somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটোবেলায় দেখা আমাদের যাত্রাপালা : দ্বিতীয় পর্ব

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সতর্কতা

এটি একটা সুদীর্ঘ রচনা, দু পর্বে সমাপ্য। শিরোনামযুক্ত বিষয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, এবং যাঁরা এ বিষয়ে গবেষণা করছেন, কেবল তাঁরা এ পোস্টে কিছু সময় কাটাতে পারেন।

************


শেষ পর্ব

জমিদারের ঘোর কাটে, কিন্তু তাঁর হতবিহ্‌বল কণ্ঠে বাক ফোটে না। এ কী অবিশ্বাস্য ঘটনা! তিনি দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন। মায়ের জায়গায় বসে লুলা মায়ের চলে যাওয়ার পথের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। জমিদার তাকে কোলে তুলে নেন, হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ফিরে আসেন, কিন্তু কাউকে কিছুই খুলে বলেন না। এ ছেলে কীভাবে দিঘির ঘাটে যায়? সারা বাড়ি ভর্তি কতো মানুষজন, এ ছেলে কখন কীভাবে পানির এতো কাছে গিয়ে বসে? কেউ কি দেখে না? তিনি আশ্চর্য হয়ে ভাবেন, আর এক নিদারুণ ভয়ে তাঁর বুক কেঁপে উঠতে থাকে।

জমিদার হারান শেখ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাকরুদ্ধই ছিলেন। তাঁর মুখে যেমন ভাষা ফোটে নি, চৈতিবিবিকেও আর কোনোদিন ঘাটে বসে লুলাকে দুধ খাওয়াতে দেখা যায় নি।
কিন্তু চৈতিবিবিকে দেখার বাসনা মানুষের তীব্র হতে থাকে। তারা ভিড় করে দিঘির পাড়ে এসে বসতো, ঝিম দাঁড়িয়ে থাকতো। অনেক দূরের মানুষও অনেক সময় এসে পাড়ে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে অপেক্ষা করতো, যদিই বা চৈতিবিবিকে একবারের জন্য দেখতে পায়।
চৈতিবিবিকে দেখার বাসনা আর কখনোই মানুষের পূরণ হলো না এবং কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে এক সময় দিঘির নামটি হয়ে যায় চৈতিবিবির দিঘি। দিঘির পাড়ের বটগাছটির বয়স দিঘির বয়সের চেয়ে বছর কুড়ি কমই হবে এবং এটাকেও মানুষ একদা চৈতিবিবির বটগাছ নামে ডাকতে থাকে।

যাত্রাস্থলের কয়েক শ গজ দূর থেকেই তুমুল শোরগোল শুনতে পেলাম। সেই শোরগোলে আমাদের প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠলো।


গভীর জঙ্গল, বাঁশঝাড় আর ঘন গাছপালায় ছাওয়া পুরী গাঁয়ের মাঝখানে উঠোনের মতো ছোট্ট একটি অসমতল মাঠ। বৃষ্টি হলেই এখানে-ওখানে পানি জমে, কাদা হয়; সেই পানি আর কাদায় গড়াগড়ি করে হাডুডু, দাঁড়িয়াবাঁধা আর কাঁচা জাম্বুরায় বালকদের ফুটবল খেলা চলে প্রায় বার মাস। মাঠের এক পাশ দিয়ে পায়ে-চলা পথ চলে গেছে, সেখানে ছোটো একটা মুদি দোকান, সেখানে পান থেকে কেরোসিন এবং চা থেকে চানাচুর– সবই বেচাকেনা হয়।

যাত্রামঞ্চের চার কোনায় চারটি হ্যাজাক বাতি ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। হ্যাজাকের আলো চারদিকে ঠিকরে পড়ছে। ছোটো মাঠখানি দিনের আলোর মতো ফরসা হয়ে উঠেছে। মঞ্চের চারপাশে উপচে পড়া দর্শকগণ মাঝেমধ্যেই জোরে হট্টগোল করে উঠছে, কেননা, রাত বাড়ছে কিন্তু যাত্রা শুরু হবার কোনো আলামতই নেই।

কিন্তু দর্শকগণ ক্রমেই অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে– অযথা কালক্ষেপণ তাদেরকে অসহ্য যন্ত্রণায় পুড়িয়ে মারছে।
অশান্ত দর্শকেরা যখন অধৈর্য্যের শেষ সীমান্তে, ঠিক সেই সময়ে বাদকদলের প্রবেশ। সাথে সাথে এক দফা উল্লাসধ্বনি ওঠে, কারণ, বাদকদলের প্রবেশের অর্থই হলো যাত্রা শুরু হতে আর দেরি নেই।
প্রবেশপথের কাছে মঞ্চের এক ধারে বসে বাদকদল বাজনা ধরলো। মধুর বাদ্যযন্ত্রে সবাই আরেকবার উতলা হয়ে উঠলো। সবার মনেপ্রাণে আজ একটাই আকাঙ্ক্ষা- প্রিন্সেস নূরজাহানের জ্বালাময়ী নৃত্য। কিন্তু কখন সে মঞ্চে আসবে? মনে হয় এখনো ঢের বাকি। ক্ষণে ক্ষণে দর্শকদের একাংশ থেকে ঠেলাঠেলি, শোরগোল শুরু হয়, আয়োজক কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিরা মঞ্চে এসে সবিনয়ে শান্ত হতে অনুরোধ জানান, তাতেও মানুষ ক্ষেপে যায়। শেষ পর্যন্ত মানুষের মুখে ধুয়া উঠলো- প্রিন্সেস নূরজাহান! প্রিন্সেস নুরজাহান! সুর করে তারা এই নাম জপতে লাগলো।

