আমার একটা গল্প ছিল, যার রহস্য উদ্ধার করতে পেরেছিলেন মাত্র অল্প কয়েকজন ব্লগার। সেটা ফেইসবুকেও দেয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো ফেইসবুকার সেই গল্পের ধাঁধাটা ধরতে পারেন নি।
গল্পটা যে খুব প্যাঁচের বা জটিল, তাও না, অন্তত ওটা লেখার সময় আমি সেটা মনে করি নি। কিন্তু ব্লগে ও ফেইসবুকে বেশ কয়েকবার শেয়ার করার পর দেখা গেল, আমি যেরকম রি-একশন আশা করেছিলাম, তার কাছাকাছি যেতে পেরেছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন।
ব্লগে বা ফেইসবুকে কোনো সেলিব্রেটি বা কোনো পরিচিত মুখ যাই লেখেন না কেন, আমরা মুহূর্তে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের বন্যা বইয়ে দিই, এমন ভাষায় প্রশংসা শুরু করি তাতে মনে হতে পারে, এমন ক্লাসিক পর্যায়ের লেখা একমাত্র তার পক্ষেই লেখা সম্ভব, তার মতো প্রতিভাধর লেখক দ্বিতীয়টির আজও জন্ম হয় নি।
অথচ বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক সত্য হলো, তার চাইতে খুব ভালো মানের লেখা হয়ত লাইক-কমেন্ট-হীন অবস্থায় নিভৃতে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ব্লগ বা ফেইসবুকের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে।
ব্লগে আমি অনেকের পোস্টে কাঁচা বা দুর্বল কবিতা পড়তে গিয়ে কিছু টিপ্স দিব ভেবে স্ক্রল করে নীচে গিয়ে পুরা আহাম্মক বনে গেছি। দেখেছি ওটা একটা শেয়ার করা কবিতা, কবির নাম হুমায়ুন আজাদ। লজ্জায় জিভে দাঁত কাটতে গিয়ে দাঁতে জিভ কেটে ফেলেছি। কলেজে পড়ার সময় একবার একটা ছেলে সাহিত্যে আমার বাহাদুরি যাচাই করার জন্য একটা উদ্ধৃতি এনে বললো- ‘এটা কার লেখা, বল’। আমি খুব অবজ্ঞা সহকারে বললাম, ‘এত দুর্বল সেন্টেন্স কোনো এস্টাব্লিশড রাইটারের হতে পারে না, এটা তুমি নিজেই লিখেছ’। সে হতবাক হয়ে বললো, ‘এটাকে তুমি দুর্বল সেন্টেন্স বললা? জানো তুমি এটা কার লেখা’? আমি জোর দিয়েই বলতে থাকলাম, ‘এটা তোমার ছাড়া অন্য কারো হবার সম্ভাবনা একেবারেই জিরো’। সে ফস্ করে বললো, ‘এটা শরৎচন্দ্রের লেখা’। আমি তার সাথে প্রচণ্ড তর্ক জুড়ে দিলে সে ‘শ্রীকান্ত’ বের করে তার মধ্য থেকে আমাকে লাইনটা দেখিয়ে দিল।
আমাদের পত্রপত্রিকায় যদি এমন ব্যবস্থা থাকতো, প্রাপ্ত লেখার মধ্যে লেখকের নাম নেই, আইডেন্টিফিকেশনের জন্য কেবল কিছু গোপন কোড দেয়া আছে, তাহলে অনেক পরিচিত লেখকের লেখাই আমরা পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে দেখতাম না। তখন বাছাইকৃত সেরা লেখাগুলোই ছাপা হতো।
