somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আল্লাহর গণনায় মাস ১২টি। এ ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত ও মর্যাদাবান। মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। আল্লাহ তাআলা নিজে এ মাসের নামকরণ করেন ‘মহররম’। আরবরা এ মাসকে ‘সফরুল আউয়াল’ তথা প্রথম সফর নামকরণ করে নিজেদের ইচ্ছা মতো যুদ্ধ-বিগ্রহসহ বিভিন্ন কাজকে হালাল ও হারাম করতো। অবশেষে আল্লাহ তাআলা এ অবস্থাকে নিষিদ্ধ করে এ মাসের ইসলামি নামকরণ করেন ‘শাহরুল্লাহিল মুহাররাম’ তথা মহররম আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা করেন।

এ মাসের ১০ তারিখকেই আশুরা বলা হয়। নিঃসন্দেহে আশুরার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহকে পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এক কথায় এ দিনটি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় হিজরত এবং হক হক তথা উত্তম প্রতিষ্ঠার জন্য এক সুমহান দিন। এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ এ দিনটিকে বিশেষ ইবাদাত-বন্দেগি তথা রোজা পালনের দিন হিসেবে শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে।

এ দিনটিতে ইবাদাত বন্দেগির ফজিলত ও তাৎপর্য অনেক বেশি। সংক্ষেপে আশুরার কিছু ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো-

ক. মুসা আলাইহিস সালামের সফলতা ও ফিরাউনের ধ্বংস
আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে এ দিনে মহান সফলতা দান করেছেন। নিজেকে প্রভু দাবিকারী অত্যাচারী ফিরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচার নির্যাতন চালাতেন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল মুসা ও তাঁর অনুসারী বনি ইসরাইলকে ফিরাউনের অত্যাচার থেকে নাজাত দান করেছেন। ফিরাউন ও তার দলবলকে বাহরে কালজুম তথা লোহিত সাগরে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেন।
আল্লাহ তাআলা প্রমাণ স্বরূপ কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফিরাউনের লোকদিগকে তোমাদের চোখের সামনে। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৫০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘আর আমি বনি ইসরাঈলকে পার করে দিয়েছি সাগর। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফিরাউন ও তার সেনাবাহিনী, অত্যাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোনো মাবুদ নেই, তাঁকে ছাড়া; যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাঈলরা।
বস্তুত আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে নাফরমানি করছিলে! এবং পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। এতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে।
আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৯০-৯২)

১০ মহররমের (আশুরা) ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট হাদিস রয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে, ইয়াহুদিরা আশুরার রোজা পালন করে। তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা এ দিনে কেন রোজা রাখ?
তারা বলন, এটা এক মহান দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা ও তাঁর জাতিকে নাজাত দেন এবং ফিরাউন ও তার জাতিকে (সমুদ্রে) ডুবিয়ে ধ্বংস করেন। তাই মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতি এদিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে রোজা রাখেন; এ জন্যে আমরাও রাখি।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমরা (তোমাদের অপেক্ষা) মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার বেশি হকদার।’ এরপর তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবাগণকেও রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দেন। (বুখারি ও মুসলিম)

খ. আশুরার রোজা পালনে গুরুত্ব
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেভাবে আশুরা ও রমজানের রোজার গুরুত্ব সহকারে অনুসন্ধান করতে দেখেছি অনুরূপভাবে অন্য কোনো রোজার ব্যাপারে তা দেখেনি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

গ. এ দিনে ছোট বাচ্চারাও রোজা রাখত
হজরত রুবাইয়্যেই’ বিনতে মুআ’ওয়েয রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন সকালে আনসারি সাহাবাগণের গ্রামগুলোতে দূত পাঠিয়ে (এ রকম) ঘোষণা দিতে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে।
তিনি (রুবাইয়্যেই’) বলেন, ‘এরপর আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোজা রাখাতাম। আর তাদেরকে তুলা দ্বারা বানানো খেলনা দিতাম। যখন তাদের কেউ খানার জন্য কাঁদত তখন ইফতারি পর্যন্ত ঐ খেলনা দিয়ে রাখতাম। (বুখারি ও মুসলিম)

মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘আমরা বাচ্চাদের জন্য তুলা দ্বারা খেলনা বানাতাম এবং আমাদের সাথে রাখতাম। যখন তারা খানা চাইত তখন তাদেরকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম; যাতে করে তারা তাদের রোজা পূর্ণ করে।

ঘ. রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘জাহেলিয়াতের যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখত এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও রাখতেন। এরপর যখন তিনি মদিনায় আগমন করলেন তখন তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন তিনি আশুরার রোজা (ফরজ হিসাবে) রাখেননি। এরপর যে চাইত রাখত এবং যে চাইত বিরত থাকত।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ঙ. রমজানের পরে আশুরার মর্যাদা
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। (মুসলিম ও তিরিমজি)
চ. আশুরার রোজায় বিগত বছরের গোনাহ থেকে মুক্তি
হজরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, তিনি বিগত এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন।’ (মুসলিম)

পরিশেষে...
মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনটি হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গী-সাথীদের জন্য বিজয়ের দিন হলেও এ দিনেই ঘটেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয় বিদরাক ও মর্মান্তিক কারবালা ঐতিহাসিক ঘটনা। আল্লাহর জমিনে দ্বীন তথা উত্তম প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অগ্রসেনানী হজরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ আত্মত্যাগ এক মহাঅনুপ্রেরণা।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, আশুরার ঐতিহাসিক তাৎপর্য, গুরুত্ব ও ফজিলত অর্জনে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আশুরার সকল ঘটনাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×