somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ শহর ছেড়ে তোর চলে যাবার কথা শুনে

২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর মাত্র কটা দিন, সন্তানদের লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে নতুন সংসারে ছেড়ে দিয়ে
এ শহর ছেড়ে চলে যাবি, বাপদাদা আর শ্বশুরশাশুড়ির জন্মভিটায়
যেখানে তোর ছাত্রীজীবন গড়ে উঠেছিল আমকাঁঠালের ছায়ায় আর পদ্মানদীর
তুখোড় ঢেউয়ে সাঁতার কাটতে কাটতে; তুই ফিরে যাবি তোর আদি জন্মস্থানে

পাওয়ার আগেই গৃহে ফিরে যাবি, আমি তো এমন তোকে চাই নি কোনোদিন

ইচ্ছেরা খড়ের আগুনে পুড়িয়েছে আমাকে। তোর গৃহের আশায় দুপুরের গনগনে সূর্য মাথার চাঁদিতে অনর্গল গলে পড়েছে। দরজার কলিংবেলে দ্বিধান্বিত আঙুলের ডগা অনেকক্ষণ উদ্যত থেকে শেষমেষ ঢলে পড়ে নিচে নেমে গেছে কতোদিন- কী জানি, ভেতর থেকে তোর দীর্ঘায়িত ‘কে’ শব্দে আমার আড়ষ্ট মুখ চিরতরে মূক হয়ে যায় যদি! তবু তোর নিশ্বাসের শব্দ নিয়েছি প্রাণ ভরে, তোর শরীরের ঘ্রাণ দেয়াল ভেদ করে আমার বুক বরাবর ঢুকে যেতো প্রতিটি ফিরতি পথে।

এভাবে একটা জীবনও যদি পার হয়ে যায় আরেকবার তোকে না দেখে- অথচ এই শহরেই কোথাও না কোথাও তুই আছিস- তোর শোবার বিছানা পেরিয়ে, বারান্দা পেরিয়ে, বিপুল জনারণ্য পেরিয়ে ছুটে আসা বুকের ঢিপ ঢিপ দু’হাতে জড়িয়ে ধরে আমি অবিরাম বেঁচে উঠবো অনাগত দিনের ভেতর।

এই শহরের কোথাও না কোথাও তুই বেঁচে থাকবি; তুই নেই জেনেও প্রতি ভোরে রাস্তায় পায়চারি করবার কালে চারদিকে তোকে খুঁজবো; আর প্রতিটি পদক্ষেপে বায়ু থেকে বুক ভরে তোর শরীরের ঘ্রাণ নেবো; একদিন গিজগিজে দুপুরে রমনার মাটিতে কান পেতে শুনবো- দূরে কোথাও, এলিফ্যান্ট রোডের কিনার ধরে ধরে, নরম নরম পা ফেলে তুই হাঁটছিস নিরুদ্দেশ। রোদের আগুনে আমার দীর্ঘশ্বাস পুড়ে যাবে, তুই আমাকে খুঁজে পাবি না, যেমন আমিও তোকে পুরো জীবনের জন্য হারাবো- একদম কাছাকাছি, একই শহরে থেকেও।

এই শহরের একটি কোণে বাসা বেঁধে তুই থেকে যা প্রিয়পাখি গাংচিল। পদ্মা শুকিয়ে গেছে তোর যৌবনের মতো; আমকাঁঠালের ছায়াতে বিষম ভাগাভাগি; কানামাছি খেলবার বিরান চত্বর তোকে কে দেবে? গ্রামের মানুষ তোকে চিনবে না। এতোসব দুঃখ আর কষ্ট সইতে কেন তুই গ্রামে ফিরে যাবি, প্রিয়পাখি গাংচিল?

তোর আরেকটা সংসার হবে। ফুটফুটে বউয়েরা। দাদি হবি। পানদানি থাকবে তোর। টুকটুকে ঠোঁট। এমন বোশেখে তোর বাসায় চাঁদের হাঁট। কেন তুই ফিরে যাবি হারানো ঠিকানায়, এসব ফেলে?

এসব কিছুই হবে না। একদা নির্বর্ষ চৈত্রে সকল বাঁধ ভেঙে তোর ঘরে ঢুকে দেখবো- দেয়ালে একখানা ছবি ঝুলছে, তোর সুন্দরী পুত্রবধূরা ঝেড়েমুছে সাজিয়ে রেখেছে ফুলে। আর অনেক অনেকদিন আগে, তোর রক্তাক্ত প্রেমিকের সকল আকুতি দলিত করে তুই ফিরে গেছিস আগের ঠিকানায়।

রোদের আগুনে আমার দীর্ঘশ্বাস কেবলই পুড়তে থাকবে।


*পুরোনো, ১৬ এপ্রিল ২০১০
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩০
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×