হঠাৎ ঘোষণা- ভাইসব, আপনারা শান্ত হোন, এখনই আমাদের যাত্রাপালা শুরু হতে যাচ্ছে।
মানুষ শান্ত হলেও উঁকিঝুঁকি দিয়ে, ঘাড় উঁচু করে প্রবেশদ্বারের দিকে অধীর ভাবে তাকায়, কিন্তু কেউ নেই। মানুষ আবারও ক্ষিপ্ত ও অবিচলিত হয়ে ওঠে।
অবশেষে প্রবেশদ্বারের ধূলি কপালে ছুঁইয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলো ছয়জন বন্দনাকারী। তাদের কণ্ঠস্বরে অপূর্ব মাধুর্য আছে, বাদ্যের তালে তালে তাদের গানের সুর এক অজাগতিক ছন্দময়তার সৃষ্টি করে। কিন্তু এসবে আজ মানুষের প্রাণ ভরছে না, আজকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সেই প্রিন্সেস নূরজাহানের খেমটা নৃত্য না দেখা অব্দি তাদের অন্তরের জ্বালা মিটবে না।
বন্দনাগীতের মাঝামাঝি সময়ে দর্শকদের মাঝে গুঞ্জন উঠলো, তাদের কান ঝালাপালা করছে।

ভীষণ চেঁচামেচির মধ্য দিয়ে বন্দনা শেষ হলো এবং সঙ্গে সঙ্গে বাদকদলের উদ্দাম বাজনা বেজে উঠলো। ধুমধাড়াক্কা তালে সেই বাজনা বেজে চলছে– প্রবেশপথের দিকে ব্যাকুল চোখে মানুষ তাকিয়ে– দূরে, আড়ালে, ঝিকিমিকি ঝিকিমিকি ক্ষুদ্র আলোর বিচ্ছুরণ- ছনাৎ ছনাৎ ঝুমঝুম বেজে ওঠে– মৃদু শোনা যায়– দর্শক ছটফট করতে থাকে– বাদ্যযন্ত্রের সুর আরো উত্তাল হলো, তখনই এক দৌড়ে মঞ্চে প্রবেশ করলো প্রিন্সেস নূরজাহান। বাজছে বাদ্যযন্ত্র, জরির ওড়নায় মুখমণ্ডল মৃদু আবৃত, ডান হাত উঁচিয়ে বাঁকা করে কপাল ঢেকে উদ্দাম তালে মঞ্চের চারদিকে ঘুরছে নূরজাহান, যেমন তার লতার মতো শরীর, ঘাগরা পরেছে, গায়ে একটা জরিমাখানো ঝলমলে ব্লাউজ– কোনোদিন-না-দেখা গ্রামবাসীগণ বাইয়ালির ব্লাউজচেরা বুক আর যৌবনখোলা নাভি দর্শনেই মূর্ছা যেতে পারতো, কিন্তু প্রিন্সেস নূরজাহান সকলের অদেখা ভুবনের রহস্য আরো বহুগুণ উন্মোচন করে দিল। নূরজাহান ভীষণ বেগে চারদিকে ঘুরছে, ঢং শব্দে বাদ্যযন্ত্রের তাল থামলো– সেই তালের সঙ্গে বিপুল দর্শকদের দিকে মুখ করে চারদিকে ঘাগরা ছড়িয়ে, একটি হাঁটু গেড়ে, আরেক হাঁটু সামনে ছড়িয়ে বসে পড়লো নূরজাহান–দু হাতে অবগুণ্ঠনে তার মুখ ঢাকা, বাদ্যযন্ত্রে এবার সুর উঠছেনখুব ধীরে ধীরে–
রূপে আমার আগুন জ্বলে...
সেই সুরে সুরে সে খুলছে অবগুণ্ঠন– দু হাত ধীরে ধীরে প্রসারিত হতেই তার মুখশ্রী দেখে পুরুষ পাগল হয়ে গেলো। রূপে আমার আগুন জ্বলে- হায় রে হায়...ধীরে ধীরে এক হাতে প্রিন্সেস নূরজাহান ঘাগরা টেনে আস্তে আস্তে হাঁটু পর্যন্ত তোলে– পুরুষেরা উন্মত্ত উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে– এক ঝংকারে উঠে দাঁড়িয়ে নূরজাহান চরকির মতো পাক খায়, আবার এক পা সামনে ছড়িয়ে কাপড় তুলতে তুলতে সে গান গায়- যৌবন ভরা অঙ্গে...সঙ্গে সঙ্গে আরেক পাক ঘূর্ণি– তারপর কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে দু হাতে দর্শকগণকে আহ্‌বান করে সে গায়- প্রেমের সুধা পান করে নাও হায়রে আমার দিওয়ানা...মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দিকে যায়নখটাখট শব্দে মঞ্চের ওপর তার কদম আছড়ে পড়ে, ঝনঝন শব্দে বাজে ঘুঙুর, আর দু হাতে দর্শকগণকে নিজের দিকে আহ্‌বান করতে থাকে, গাইতে থাকে- রূপে আমার আগুন জ্বলে...

এ এক আশ্চর্য অপূর্ব উদ্দাম নৃত্য। বাদ্যমূর্ছনার তালে তালে দর্শকহৃদয়ে ঢেউ খেলে যেতে লাগলো। পুরুষ দর্শকরা সবচেয়ে বেশি উন্মত্ত হয়ে ওঠে যখন নূরজাহান ব্লাউজের নিচে পনিরের মতো ধবধবে অংশটুকু অপূর্ব কৌশলে ঢেউ খেলাতে থাকে, প্রস্ফুটিত নাভিখানিকে খাবলে খেয়ে ফেলার জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে– যখন সে এক স্থানে থমকে দাঁড়িয়ে বক্ষ দোলাতে থাকে, তার সেই বক্ষ দুলুনিতে পুরুষহৃদয়ে ঝড় বয়ে যায়।
কী থাকে জীবনে যদি কেউ প্রিন্সেস নূরজাহানের এই নাচই না দেখলো? পুরুষ-যুবাদের জীবন আজ ধন্য হলো। নূরজাহানের নৃত্য দেখে, যা আগে কখনো কেউ দেখে নি, ভবিষ্যতেও কোনোদিন দেখার সুযোগ হবে কিনা কেউ জানে না– পুরুষরা জ্বলে উঠলো। কিন্তু মেয়েমহল একেবারে নিস্তব্ধ, তারা অতিশয় লজ্জাবনত, মাথা নিচু করে নীরবে বসে, দু একজন অত্যুৎসাহী বাঁকা চোখে তা দেখছে যদিও, অনেকেই বিব্রতভাবে উঠে চলে যেতে থাকলো।

