somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটোবেলায় দেখা আমাদের যাত্রাপালা : প্রথম পর্ব

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সতর্কতা

এটি একটা সুদীর্ঘ রচনা, দু পর্বে সমাপ্য। শিরোনামযুক্ত বিষয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, এবং যাঁরা এ বিষয়ে গবেষণা করছেন, কেবল তাঁরা এ পোস্টে কিছু সময় কাটাতে পারেন।

************

আমাদের ছোটোবেলার গাঁওগেরামে পাবলিক ইভেন্ট সমূহের মধ্যে যাত্রাপালা ছিল অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। আশ্বিন-কার্তিকের আমন ধান, পউশ-মাঘের বোরো এবং জ্যৈষ্ঠ্যের আউশ ধান কাটার মৌসুমের সাথে যাত্রাপালার উৎসব ছিল অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। সে-সময়ে আমাদের অঞ্চলে কোনো সিনেমা হল ছিল না, এবং ৭০-এর দশকের শেষের দিকে উপজেলা সদরে 'জয়পাড়া সিনেমা' শুরু হলেও তা ছিল মূলত অভিজাত ও শিক্ষিত পরিবার এবং উঠতি বয়সের ছাত্রদের উপভোগের স্থান; কিন্তু আপামর গ্রামবাসীদের জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য অনুষ্ঠান ছিল যাত্রাপালা। কার্তিক মাস এলেই যাত্রাপালর জন্য আমাদের মন চঞ্চল হয়ে উঠতো। বিকেলে খেলার মাঠের এক কোণে যাত্রার পাট হতো। তাদের চারদিক ঘিরে উৎসুক তরুণদের ভিড় জমে উঠতো। প্রায় মধ্যরাত অব্দি সেই পাট চলতে থাকতো। কখনোবা কোনো এক বাড়িতে এ পাটের আয়োজন করা হতো। পুরুষরাই পুরুষ ও নারী উভয় চরিত্রে অংশগ্রহণ করতো। এভাবে ১০-১৫ দিন, কখনো বা মাসাধিক কাল ধরে পাট করা হতো, তারপর যাত্রাপালার জন্য চুড়ান্ত দিন নির্ধারণ করা হতো। আশেপাশের সবগুলো বাজার ও গ্রামে ঢোল পিটিয়ে যাত্রাপালার ঘোষণা দেয়া হতো।

যাত্রার দিন সকাল হতেই সারাগ্রাম উৎসবমুখর হয়ে উঠতো। যাত্রাকে ঘিরে খেলার মাঠে মেলা বসতো। যাত্রানুষ্ঠানের স্টেজ তৈরি ছিল একটা কষ্টকর কাজ; এ কাজটি যাত্রার অভিনেতাদেরই করতে হতো। গ্রামের সেরা ৬টা কলাগাছ গোড়া থেকে কেটে এনে বর্গাকার স্টেজের চারকোনায় চারটি এবং প্রবেশপথে ২টি কলাগাছ পোঁতা হতো, যা শক্ত ও মজবুত এবং উঁচু খুঁটির কাজ করতো। বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চৌকি বা খাট যোগাড় করে স্টেজ সাজানো হতো। মূল স্টেজের উপরে সুন্দর শামিয়ানা তো থাকতোই, এর বাইরেও অনেক জায়গা জুড়ে শামিয়ানা টাঙিয়ে দেয়া হতো দর্শকদের জন্য। যে কোনো একদিকে মহিলাদের জন্য একটা জায়গা নির্ধারণ করে তাতে বাঁশ টেনে আলাদা করে দেয়া হতো।


বাইয়ালি, ব্যান্ড পার্টি, যাত্রার পোশাক, ইত্যাদি

বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে 'নর্তকী'র দল এলে তাদেরকে যাত্রার 'ওস্তাদ', কিংবা আয়োজনকারী মাদবর বাড়িতে নিয়ে ওঠানো হতো। এখানে আপনারা হয়তো অনেকেই মুখ টিপে হাসছেন এবং অন্যকোনো কিছুর ইঙ্গিত অনুমান করছেন– ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আমার যাত্রাপালা দেখবার সুযোগ হয়েছিল; এ সময়ের মধ্যে অসংখ্য যাত্রাপালার মধ্যে মাত্র ২ কী ৩টা অনুষ্ঠানে মেয়ে নর্তকী দেখেছি, বাকি সবগুলো যাত্রায় ছেলেরাই 'নর্তকী' সেজে স্টেজ মাতিয়ে তুলতো। নর্তকীদের আমরা বলতাম 'বাইয়ালি'। 'বাইয়ালি' শব্দটা কোনো অভিধানে খুঁজে পাই নি; স্কুলে পড়বার সময়েও আমরা 'বাইয়ালি' বলতাম; হাটেবাজারে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর ক্যানভাসের সময়েও এরকম পুরুষনর্তকীরা 'বাইয়ালি' নাচ দেখাতো। আমি নিশ্চিত নই, শব্দটা 'বাইজিনাচ' থেকে এসে থাকতে পারে। সে যাই হোক, যাত্রানুষ্ঠানে বাইয়ালির নাচ ছিল যাত্রার প্রাণ। এমনও দেখা গেছে যে, পুরো যাত্রা ঝুলে যাচ্ছে, তখন বাইয়ালিরা তাদের খেমটা নাচ দিয়ে অনুষ্ঠান চাঙ্গা করে তুলতো।

বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে বাইয়ালি গোষ্ঠি এসে উপস্থিত হলে তাদের একনজর দেখবার জন্য আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে মাদবর বাড়িতে ভিড় জমাতাম। নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর, কলাকোপা ছিল 'বাইয়ালি' গোষ্ঠি সমৃদ্ধ অঞ্চল। আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি, এই বাইয়ালি গোষ্ঠিই আবার যাত্রার জন্য ব্যবহৃত পোশাকাদি বা ’ড্রেস’ সরবরাহ করতো, এবং বাদক দল বা ব্যান্ড পার্টিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, নর্তকী বা বাইয়ালি, অভিনেতাদের পোশাক এবং বাদক দলকে মোটা টাকায় বক্সনগর বা কলাকোপা থেকে ভাড়া করে আনা হতো।

