somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি পাষাণ ফকিরের ব্লগিং

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিবর্হণ, শায়মা, সোহানী আর আমার অনেক অনুনয় বিনয়ের পর সময়ের সেরা কবিদের একজন কবি পাষাণ ফকির আমাদের ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করলেন। আমরা তাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি এই বলে যে, এ ব্লগে অনেক ভালো মানের কবি আছেন, যেমন আহমেদ জী এস, জাহিদ অনিক, খলিল মাহ্‌মুদ, প্রমুখ। আরো বলি, কবিতার সমঝদারের সংখ্যাও প্রচুর, যেমন জলদস্যু, মিডল, জুল ভার্ন সহ আরো অনেকে; কবিতার উপর সুন্দর, গঠনমূলক আলোচনা হয়।

আমাদের অনুরোধে তিনি কবিতা পোস্ট করা শুরু করলেন। তিনি ব্যস্ত মানুষ, রুটিন করে দিনে কয়েকবেলা ব্লগে সময় দেন; কারা, কী কী কবিতা, গল্প, বা সমসাময়িক বিষয়ে পোস্ট লিখছেন, কে, কেমন মন্তব্য করছেন, সেগুলোও তিনি দেখেন। ব্লগার শেরজা তপন আর সাড়ে চুয়াত্তরের কমেন্ট দেখে তিনি মুগ্ধ, অভিভূত ও উদ্বেলিত হলেন।

যথারীতি আমরাই তার কবিতার পোস্টে কমেন্ট করা শুরু করলাম। আমাদের মতো চেনা মানুষের কমেন্ট থেকে তিনি তেমন অনুপ্রাণিত হলেন বলে মনে হলো না। এর মধ্যেই একটা কমেন্ট পড়লো - ‘অসাধারণ কবিতা’। পাষাণ ফকিরের কবিতার সঠিক মূল্যায়ন বটে, কবি মনে মনে বিপুল প্রসাদ উপভোগ করবেন, নিঃসন্দেহে।

চার-পাঁচটা কবিতা পোস্ট করার পর দেখা গেল নির্দিষ্ট কয়েকজন পাঠকই তার কবিতা পড়ছেন এবং ‘খুব ভালো লাগলো’, ‘এমন কবিতা এই প্রথম এই ব্লগে’, এ ধরনের প্রশংসাসূচক কমেন্টই ছিল সবগুলো এবং কমেন্টের সংখ্যা নেহায়েতই কম।

তিনি একদিন বললেন, ব্লগে তো দেখি কবির সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু কোনো ভালো কবিতা দেখি না কেন?
আমরা আমতা আমতা করে বলি, ভালো কবিরা এখন শীতনিদ্রায় আছেন, তারা কালেভদ্রে কবিতা পোস্ট করেন; বোঝেন তো, ভালো জিনিসের সংখ্যা হয় খুবই কম!
তিনি আমাদের কথায় তেমন সন্তুষ্ট হলেন না। ব্লগের পাতায় একটার পর একটা কবিতা ঘাঁটতে লাগলেন, মুখে তার বিরক্তির ছাপ। তবে শাহ আজিজের কবিতা পড়ার সময় তার মুখটা বেশ উজ্জ্বল দেখালো, অস্ফুটে বললেন, খুব উচ্চমার্গীয় কবিতা।

একফাঁকে বললেন, আপনারা ‘লুল’ শব্দটা কখনো শুনেছেন?
‘লুল’! আমরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করেই ফিক করে হেসে দিলাম। কবি ভাই, এই ‘লুল’ শব্দ আপনি কোথায় পেলেন? এটা তো আমাদের ব্লগীয় টার্ম!
হ্যাঁ, ব্লগের টার্মই এটা। আমার এক বন্ধু আমাকে জানালো 'লুল' শব্দটা সম্পর্কে। আপনাদের ব্লগে প্রচুর লুলের উপস্থিতি। আর কবিদের মধ্যেই লুলের সংখ্যা বেশি। কিছু লুল-কবিকে দেখলাম প্রমীলা কবিদের পোস্ট দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন, কিন্তু পুংকবিদের পোস্টে পা-ও মাড়ান না। আজ পর্যন্ত আমার পোস্টেও ঐসব পুংকবিদের টিকিটি পর্যন্ত দেখতে পাই নাই।