নূরজাহান নেচেই চলছে অবিশ্রান্ত। হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়; তামাম পুরুষকে লক্ষ্য করে সে তার ভারী নিতম্ব ও কোমর দোলাতে থাকে– এমন সময় এক দুষ্টু যুবক নূরজাহানের বুক লক্ষ্য করে এক রুমাল ছুঁড়ে মারে, খপ করে তা ধরে ফেলে নূরজাহান। প্রচণ্ড উল্লাসে মানুষ ফেটে পড়ে। নূরজাহান আরো চমক দেখালো– রুমালটি বুকের ব্লাউজ গলিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে রাখলো, পুরুষরা আরো জোরে উল্লাস করে উঠলো। তখনই মেয়েদের সারিতে গুঞ্জরণ তীব্রতর হলো। এক ফাঁকে বুকের ভিতর থেকে রুমাল বের করে আনে নূরজাহান, তারপর ছুঁড়ে মারে সেই যুবকের বরাবর– উপর্যুপরি সরব উল্লাস। দেখাদেখি আরেকজনের আরেকটা রুমাল– নূরজাহান এবার সবচাইতে বড় চমকটি দেখালো– সে দু পা ঈষৎ ফাঁক করে দাঁড়ালো, বাম হাতে ঘাগরার কোনা উঁচু করে ধরলো, ডান হাতে রুমালটি ঘাগরার ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ ঘষলো, তারপর বের করে এনে দর্শকদের বরাবর ছুঁড়ে মারলো, ওটা ধরার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়লো, নূরজাহান আবার বাদ্যের তালে তালে নেচে উঠলো– তার কণ্ঠে সেই স্ফুলিঙ্গ-গান :

রূপে আমার আগুন জ্বলে
যৌবন ভরা অঙ্গে
প্রেমের সুধা পান করে নাও
হায়রে আমার দিওয়ানা।
ও আমার দিওয়ানা...
ও আমার মাস্তানা...
রূপে আমার আগুন জ্বলে...

মহিলা সারিতে ভীষণ জটলা আর হট্টগোল শুরু হয়ে গেছে। এতোক্ষণ একজন দুজন করে স্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছিল, এবার সকল মহিলা একযোগে উঠে দাঁড়ালো। আয়োজকদের লোক তাদেরকে থামাতে চেষ্টা করছে, কিন্তু মহিলারা তা শুনছে না। তারা এই বেশ্যা মাগির নাচ দেখবে না, ঘেন্নায় তাদের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।
শোরগোল আর গোলের মধ্য দিয়ে মহিলাদের বসার সারি শূন্য হয়ে গেলে পুরুষরা দ্রুত সে-স্থান দখল করে নিল এবং এর মধ্য দিয়েই প্রিন্সেস নূরজাহানের প্রথম দফা নৃত্য শেষ হলো।


নুরু ও রহিমুদ্দিনের সাথে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়টুকু উপভোগ করছি। আমরা তিনজন মাঝখানের একটা জায়গায় একত্রে বসেছি, আমাদের চোখেমুখে উত্তেজনা, অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা, আমরা পরস্পর বাইয়ালি বিষয়ক কানাঘুষা করি। নুরু ও রহিমুদ্দিনের বয়স আমার চেয়ে পাঁচ-সাত বছর বেশিই হবে। রহিমুদ্দিন আবার সবচাইতে সেয়ানা, বিশেষ করে নারী রহস্য সম্পর্কে তার জ্ঞান সবচাইতে বেশি।
রহিমুদ্দিন বলে, ’বাইয়ালিডা দোস্ত একটা খাসা মাল। চুমুক দিতে ইচ্ছা করবার লাগছে।’ নুরু এ কথা বলে আর জিহ্বায় ওপর-নিচ ঠোঁট ভিজায়। আমি অতোটা ঠাওর করতে পারি না কোন্‌ জিনিসটায় চুমুক দেয়ার প্রতি নুরুমিয়ার এতো সাধ। তবে আমি নিশ্চিত যে এটা অবশ্যই বাইয়ালির শরীরঘটিত ব্যাপার-স্যাপারই হবে। আমি লক্ষ্য করে দেখি নুরুমিয়া আর রহিমুদ্দিনের চোখ কী এক অদৃশ্য বস্তুর আকাঙ্ক্ষায় চিকচিক করে জ্বলছে।
রহিমুদ্দিন ফিসফিস করে বলে, ’ওরা আইজক্যা নূরজাহানের অবস্থা টাইট কইর্যা ছাড়বো রে।’
’নু যাই, দেইক্যা আহি। যাবি?’ নুরু জিজ্ঞাসা করে।
’ধূর পাগল, আমরা কি ধারেকাছে ভিড়বার পারুম?’
’বাইয়ালি কাইলক্যাও এইহানে থাকবো নি রে?’
’আরো অন্তত এক সাপ্তা পর্যন্ত এইহানে থাকবো। পুরা খরচ উসুল কইর্যা ছাড়বো না?’
নুরু আর রহিমুদ্দিন এসব কথা বলতে থাকে।

মানুষের মধ্যে আবার অস্বস্তি দানা বাঁধে, ওঠে গুঞ্জন। অভিনয় শুরু হয়েছে, কিন্তু অভিনয়ের প্রতি কারো বিন্দু আগ্রহ নেই। প্রিন্সেস নূরজাহানকে চাই, তার নাভি নাচানো, বক্ষ দোলানো, ছুঁড়ে দেয়া রুমালের স্নায়ু-উত্তেজক গোপনাঙ্গ ঘর্ষণ- এসবের জন্য দর্শকগণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো।