আমরা মাদবর বাড়িতে গিয়ে বাইয়ালিকে খুঁজতাম। বাইয়ালিরা দেখতে না জানি কতো সুন্দর; কিন্তু অনেক সময়েই আমরা বেজায় আশাহত হতাম, যখন দেখতাম কালো কুচকুচে চেহারার একটা লোককে দেখিয়ে সবাই বলছে, 'উনি হইল বাইয়ালি।' আমার বিশ্বাসই হতো না এত্তো কালো একটা লোক কীভাবে বাইয়ালি হতে পারে। 'ড্রেস'-এর উপরও আমাদের তীব্র আকর্ষণ ছিল। যাত্রাপালা মানেই রাজ-রাজড়াদের কাহিনি; আমরা ছোটোবেলায় যতোগুলো যাত্রাপালা অভিনীত হতে দেখেছি তার সবগুলোই ছিল রাজা-বাদশাহ ও জমিদারদের কিসসা। রহিম বাদশাহ ও রূপবান কন্যা, সয়ফল মুল্লুক বদিউজ্জামান, আলোমতি প্রেমকুমার, গুনাই বিবি, বনবাসে রূপবান, কমলার বনবাস- এ যাত্রাগুলোর কাহিনি গ্রামের মানুষের মুখস্থ ছিল। এ গ্রামে গুনাই বিবি হলে তো পাশের গ্রামে রূপবান কন্যা- এভাবেই বছরের পর যাত্রাপালাগুলো ঘুরেফিরে আমাদের গাঁওগেরামে মঞ্চস্থ করা হতো। যাত্রাপালা যখন শুরু হতো, রাজাকে মনে হতো তিনি সত্যিকারেই কোনো একজন রাজায; রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয়কারীকেও তেমনি রাজার পুত্র মনে হতো- আর আমার কিশোর মন আন্দোলিত হতো- যদি আমিও অমন একজন রাজপুত্র হতাম- আমার মাথায় থাকতো ও-রকম স্বর্ণোজ্জ্বল একটা তাজ, গায়ে থাকতো জড়িঅলা পোশাক, পিঠের উপর দিয়ে কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়তো ঝলমলে পোশাক; আমারও কোমরে কোষের ভিতর ধারালো তরবারি গচ্ছিত থাকতো। ...রাজার হুংকারে সমগ্র পরিবেশ প্রকম্পিত হতো, প্রতিবাদী রাজপুত্রের কণ্ঠেও আগুন ঝরতো, অসহায় রাজমাতার আর্তচিৎকার আর রাজপুত্রের প্রেমাকঙ্ক্ষী দরিদ্র নায়িকার করুণ গানের সুরে চারপাশ ভারী হয়ে উঠতো।



যেভাবে, যখন যাত্রার মূল অনুষ্ঠান শুরু হতো

একটা প্রচলিত রেওয়াজ ছিল যে যতো দেরিতে এবং গভীর রাতে যাত্রা শুরু হবে, যাত্রা ততো জমবে। কিন্তু মানুষের ভিড় শুরু হতো সন্ধ্যা থেকেই। পরিবারের নারীপুরুষ একত্রে যাত্রা দেখতে আসতো। নারীদেরকে 'মহিলা'দের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে পুরুষ সদস্যরা নিজেদের জায়গা খুঁজে নিত। রাট ৯টার দিকে মানুষের ভিড় ও উৎসাহ বাড়তে থাকতো। ভিড়ের একদিক থেকে ঠেলাঠেলি করে জায়গা দখলের চেষ্টাও চলতো প্রচুর, এবং এ থেকে যাত্রা শুরুর আগেই ঝগড়া বেঁধে যেতো অনেক সময়, এবং কখনো কখনো পুরো অনুষ্ঠানই এ ঝগড়ার ফলে পণ্ড হয়ে যেতো।

রাত গভীর হতে থাকতো, মানুষের চিৎকার, ঠেলাঠেলি, শিস কাটার ধুমধারাক্কা বাড়তে থাকতো। যখন মানুষের উৎসাহ তুঙ্গে, তখন আয়োজনকারীদের মধ্য থেকে কেউ একজন মঞ্চে এসে, অথবা মাইকে ঘোষণা দিত অল্পক্ষণের মধ্যেই 'ব্যান্ড পার্টি' মঞ্চে প্রবেশ করবে। এ ঘোষণার পর মানুষ যেমন আশ্বস্ত হতো, তেমনি তাদের মধ্যে হঠাৎ করে আনন্দ ঝলসে উঠতো। এরপরও আরো আধঘণ্টা বা, ঘণ্টা, কিংবা তারও পরে দেখা যেতো ৫-৭ জনের ব্যান্ড পার্টি স্টেজে ওঠার প্রবেশপথ দিয়ে মঞ্চ অভিমুখে আসছে, তাদের দেখামাত্র আরেকবার সমস্বরে আনন্দচিৎকারের ধ্বনি উঠতো। স্টেজের একপাশে, নিচে বিছানা পেতে ব্যান্ডপার্টির বসার ব্যবস্থা করা হতো। তারা ঢোল, তবলা, বিভিন্ন বাঁশির সমাহারে যে সুর তুলতো, এখনো তা মনে পড়লে নস্টালজিয়ায় ডুবে যাই- আহা, আরেকবার যদি সেই যাত্রাপালা দেখবার সুযোগ হতো। সত্যি কথা বলতে কী, ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের সুর আমাকে খুব উন্মাতাল করতো, আমার বুকে এক অনির্বচনীয় আনন্দ হিন্দোল খেলে যেতো। ... ব্যান্ড পার্টি তাদের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে মানুষকে মাত করে ফেলতো। অনেক সময় ব্যান্ড পার্টির বাজনা খুব বাজে হতো; এটা আয়োজকদের জন্য খুব নিন্দনীয় ব্যাপার ছিল- মানুষ বলতো, টাকার অভাবে এরা একটা ভালো ব্যান্ড পার্টি আনতে পারে নি। আমরা উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকতাম স্টেজে ওটার পথের দিকে- দূরে সুসজ্জিত পোশাকে কাউকে দেখে ফেললে খুব পুলকিত বোধ করতাম।