আমি ব্লগে ২০০৯/১০ সালে একটা সিরিজ পোস্ট লিখতাম – “নবীন কবিরা যেরকম আধুনিক কবিতা লিখবেন”, তারপর পোস্ট করতাম বিখ্যাত কবিদের এমন কিছু কবিতা, যার কোনো পরিচিতি নেই, বা যে কবিতার মানও তেমন উন্নত নয়, এবং কবির নাম হিসাবে আমার নাম জুড়ে দিয়ে লিখতাম- একটা আধুনিক কবিতা এরকম হতে হবে। ঐ সময়ে ব্লগে আমার পরিচিতি আজকের চাইতে অনেক গুণ কম ছিল। কাজেই, কবিতাগুলোতে খুব নেগেটিভ কমেন্ট পড়তো। “এটা কোনো কবিতা হলো? ফালতু কবিতা। এটা কিচ্ছুই হয় নি।” ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি মনে মনে খুব হাসতাম। কারণ, আমি যদি লিখতাম এটা জীবনানন্দ দাশ বা রবীন্দ্রনাথের কবিতা, তাহলে অন্তত এটাকে ‘ফালতু কবিতা’ বলার দুঃসাহস কারো হতো না।
এরকমও গল্প পড়েছি, পত্রিকায় লেখা পাঠান, কিন্তু ছাপা হয় না। ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে জনৈক নবীন কবি রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা নিজের নামে লিখে সম্পাদকের কাছে গেলেন ছাপানোর আবেদন নিয়ে। সম্পাদক ভালো করে নেড়েচেড়ে পড়ে ওটা রিজেক্ট করে দিলেন- কবিতা হয় নি বলে। হুমায়ুন আজাদ আর হুমায়ূন আহমেদেরও এরকম একটা গল্প শুনেছি। হুমায়ুন আজাদের অহঙ্কারী মনোভাবের কথা আমরা জানি এবং হুমায়ূন আহমেদের উপর যে তার খুব বিদ্বেষ বা হিংসা ছিল, তাও জানি। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস কোনো উপন্যাস হয় না বলে ওগুলোকে নাকি তিনি ‘অপন্যাস’ বলতেন। একবার হুমায়ূন আহমেদ একটা উপন্যাস দিলেন হুমায়ুন আজাদকে পড়ে বলার জন্য উপন্যাসটা কেমন হয়েছে। হুমায়ুন আজাদ উপন্যাসটা পড়ে বলেছিলেন- ওটা কোনো উপন্যাস হয় নি। হুমায়ূন আহমেদও হেসে বলেছিলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসও যদি উপন্যাস না হয়ে থাকে, তাহলে আমার উপন্যাস কিছু না হলে ক্ষতি নেই। (হুমায়ুন আজাদের এ গল্পটা আমি কোনো বইতে পড়ি নি। ব্লগ বা ফেইসবুকে কোথাও পড়েছিলাম। কাজেই সত্যমিথ্যা জানা নেই।)
কোনো লেখকের লেখা অনলাইনে পড়ে কমেন্ট করার সময় আমাদের মনে অনেকগুলো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। আমরা যেমন সেলিব্রেটিদের লেখায় প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিই, ক্লাসিকতুল্য করে ফেলি, তেমনি, কোনো কোনো সেলিব্রেটি লেখকদের বেলায় এর উলটোটাও ঘটে- লেখকের বিরুদ্ধে হিংসা বা ক্ষোভের অন্ত থাকে না। উদাহরণস্বরূপ হুমায়ূন আহমেদের কথাই বলা যায়। তিনি যদি সারাজীবনে গোটা পাঁচেক বই লিখতেন, কিংবা গোটা পাঁচেক বই লেখার পর মারা যেতেন, তাহলে তাঁর জন্য আমাদের কান্না আর আফসোসের অন্ত থাকতো না- হায়! হাজার বছরে একজনই হুমায়ূন আহমেদ জন্ম নেন। কিন্তু, তিনি ভুল করেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বই লিখে, ফলে, তিনি অনেকের কাছেই হলেন চক্ষুশূল এবং হিংসার পাত্র।