হঠাৎ মানুষ একটু চাঙ্গা হয়ে উঠলো– যাত্রার কাহিনি জমে উঠেছে।
পাঠশালার শ্রেণীকক্ষ। বহু ছাত্রছাত্রীর মাঝে সুন্দরী, লাজুকলতা, ভিন গাঁয়ের জমিদারের আদুরে ভগ্নি গুনাই বিবিও একজনা। ছাত্রছাত্রীদের ঠাট্টারসিকতায় পণ্ডিত মহাশয়বিহীন শ্রেণীকক্ষটি একেবারে সরগরম। এহেন বিশৃঙ্খলার মধ্যে পণ্ডিতজির প্রবেশ। তাঁর ধমাধম বেত্রাঘাতে কয়েকজন দুষ্টু ছাত্রের পৃষ্ঠদেশ স্ফীত হলো। শ্রেণীকক্ষ শান্ত হয়ে উঠেছে, এমন সময় জমিদারপুত্র তোতামিয়াকে সঙ্গে নিয়ে নায়েব মহাশয়ের আগমন। আজ তোতামিয়াকে পাঠশালায় ভর্তি করানো হবে।
ভর্তির প্রথম দিনেই তোতামিয়াকে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হলো।
সম্রাট আকবরের পিতার নাম জানো কি, হে ফজরুল্লাহ্‌? ফজরুল্লাহ্‌কে লক্ষ্য করে গুরুগম্ভীর স্বরে পণ্ডিত মহাশয় জিজ্ঞাসা করেন।
দুষ্টু ফজরুল্লাহ্‌র উত্তর জানা নেই। সে বলে, পণ্ডিতজি, গতকাল আমার বাবার বিয়ে ছিল বলে পড়তে পারি নি। উত্তর জানবো কী করে?
ফজরুল্লাহ্‌র জবাব শুনে দর্শককুল হেসে ওঠে। পণ্ডিত মহাশয় ক্ষেপে গিয়ে ফজরুল্লাহ্‌কে বেত্রাঘাত করতে উদ্যত হোন, পাগলা ফজরুল্লাহ্‌ লুকোবার জন্য ছুটতে থাকে, গুনাই বিবির দু পায়ের ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকতে যায়– আবারো দর্শকগণের গলাফাটা হাসাহাসি। গুনাই বিবি এই অসভ্যটাকে পণ্ডিতজির হাতে তুলে দেয়, তিনি অনবরত বেত্রাঘাত করতে থাকেন, ফজরুল্লাহ্‌ লাফাতে লাফাতে সচিৎকারে পাঠশালা ত্যাগ করে– দর্শকগণ অবিরাম হাততালি দিতে থাকে।
অপর ছাত্র মানিক চাঁদের ওপর এবার পণ্ডিতজির দৃষ্টিপাত হয়।
মানিক চাঁদ কাঁপতে কাঁপতে জানায়, তারও পড়া হয় নি। কারণ, আগের দিন তার মায়ের জন্ম হয়েছে। সারারাত শিশু মায়ের শুশ্রূষায় তার পড়া বন্ধ ছিল। আবারো হাসির রোল। যথারীতি দুষ্টুমির অপরাধে পণ্ডিতজির বেত্রাঘাত ও মানিক চাঁদের সলম্ফ প্রস্থান।

আসন্ন বিপদাশংকায় তোতামিয়ার শরীর কাঁপছে। তারও উত্তর জানা নেই। পালাক্রমে তাকেও নির্ঘাত এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, এটা সে দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছে।
তোতামিয়ার ভাবনাই সত্যি হলো।
হে জমিদারপুত্র, পণ্ডিত মহাশয় বলেন, আশা করি এ প্রশ্নের জবাব তোমার জানা আছে।
তোতামিয়া লজ্জিত মুখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
কী হে, জানা নেই? পণ্ডিতজি মৃদু গম্ভীর ধমকে ওঠেন।
জি না, পণ্ডিতজি। অনুচ্চ কণ্ঠে তোতামিয়ার সলজ্জ উত্তর।
তা থাকবে কেন? তিনি গম্ভীর গর্জন করে ওঠেন, জমিদারপুত্র তো ভবিষ্যৎ জমিদার, বিদ্যাশিক্ষার তার কী-ই বা দরকার! তবে শুনে রাখো হে অবোধ বালক, আমার পাঠশালায় পড়তে চাইলে কঠিন অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেকে যথাযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য সর্বদাই প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যথায়, এ পাঠশালা তোমার জন্য নয়।
অপমানে তোতামিয়ার মাথা হেঁট হয়ে আসে।

পণ্ডিত মহাশয় এবার গুনাই বিবির দিকে ফিরে তাকান। গুনাই বিবি সলজ্জ চোখে ভাব-অভিব্যক্তিহীন ভাবে গুরু মহাশয়ের দিকে তাকায়– দর্শকগণ তখন নড়েচড়ে বসে, একটা জমজমাট সংঘাত প্রত্যক্ষ করার জন্য।
তুমি কি উত্তরটা জানো, গুনাই বিবি? খুব নরম ও বিগলিত স্বরে পণ্ডিত মহাশয় জিজ্ঞাসা করেন।
জানি মহাশয়।
জানো...! পণ্ডিত মহাশয়ের আশ্চর্যবোধক প্রশ্নের সাথে সাথে গুনাই বিবির দিকে ফিরে তাকায় তোতামিয়া।
তাহলে গুনাই বিবি, জমিদারপুত্রধনকে সবিনয়ে জানিয়ে দাও সম্রাট আকবরের পিতা কে ছিলেন।
অত্যন্ত মিষ্ট স্বরে গুনাই বিবি জানায়, সম্রাট আকবরের পিতার নাম ছিল সম্রাট হুমায়ুন।
অতি উত্তম জবাব! মারহাবা! মারহাবা! পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রীর পারদর্শিতায় খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। তোতামিয়ার দিকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, দেখেছো বৎস, তুমিও জমিদারের পুত্র, গুনাই বিবিও জমিদারকন্যা, অথচ কতো তফাৎ!
গুনাই বিবি আর যাবে কোথায়? নিজ পাঠশালায় আপন পিতার অর্থে পালিত পণ্ডিত মহাশয়ের দ্বারা এক নারীর কাছে পরাজয়? গুনাই বিবিকে লক্ষ্য করে ক্ষিপ্ত স্বরে তোতামিয়া বলে উঠলো, গুনাই বিবি...সামান্য এক নারী তুমি, তোমার কাছে এই পরাজয় কোনোদিন ভুলবো না হে নারী, আজ হোক, কাল হোক, এই পরাজয়ের প্রতিশোধ আমি নিবই নিব...। বলে সে দ্রুত মঞ্চ থেকে প্রস্থান করে। দর্শকদের প্রচণ্ড করতালি।

দর্শকদের মধ্যে আবারো উত্তেজনা। গুনাই বিবি আর ভালো লাগছে না। নূরজাহানকে চাই। চাই প্রিন্সেস নূরজাহানের খেমটা নৃত্য।