এভাবে আরো বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলে ৪-৮ জনের একটা দল যাত্রামঞ্চে প্রবেশ করতো- এরা হলো ’বন্দনা পার্টি।’ যে-কোনো অভিনেতা প্রথমবারের মতো মঞ্চে প্রবেশকালে নিচু হয়ে প্রবেশপথ ছুঁয়ে সালাম করা একটা রেওয়াজ, যেন তিনি সফলভাবে অভিনয় সম্পন্ন করতে পারেন, এই আশীর্বাদ কামনা। বন্দনা পার্টি বর্গাকারে সজ্জিত হয়ে মঞ্চে দাঁড়াতো।

প্রথমে বন্দনা করি আল্লাহ-নবীর নাম
এরপরে বন্দনা করি মা ও বাবার নাম
পশ্চিমে বন্দনা করি মক্কা শরীফের

এরপর উত্তরমুখি হয়ে :
উত্তরে বন্দনা করি হিমালয় পর্বত

তদ্রূপ পূর্ব ও দক্ষিণমুখি হয়ে :
পুবেতে বন্দনা করি সূর্য মহারাজা
দক্ষিণে বন্দনা করি বঙ্গোপসাগর

পুনরায় পশ্চিমমুখি হয়ে :
ওস্তাদ আমার হাই মাদবর তাঁর পায়ে সালাম
সবাই মিলে শুনবেন আজ রহিম বাদশার গান

ছোটোবেলার স্মৃতি থেকে বন্দনার গানটা বললাম, কিন্তু এখানে অনেক ভুল আছে। এ বন্দনায় আরো অনেক বর্ণনা থাকতো যা আজ আর মনে নেই।

এর পরের পর্বটাকে অনেক সময়ই যাত্রার প্রাণ হিসেবে বলা হতো। বন্দনা দল মঞ্চ ত্যাগ করার সাথে সাথে ব্যান্ড পার্টির পাগলা সুর বেজে উঠতো, আর এক দৌড়ে মঞ্চে এসে ঢুকতো বাইয়ালি। বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার, বাইয়ালির নাচ, আর তার তালে তালে দর্শকদের উল্লাস এক মনোমুগ্ধকর মূর্ছনার সৃষ্টি করতো। যে কালো কুচকুচে পুরুষ লোকটাকে বিকেলে মাদবর বাড়িতে দেখেছি, তাকে এই নৃত্যরত অবস্থায় দেখলে ভুলেও কেউ বিশ্বাস করবে না এই সেই কালো লোকটা- যাকে মেকাপ দিয়ে এতো 'রূপবতী' করে তোলা হয়েছে। আমাদের সময় অনেকগুলো জনপ্রিয় গান ছিল, যা যাত্রার বাইয়ালিরা নাচবার কালে গেয়ে থাকতো। তার একটা তালিকা মোটামুটি নিম্নরূপ :

ক.
রূপে আমার আগুন জ্বলে, যৌবন ভরা অঙ্গে
প্রেমের সুধা পান করে নাও হায়রে আমার দিওয়ানা
ও আমার দিওয়ানা, ও আমার মাস্তানা...

খ.
ও আমার রসিয়া বন্ধুরে
তুমি কেন জংলি ছাপার শাড়ি হইলা নামাজ

গ.
নানি গো নানি তোরে আমি জানি
আমারে নি নিয়া যাবি ভাইসাবের বাড়ি

ঘ.
একটুসখানি দেখো, একখান কথা শোনো
ভালোবাইসা একবার তুমি বউ বইলা ডাকো

এ ছাড়া কিছু হিন্দি গানও মাঝে মাঝে গাওয়া হতো।

যাত্রানুষ্ঠানে দুইজন করে নর্তকীর নাচবার রেওয়াজ ছিল। প্রথম নর্তকী মঞ্চ কাঁপিয়ে চলে যাবার পর দ্বিতীয় বাইয়ালির আগমন ঘটতো। আমরা তুলনা করতাম, কোন্‌ বাইয়ালি বেশি সুন্দর, কে বেশি ভালো নাচে। এভাবে প্রথম ধাপে বাইয়ালি নৃত্য শেষ হবার পর ব্যান্ডের গুরু গম্ভীর বাদ্য বেজে উঠতো। আমরা প্রবেশপথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম- অতি ধীরপায়ে, একা, অথবা রাণী, মন্ত্রী, সিপাহসালার সমভিব্যাহারে মঞ্চে প্রবেশ করতেন রাজা বা জমিদার। তাঁর ভারিক্কি কথাবার্তা ও অভিনয়ে মনে হতো আমরা যেন একটা রাজদরবারের সামনে বসে আছি।



আমার দেখা প্রথম যাত্রাপালা

আমার দেখা প্রথম যাত্রাপালা কোন্‌টি তা সঠিক করে বলতে পারবো না। তবে, নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, হয় সয়ফল মুলুক বদিউজ্জামান, অথবা গুনাই বিবি। এগুলোতে আমাদের গ্রামের আমোদে মানুষগুলো নিজেরাই অভিনয় করতো, নিজেরাই আয়েজন করতো। এ ছাড়া মাঝে মাঝেই বিভিন্ন অপেরা তাদের যাত্রাদল নিয়ে জয়পাড়া কিংবা মেঘুলা আসতো, যেখানে টিকিট কেটে যাত্রা দেখতে হয়। স্থানীয় কমিটি এ সকল অপেরা চুক্তি ভিত্তিতে নিয়ে আসতো। আমার কখনো টিকিট কেটে যাত্রা দেখবার সুযোগ ঘটে নি, কারণ, যে সময়ে এসব অপেরার যাত্রাপালা গ্রামে আসতো, আমি তখনো রাতে একা বাড়ির বাইরে যাবার বয়স অর্জন করি নি। তবে অনেক ইঁচড়েপাকা বন্ধু ছিল যারা এগুলোও দেখেছিল। ওদের বর্ণনা শুনে আমার প্রবল ইচ্ছে হতো অপেরার যাত্রা দেখতে– যেখানে বাইয়ালিরা শুধু নাচই নয়, আরো ’অনেক কিছুই’ দেখিয়ে থাকে।

