somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে নাগরিক ও রাজনীতির মাঝে সূচীত হোক একটি নতুন “স্যোশাল কন্ট্রাক্ট”

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চরম কর্তিত্ববাদী, জেল-জুলুম গুম-খুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রবলভাবে একদলীয় ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি ঐক্য প্রচেষ্টা এই সময়ে দৃশ্যমান হয়েছে। উদার ডান ও প্রগতিশীল বাম ভাবধারার রাজনৈতিক শক্তি বলয় সমূহের ঐক্য প্রক্রিয়া গুলোর দেনদরবারের কৌশলগত ভিত্তি সমূহ ঠিক কতটা আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সনদ গুলোর আলোকে, কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের তরে কতটা নিবেদিত এবং চূড়ান্ত ভাবে কি পরিমানে নাগরিক স্বার্থ্য কেন্দ্রিক তা নিয়ে ভাবার বিস্তর অবকাশ রয়েছে। রাষ্ট্রকে চরম কর্তিত্ববাদী ও স্বৈরাচারী শাসনের খোলস থেকে বের করে নাগরিক বান্ধব করে তুলতে একটি বিস্তৃত ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির একটি দৃশ্যমান চেষ্টা ও নাগরিক চাপও সমাজে তৈরি থাকা দরকার। কিসের ঐক্য চাই, কি নিয়ে ঐক্য চাই, এই বুঝাপড়া গুলো চূড়ান্ত না হলে, বার বার রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়া গুলো শুধু মাত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কূটচাল হিসেবেই থেকে যাবে! বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ইতিহাস ঠিক যেন নাগরিক স্বার্থ্যের সাথে নিয়ত করে চালানো চরম প্রতারণারই প্রতিচ্ছবি।
বুঝাপড়ার ভিত্তিঃ কিসের ঐক্য চাই, কি নিয়ে ঐক্য চাই!


১। স্বচ্চ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, নির্বাচন উত্তর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে একটি স্থায়ীভাবে স্বাধীন দায়বদ্ধ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনী প্রশাসন গড়ে তোলার ঐক্য।
২। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলোকে পুনর্গঠন করে, তাদের বৈচারিক ক্ষমতা, স্বাধীন বাজেট এবং স্বাধীন জনবল কাঠামো তৈরি করে ও দায়বদ্ধতা ভিত্তিক আইনি কাঠামো দিয়ে তাদেরকে নির্বাহী বিভাগের আয়তা বহির্ভূত করতে ঐক্য।
৩। সংবিধান ও বিচার বিভাগের কার্যকর ও নাগরিক অধিকার বান্ধব সংস্কারের ঐক্য। বিচার বিভাগকে প্রকৃত স্বাধিকার দেয়া।
৪। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয়ের রাজধানী কেন্দ্রিক একচেটিয়া ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ঐক্য।
৫। মানসম্পন্ন শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং মানবিক কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের ঐক্য।
৬। দুর্নীতি, ঘুষ, তদবির ও লুটপাট রোধ করে বাজেটের বাস্তবায়ন সক্ষমতা তৈরির ঐক্য। সকল অবকাঠামো ও সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে বাধ্যতামূলক ভাবে টেকসই দুরদর্শী ও পরিবেশ বান্ধব করে তৈরির ঐক্য।
৭। রাষ্ট্রের বৈদেশিক ঋণের লাগাম টেনে ধরার ঐক্য।
৮। জন ও পরিবেশ বান্ধব আবাসন তৈরি ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন তৈরির ঐক্য।
৯। দৈনন্দিন জীবনের খরচ কৃষি শিল্প শ্রমিক ও শহুরে নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবিত্তের সাধ্যের ভীতরে রাখার ঐক্য। সর্বনিন্ম মজুরীকে বাঁচার উপযোগী মজুরি করা ঐক্য।


স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ নির্বাচনী কাঠামো এবং শান্তি পুর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর কাঠামো