এভাবে প্রত্যেক অংক শেষ হলেই যথারীতি প্রিন্সেস নূরজাহান দৌড়ে মঞ্চে প্রবেশ করে তার বিবিধ কলা ও ঢঙের নৃত্য নাচে। একবার সেই নৃত্য শুরু হলে দর্শকদের আগ্রহ-উত্তেজনার মুখে তা বহুক্ষণ ধরে চলতে থাকে।

যাত্রার শেষ অংক। নায়ক মর্মান্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জমিদার বাড়ির বিশাল দিঘির পাড়ে প্রকাণ্ড এক আম্রবৃক্ষ ছিল। নিস্ফলাপ্রাপ্ত এবং মৃত্যু–আসন্ন সেই বৃক্ষ উৎপাটনের জন্য গাঁয়ের দরিদ্র প্রজা মানিক চাঁদকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কুঠার দিয়ে সারাদিন গাছের গোড়া কাটার পর শেষ বিকেলের দিকে মটমট শব্দে বৃক্ষের পতন হয়। কিন্তু হায়, অসাবধানতা বশত দরিদ্র মায়ের একমাত্র যক্ষের ধন স্বল্পবুদ্ধি মানিক চাঁদ পতিত বৃক্ষের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করে। তোতামিয়ার জন্মশত্রু, গুনাই বিবিকে শাদি করতে না পেরে যে খলনায়ক বহুদিন ধরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা করে আসছিল, মানিক চাঁদের মৃত্যু তাকে এক মোক্ষম মওকা এনে দেয়। দ্রুত সে দুরভিসন্ধি করে এবং গ্রামময় প্রচারণা চালায় যে স্বয়ং তোতামিয়াই ষড়যন্ত্র করে দুঃখিনী মায়ের এই অভাগা মানিক চাঁদের মৃত্যু ঘটিয়েছে। ঘটনা কোর্টে গড়ায়। তোতামিয়ার পক্ষে উপযুক্ত সাক্ষী না মিললেও শত্রুপক্ষ অঢেল মুচলেকার বিনিময়ে পর্যাপ্ত সাক্ষীসাবুদ যোগাড় করে, অনাথের জীবননাশের জন্য তোতামিয়ার ফাঁসির আদেশ হয়।

এমন নিদারুণ দুঃসংবাদে শোকে পাথর হয়ে যাওয়া গুনাই বিবি কেরাই নৌকা যোগে বাড়ি থেকে গঞ্জের হাজতে বন্দি তোতামিয়াকে দেখতে যাচ্ছে। নৌকার মাঝি বছির উদ্দিন এক দুষ্টুমতি উঠতি যুবক। গুনাই বিবির অসামান্য রূপলাবণ্যে মাঝির পাগল মন। মাঝ নদীতে যাওয়ার পর মাঝি বলে, ও গুনাই বিবি, গঞ্জে যাইয়া আর কাম কী? তোতামিয়ার তো ফাঁসির আদেশ হইছে। তার ফাঁসি হইয়া যাইবো গা। হায় হায়রে, এই সোনার যইবন তুমি কেমনে ধইরা রাখবা? তুমি ফিরা চলো, বাইত্তে যাই। আমি তুমারে বিয়া করুম গুনাই বিবি।
গুনাই বিবি অনেক অনুনয় বিনয় সহকারে করুণ সুরে গান ধরেছে :
ও দাদা বছির রে...বছির রে
তুই যে আমার ধরমের ভাই।
ধরমের বোনরে বিয়া করবি
তোর কি লজ্জা শরম নাই?
অজস্র মিনতির পর বছির উদ্দিনের মন বিগলিত হয়। সে গুনাই বিবিকে নিয়ে গঞ্জের ঘাটে ভিড়ে।

নৃত্যে ভরপুর যাত্রানুষ্ঠান যখন সমাপ্তির পথে, তখন দর্শকদের একাংশ থেকে দাবি উঠলো, তারা আরেকবার নূরজাহানের দামাল নৃত্য দেখবে। কিন্তু কাহিনি তখন দারুণ জমে উঠেছে। দর্শকদের কিছু অংশ সেই কাহিনিতে মজে গিয়েছিল। নূরজাহানের জন্য পাগলপ্রায় দর্শকদেরকে হট্টগোল করতে নিষেধ করামাত্রই দু পক্ষে ভীষণ বিতণ্ডা শুরু হলো। মুহূর্তে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো, ক্রোধোন্মত্ত দর্শকদের মধ্যে ’ধর রে, মার রে’ শোরগোল উঠলো। কেউ সেই ঝগড়ায় সক্রিয় ঝাঁপিয়ে পড়ে, কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে দিগ্বিদিক দৌড়ে পালাতে লাগলো।

যখন যাত্রানুষ্ঠান শুরু হয়, তখন সবার মনে ফুর্তির বন্যা বয়ে যায়। রাত্রি শেষে সেই অনুষ্ঠান সাঙ্গ হলে করুণ বিষণ্ণতায় হৃদয় ছেয়ে যেতে থাকে, মন বলে, যদি আরো একটুখানি দীর্ঘ হতো– আরো একটুখানি দীর্ঘ হলে কতো ভালো হতো।
কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তিনজন প্রাণের মায়ায় যাত্রাস্থল থেকে ছুটে পালিয়েছি। তিনজন এক জায়গাতেই ছিলাম। হট্টগোলে মারপিট করার মতো দুঃসাহস আমাদের কারোরই নেই। গণ্ডগোল শুরু হওয়ামাত্রই তিনজনে এক সাথে উঠেপড়ে ছুট দিয়েছিলাম। আবছা অন্ধকারে দৌড়ে পালাতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেলাম, উপুড় হয়ে পড়ে গেলাম, হাঁটুতে ব্যথা পেলাম, পা মচকালো; এতো মানুষের ভিড়ে আমরা অবশেষে পরস্পরকে হারিয়ে ফেললাম। হারিয়ে ফেললাম, কিন্তু সামনে-পিছে মানুষের সাথে সাথে বেদম দৌড়াতে লাগলাম। পেছন থেকে মাঝে মাঝেই ধর-ধর শোর উঠতে থাকে, মনে হয় কারা যেন তেড়ে আসছে, দৌড়ের গতি তখন দ্রুততর হয়।

