somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে সমাজ বদলের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন পূর্বে পিরোজপুরে কয়েকজন স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে ভিডিও করে বাজারে ছেড়েছে পিরোজপুরের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। আরো এক জায়গায় গণধর্ষণের অসন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেছেন ডাচ রাষ্ট্রদূত, দোররা মারার ঘটনাও ঘটেছে এই কয়েক দিনের মধ্যেই। এই ঘটনাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে নষ্ট এই সমাজ ব্যবস্থা কতটাই পচে গেছে। যে সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা হয়, নারীর দেহ ও সৌন্দর্যকে যেখানে পণ্যে পরিণত সেখানেই পুরুষদের একাংশের ঘটে ব্যাপক অধঃপদন আর তাদের কেউ কেউ এমনই ঘৃণ্য কাজ করে যা গোটা মানবজাতির জন্যই কলঙ্কজনক।
তরুনী লাঞ্চনাকারীরা মানবজাতির জন্য কলঙ্কজনক। এরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। এদেশের শাসক শ্রেণীর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, শিক্ষাঙ্গনে ও শিক্ষাঙ্গনের বাইরে এমন ঘটনা বারবার ঘটাচ্ছে। পাকিস্তানের পাচাটা গভর্ণর মোনায়েম খানের পোষা ছাত্র সংগঠন এনএসএফ -এর গুন্ডারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী ধর্ষণ করেছে; আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে, ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারী রাতে, শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের গুন্ডারা ছাত্রী-তরুনীদের লাঞ্চনা করেছে। আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত আমলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এমনকি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল না করেও, এরশাদ আমলে, স্থানীয় ক্ষমতার জোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ক্যাডাররা ছাত্রীদের উৎসব-মিছিলে হামলা চালিয়েছে, আহত করেছে, লাঞ্চনা করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপর মোটর সাইকেল তুলে দিয়েছে ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা। এভাবে শাসক শ্রেণীর প্রতিটি রাজনৈতিক দল, তার ছাত্র সংগঠনের পান্ডারা নারীদের উপর বারবার নিপীড়ন চালিয়েছে, এখনও চালাচ্ছে। এদের নিজেদের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব থাকলেও নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে এরা সবাই এক। এরা সকলেই পাক-বাহিনীরই উত্তরসূরী। এই মিলের একটা বড় কারণ রাষ্ট্র বদলালেও সমাজ ব্যবস্থাটা আদৌও বদলায়নি।
এ সমাজব্যবস্থয় তরুনীর লাঞ্চনা কারো কারো কাছে হয় ব্যবসার উপায়, কারো কাঠে বিকৃত উল্লাসের উপকরণ অথবা কারো রয়েছে উদ্ধার করতে গিয়ে ফেঁসে যাবার কাপুরুষোচিত ভীতি। এ ভীতি অমূলক নয়, বাঁধনকে উদ্ধার করতে আসা বা হামলাকারীদের বাধা দিতে যাওয়া দুই তরুনকেই উল্টো দোষী করা, গ্রেফতার করা, অত্যাচার করা হয়েছে। এ সমাজে, এ রাষ্ট্র যন্ত্রের ধারকবাহক পুলিশ-গোয়েন্দাদের কাজই হচ্ছে এমন। এভাবে প্রতিবাদীদের, অন্যায়ের প্রতিরোধকারীকে ভয় দেখানো, নিরুৎসাহিত করাই এদের কাজ।
যে কোন উৎসবে নারীদের লাঞ্চিত হওয়া এদেশে অনিবার্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা সে পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্র“য়ারী আর মেলা উৎসব যা-ই হোক না কেন। প্রতি বছরই তরুনীরা উৎসবের আনন্দে যোগ দিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন নিপীড়ক-পুরুষদের বিকৃত লালসার শিকার হয়ে। অথচ না হয়েছে এই সব ঘটনার কোন বিচার, না হয়েছে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
যখন কোন ঘটনায় সারা দেশে ছি ছি করেন জনগণ তখনই রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষ থেকে হাঁক ছাড়া হয় আর তারই আজ্ঞাবহ পুলিশ এমনভাবেই মামলা সাজায় যাতে এসব নরপশুরা আইনের ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে নির্বিঘেœ। এমনটাই হয়ে আসছে, এই শাসকগোষ্ঠী একাত্তুরের ধর্ষণকারী নরপশুদের ক্ষমা করে রক্ষা করেছে। ইয়াসমিন, সীমা, তানিয়া, পারুল, বাঁধন, স্মৃতি, কণাসহ হাজারো নারী ও শিশুর ধর্ষণকারীদের এরা হয় বিচারই করে নি নতুবা বিচারের নামে প্রহসন করে নরপশুদের রক্ষা করেছে। এখনও তা-ই করছে। এমনকি উল্টো এসব ঘটনার কারণ হিসেবে অবাধ চলাফেরাকেই অর্থাৎ নারীদেরকেই দায়ী করছে।
এ দেশের নারীরা প্রতিদিন নিপীড়িত নির্যাতিত হচ্ছেন। পথে ঘাটে, কল-কারখানায়, অফিস-আদালতে, উৎসবে, যানবাহনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই এদেশের নারীরা শারীরিক-মানসিক নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, অপমানিত হচ্ছেন। সরকার কিংবা শাসক বদল হলেও, প্রধানমন্ত্রী নারী হলেও, এ সমাজে নারী নির্যাতনের চিত্র বদলায় নি। কারণ সমাজ থেকে শ্রেণী নিপীড়ন, পুরুষতান্ত্রিকতা এসব দূর না হলে নারী নির্যাতন দূর হতে পারে না।
সকল নারী একইভাবে শোষিত-নিপীড়িত হন না। শ্রমজীবী নারীরা, বিত্তবান-মধ্যবিত্ত নারীদের তুলনায় ব্যাপকভাবে ও তীব্রভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। বিত্তবান, ক্ষমতাবান এমনকি মধ্যবিত্ত ঘরের নারীদের হাতেও অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কাজের ছেলে-মেয়েরা।
প্রতিদিন সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন শহর ও গ্রামের শ্রমজীবী নারীরা। অথচ এদের ওপর নির্যাতন হলে সেটা কোনো বিশেষ খবর নয়।
শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় শত ধর্ষণের নায়ক(!) মানিক আজ বিদেশে পুনর্বাসিত। এদেরই ছত্রছায়ায় আজ আবার শুরু হয়েছে ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যদি না এদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা যায় এরা কোন শাস্তি ছাড়াউ পার পেয়ে যাবে, সাহস আরো বাড়বে এই নর্দমার কীটগুলোর।
এখনও নরপশুরা ব্যাপকতম গণপ্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে না বলেই নারী নির্যাতন আজ এতটা ব্যাপক হতে পেরেছে। এদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে, বিশেষত নারীদের নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। শাসক শ্রেণীর কোনো দলের কাছে এই লড়াইয়ে সামান্যতম সাহায্য প্রত্যাশা এই আন্দোলনকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে। একাত্ম হবে হবে ব্যাপকতম শ্রমজীবী জনসাধারণের সাথে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×