সুশাসন অনুপস্থিত এমন দেশে সামাজিক অশান্তি, রাজনৈতিক হানাহানি, জেল-জুলুম-গুম-খুন, ব্যবসায়িক মন্দা, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ধ্বস, বেকারত্ব বৃদ্ধি, নির্বাচনের আগে আগে ব্যাংক লূট এবং অর্থ পাচারের মত ভয়ঙ্কর সব সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন হীনতা এবং শান্তি পুর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সিস্টেম হীনতা। দেশের নেতৃত্ব বাকি সব কিছুকে দূরে ঠেলে যখন শুধু মাত্র ক্ষমতায় থাকার ও দ্রুত সময়ে অর্থ লোপাটের চিন্তা চেষ্টা ও চর্চার কৌশল বাস্তবায়নে দিন কাটায় তখন মানবসম্পদ, নাগরিক জীবন যাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব অবকাঠামো উন্নয়নের মৌলিক ও টেকসই দিকগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে বাধ্য। যা হয় তার সবকিছু লোক দেখানো, সাময়িক এবং লূট সর্বস্ব। দায়বদ্ধতা না থাকায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলয়ের লোকেরা বেপারোয় অর্থ লুটে আত্মনিয়োগ করে, ফলে সব কিছু নষ্টের দখলে চলে যেতে বাধ্য হয়।

প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি
দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় প্রভাব মুক্ত, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ, সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বাইরে স্থায়ীভাবে একটি স্বাধীন নির্বাচনী কাঠামোর তৈরির ঐক্য চাই। একটি (ক) স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এমন চাই যারা প্রধানমন্ত্রীর বা রাষ্ট্রপতির নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়, যারা সাংবিধানিক ক্ষমতায় নির্বাচনী প্রার্থীদের দায়বদ্ধ করতে পুরোপুরি সক্ষম, শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত নিজের সকল জনবল নিজেরাই স্বাধীন ভাবে তৈরি ও বিন্যস্ত করতে সক্ষম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত যাঁদের নির্বাচনী স্বচ্ছতার সকল কাজ ও উদ্দেশ্যকে সুরক্ষা দিতে বাধ্য। এমন নির্বাচন কমিশন চাই যারা একটি দলের নির্বাচনী ইশতেহার বা তার অংশ মিথ্যা কিনা, পুনরাবৃত্ত কিনা তা যাচাই করবে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দাতা দলের নেতাকে সামনের নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত করার ক্ষমতা পাবে, ইতিপূর্বে নির্বাচিত প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৭৫% বাস্তবায়নের সাপেক্ষে নতুন মনোনয়ন গ্রাহ্য করবে।
আমাদের এমন একটি নির্বাচনী কাঠামো দরকার যারা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রার্থীদের বাধ্য করতে পারবে, ক্ষমতা ছাড়া ও নতুন ক্ষমতা গ্রহণের ট্রাঞ্জিশনারি সময়ে হানাহানি থেকে বিরত থাকতে নির্বাচনী প্রার্থীদের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিতে পারবে। শান্তি পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যর্থ প্রার্থীরা বর্তমান মেয়াদে অভিশংশিত হবে এমনকি ভবিশ্য নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়বেন, ঠিক এমনই একটা শক্তিশালী নির্বাচনী কাঠামো গঠনে ঐক্য চাই।


এই একই ধরণের সার্বভৌম কাঠামো দরকার আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্যও। যেমন- (খ) বিচার বিভাগ (গ) দুর্নীতি দমন কমিশন (ঘ) বাংলাদেশ ব্যাংক (ঙ) উচ্চ ক্ষমতা অসম্পন্ন জালিয়াতি প্রতিরোধ কমিশন (প্রস্তাবনা) (চ) জাতীয় হিসাব নিরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ অফিস (ছ) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) (জ) পুলিস-আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার নাগরিক হয়রানি, ঘুষ ও চাঁদাবাজি রোধে স্বাধীন জাতীয় তদন্ত কমিশন (প্রস্তাবনা)। এই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলোকে পুনর্গঠন করে,তাদের বৈচারিক ক্ষমতা,স্বাধীন বাজেট এবং স্বাধীন জনবল কাঠামো তৈরি করে ও নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে নির্বাহী বিভাগের আয়তা বহির্ভূত করতে হবে। এই ব্যাপারে দৃঢ় নাগরিক ঐক্য চাই যা রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ তৈরি করবে। এতে করে চাইলেই রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, ব্যক্তি মাফিয়ার দুর্বিত্তপণা রাষ্ট্রীয় ইন্সটিটিউশনকে যখন তখন কলুষিত করতে পারবে না। অর্থাৎ নির্বাহী ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা বিন্যাস তো বটেই আরো কিছু বৈষয়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে যারা শাসন ব্যবস্থায় চেক এন্ড ব্যালান্স তৈরি করবে, স্বচ্ছতা আনবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করবে।