কিছুদূর আসার পর যখন মনে হলো বিপদ কেটে গেছে, তখন থামলাম। সামনে-পিছনে মানুষের দৌড়ানোর আওয়াজ, কিংবা হাঁটা ও ছোট ছোট শব্দের কথা শোনা যায়। রহিমুদ্দিন আর নুরুমিয়া কি আমার সামনে, নাকি এখনো পেছনে পড়ে আছে? ভেবে স্থির করতে পারি না। কয়েক দণ্ড দাঁড়ালাম, পেছন থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ আমাকে অতিক্রম করে চলে গেলো, কিন্তু রহিমুদ্দিন আর নুরুমিয়া সেই দলে নেই। গায়ের শক্তি ও চাতুর্যে ওরা দুজন আমার চেয়ে অধিক পরিণত। ওদের পিছে পড়ে থাকবার কোনো কারণ নেই। দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকি, ওরা সামনেই আছে, ওদেরকে ধরতে হবে। ওদেরকে ছাড়া একা এই বিরান চক আমি পাড়ি দিতে পারবো না।

একটু অগ্রসর হয়েই দুজন লোকের দেখা পেয়ে যাই, তাদেরকে আমি চিনি, যদিও তারা আমাকে চিনে না। তারা আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে তাদের নিজ গ্রামে যাবে। সেই দলে ভিড়ে গেলাম।
এ দুজন লোক বড় আমুদে। তারা এখন হেলেদুলে গলায় মধু ঢেলে প্রিন্সেস নূরজাহানের গান ধরেছে...রূপে আমার আগুন জ্বলে, যৌবন ভরা অঙ্গে...। রাত্রিবেলায় চলাফেরার কালে গান গাওয়া ভালো– বুকের ভয়ই শুধু কমে না, মনের আনন্দও মেটানো যায়। গ্রামের মানুষরা রাতে চলার সময় এভাবে গান গেয়ে থাকে। আমি যদি এখন নুরু আর রহিমুদ্দিনের সাথে থাকতাম, তাহলে আমিও এখন গলা ছেড়ে এই গান গেয়ে উঠতাম। কিন্তু অল্পচেনা মানুষের সাথে গানের তাল ধরাটা বিষম লজ্জাকর।
চৈতিবিবির বটগাছের তলায় আসতেই শুনতে পেলাম, পেছনে দূর থেকে কারা যেন আমার নাম ধরে ডাকছে, ও কুডি, কুডি রে...
থমকে দাঁড়াই। কান খাড়া করে শুনি নুরু আর রহিমুদ্দিন আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে এদিকে এগিয়ে আসছে। আমার মনে হলো আমি যেন কোনো এক দূর দেশে অচেনা রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম, হঠাৎ চেনা মানুষের দেখা পেলাম। আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলাম, আমি এই যে এইহানে রে, ও নুরু, আমি বটগাছের নিচে...
নুরুও চিৎকার করে বলতে থাকে, খাড়া...আমরা আইফার লাগছি। তরে কতো খুঁজলাম...
আমার গলায় এবার গান আসে। গলা ছেড়ে গেয়ে উঠি– রূপে আমার আগুন জ্বলে...
হঠাৎ অনুভব করি প্রস্রাবের বেগ পেয়েছে, এতোক্ষণ মোটেও টের পাই নি। গান গাইতে গাইতেই বটতলায় খালের পাড় ঘেঁষে প্রস্রাব করতে বসে পড়ি।

প্রস্রাব করতে বসেই শরীরে জাড়কাটা দিয়ে ওঠে ভয়ে। দিনের বেলায়ও এই বটগাছের নিচে একাকী দাঁড়িয়ে থাকার সাহস আমার কখনো হতো না। সাথের মানুষ দুজন আমার জন্য থামে নি, থামার প্রয়োজনও তারা মনে করে নি। একাকী এই অন্ধকারে ভীষণ ভয় পেলাম। চিৎকার দিয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ভয় পেলে চিৎকার দিতে নেই, তাহলে ভয় আরো বহুগুণ বেড়ে যায়, আমি শুনেছিলাম কোথাও। নুরু আর রহিমুদ্দিন কতোদূর?
ভয় পাওয়ার উপক্রম হলে জোরে কথা বলতে হয়, মুখে শব্দ করতে হয়, ভয় কেটে যায়।

প্রস্রাব সেরে ঘন ঘন কয়েকবার কেশে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। এমন সময়ে অনুভব করি আমার দু ঘাড়ে আলগোছে দু পা ফেলে কে একজন এসে দাঁড়ালো। চকিতে দু দিকে দু হাত তুলে ঘাড় স্পর্শ করতেই কার শক্ত দু পায়ের ওপর হাত পড়ে, অমনি ’ও-বাবারে’ বলে গগণভেদী চিৎকারে দৌড়ে পেছন দিকে ছুটতে থাকি, কাঁধে ভর করে দাঁড়ানো জন্তুটাও মনে হলো আমাকে ধরতে লম্বা কদম ফেলে ধেয়ে আসছে, আর আমি প্রাণপণে দৌড়াতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছি, গলার আওয়াজ শুকিয়ে যেতে থাকে, দৌড়াতে দৌড়াতে নুরু আর রহিমুদ্দিনের পায়ের কাছে এসে যখন দড়াম খেয়ে পড়ে গেলাম তখন আমি পুরোপুরি অজ্ঞান।

নুরুমিয়া ও রহিমুদ্দিনও বিষম ভয়ে কী অইছে রে, কী দেখছা তুই বলে প্রায় চিৎকার দিয়ে ওঠে, তখন পেছন থেকে আসা আরো কয়েকজন জড়ো হয়, পোড়ো জমিদার বাড়ির ভিতর থেকে দু তিন জন মানুষ দৌড়ে আসে। আমার মুখ হতে মৃগী রুগীদের মতো অনর্গল ফেনা বের হতে থাকে। ধরাধরি করে আমাকে ওরা পোড়ো বাড়ির এক ঘরে নিয়ে যায়। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়ার পর আমার জ্ঞান ফিরতে থাকে, কিন্তু চোখে বিপুল ভয়। ঘন ঘন শরীর ঝাঁকি দিয়ে ওঠে।
কতা ক কুডি। কী দেখছিলি? ভূত? নুরু আর রহিমুদ্দিন আমাকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। আমি ঘোরের মধ্যে পরিষ্কার শুনি না কিছুই।
বলি, ’জানি না কী দেকছি। পেশাব কইরা খাড়াইবার লাগছি, অমনি কান্দের ওপরে আইয়া খাড়াইলো। আমি নড়তেও পারি না, চড়তেও পারি না। দইড় দিলাম, খালি আছাড় খাইয়া পইড়া যাই। দেহি কী আমারে ধরবার লিগা পাছে পাছে ধাওয়া করবার লাগছে। তারপর আর জানি না।’