যাত্রাপালার অভিনেতারা বেশিরভাগই অশিক্ষিত ও মূর্খ, গরীব ঘরের মানুষ। শিক্ষিত ছেলেরা ’নাটক’ করতো। কিন্তু একটা নাটকে অভিনয় করবার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষিত ছেলে সচরাচর গ্রামে পাওয়া যেতো না, ফলে প্রায়ই দেখা যেতো সোৎসাহে নাটকের পাট শুরু হয়ে সপ্তাহ খানেকের মাথায় তা পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে গেছে। কিন্তু একটা নাটকের কথা আমার মনে আছে, যা আমার জীবনের প্রথম নাটক, যা যাত্রাপালা দেখবার অনেক আগে দেখেছিলাম, বাবার কোলে বসে। প্রতিটি দৃশ্য যেন চোখের সামনে ভাসছে। আমি কলেজে পড়বার সময়ে ’রক্তাক্ত প্রান্তর’ করবার জন্য উঠেপড়ে লাগলাম– শৈশবে দেখা নাটকটার মতো একটা নাটক আমি গ্রামের মানুষকে উপহার দেবো। সপ্তাহ দেড়েক পাট করবার পর প্রোগ্রাম বাতিল করতে হলো– দক্ষ অভিনেতার অভাবে।


সয়ফল মুল্লুক বদিউজ্জামান

প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় রাজপুত্র সয়ফল মুল্লুক মঞ্চে প্রবেশ করছে। তার মন খুব উৎফুল্ল। তার ডায়লগে জানা যায়– চাঁদনি রাত। মনোরম দক্ষিণা হাওয়া। চমৎকার পরিবেশ। তার মনে প্রেমভাব। সে আনন্দে গান গায়। তারপর একটা চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে পড়ে। এমন সুন্দর পরিবেশে মুহূর্তেই সে ঘুমিয়ে পড়ে।

সহসা তার ঘুম ভেঙে যায়– নিদ্রা-উত্থিত রাজকুমার জামান-জামান চিৎকারে চারদিক সচকিত করে তোলে। প্রহরী-সহচরগণ ত্রস্তে সমবেত হয়, স্বপ্নাহত রাজকুমার চারদিকে তাকিয়ে কী যেন খোঁজে। তারপর বেদনার্ত স্বরে জানায়, কোনো এক অরণ্যচূড়ায় অপূর্ব সুন্দরী জনৈকা রাজকুমারীর সাথে তার মিলন হয়েছিল। বদিউজ্জামান রাজকুমারীর নাম। সোনার পালঙ্কের কোনা ধরে ঝলমলে পরীরা সেই অরণ্যচূড়ায় আনন্দ-নৃত্যরত ছিল, রাজকুমার আর রাজকুমারী সেই পালঙ্ক-মাঝে প্রেমালিঙ্গন করেছিল। এ কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসে; সবিনয়ে বলে, ওটা সত্যি নয়, স্বপ্ন। রাজকুমার তার হাতের অঙ্গুরি দেখায় যা সে রাজকুমারীর সাথে গভীর প্রেমের সাক্ষী স্বরূপ বদল করেছিল। সত্যি না হলে হাতের আংটি কী করে বদল হলো? বদিউজ্জামানের প্রেমে দিওয়ানা রাজকুমার অবশেষে গৃহত্যাগী হয়, সৈন্যসামন্ত-প্রহরী-পেয়াদা সঙ্গে নিয়ে সে যাত্রা শুরু করে; কতো ঝড়ঝঞ্ঝা, বৃষ্টিবাদল, রৌদ্রখরতাপ মাথায় নিয়ে তারা ছুটে চলে- শ্বাপদসংকুল অরণ্যপাহাড়, তরঙ্গবিক্ষুব্ধ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তারা ছুটে চলে- অবশেষে এক পরীর রাজ্যে গিয়ে তারা পৌঁছে। পরীরাজ্যের রাজকন্যার নামই বদিউজ্জামান। রাজপরীকন্যার সাক্ষাৎ পাওয়ার পর সয়ফুলমূলক যে উচ্ছ্বাস আর উৎফুল্লতা প্রকাশ করেছিল, তার রেশ বহুদিন অব্দি আমার মন জুড়ে বাজছিল- কী একটা ঘোরের মধ্যে সর্বদা মনে হতো আমি কোনো দরিদ্র কৃষকপুত্র নই, আমিই রাজকুমার সয়ফলমূলক, আর আমার কোলে বসে রাজকুমারী বদিউজ্জামান সুরেলা কণ্ঠে গান ধরেছে :

ও রসের নাগরও,
কোলে বসিয়া মধু পান করো...


গুনাই বিবি

এখানে আমার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবো। ছোটবেলার একটা কথা আমার মনের ভিতর আজো গেঁথে আছে। বাবার কোলে চেপে আটশাট হয়ে রহিম বাদশাহ্‌ ও রূপবান কন্যার যাত্রা দেখছিলাম। আমার দেখা প্রথম যাত্রাপালা সেটা ছিল না, কিন্তু ঐদিনই প্রথম বোধ হয় যাত্রার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করেছিলাম। যা দেখি তাতেই মুগ্ধ হই। গম্ভীর চলনে মঞ্চে প্রবেশ করলো বাদশাহ্‌, উজির; তাদের পোশাকের ঝলকানি আর শানশৌকত দেখে পুলক ধরে রাখতে পারি না, তাদের সুমিষ্ট বাচন, অঙ্গভঙ্গি, তলোয়ারের ঝনঝনানি, বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশির ঐকতান আমার অন্তরে অনির্বচনীয় আনন্দের ঢেউ তোলে। কয়েক দৃশ্য পরই মঞ্চ আলো করে প্রবেশিত হয় পরীর মতো অতিশয় সুন্দরী রাজকন্যা– যেমন তার রূপের ঝিলিক, তেমনি তার সাজসজ্জার বাহার; রাজকুমারীর মুখের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলাম– কী করে এতো রূপবতী হয় রাজকন্যারা! এমন রূপবতী জীবনেও দেখি নি। দু চোখ বিস্ফারিত করে বাবার কোলের সাথে লেপ্টে থেকে রূপসী নায়িকার দিকে তাকিয়েছিলাম– এমন সময় বাবা আমার কানের কাছে মুখ এনে মৃদু শব্দে বলে ওঠেন, তুমার নছর মামুরে চিনছাও বাজান? ধ্যানভঙ্গ হয়ে জিঞ্চাসু চোখে বাবার দিকে ফিরে তাকাই। মঞ্চে উপবিষ্ট রূপবান কন্যাকে দেখিয়ে বাবা নরম স্বরে বলেন, তুমার নছর মামু রূপবান কন্যা অইছে। দেখছাও?