বিচার বিভাগের সংস্কার
বিচার বিভাগের সংস্কারে ঐক্য বহু জরুরি। বর্তমান বিচার ব্যবস্থা সমাজ ও রাষ্ট্রের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। নিন্ম আদালতে বিচারক নিয়োগে খুললাম খুল্লা দলীয়করণ প্রতিহত করতে স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি আনতে হবে, জুডিশিয়াল সার্ভিসে যেনতেন পরীক্ষা, মানহীন সনদ ভিত্তিক নিয়োগকে রুখে দিতে ঐক্য চাই। বিচারক নিয়োগে নির্বাহী বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। আলাদা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন করতে হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় যৌক্তিক বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। ২ বছরের মধ্যে মামলা জট কমিয়ে নতুন মামলাকে সময় নিয়ন্ত্রিত প্রসেসে নিয়ে আসতে হবে যাতে নাগরিক বিচারের চূড়ান্ত রায়ের সম্ভাব্য তারিখ মামলার সময়েই জানতে পারেন।

মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকে মানুষের জান, মাল এবং ইজ্জতের সুরক্ষার জন্যে একটি নতুন সার্বজনীন নাগরিক অধিকারের সনদ তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠান এই সনদের নীতিবিরুদ্ধ কোন কাজ এবং আইন প্রয়নয়ন করতে পারবেনা। মানবাধিকার কমশনকে সরকারের চাটুকারিতার বিপরীতে নাগরিক ও আদালতের কাছে দায়বদ্ধ সংস্থার খোলসে আনতে ঐক্য চাই।

সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা
প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চার জন্যে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হওয়ার ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার রাজনৈতিক ঐক্য চাই। বিপরীতে দলীয় প্রধান ও তার পরিবারের ইচ্ছা, দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বিশেষের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বদলে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে সিদ্ধান্ত নিবার প্রক্রিয়াকেই গণতান্ত্রিক করা চাই, যাতে হর্স ট্রেইডিং ক্ষেত্রই তৈরি না হয়। রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধান তৈরি উদ্যোগ নিতে হবে। "কনফ্লিক্ট ইন পাওয়ার এন্ড ফান্নান্সিয়াল ইন্টারেস্ট" দূর করতে সরকার প্রধানকে দলীয় পদ ছাড়তে হবে, মন্ত্রীসভার সকল সদস্যকেও দলীয় যে কোন পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ পূর্বক শপথ নিতে হবে। মন্ত্রী সভার কোন সদস্যই কোন বেসরকারি কোম্পানির চেয়ারম্যান বা এমডি বা ডিরেক্টর বা উপদেষ্টা হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী জীবন মেয়াদে দুই বারের অধিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এই ঐক্যগুলো রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা আনতে বহু জরুরী।


প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংসদীয় নির্বাচন
শুধু ১টি মাত্র আসন ভিত্তিক সংসদ নির্বাচনের বদলে একটি পুরো জেলায় একদল প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রিক ভোট হবে। অর্থাৎ বর্তমানের সংসদীয় আসন এর সীমা উঠে যাবে, বিপরীতে পুরো জেলা একটি নির্বাচনী ইউনিট হবে এবং সেখানে সাধারণ প্রার্থী তালিকায় ভোট হবে ।(এতে করে চাইলে জেলা সরকার গঠন করা যাবে, প্রতিটি জেলায় উৎপাদন বন্টন ও কর্মসংস্থানের আলাদা আলাদা টার্গেট ভিত্তিক রাজনৈতিক বা নির্বাহী প্রশাসন সাজানো যাবে। পশ্চাৎ পদ জেলার লোকেরা আঞ্চলিক দল তৈরির সুযোগ পাবে এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ভূমিকা রাখবে)।

জেলায় প্রাপ্ত মোট ভোটের শতাংশ অনুসারে ঠিক হবে দলীয় আসন বিজয়। ঐ জেলার জনসংখ্যা অনুপাতে নির্ধারিত সংসদীয় আসন গুলোতে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবেন। {সম্ভাব্য মডেল- কোন জেলায় ১০ টি আসন, দলগুলো সর্বোচ্চ ১০ জন করে কমন প্রার্থী ঘোষণা করবে পুরো জেলায়, একজন ভোটার সকল দলের সব প্রার্থীর মাঝে শুধু ১ জনকেই ভোট দিতে পারবেন, কোন দল জেলায় মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০% বা কাছাকাছি পেলে সেই দল চারটি সংসদীয় আসন পাবে, ৩০% বা কাছাকাছি পেলে তিনটি, ২০% বা কাছাকাছি পেলে ২টি এবং ১০% বা কাছাকাছি পেলে ১টি সংসদীয় আসনের সুরক্ষা পাবে। দলীয় প্রার্থীদের মাঝে ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তরা নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবেন।}