পুবের আকাশে অরুণোদয়ের ঈষৎ রক্তিমাভা ফুটতে শুরু করেছে। দূর থেকে ভেসে আসছে আজানের সুমধুর ধ্বনি। সেই সুর শুনেই চমকে উঠি। বলি, ও নুরু, জলদি নু। মায় তো অহনেই নামাজ পড়বার উইড্যা পড়বো। ভূতের ভয়ের চেয়ে মায়ের বকুনির ভয়ে সহসা মন শঙ্কাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই ভোরবেলা আজানের শব্দে মা ঘুম থেকে জাগে। দাদি ডেকে তোলে। সুর করে কালিমা তৈয়ব পড়তে পড়তে ঘরের ঝাঁপ খুলে বউ-শাশুড়ি বাইরে বেরোয়, প্রাতঃক্রিয়াদি শেষে ওজু করে ঘরে ঢুকে জায়নামাজে বসে। জায়নামাজের পেছনেই আমি শুই। মা আমাকে অন্তত একবার হলেও বলবেই, ’বাজান, ওড্‌, নামাজ পড়বি না? নামাজ পড়্‌। অহনে তুই বড় অইছা না? বড় অইয়া নামাজ না পড়লে আল্লায় গুনা লিগবো।’ আমার খুব আলসেমি লাগে। মায়ের কথায় মাঝে মাঝে নামাজ পড়িও। তবে বাবা এ ব্যাপারে খুব কড়া গলায় আদেশ করেন। সেই আদেশে ঠিকই বাধ্যগতের মতো বাবার পাশ ঘেঁষে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ি। কিছু কিছু সুরা মা ও দাদির কাছ থেকে মুখস্থ করেছি। অন্যান্য তরিকাও কিছুটা রপ্ত হয়েছে। শুধু আলসেমিটা ছাড়তে পারছি না বলে নামাজটা ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। এজন্য আমার কিশোর মনও মাঝে মাঝে বিবেকদংশিত হয়; তখন মনকে সান্ত্বনা দিই, সামনে কত্তো সময় পইড়া আছে! একদিন শুরু অইবোই।

মনে ভয় জাগে, মা যখন আমাকে নামাজের জন্য ডাকবে, কিংবা আমার শোবার জায়গার সামনে জায়নামাজ বিছাবে, দাদির পেছনে আমাকে দেখতে পাবে না; দেখতে না পেয়ে মা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবে, পাড়া-পড়শি জড়ো হবে, ঘর হতে তরতাজা কুডি কোথায় হারিয়ে গেলো এই তরাসে তখন সারা গাঁয়ে শোর উঠবে। অবশ্য সামান্য সাহসও পেলাম মনে। মা নিশ্চয়ই জানবে নুরুমিয়া আর রহিমুদ্দিনের সাথে আজ যাত্রা দেখতে না গিয়ে পারি না। আরেকটা বিষয়ও মাথায় ঢুকলো। মায়ের অবাধ্য হয়ে ঘরের বাহির হওয়া আমার জন্য অমার্জনীয় অপরাধ। সেই অপরাধের শাস্তিদানের কথা না ভেবে মা যখন দেখবে ভোর হয়ে গেছে, অথচ একরত্তি কুটিমিয়া এখনো ঘরে ফিরে নি, ঘোর অমঙ্গলের আশংকায় তার মন তখন বিষম উতলা হয়ে উঠবে।

শরীর ঝাঁকি দিয়ে ত্বরিত উঠে দাঁড়াই। বলি, ’জলদি নু।’ বলেই নুরু কিংবা রহিমুদ্দিনের উত্তরের অপেক্ষা না করে হনহন করে হাঁটতে থাকি।
’ও কুডি, খাড়া। খাড়া...অহনতুরি অনেক রাইত। আবারো বটতলা দিয়া মরবার যাবি?’ পেছনে হাঁটতে হাঁটতে নুরুমিয়া বলে। রহিমুদ্দিনও হাঁটতে থাকে।
’বটতলা দিয়া যামু ক্যান? ঘুইরা আইল দিয়া যামু।’ হাঁটতে হাঁটতে আমি বলতে থাকি।

এবার আর বটতলা দিয়ে গেলাম না। রাস্তা থেকে নেমে তিন-চারটি ক্ষেত পার হয়ে আইল ধরে হেঁটে ঘুরে আবার রাস্তায় উঠলাম। খুব দ্রুত হাঁটছি। আমার মনে এখন একটুও ভূতের ভয় নেই, শুধু মায়ের ভয়। কিন্তু তবুও মনে হতে লাগলো আমাদের পেছনে কেউ একজন লম্বা কদম ফেলে ধেয়ে আসছে, সেই ভয়ঙ্কর জন্তুটা, যেটা পা ফেলে আমার কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়েছিল। নুরু আর রহিমুদ্দিন আরো জোরে, আরো জোরে, প্রায় দৌড়ে ছুটতে চায়। একবার ভাবলাম লম্বা এক ছুট দিই; আবার ভাবি নুরুর পিঠে ধাক্কা দিয়ে বলি, ’চালাইয়া আটতে পারস না? আরো জোরে পা চালা।’ কিন্তু বললাম না, কারণ, এ কথায় তিন জনেই একযোগে দৌড় লাগাবো হয়তো, কিংবা বাড়ির কাছে এসেও ভয়ে নিজেদের চিৎকারে নিজেরাই পেছনে আন্ধাকুন্ধা জ্ঞান হারাবে।

দরজার কাছে এসে মুহূর্তকাল দাঁড়ালাম, তারপর খুব আস্তে ঝাঁপ খুলে ভিতরে ঢুকলাম। পা টিপে নিজের শোবার জায়গায় যাই, আলগোছে শুয়ে পড়ি। শুয়ে পড়ে মনে মনে খুব শঙ্কামুক্ত হলাম, আবার আশ্চর্যও হই, ব্যাপারডা কী, মায় কি আমি আহনের আগেই নামাজ পইড়া আবার শুইয়া পড়ছে নিকি?