এরপর কবির সাথে আমাদের হঠাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি ব্লগে লগিন করেন না। কোনো কবিতাও পোস্ট করেন না।
আমরা আরেকদিন দল বেঁধে কবির বাসায় গেলাম।
তিনি আমাদের উপর একটু বিরক্ত। তিনি অল্প কথার শেষে জানালেন, ব্লগে আর থাকতে পারবেন না।
আমরা মুষড়ে পড়লাম কবির এ কথা শুনে। এত শ্রম দিয়ে একজন বিখ্যাত কবিকে ব্লগে আনলাম, যাতে সবার কাছে বড়াই করে বলতে পারি, দেশের সেরা কবিরাও আমাদের সাথে ব্লগিং করেন, এই অবস্থায় যদি মহামতি পাষাণ কবি ব্লগ থেকে চলে যান, আমাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

তার এ সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে। আমরা নাছোড়বান্দা।
তিনি শেষমেষ যা বললেন, তা শোনার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।
কবি বললেন, ব্লগে যেমন ভালো কবি নাই, ভালো সমঝদারও নাই, কবিতা ভালো বোঝেন, এমন পাঠকও নাই। যে পাঠক আমার কবিতাকে বলে গেলেন ‘অসাধারণ কবিতা’, সেই একই পাঠক অন্য এক কবিতায় দেখলাম একই কমেন্ট লিখেছেন – ‘অসাধারণ কবিতা’, অথচ ওটা কবিতার কোনো জাতই হয় নাই। এ ধরনের মন্তব্যদাতার সংখ্যাই বেশি। কারো কারো কবিতায় কমেন্ট লেখার প্রতিযোগিতা পড়ে যায়, কিন্তু একটা পঙ্‌ক্তিও তাতে নাই যাতে ওটাকে কবিতার কোনো মানদণ্ডে ফেলা যায়। এদের কমেন্ট দেখে এদের কবিতাজ্ঞান সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা হয়ে গেছে। ব্লগে কেউ কবিতা বোঝেন না, কিন্তু ভান করেন খুবই উঁচু মাপের কবিতাপ্রেমিক - তারা সব কবিতাকেই একই মানের কবিতা মনে করেন, তাই সব কবিতাই তাদের কাছে 'অসাধারণ কবিতা' হয়ে থাকে। তিনি বলতে থাকেন, আরেক পাঠককে দেখলাম, এক কবিকে ‘কবিতার রাজা’ বলে সম্বোধন করে মাথায় তুলে নাচছেন। এতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না, কিন্তু সেই ‘কবিতার রাজা’র কবিতা পড়ে আমার বিস্ময়ের সীমা নাই – এ কবিরাজ কি চ্যাটজিপিটি দিয়ে কবিতা লেখেন নাকি? হেন কোনো বিষয় নাই, যা নিয়ে তিনি লেখনে নাই, কিন্তু সবই হলো বর্জ্যপদার্থ, ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর। কবিতা কী, এটাই তো এ কবি মশায় জানেন না। এই কবি আর তার তোষামোদকারী, দুজনেই ঘিলুহীন।
শেষ করলেন, আপনারা প্লিজ মাইন্ড করবেন না। যাদের কাছে গার্বেজ কবিতাও ‘অসাধারণ কবিতা’ মনে হয়, তারা কোনোদিন ‘অসাধারণ’ কবিতাকে চিহ্নিত করতে পারেন না। এমন পাঠক আমার কবিতাকেও না বুঝেই ‘অসাধারণ’ বলুক, তা আমি চাই না। তাই ব্লগ ছেড়ে চলে গেলাম। আমাকে অনেক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। আমি আপনাদের সাথে সময় দিতে পারবো না বলে খুবই দুঃখিত। তবে শুভেচ্ছা থাকলো সকল ব্লগারের জন্য, তারা সত্যিকারের কবিতাবোদ্ধা হয়ে উঠবেন, এই আশা করি।

০৬ এপ্রিল ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৬
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×