প্রতিনিধিত্বের শতাংশ ভিত্তিক আসন বরাদ্দের এই নতুন বিধান চাই এজন্য নিশ্চিত করা চাই যাতে করে ছোট রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দলীয় ভিন্ন মতাদর্শী, আঞ্চলিক ক্ষুদ্র দল, দার্শনিক বা বুদ্ধিজীবীদের দল, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, বঞ্চিত এলাকার জনতা এবং বঞ্চিত পেশাজীবী সংগঠন গুলো দল গঠন করে সংসদে দাবী উত্থাপন ও কথা বলার সুযোগ পায়।
রাষ্ট্র চালাতে যেসব মূখ্য পেশাজীবীর প্রয়োজন সেই সব গুলো সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের প্রতিনিধিত্ব থাকা চাই দলীয় প্রার্থী তালিকায়। না ভোট রাখা চাই, চাই এক তৃতীয়াংশ “না ভোট” পড়া সাপেক্ষে ঐ নির্বাচনের সব প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষনা করে নতুন প্রার্থীতে নির্বাচনের বিধান রাখা চাই যাতে একদলীয় বা গোষ্ঠীগত নির্বাচন, চোর ও জনবিরোধী প্রার্থী ঠেকানো যায়। জামানত ভোটের মোট শতাংশের ১ থেকে সর্বোচ্চ ২% এ নামিয়ে আনা চাই (বর্তমানে যা ১০%)। দেশের যে কোন নাগরিকের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন করার এবং নির্বাচন করার অধিকার দেয়া চাই।

কল্যাণ ও সেবা মুখী রাষ্ট্র
রাষ্ট্রকে কল্যাণমুখী করার প্রথম ১ম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির নূন্যতম ৫% করে মোট ১০% বরাদ্দ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রাখার ঐক্য চাই যা পরবর্তিতে ধাপে ধাপে ১০ শতাংশ করে মোট জিডিপী’র ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। জ্বালানী তেল, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, গণ পরিবহণ ভাড়া এবং বাসা ভাড়া বছরে বাৎসরিক ঘোষিত মূল্যস্ফীতির পরিমাণের বাইরে এক আনাও কিংবা এক শতাংশও বাড়াতে পারবে না-সরকার, প্রসাশন,বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ভিত্তিতে সবার দৃঢ় ঐক্য চাই। সর্বনিন্ম মজুরি নির্দিস্ট শহরে বাঁচার উপযোগীতার ভিত্তিতে নির্ধারিত করার ঐক্য চাই। দীর্ঘ মেয়াদে বস্তিবাসীকে মানবিক আবাসন দানের পরিকল্পনা চাই। দুর্নীতি গ্রস্ত লূটেরা নদী ও পানি কেন্দ্রিক অবকাঠামো (নদী ভাঙ্গন, চর দখল, উপকূলীয় ভূমি ক্ষয়), ভূমি অধিগ্রহণ, রাজনৈতিক দখল (ইকোনোমিক ডিস্প্লেইস্মেন্ট) ও কৃষি ভূমি ও কৃষক হারানো সহ বস্তিবাসী তৈরির পরোক্ষ কারণ সনাক্ত করে স্থায়ী সমাধান তৈরির তাগিদ নিবার ঐক্য চাই।

কল্যাণ ও সেবা মুখী রাষ্ট্রকে টেকসই রূপ দিতে কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষাকে গবেষণা এবং ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্ক ফোর্সের চাহিদা ভিত্তিক দুই সমান্তরাল ধারায় বিন্যস্ত করা চাই। গ্রামীণ শিক্ষাকে উচ্চ মান করে তোলার তৃণমূল কাঠামো চাই। চাই নিন্ম মাধ্যমিক ও পর্যায় ক্রমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত (প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত, ১৮ বছর) বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্রিস্তিতি। এই শিক্ষার ব্যয় নির্বাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই।
গতানুগতিক শিক্ষা সূচী বাদ দিয়ে প্রাণ-পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষার টেকসই দিক, দেশীয় কৃষি ও শিল্প রক্ষার টেকসই দিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুরক্ষায় টেকসই দিক, সমাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরির টেকসই দিক, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিপরীতে কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ উৎপাদন সুরক্ষার টেকসই দিক, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনের টেকসই দিক এবং দেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনার বহুবিধ টেকসই জ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক ও বাস্তবধর্মী শিক্ষা কোর্স প্রণয়নের পরিকল্পনার উপর ঐক্য চাই।