সেদিন আমার আশ্চর্যের সীমা ছিল না। নছর মামাকে আমার নানা বাড়িতে কত্তো দেখেছি! গরীবের ছেলে সে, সারা বছর নানা-বাড়িতে রাখাল খেটে খায়। অথচ সেই নছর মামাই রূপবান কন্যার পাটে মেয়ে সেজেছে; তার একপিঠ লম্বা চুল, চুলের খোঁপায় রঙিন ফিতা ও ফুল, চকচকে সোনার হার তার গলায়, মাথায় পরেছে ঝলমলে রুপালি তাজ, নছর মামাকে কী যে রূপবতী লাগছিল! বাবা বলে না দিলে কস্মিনকালেও জানতে পারতাম না যে অপূর্ব সুন্দরী রূপবান কন্যাটা আসলে আমার নানা-বাড়ির রাখাল ছেলে, আমার নছর মামা।

একদিন অকস্মাৎ দারুণ খবর চাউর হলো– দোহার পুরীতে গুনাই বিবি হবে। তবে যাত্রার খবরের চেয়ে আরেকটি খবর সবচেয়ে বেশি চমক ছড়ালো– তা হলো, এই তল্লাটে প্রথম বারের মতো যাত্রায় মেয়েনর্তকী নাচবে, যাকে সুদূর ময়মনসিংহ থেকে অনেক টাকার নজরানায় আনা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ঢোল পিটিয়ে, মাইকে গলা ফাটিয়ে সেই নর্তকী আসার খবর জানানো হলো। জবর চমকপ্রদ তার নাম– প্রিন্সেস নূরজাহান। তার রূপের আগুনে চারপাশের সবকিছু জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এমন রূপসীকে এক নজর দেখলেই জীবন ধন্য।

একা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে রাতের বেলা যাত্রা দেখার বয়স তখনো আমার হয় নি। এই সেদিনও বাবার কাছ ঘেঁষে বসে বাইয়ালির নাচ দেখেছি, কিন্তু এখন আর সেভাবে নর্তকীর নাচ দেখা সম্ভব নয়। অথচ প্রিন্সেস নূরজাহান নামটা আমার মনের মধ্যে তীব্র আগুন জ্বেলে দিয়েছে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজাত কামবোধ নয়, কেবল লোকমুখে শুনে কখনো-না-দেখা নারী-নর্তকীর উথালপাথাল রঙ্গনৃত্য উপভোগের লোভই ভিতরে ভিতরে তাকে ক্ষেপিয়ে তুললো। মেয়েটা যখন সারা মঞ্চ জুড়ে দুলে দুলে নাচবে, কী হবে তার মুখের ভাষা, গানের সুর, চোখের চাহনি? তার চুলের খোঁপায় কৃত্রিম পরচুলা থাকবে না, তার বুক কিংবা পিঠের জমিন পুরুষ-নর্তকীর মতো বেঢপ ও সমতল নয়– আছে পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢেউ– যা দেখলেই ঝিলিক দিয়ে যৌবন জেগে ওঠে। তবে পুরুষ বাইয়ালিরা খুব বিশ্রী আর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে, মেয়েনর্তকীটা নিশ্চয়ই অতোখানি যাবে না। এসব কল্পনা করতে করতে আমার মনে হতে লাগলো– ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে বাউরি বাতাস ঢেউ খেলে যায়– সুন্দরী নর্তকীটা সেই ঢেউয়ের তালে তালে নাচছে, উত্তুরে হাওয়ায় বাঁশঝাড়, কলার ঝোপ ঝমঝম-পতপত করে বাজে, গাছপালা-বনবাদাড়ে মটমট করে ডালে ডালে ঘর্ষণ হয়, পাতার মর্মর, কী এক আনন্দ-হিল্লোলে আমার মন দুলে ওঠে। অশান্ত-উৎসুক-আঁতিউঁতি-চোরা চোখ চারদিকে তাকে খুঁজে ফিরে– যার পায়ের ঘুঙুর বাজে বাতাসে বাতাসে, পাতার মর্মরে।

চাচাতো ভাই চানমিয়ার সাথে মাঝে একবার সলা-পরামর্শ করলাম কী করা যায়। চানমিয়াও নূরজাহানের ঘোরের মধ্যে আছে। যদিও তারও কৈশোর কাল বটে, মেয়েদের দিকে সে-ও তাকায়, কিন্তু সেই চাহনিতে নব যৌবনাগমনের কোনো চিহ্ন থাকে না, অজানা অদেখাকে জানার এবং দেখার তীব্র বাসনা ও কৌতূহল আছে তাতে।

পাঠ্যবইয়ে পড়েছি প্রিন্সেস অর্থ রাজকুমারী। রাজার দুলালী। রাজকন্যারা ভীষণ রূপসী হয়। এতোটুকু বুঝি যে, প্রিন্সেস নূরজাহান কোনো রাজার কন্যা নয়, তবু ভেবে খুব আকুল হলাম– নূরজাহানকে প্রিন্সেস ডাকা হয় বলে। যাত্রার সব নর্তকীকেই কি তাহলে প্রিন্সেস ডাকা হয়? অবোধ আমার মন ভাবে, প্রিন্সেস নূরজাহান কোনো রাজা-মহারাজার রূপসী কন্যা নয়; কার কন্যা তবে সে? কোনো রাজকন্যা কি কোনোদিন কোনো যাত্রামঞ্চে নৃত্য দেখিয়েছিল? ধ্যানমগ্ন হয়ে এসব ভাবতে থাকি।

তীব্র আবেগ আর উচ্ছ্বাস চেপে রাখা ভীষণ দায় হলো। একবার মনে মনে এ-ও ভাবলাম, শেষ পর্যন্ত বাবা কিংবা চাচার সাথে হলেও যাত্রা দেখতে যাবো। তাঁদের সামনে হয়তো প্রকৃত রসভোগ করতে পারবো না, কিন্তু আমার দু নয়ন তো জুড়াবে, একদিন বুক উঁচু করে বলতে পারবো, প্রিন্সেস নূরজাহানের নাচ আমিও দেখেছি।

