্যন্ত তোমাদের ভাইই ছিল। এবারও ওমর (রা.) দাঁড়িয়ে একই উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! এদের ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হোক। রাসূলুল্লাহ (সা.) এবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং পূণরায় ঐ একই কথা বললেন। এবার আবু বকর সিদ্দিক (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, আমার মত এই যে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করুণ। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহর চেহারা থেকে চিন্তার লক্ষণ দূর হয়। তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং মুক্তি পণ নিয়ে সকলকেই মুক্ত করে দেন। তখন মহা মহিমাম্বিত আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।

* সূরা আনফালের ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নং আয়াত অনুযায়ী অধিকাংশ মুসলমানদের ভুল সিদ্ধান্ত আল্লাহ অনুমোদন করেছেন। ঘটনাটি হলো বদর যুদ্ধে যে ৭০ জন কাফিরকে মুসলমানরা বন্দী করেছেন। হজরত ওমর (রা.) ছাড়া আর সব সাহাবার মত অনুযায়ী মহানবি (সা.) তাদেরকে মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। আল্লাহ ৬৭ নং আয়াতে এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলেও ৬৯ নং আয়াতে সংখ্যা গরিষ্টের ভুল সিদ্ধান্তের প্রতি আল্লাহ তাঁর অনুমোদনের কথা ঘোষণা করলেন। সুতরাং অধিকাংশের কথা বলে মুসলিমদের সর্ববৃহৎ দলের বিরোধীতা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে।

সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।

* রমজানের ২৭ তম রাতে শবে কদর এবং শাবানের ১৫ তম রাতে শবে বরাত বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকায় এ বিষয়ে মতভেদ মহাশাস্তির কারণ হবে। আর শবে কদর ও শবে বরাতের মর্যাদা মূলত সমান হবে।সুতরাং শবে বরাতে ইবাদত করলেও হাজার মাসের বেশী ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যাবে।যারা মতভেদে পড়ে এ রাত দু’টিতে ইবাদত করা থেকে বিরত থাকে তাদের বরাত বড়ই মন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×