কেন্দ্রীয় খরচ ও ক্রয় স্বচ্ছতা" কমিটি
জন প্রশাসনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গুলোর ক্রয় ও বাজেট খরচের অনুমোদন গুলো, ক্রয় কমিটি গুলোর যাবতীয় ক্রয়, খরচ ও ব্যয়কে "কেন্দ্রীয় খরচ ও ক্রয় স্বচ্ছতা" কমিটি নামক স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য ন্যাস্ত করতে হবে। দুর্নীতি রোধে সরকারি সকল ব্যয় ও ক্রয়কে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব মুক্ত এই স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করতে হবে, দীর্ঘসূত্রীতা এড়াতে এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকান্ডকে আধুনিক কারিগরি স্বয়ংক্রিয়তায় আনতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হবে দুর্নীতি ও লুটপাট থামিয়ে বাজেটের বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানো। প্রতিটি সরকারি বিভাগ ২০০০ টাকার উপরে প্রতিটি খরচ হওয়ার পরেই তার ক্রয়মুল্য এবং বিক্রেতার নাম উল্লেখ পূর্বক তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে।

আগামী একটি বা কয়েকটি নির্বাচনে সব ঠিক থাকলেও, ক্ষমতা হস্তান্তর স্বচ্চ হলেও, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার গত দশ বছরে বাজেট স্ফীতকরণ, বরাদ্দ, প্রকল্প ব্যয় এবং দলীয় লোকেদের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঋণ দিবার যে বেপারোয়া লুটেরা মডেল স্থাপন ও বাস্তবায়ন করে গেছে, নতুন সরকার যদি এই দুর্বিত্ত মডেল আমূল পরিবর্তন না করে বেপারোয়া খরচের লাগাম টেনে না ধরে, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশী ঋণের জাল থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা যাবে না, ইতিমধ্যেই দেশের বাজেটের ২য় শীর্ষ খাত হিবেসে আবির্ভুত হয়ে ঋণের সুদ প্রদান। বাস্তব ব্যয়ের ১০ থেকে ১০০ গুণও বরাদ্দ পেয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প ব্যয় ও বিভিন্ন সরকারি ক্রয়। এটা অবাধ লুটতরাজ থামাতে না পারলে নাগরিকের আর্থিক মুক্তি সুদূর পরাহত। রাষ্ট্রীয় বাজেটের সক্ষমতা তৈরি ও দুর্নীতি বন্ধের এই বোধ প্রতিষ্ঠার ঐক্য চাই।

পূর্ব ও পরে প্রতিষ্ঠানিক শাসনের যৎসামান্য কাঠামো যা ছিল কিংবা বিচ্ছিন্ন ভাবে গঠিত হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তি ৪৭ বছর শেষে বর্তমানে তা পুরোপুরি ধ্বংস প্রাপ্ত। এই সবই করা হয়েছে সচেতনে, শুধু মাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে, কেন্দ্রীয় নজরদারি আনার কথা বলে। এতে করে বহুবিধ সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে, বহু আইন এবং শাসন তান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে সাজানোর দরকার পড়েছে। বাংলাদেশের সম্পদ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন কোন বাস্তবায়ন ধারা তৈরি হয়নি যাতে প্রতীয়মান হয়ে যে আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে হাঁটছি। নাগরিকের তরে নিবেদিত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের মূল লক্ষ্য ভুলে আমরা নিছক কিছু অকার্যকর ও লূটেরা উপলক্ষ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পথ হারিয়ে ভ্রান্ত পথ নিয়েই বিতর্কে জড়িয়েছি, লক্ষ্য নিয়ে নয়। ফলে যে কোন পর্যায়েই সুশাসন ফিরাতে সত্যি সত্যিই একটা আমূল পরিবর্তনের দরকার, কেননা বর্তমানের শাসন মডেল নাগরিক স্বার্থ্যের সাক্ষাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। যে কোন নিবেদিত ও সতত ঐক্য প্রক্রিয়ার বুঝাপড়ার ভিত্তির লিস্টও অতি দীর্ঘ হতে বাধ্য। তার পরেও আমাদের পথ খুঁজে পেতে হবে, মত ও পথের ভীড়ে, নাগরিকের তরে নিবেদিত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আমাদের জানতে হবে, আমরা কি করছি, কি চাচ্ছি, কেন চাচ্ছি, কোথায় আমাদের গন্তব্য! ঠিক কখন আমরা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হতে পারবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×