somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে মেয়েটি আমাকে প্রথম প্রেম শিখিয়েছিল

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে আমার দু বছরের বড় ছিল আর স্কুলে এক ক্লাস উপরে পড়তো। সে খুব মারকুটে ও ডানপিটে ছিল; আমি খুব গোবেচারা ছিলাম। আমাকে দু চোখে দেখতে পারতো না। সে পড়ালেখায় ব্যাকবেঞ্চার ছিল, আমি নাকি মেয়েটার চেয়ে খুব মেধাবী ছিলাম; এজন্য আমার প্রতি তার প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল; অবশ্য এটা আমি জানতে পেরেছিলাম অনেক অনেক দিন পর- সে যখন মুচকি মুচকি হাসছিল, আর তার স্বামীর কাছে অনুযোগ করছিল, অনেক অনেক দিন পর পথে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে।

তার সাথে একদিন স্কুলে ঝগড়া হয়েছিল। আমি শিক্ষকের কাছে নালিশ করেছিলাম। শিক্ষক তাকে ভর্ৎসনা সহ বেত্রাঘাত করেছিলেন। আমার প্রতি মেয়েটার প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল।
তারপরের দিন একটা বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল।
স্কুল ছুটির পর। আমাদের বাড়িতে আসতাম মেয়েটার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে। ওত পেতে থাকা মেয়েটা আমাকে দেখেই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এবং ছুটে পালাবার আগেই বাঘিনীর মতো আমার পিঠের উপর বড্ড একটা কামড় বসিয়েছিল। আমার হৃদয়বিদারক কান্নায় মেয়েটার মা ছুটে এসে আমাকে আদর করেছিলেন, আর মেয়েটাকে মারবার জন্য তাড়া করেছিলেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা জানতে পেরে আমার মা অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন।

এ ঘটনার পরের বছর আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলাম, আর ফাঁকিবাজ, দজ্জাল মেয়েটা ফেল মেরে দ্বিতীয় শ্রেণিতেই রয়ে গেলো। প্রকৃতি মানুষকে এভাবেই শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মে মেয়েটা আমার প্রতি নরম হতে থাকে। আমার জন্য সে গাছপাকা বরই নিয়ে আসতো; ওদের আমতলায় ঝড়ের দিনে আম কুড়োনোর দাওয়াত দিত; চড়ুইভাতিতে আমাকেও সঙ্গে নিত। পুতুল বিয়ের সময় ছেলে হিসেবে একমাত্র আমাকেই ডাকতো ওর দলে। প্রথম বৃষ্টির নতুন পানিতে পুকুর ভরে যেতো, রাতভর ব্যাঙ ডাকতো; সকালে আমরা একসাথে সেই ব্যাঙ তাড়াতাম, আর সারাদুপুর ভরা পুকুরে ডুবসাঁতার খেলতাম।
আরও কিছুকাল পর মেয়েটা বলেছিল, ‘তোকে একদিন একটা জিনিস দেখাবো, কাউকে বলবি না তো?’
আমি সে কথা কাউকে বলি নি।

একদিন মেয়েটা শাড়ি পরেছিল; পুতুল বিয়ের দিনে। আমাকে পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরতে বলে নি; এসব কি ছাই আমরা জানতাম? তেঁতুলখোসায় ভাত রেঁধে দিয়েছিলেন ওর মা; পুরো একতেঁতুল ভাত সে আমাকেই দিয়েছিল। তারপর মুখ টিপে হেসে বলেছিল, ‘দেখবি?’
‘দেখবো’- বলতেই ‘আয়’ বলে ইশারায় ডেকে নিয়ে যায় ওদের কোনার দিকের অন্ধকার ঘরটায়। খুব আলগোছে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘কাউকে বলবি না তো?’
‘না।’ আমিও ফিসফিস করে জবাব দিই। মেয়েটা কাঁপা হাতে খাটের উপর জাজিমের নীচ থেকে কী যেন বের করে এনে আমার হাতে তুলে দেয়।
‘পড়। কাউকে বলবি না তো?’
‘না।’ বলে আমি পড়তে থাকি। এক আনা যদি পড়তে পারি, ষোলো আনা তার অর্থ বুঝি না।
‘প্রেমপত্র। বুঝলি?’
‘তুই লিখেছিস?’
‘না। বকুলা ম্যাডামকে দিতে বলেছিল, তুহিন স্যার। দিই নি। কাউকে বলবি না তো?’
‘না।’
‘আমিও একটা লিখবো। তুই নিবি?’
‘নিব।’

তারপর মেয়েটা একদিন আমাকে একটা ‘প্রেমপত্র’ লিখেছিল; আর একটা অনবদ্য জিনিস দেখিয়েছিল।
আমি সে কথা কাউকে বলি নি।

২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯


*ই-বুক 'তারকাজরিপ' ডাউনলোড লিংক



উৎসর্গঃ আমার পার্মানেন্ট প্রেমিকা




সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৬
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×