আমাদের ব্লগ বা ফেইসবুকেও এমন লেখক ও পাঠকের অন্ত নেই। কখনো কখনো পরশ্রীকাতরতা আমাদের এতটাই উন্মত্ত করে তোলে যে, প্রসিদ্ধ কারো লেখা দেখলেই তাকে নানাভাবে আঘাত করে তাকে ঘায়েল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি; তার লেখার মান যাই হোক না কেন, তা দেখামাত্র বলে ফেলি- কিছুই হয় নি। এর জ্বলন্ত উদাহরণ টানা যায় ২০১৯-এর বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের জরিপ থেকেই। বেস্ট সেলার ১০টি বইয়ের গোটা দুই তালিকা দেখেছিলাম বলে মনে পড়ে। এ তালিকায় এমন কিছু লেখক ও বইয়ের নাম উঠে এলো, যাদের কেউ চেনেন না, আগে নামও শোনেন নি। কয়েকজন প্রসিদ্ধ লেখকের নাম সেখানে থাকলেও নামগুলো শীর্ষে ছিল না, এবং তাঁরা যে দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক এমনও না। এই তালিকার অনেকেই আবার ফেইসবুক সেলিব্রেটি, তাঁদের একেকটা স্টেটাসে লাইক-কমেন্টের ঝড় বয়ে যায়। এর মধ্যে একজন সেলিব্রেটি লেখিকার রাইটিং স্টাইল আবার অভিনব ও চমকপ্রদ- তিনি ইংরেজি হরফে বাংলা উপন্যাস লিখেছেন, যাকে আমি নাম দিয়েছি ‘ইংব্লিশ’ (বা এটাকে ‘ইংব্লা’ও বলতে পারেন)। ফলে, তালিকাগুলো বিতর্কিত হতে থাকলো। অনেকেই বললেন এসব হলো ভূয়া বা বানোয়াট তালিকা, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই তালিকা গ্রহণযোগ্যতা হারালো। কিন্তু, ঐ তালিকায় যদি আমাদের পরিচিত বিখ্যাত লেখকদের নাম থাকতো- হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল ইসলাম, তসলিমা নাসরিন, প্রমুখ- তাহলে সম্ভবত আমাদের আপত্তি থাকতো না, বা আপত্তি থাকলেও আপত্তির জায়গাটা ভিন্নতর হতো। তো, এইসব তালিকা কী প্রমাণ করে? প্রমাণ করে- আমরা যাদের বিখ্যাত লেখক ভাবি, তাঁদের বাইরেও বিখ্যাত লেখক গড়ে উঠছেন; হতে পারে, আমাদের পাঠকের পাঠরুচির পরিবর্তন হচ্ছে। ঘটনা যাই হোক না কেন, আমার চূড়ান্ত মতামত এই যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যিনি/যাঁরা অধিক সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন, তিনি/তারাই সেরা। ধরে নিতে হবে, লেখার স্টাইল তাদের স্টাইলের দিকেই ধাবমান, ভবিষ্যতের লেখক ও পাঠকও ঐরকমই হবে। আপনি যদি তাঁদের লেখাকে মূল্যায়ন না করেন, তাতে তাদের কিছু আসবে যাবে না। আপনি বা অন্যরা যে তাদের চাইতে ভালো মানের লেখা উপহার দিচ্ছেন, তার ভিত্তি কী? আপনার লেখাকে যারা ‘সেরা’ লেখা বলছেন, তাঁরা কারা? তাঁরাই যে সেরা বিচারক, এটা কারা ঠিক করে দিয়েছেন? তাই আবারও বলতে হচ্ছে, পাঠকই হচ্ছে সেরা বিচারক। যার পাঠক যত বেশি, তিনিই তত বড়ো লেখক। আপনার ভিন্নমত থাকবে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই ভিন্নমত কতজন গ্রহণ করলেন, সেটাও একটা বিবেচ্য বিষয়।