দারুণ এক মওকা জুটে গেলো। যেদিন যাত্রা মঞ্চস্থ হবে সেদিন বাবাও বাড়িতে নেই, চাচাও নেই। মায়ের খুব একটা অবাধ্য আমি নই, বাবা বাড়িতে থাকলে মায়ের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা কারো সাধ্য নেই, কিন্তু মায়ের সাথে তর্ক করতে পারি নির্বিঘ্নে ও অসংকোচে, আমার মনের মতো কিছু না হলে বা না পেলে মাটিতে দড়াম দড়াম পা আছড়াই, মুখে দু চারটি কটু কথা বলে মনের ঝাল মিটাই।
সকালবেলা বড় এক বোঝা ঘাস কেটে এনে খালের পানিতে গরু গোসল করালাম। পান্তা খেতে বসে মাকে বলে বসলাম, রাইত্রে আমি যাত্রা দ্যাকতে যামু।
পাগল পুলা কয় কী, আইজকা আবার যাত্রা অইবো কুতায়? আমার কথায় অবিশ্বাসের সুরে মা বলে।
আল্লা, তুই জানস না মা, পুরীতে আইজ গুনাই বিবি অইবো? হেইহানে একটা ম্যায়া বাইয়ালি নাচবো, জানছ?
নাউজুবিল্লা- নাউজুবিল্লা, মা দু চোখ কপালে তুলে বলে, এতো মাইনষের সামনে ম্যায়াডা নাচবো? কুন্‌ গেরামের ছিনাল?
কী যে তুই কছ মা, ছিনাল অইবো ক্যান? মায়ের সম্মতি পাবার আশায় বানিয়ে একটা মিথ্যা কথা বলি, ...প্রিন্সেস। রাজার ম্যায়া। রাজার ম্যায়ার নাচ না দেকতে পারলে একদুম মইরা যামু।
অবদ্র পুলার কতা হুনো তো। রাজার ম্যায়া আইফো কই গনে? রাজার ম্যায়ারা কি নাচে?
তুই কিছুই জানছ নারে মা। গেরাম ভইরা নাম ছড়াইয়া গেছে প্রিন্সেস নূরজাহানের, যেমন তার রূপ, তেমনই তার নাচননা দ্যাকলে কেউ বিশ্বাসই করবো না।
এইসব যাত্রাফাত্রা দ্যাকপার পারবি না। রাইত-বিরাইতে কতো আপদ-বিপদ আছে। দোহারপুরী কি এইহানে?
না, আমি যামু।
চুপ কর ব্যাশিজিল পুলা। যাত্রা দ্যাহে কে রে, জানছ? যাত্রা দ্যাহে ফাত্রায়। তুই কি ফাত্রা?
কিন্তু আমি নাকি সুরে বলতে থাকলাম, আমি কিন্তু যামুই।

পাশের বাড়ির আবুল, রহিমুদ্দিন, নুরুনওরাও যাবে। ওরা অবশ্য কোনো বারই যাত্রা দেখা বাদ দেয় না। রাতের বেলা ওরা কোথায় যায় বা না যায় ওদের মা-বাবারা সে খবর রাখে না; অসংখ্য ভাইবোনের মধ্যে ওদের খবরাখবর রাখা ওদের মা-বাবাদের পক্ষে কখনো সম্ভবও হয় না, ওরা তাই দিনে দিনে বাদাইরা হয়ে গেছে, ব- স্বাধীন ওদের জীবনযাপন। যতো বাধানিষেধ যেন কুটিমিয়ার জন্য। সন্ধ্যা হলেই ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে কুপির কাছে বসে বই পড়া, খাওয়া-দাওয়া সেরে কাঁথার নিচে মাথা গুঁজে শুয়ে পড়া। এভাবে ঘরের কোণে বন্দি করে রাখলে তার কি চোখ ফুটবে? তার বয়স হবে, দেখা যাবে তখনো মায়ের আঁচলের তলে ভীরুর মতো মুখ লুকিয়ে আছে।

সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে অত্যন্ত সুবোধ বালকের মতো পা ধুয়ে ঘরে ঢুকে পড়লাম। কুপির কাছে বসে পড়তে লাগলাম এক মনে, শব্দ করে সুর করে পড়ি, কিন্তু আমি জানি আমার স্মৃতির কোঠায় আজ কিছুই লেগে থাকে না, সব ঝরে যায়, আমার মন আর ঘরে নেই।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিজেই ঘরে বাঁশের ঝাঁপ আটকে দিলাম। একেবারে বেড়ার কাছ ঘেঁষে কাত হয়ে শুয়ে ছোট ভাই কালামিয়াকে নিয়ে মা, মাঝখানে দাদি। বাবা বাড়িতে না থাকলে মাঝে মাঝে দাদি এ ঘরে থাকে। আরো ছোট কালে দাদির গলা ধরে ঘুমাতাম। এখন গলা ধরে ঘুমাতে লজ্জা হয়, তাছাড়া আমি কারো মুখের নিশ্বাস সহ্য করতে পারি না।

দাদির পিঠের কাছে শুয়ে পড়ে গুটিপোকার মতো নির্জীব হয়ে পড়ে রইলাম। মাথার কাছে কুপিটা জ্বলছে। মাঝে মাঝে সামান্য মাথা উঁচু করে দেখি মা ঘুমিয়েছে কিনা– কিন্তু বোঝা যায় না। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে পড়লাম। একবার ইচ্ছে হলো এগিয়ে মাথা উঁচু করে লম্বা ফুঁ দিয়ে কুপি বাতিটা নিভিয়ে দিই। মনে মনে কামনা করি, যদি একটা দমকা হাওয়া এসে বাতিটা নিভিয়ে দিত, খুব ভালো হতো। প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে, ইচ্ছে হয় এক ঝটকায় গাছাটা শুদ্ধ কুপিটা কাত করে ফেলে দিতে।

মাথা উঁচু করে মায়ের দিকে তাকাই, মা এ দিকে কাত হয়ে আছে, তার দু চোখ বন্ধ, ঘুমিয়ে গেছে বোঝা যায়, কিন্তু ইঁদুর হাঁটার শব্দেও সে চমকে জেগে ওঠে। অন্য দিকে কাত হয়ে শুলে অবশ্য ঝুঁকি নেয়াটা সহজ হতো।