নিশ্চিন্তে স্বস্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু যাত্রা-নৃত্যোপভোগে নির্ঘুম রাত্রিজাগরণের ফলে দিবাভাগে বিলম্বিত নিদ্রাটুকু স্বপ্নের ঘোরে প্রিন্সেস নূরজাহানের কামোত্তেজক তুমুল নৃত্যঝঙ্কারময় হলো; ঘরের পেছনে রাস্তায় মানুষ ও গো-পশুর চলাচলে বার বার আমার ঘুম ভাঙলো, যন্ত্রণায় দু চোখ জ্বলে যেতে থাকলো। এমনি আধো ঘুম আধো জাগরণের মধ্যে শুনতে পেলাম, রাস্তায় বহু মানুষ ছোটাছুটি করছে আর বলাবলি করছে, ’আহহারে, এমন সুন্দর বউডা গলায় দড়ি দিল?’ চমকে লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াই। ভীষণ একটা চিৎকার দিব কী দিব না, আমার চাঁদের মতো রূপবতী মায়ের মনে কোনো দুঃখ নেই, মা কেন আজ নামাজ পড়তে ওঠে নি? আমার মায় কি গলায় দড়ি দিছে? ও মা লো...। বিকট চিৎকারে ঘর থেকে বের হতে উদ্যত হতেই আতঙ্কিত আমার মা দৌড়ে সামনে আসে, ’কী রে বাজান? চিক্কর দিলি ক্যান?’ মা-ও সচিৎকারে আমাকে বুকে জাপটে ধরে। মায়ের বুকে মাথা গুঁজে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলি, ভয়ার্ত জননীরও সর্বাঙ্গ থরোথরো কাঁপে।
’কী অইছে, আমার যাদু সুনামণি?’
আমি মাথা তুলে তাকাই। বুকের ধড়পড়ানি ধীরে ধীরে স্তিমিত হচ্ছে। বলি, ’তুই আইজ নামাজ পড়স নাই?’
’কিছু স্বপ্নে দেখছা বাজান?’
’হ। দেহি কি তুই গলায় দড়ি দিছা।’
মা মৃদু ম্লান হাসে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ’যা দেকছা বালোই দেকছা রে বাজান। পুরীর মোল্লা বাড়ির সুন্দরী বউডা আইজক্যা ফাঁসি দিয়া মইরা গেলো। বাছছে।’

এবার মনে পড়ে, ঘুমের ঘোরে আমি এই কথাই শুনেছিলাম, রাস্তার মানুষেরা বলাবলি করছিল।
’মা, আমি গেলাম। দেইক্যা আহি।’ আমি দেরি করি না। রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। অনেক মানুষ, মহিলা-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ, যেন সামনেই কোনো উৎসবে তারা যোগ দিতে যাচ্ছে, দ্রুত হেঁটে চলছে দোহার পুরীর দিকে। রাত্রে আমরা তিন জন এই রাস্তা ধরেই যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম। এতো মানুষ– তাদের দলে মিশে যাই– কতো আফসোস তাদের-
’গরীব ঘরের ম্যায়া বইল্যাই তো ঐ লোচ্ছাটার কাছে বিয়া অইছিল- নাইলে কি পরীর মতোন এই রাজকন্যা ওর কফালে জুটতো?’
’এমন সুন্দর বউ থুইয়া কেউই বাইয়ালির লগে আকাম করে?’
’এইগুনি অইলো মিয়া হস্তিপুরুষ। ঘরের মাইয়া মানুষে তাগো অয় না।’
’মাদবরের পুলা তো।’
’পাষণ্ড। দেইক্‌কো, কাইলই আরেকটা বিয়া কইরা ফালাইবো।’
’ছুডো ছুডো ম্যায়া দুইডার অহনে কী অইবো কউ দেহি?’

চকের মাঝামাঝি আসতেই দেখতে পাই চৈতিবিবির বটতলায় মানুষ থৈথৈ করছে। বটগাছের তলায় এতো মানুষ কেন? বউডা কি বটগাছে ফাঁসি দিল?

ফাঁসিতে ঝুলে থাকা কোনো মানুষ কখনো দেখি নি এর আগে। একটা দীর্ঘ চঙ্গ, এই চঙ্গ বেয়ে এই দুঃখিনী রূপবতী বউটি বটের শাখায় উঠেছিল, আসমানী রঙের একটা শাড়ি তার পরনে, এ রকম শাড়ি আমার মা-ও পরে; মুখখানি দারুণ ফ্যাকাশে, ঘাড় কাত করে ঝুলে আছে, মুখের বামপাশ ঘেঁষে জিহ্‌বার কিছু অংশ বেরিয়ে... আমার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। বউটার পা বরাবর নিচের কিছু জায়গা ঘের দিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে কেউ মৃতকে স্পর্শ করতে না পারে। থানা থেকে পুলিশ আসবে, তারাই প্রথম স্পর্শ করবে তাকে।

হঠাৎ আবছা আবছা খেয়াল হয়, রাতে যাত্রা থেকে ফেরার পথে ঠিক ঐখানটাতে দাঁড়িয়েছিলাম, যেখানে এখন বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। আহ্‌হারে, বউটার পায়ের তলাই আমার ঘাড়ের কাছে লেগেছিল, এখন তা স্পষ্ট মনে হয়। এমনও তো হতে পারে, তখনও সে মরে নি, মরার আগের অবস্থায় সে ছটফট করছিল। না, তা হয় না। তা হলে তার খিচুনির শব্দটুকু অন্তত শুনতে পেতাম, এতে হয়তো ভয়ও অনেক বেশিই পেতাম। ভাবলাম, যদি বুঝতে পেতাম ওটা ফাঁসিতে ঝুলে থাকা একটা মানুষ, কী করতাম তখন? আমি জানি, সেটা জিন বা প্রেতের ভয়ের চেয়েও ভয়াবহ হতো।


আগের পর্ব

শেষ হইয়াও হইল না শেষ

আগামীতে রহিম বাদশাহ ও রূপবান কন্যা সহ আরো কিছু যাত্রাপালার কথা আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:১০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×