অনেক বছর চেতন আর অবচেতন এর মাঝামাঝি ছিল অরিত্র, যাকে বলে একদম পারফেক্ট টুইলিট জোন। সেখান থেকে কে যেন তুলে এনে এই অদ্ভূত আর ভয়ঙ্কর ঘরটাতে রেখেছে তাকে। কিছু দিনের ভেতরই তার স্থানান্তর হবে স্থায়ী একটা জায়গায়, জায়গাটা নাকি হবে ভীষন কষ্টের - শুনেছে সে। দরজায় কোন পাহারা নেই, সামনে এগিয়ে গেল অরিত্র। মিষ্টি সুবাস, রমনীদের হাসি আর আনন্দে ভরপুর চারপাশ। এখানে বাতাস নেই, প্রয়োজন হয়ত হয়না তাই নেই। তবুও চারদিকে সুবাস ও সুখের ভেসেচলা। হঠাৎ কারো হুংকার-
: এই কে? কে তুই? কি করছিস এখানটায়?
- আমি, আমি অরিত্র।
: তোর গতিবিধি সুবিধের না, তোকে এখনই দরবারে নিয়ে যাব
কোন প্রশ্ন না করে সোজা দরবারে গেল সে। তকতকে, ঝকঝকে, আলোর পর্দার পেছনে ঈশ্বর।
: অরিত্র, আমি ঈশ্বর। এখানে তোকে স্বাগতম। সারা জীবনে যা পাপ করেছিস তাতে তোর কপালে নরকই আছে। অবশ্য পরজন্মে আবার ভাল করার সুযোগ পাবি।
-হে ঈশ্বর, দোহাই তোমার নরকে দিয়না। তুমিই ত ভাগ্য লিখেছিলে, পাপী বানিয়েছিলে।
: চুপ কর মূর্খ। আজ তোর সাথে দরবারে উপস্থিত তোর পরিচিত মফিজ - যাবে স্বর্গে। তাকেও ত ভাগ্য দিয়েছিলাম, সে নিজেকে পাপ থেকে বাঁচিয়েছে। আর তুই - সারা জীবন করেছিস পুলিশের চাকরি আর খেয়েছিস ঘুষ।
- ঈশ্বর, আমার কী দোষ। সামান্য সে বেতন, নাই প্রমোশন, নাই ভাল জায়গায় স্থানান্তর। তার উপর তোমার নেতাদের খুশি করা। অভাবি সংসার, বৃদ্ধ বাবা-মা, কাঙ্গাল বউ-সন্তান। অবশেষে বাধ্য হয়ে করলাম নীতির বলিদান।
: তোর যত অজুহাত। এই মফিজও চাকরি করত। সে ত খায়নি ঘুষ, তার উপর দান খয়রাতে ভরিয়েছে সবার মুখ।
- আমার বোকা ঈশ্বর, ও করত চাকরি বেসরকারি আর আমি করতাম সরকারি। ওর বাপ দাদা শিক্ষিত, কর্মকর্তা সরকারি, সরকারি চাকরি করে পরিচিতি ও টাকা - দুটোই বগল থাবা। আর আমার বাপ দাদা - কৃষক সম্মানে গাধা। তাহারা মফিজকে পড়িয়েছে ভাল স্কুল-কলেজ ও ইংলিশ মিডিয়ামে, আর আমাকে পড়িয়েছে অখ্যাত এক গ্রামে। তাহার বাপ-দাদা যুদ্ধের সময় বিদেশ পালিয়ে ছিল- যুদ্ধ ছিল তাদের শিক্ষায় বাঁধা। আমার বাপ-দাদা জন্মের গাধা, যুদ্ধ জয়ের পর হয়ে গেল চির জন্মের গাধা। স্বাধীন দেশে ফিরে আসল তার বাপ-দাদা, তখন তারা মহাজ্ঞানী অগ্রগন্য নাগরিকের সম্মানে বাঁধা। বৈষম্য সৃষ্টি হল, স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি অতলে গেল।
: কেন তুই করলিনা চাকরি বেসরকারি?
- বেসরকারিতে বাপ, চাচা, মামা, কাকা, নয়তো খালু - তাহলেই কেবল পাওয়া যেত চাকরি ও নিতম্বের সাথে আলু। এসব দাওনি আমায় কিছু, জগতে দিয়েছো মফিজকে সম্মান। তাই ত বলি তুমি বোকা ঈশ্বর একখান।
: চুপ কর বেহায়া, মনে মনে করেছিস হাজারো ধর্ষন
- কী করবো প্রভূ, কর্পোরেট চাকরি ছাড়া সরকারিতে মিচুয়ালের ছিল যে বড়ই অভাব অনটন।
: আরে এসব কথা ছাড়, মফিজ ব্লগে লিখত নিয়ে নারীর অধিকার
- সেজন্যেই সব নারীদের ব্লগে মফিজের মন্তব্যের থাকতো বাহার
: আরে নাদান অরিত্র, দুনিয়াতেও বুঝলিনা আর এখানেও বুঝলিনা । মফিজ সব সময় বলে - মডু ও ঈশ্বর দু'টাই আমার।
তোর শেষ কোন আবদার?
- পূণ্যের পথ বন্ধ করে পাপের পথে ঠেলে দাও, ব্যানের ভয় দেখিয়ে সিন্দুকে আটকাও। এই যদি হয় তোমার সমঅধিকার, তবে এখন নরকেই দাও আমায়। পরজন্মে দয়াকরে মামা-চাচার বংশে জন্ম দিও আমার।
পরবর্তিতে অরিত্রের পূনর্জন্ম হয়েছিল কী না তা সঠিক জানা যায়নি। ধারনা করা হয় অভাগার সেটাই সপ্তম ও শেষ জন্ম ছিল।
বি:দ্র: জীবনে প্রথম একটা গল্প লেখার চেষ্টা করলাম, হল না বোধহয়। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, কোনকিছু বা কারো সাথে মিলে গেলে লেখকের করার কিছুই নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:২৯