ঝুঁকি ছাড়া জীবনে কিছুই করা যায় না। মুহূর্তে সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলাম, যা ঘটে কপালে ঘটুক, চেষ্টা আমাকে করতেই হবে। আলগোছে হাত বাড়িয়ে গাছার ওপর থেকে বাতিটা নামিয়ে আনলাম, সিথান বরাবর বিছানায় নামালাম, ফুঁ দিয়ে নেভালে ফুঁ-এর শব্দে কারো ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। দু আঙ্গুলির ফাঁকে সলতে চেপে ধরতেই দপ করে কুপি বাতি নিভে যায়। মুহূর্তে পুরো ঘর অন্ধকার– ইচ্ছে করলেই অভিযানে উদ্যত হতে পারি, কিন্তু সামান্যক্ষণ অপেক্ষা করে দেখতে চাই, এরই মাঝে যদি কারো ঘুম ভাঙ্গে, যদি দেখে ঘরের বাতি নিভে গেছে, আমার সমস্ত ইচ্ছের মুহূর্তে জলাঞ্জলি ঘটবে।

রহিমুদ্দিন আর নুরুর ছোট ছোট কথার শব্দ শোনা যায়। আমি উঠে দাঁড়াই। অতি সপ্তর্পণে ঝাঁপ খুলি– ঝাঁপের কানও সেই শব্দ শুনতে পায় না। নরম পা ফেলে বাইরে এসে পুনরায় ঝাঁপ লাগিয়ে দিলাম, তারপর লম্বা কয়েক কদমে বাড়ির বাইরে রাস্তায় চলে আসি– তখন রহিমুদ্দিন আর নুরুও ঠিক সেই জায়গায় এসে পৌঁছে গেছে। এমন মুক্তির আনন্দ জীবনে আমি প্রথম উপভোগ করলাম। ওদের সাথে দ্রুত পায়ে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছেই মনের আনন্দে সমস্বরে গুনাই বিবির গান জুড়ে দিলাম :

দাদা আর যাবো না ঐ ইশকুলে পড়তে।
ঐ ইশকুলে পড়তে গেলে দাদা গো
ও দাদা সন্মান বাঁচবো না
দাদা আর যাবো না ঐ ইশকুলে পড়তে...
গান গাই আর মনে মনে ভাবি, যাত্রাগানের চেয়ে নূরজাহানের নাচের আসর হলেই সবচাইতে বেশি ভালো হতো।


চৈতিবিবির দিঘি

দু গাঁয়ের মাঝখানে আধমাইল দীর্ঘ চক, চকের মাঝ বরাবর শুকনো সরু খাল, খালের পাড় ধরে গান গাইতে গাইতে আমরা হেঁটে চলছি। দক্ষিণের ফুরফুরে হাওয়ায় আমাদের মনে ফুর্তি আর ধরে না।
আকাশে চাঁদ নেই। রাতের শেষ প্রহরে সরু এক ফালি চাঁদ পুব দিকে যখন উঠবে, তখন যাত্রার করুণ গানের মতোই সেই চাঁদখানি অতিশয় ম্লান ও বিরহকাতর দেখাবে।
চক পার হয়ে গ্রামের শুরুতেই রাস্তার উত্তর ধারে প্রকাণ্ড এক বটগাছ– অসংখ্য শেকড় আর নোয়ানো শাখা-প্রশাখায় ঢাকা তলাভূমি তার উত্তরে বহুদূর অব্দি বিস্তৃত, তারও উত্তরে যে বিশাল ও গভীর এক দিঘি আছে, তার নাম চৈতিবিবির দিঘি।
বটগাছটি দিনের বেলায় রাখাল ছেলেদের, ক্লান্ত কৃষকগণের ও শ্রান্ত পথিকদের মনোরম বিশ্রামস্থল। রাত্রিবেলায় দূর থেকে আবছা অন্ধকারে এটিকে আকাশছোঁয়া এক পাহাড়ের মতো মনে হয়– বুকের ভিতর কেমন এক ভয় জাগে। তাই সাঁঝের পর সচরাচর এ গাছের নিচ দিয়ে কেউ হাঁটে না।
আমাদে মনে আজ কোনো ভূতের ভয় নেই। কিন্তু তবুও বটগাছের কাছে আসতেই গা ছমছম করে উঠলো। তবে মুখে কেউ কোনো কিছু প্রকাশ করলাম না– যদিও আমরা সবাই জানি আমাদের সবার বুকই ভয়ে দুরুদুরু করছে– নুরু সবার আগে, গাছতলায় আসা মাত্র সে দ্রুত কদম ফেলতে লাগলো, দেখাদেখি তার পেছনে রহিমুদ্দিন, এবং বলা বাহুল্য, আমিও। রাতের বটগাছকে তো মানুষ এমনিতেই ভয় পায়– কিন্তু এই গাছটিকে ভয় পাবার পেছনে গভীর রহস্য আছে। আমরা বটগাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, খুব দ্রুত পায়ে। এ গাছের কাছে আসলেই বহু যুগ ধরে শুনে আসা ভয়ঙ্কর কাহিনি সবার মনে পড়ে যায়–
চৈতিবিবির দিঘির পাড়ে বটগাছটা দাঁড়িয়ে, এজন্য মানুষের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে এ বটগাছটার নাম চৈতিবিবির বটগাছ হয়ে গেছে। এর পশ্চিমে জঙ্গল-ছাওয়া যে বিশাল পোড়ো ভিটেটি রয়েছে, ওটি বহু যুগ আগে এক জমিদার বাড়ি ছিল।
চৈতিবিবির দিঘির আছে এক করুণ ইতিহাস।
প্রায় একশত বছর আগে জমিদার হারান শেখ এই দিঘি খনন করেছিলেন। প্রতিদিন ১০০ জন করে কামলা মাটি কাটতো এই দিঘিতে, পুরো ১০০ দিন একটানা মাটি কাটার পর এতোই গহীন ও বিশাল হয় এই দিঘি যে এর পাড়ে এসে দাঁড়ালে ভয়ে বুক কেঁপে উঠতো।
এই দিঘির একটি মাত্র শান বাঁধানো ঘাট ছিল। সেই ঘাটে সখীগণকে নিয়ে গোসল করার অধিকার ছিল মাত্র এক জনের- সে হলো জমিদারের পুত্রবধূ চৈতিবিবি।
জমিদারের একমাত্র পুত্র মরন শেখের তিনটি বিয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু কারো গর্ভেই কোনো সন্তানাদি জন্মালো না। বংশ রক্ষার্থে অগত্যা জমিদারপুত্রের চতুর্থ বিয়ে দেয়া হয় চৈতিবিবির সাথে এবং আল্লাহ্‌র অসীম ফজিলতে বিয়ের প্রথম রাতেই চৈতিবিবি গর্ভবতী হয়। এই শুভ সংবাদে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে জমিদার মহোদয় মহা ধুমধামে সাত গ্রামের মানুষজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান।