অনেককে দেখছি গত ৮-১০ বছর ধরে ব্লগ বা ফেইসবুকে লিখছেন। আমার অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী তাদের লেখার মান ব্লগিঙের শুরুতে যা ছিল, আজও অবিকল সেইখানেই রয়ে গেছে; অথচ তাদের লেখায় কমেন্ট আর প্রশংসার কমতি নেই। লেখকও এটা দেখে ফুলেফেঁপে ওঠেন, সন্দেহ নেই। এসব প্রশংসা দেখে আমার আগে মনে হতো, এসব প্রশংসা ফেইক বা সাময়িক, প্রকৃত বিচারে এসবের কোনো মূল্যও নেই, কালের গর্ভে এগুলো টিকবেও না। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত আমাকে এই ধারণা থেকে সরে আসতে হয়েছে। আপনি বর্তমানে যেটুকু পাচ্ছেন, সেটাই প্রকৃত প্রাপ্তি। আপনার বর্তমানের প্রাপ্তিটাই ইতিহাসে রেকর্ডেড থাকবে এবং এর দ্বারাই আপনি ভবিষ্যতে স্মরণীয় হবেন। যিনি ভালো লিখছেন, কিন্তু পাঠক নেই, পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না, তিনি জীবিত থেকেও মৃত- জীবন্মৃত। তার এই লেখাকে রেকর্ড করে রাখার জন্য কেউ নেই, যারা ভবিষ্যতে লাইব্রেরি খুলে এগুলোকে পাঠকের সামনে তুলে ধরবেন। দৈবাৎ কেউ এগুলো সংরক্ষণ করে রাখলেও ভবিষ্যতেও যে এগুলো পাঠক-সমাদৃত হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে, হারিয়ে যাওয়া একটা লেখা যে সত্যিই ভালো লেখা ছিল, তারও কিন্তু কোনো ভিত্তি নেই। লেখার মান যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত পাঠসংখ্যা, কমেন্টসংখ্যা, লাইকসংখ্যাই একটা লেখার ‘মানদণ্ড’ নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। যে লেখা কারো চোখে পড়লো না, কেউ পাঠ করলো না, সেটা যে একটা ‘মানসম্পন্ন’ লেখা ছিল, তা নির্ণয়ের কোনো সূত্র বা ফর্মুলা নেই। ঐ লেখা নীরবে জন্ম নিয়ে নীরবেই হারিয়ে যায়। একজন লেখককে পাঠকের কাছে পৌঁছুতে হবে, যে-কোনো প্রকারেই হোক না কেন। পত্রিকায় লেখককে লেখা ছাপাতেই হবে-প্রচার ও পরিচিতির জন্য। ভালো লেখা হলেই তা পত্রিকায় স্থান পাবে, ব্যাপারটা ঠিক এমন না তা আমরা মোটামুটি সবাই জানি; একটা লেখা যে পত্রিকায় স্থান পাবার যোগ্যতা রাখে, তা সম্পাদকের গোচরে আনতে হবে লেখককেই, তাঁর যোগ্যতা বা দক্ষতা, বা কৌশল জানা থাকলে যে-কোনো লেখাই ছাপা হবে। ব্লগীয় বা ফেইসবুকীয় মিথস্ক্রিয়া ভালো থাকলে যে-কোনো লেখায়ই পাঠক হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। লেখক তখন একজন স্বনামধন্য লেখক হয়ে উঠবেন সহজেই।