চৈতিবিবির একটি লুলা পুত্রসন্তান হয়। জমিদার পরিবারে দুঃখের অন্ত থাকে না, তাঁদের দুঃখের সাথে গ্রামবাসীরাও কেঁদে আকুল হয়- বিধাতার কী নিষ্ঠুর রহস্য! দিনে দিনে লুলা পুত্র বড় হতে থাকে। টেনে টেনে হামাগুড়ি দেয়- তা দেখে চৈতিবিবি অঝর ধারায় চোখের পানি ফেলে। আস্তে আস্তে আরো বড় হয়- ভাঙ্গা পায়ে অতি কষ্টে লুলা ছেলে হাঁটে।
একদিন ভরদুপুরে দিঘির ঘাটে চৈতিবিবির লাশ ভাসতে দেখা গেলো। চৈতিবিবির অকাল বিদায়ে সারা গাঁয়ে কান্নার রোল উঠলো। সেই কান্না থামে না।
এরপর বহু আশ্চর্য ঘটনা ঘটতে লাগলো। প্রায় দুপুরেই দেখা যায় লুলা শিশুটি পাকা ঘাটের কিনারে বসে পা দুলিয়ে খিলখিল করে হাসছ– একদম একাকী। কেউ তাকে ওখানে নিয়ে যায়, নাকি সে একা একা যায়, কেউ তা জানে না, বুঝতেও পারে না।

দুপুরে ঘাটে পানি আনতে গিয়ে জমিদার বাড়ির এক চাকরানি একদিন ও-মাগো বলে চিৎকার দিয়ে গ্যান হারালো। তার জ্ঞান ফিরলে সে জানালো, সে নাকি ঘাটের কিনারে চৈতিবিবিকে লুলাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখেছে। খুশিতে ডগমগ লুলা পা দুলিয়ে মায়ের বুকে দুধ খাচ্ছিল আর মাঝে মাঝেই খিলখিল করে হেসে উঠছিল।
এটা তার দেখার ভুল। চৈতিবিবি মারা গেছে মাস ছয়েক আগে- সে কোথা থেকে আসবে?
এরূপ আরো অনেকে চৈতিবিবিকে দেখতে লাগলো, সে সাঁতার কেটে দিঘির এ পাড় থেকে ও পাড়ে যায়, মাঝখানে চিৎ হয়ে ভেসে থাকে। ঘাটে বসে লুলাকে গোসল করায়। এসব কথা জমিদারের কানে যায়, কিন্তু তিনি তা শুনে বিরক্ত হোন- এ কখনো হয়? শেরেকি কথা। অবশ্য এ-ও তিনি ভাবেন– চৈতিবিবিকে গাঁয়ের মানুষ খুব ভালোবাসতো, তার অস্বাভাবিক মৃত্যু তার প্রতি মানুষের সহানুভূতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, দিঘির কাছে এলেই চৈতিবিবির কথা তাদের খুব করে মনে পড়ে যায়, ফলে দৃষ্টিভ্রম হয়। জমিদার অবশ্য এ-ও জানেন, তিনি তাঁর এই পুত্রবধূটিকে অসম্ভব ভালোবাসতেন এই কথাটি সবারই জানা, চৈতিবিবির কথা পেড়ে জমিদার মহোদয়ের সুনজর পাওয়ারও একটা প্রয়াস থাকতে পারে।

এর মাস খানেক পরই অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি ঘটলো। জমিদার মহোদয় দুপুরে পুকুরের পাড়ে বটের ছায়ায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। হঠাৎ তাঁর কানে এক শিশুর খিলখিল হাসির শব্দ ভেসে আসে। উৎসুক হয়ে সামনে এগিয়ে যান- ঘাটের পাড়ে দাঁড়াতেই তিনি বিস্ময়ে রুদ্ধবাক হয়ে যান– তাঁর দু চোখ বিশাল বিস্ফারিত হয়ে ঘাটের কিনারে দৃষ্টি স্থির হয়– বেণি খোলা, এলোচুল তার, পানিতে অর্ধনিমজ্জিত দুই পা, কোলের ওপর লুলাকে বসিয়ে স্তন্যপান করাচ্ছে চৈতিবিবি, ঘাড়খানি বাম দিকে ঘোরানো, তার ভীষণ হাস্যোজ্জ্বল মুখটি ঈষৎ দেখা যায়, মাঝে মাঝে লুলার গালে সে টুসি মারে, খিলখিল হাসিতে সে ফেটে পড়ে- এ কী অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন জমিদার মহোদয়! অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য!
বউমা!
ঘোরের মধ্যেই তিনি অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় চৈতিবিবি, তার হাসিমুখ স্তিমিত হয়, সন্তর্পণে লুলাকে কোল হতে নামিয়ে পাথরের সিঁড়িতে তাকে বসায়, তারপর ধীরে ধীরে সাঁতরে দিঘির মাঝখানে চলে যায়– জমিদার এক দৃষ্টিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো তাকিয়ে থাকেন– চেয়ে চেয়ে দেখেন, দিঘির মাঝখানে গিয়ে চৈতিবিবি থামলো, আবার তার দিকে ফিরে তাকালো, তারপর টুপ করে একটা ডুব দিল, মাথার চুল পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেলো কিছুক্ষণ, শাড়ির আঁচলখানিও আরো কিছুক্ষণ দেখা গেলো, তারপর আর কিছুই দেখা গেলো না।


পরের পর্বে সমাপ্য

তবে পুরোটা ডাউনলোড করা যাবে এখানে ক্লিক করে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×