আমার গল্পটার নাম ‘রানি ভানুসিংহীর ব্লগ।’ গল্পটা বুঝতে হলে ফেইসবুক ও ব্লগীয় মিথস্ক্রিয়া বা ব্লগীয় সিন্ডিকেটশিপ সম্পর্কে যেমন সম্যক ধারণা থাকতে হবে, তেমনি লেখালেখি সম্পর্কেও অগাধ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ, লেখা দেখেই চট বুঝে ফেলার ক্ষমতা থাকা আবশ্যিক- এটা রবীন্দ্রনাথের বা নজরুলের লেখা, ওটা সত্যেন্দ্রনাথ বা হুমায়ূন আহমেদের লেখা; এ স্টাইলটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা আল মাহমুদের, ইত্যাদি।
মহারানি চৌরঙ্গিলা হলেন কবিখ্যাতির শিখরে থাকা একজন ধনাঢ্যা রূপবতী কবি। তাঁর লেখার জন্য সম্পাদকরা লাইন দিয়ে অপেক্ষায় থাকেন, তবে, কবির সান্নিধ্য লাভের জন্য দর্শনার্থীদের জমজমাট ভিড়টাই হলো সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক। তার প্রতিটা কথা মুখ থেকে বের হবার আগেই উপবিষ্ট সভাসদ্গণ কেড়ে নিয়ে স্তুতিবর্ষণে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে কে কার আগে তাকে অভিনন্দন ও প্রশংসা জানাবে, তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ফেইসবুক ও ব্লগেও তিনি অনন্যা ও অদ্বিতীয়া। তাঁর একটা লেখা প্রকাশিত হলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের ফলে ব্লগ ও ফেইসবুক হ্যাং হয়ে যায়।
মহারানি চৌরঙ্গিলা জানেন এবং বোঝেন, এরা সবাই দুধের মাছি। তিনি ভালো করেই জানেন যে, পুরুষ মাত্রেই চাটুকার; রমণীদের সামনে গদগদ হয়ে তৈলমর্দনের জন্যই যেন এদের জন্ম। তদুপরি, নিজেকে যাচাই করার লোভটাও তিনি হাতছাড়া করতে চাইলেন না। নিজের আড়ালে নিজের সম্পর্কে অন্যেরা যা ভাবেন, সেটাই প্রকৃত ‘আমি’। তাঁর মনে একটা কূটবুদ্ধি খেলে গেল। একদা নিশীথে তিনি ‘ভানুসিংহী’ নিকনেম দিয়ে সামহোয়্যারইন ব্লগে দ্বিতীয় একটা ব্লগ ক্রিয়েট করলেন। তারপর আসল খেলাটা দেখার জন্য সেখানে একটা নতুন কবিতা পোস্ট করলেন। পাশাপাশি, অরিজিন্যাল ব্লগ থেকেও অন্য অপেক্ষাকৃত একটা কাঁচা কবিতা পোস্ট করলেন। যা ভেবেছিলেন, তার ব্যত্যয় হলো না মোটেও। অরিজিন্যাল ব্লগ হ্যাং হবার জো হলো, এত লাইক, এত কমেন্ট, এত প্রশংসা; আর ‘ভানুসিংহী’র ব্লগ মূলত খা-খা করতে থাকলো; এবং সেখানে যারা কমেন্ট করলো তারা বার বার শুধু এটাই উল্লেখ করলো যে, ভানুসিংহীর কোনো কবিতা-প্রতিভাই নেই, তার কবিতা লেখার চেষ্টা না করাই উত্তম।
আমার গল্পটার রহস্য আমি এই পোস্টেও প্রকাশ করি নি। যারা বোঝার, তারা শুরুতেই বুঝেছিলেন, যারা এখনো বোঝেন নি, তারা এই পোস্টটি পড়ার পর আবার কোনোদিন ঐ গল্পটা পড়লে নিশ্চিত বুঝে ফেলবেন, গল্পে উল্লেখিত কবিতাটি বঙ্কিমচন্দ্রের, প্রমথ চৌধুরীর, নাকি অন্য কারোর, নাকি স্বয়ং আমিই লিখেছি, আর জনাবা ‘ভানুসিংহী’কেও যে তারা চিনে ফেলবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
এই সেই গল্পটা - রানি ভানুসিংহীর ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫১