১- গ্রামে গ্রামে কৃষি ভূমি সমীক্ষা করে তা প্রটেক্ট করা যাতে চাইলেই কৃষি ভুমি ভরাট করে আবাসন, কিংবা ব্যবসা বা শিল্প না করা হয়। এর জন্য দরকার সমন্বিত ভূমি মহা পরিকল্পনা। প্রতিবছর অন্তত ১.৫ থেকে ২% কৃষি ভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ আবাসন ও শিল্পের মডেল ঠিক করে এই কৃষি ভূমি আগ্রাসন থামানো যায়।
২-কৃষি ভূমির উপরিভাগ কেটে ইটের ভাটায় নিয়ে মাটির প্রাকৃতিক জৈব রাসায়নিক উর্বরতা এবং হিউমাস নষ্টের দীর্ঘ মেয়াদী চক্রান্ত বন্ধ করা। উপরিভাগের হিউমাস যুক্ত মাটি দিয়ে ইট বানানো হচ্ছে তাতে অন্তত বিশ বছরের জন্য একটি জমি উর্বরতা হারিয়ে ক্ষতিকর ও খরুচে রাসায়নিক চাষের খপ্পরে পড়ছে। টপ সয়েল দিয়ে বানানো ইটার ব্যবহার বন্ধের পদক্ষেপ নিতে হবে ধাপে ধাপে এবং বিদেশে ইটা রপ্তানি বন্ধ করতে হবে স্থায়ীভাবে। বিকল্প পরিবেশ বান্ধব ইটার বাধ্যতামূলক ব্যবহার নেয়া চাই।
৩- গ্রাম থেকে পিলিথিন রিসাইকেল অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির একটি। এটা চূড়ান্ত লজ্জা ও হীনমান্যতার বিষয় যে, পলিথিন বাজারজাতকরণের পরে বিগত চার দশকে পলিথিন ব্যাগ ও প্যাকেজিং পিলিথিন রিসাইকেল করা হয়নি। এই পলিথিন আমাদের জল স্থল সব বিষয়ে দিয়েছে। বিষিয়ে দিচ্ছে আমার সমুদ্র উপকূলের ফ্লোরা ও ফাউনা। এই নির্লজ্জতা সীমাহীন, নিদারুণ!
৪- গ্রামে যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আছে তাকে উন্নত ও দক্ষ করা
- গ্রামে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা, সুনির্দিস্ট শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও নিরাপত্তার অবকাঠামো গড়ার অঙ্গীকার
৫-গ্রামীণ কৃষি অফিস গুলোকে অফিসার সর্বস্ব না করে বরং কৃষি সারঞ্জামের টুল হাউজ করে তোলা।
৬- গ্রাম ভিত্তিক কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের পরিসংখ্যান তৈরি ও নতুন নতুন স্কিল্ড ও সেমি স্কিল্ড কর্মসংস্থান বাড়ানোর সংখ্যা ভিত্তিক উদ্যোগ
৭- গ্রামের পরিবেশ ও খাল রক্ষা করা, অপরিনামদর্শী জলাভূমি ভরাট বন্ধ এবং জলাবদ্ধতা বন্ধের টেকসই উদ্যোগ
৮- গ্রামীণ বনায়নকে একচেটিয়া ব্যবসায়িক মডেলে ঠেলে না দিয়ে প্রাণ ও পরিবেশ বান্ধব করা, পাখি ও বন্যপ্রাণির খাদ্য চাহিদার আলোকে সাজানো। (সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বড় গাছের অভাবে বজ্র পাতে মিরত্যু বাড়ার কথাও মনে করা যেতে পারে)
৯- গ্রামের স্কুলে মান সম্মত ও মাথা পিছু হারে শিক্ষক ব্যবস্থা করা
১০- গ্রাম পর্যায়ে মান্সম্পন্ন ও মাথাপিছু হারে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা
১১- কৃষি ভূমির উপর চাপ কমাতে এবং আবাসন উন্নত করতে ভার্টিক্যাল ভিলেইজ ব্যবস্থার চালু করা। এই ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং ফাইনান্সিয়াল মডেলিং তৈরি করা
১২- গ্রাম পর্যায় থেকে সন্ত্রাস দমন। এটা অবিসংবাদিত ভাবে সত্য যে ক্ষমতাবলয় সংশ্লিষ্ট তৃণমূলের কর্মীদের একটি বড় অংশ গ্রাম পর্যায়ে সন্ত্রাসী। এরা বিপদে পড়া মানুষ থেকে বখরা খায়, কৃষক ও ব্যবসায়ীর উৎপাদন ও উপার্জন থেকে চাঁদা খায়। এরা উপার্জন না থাকলে মানুষকে ইচ্ছাকরে বিপদে ফেলে টাকা খায়। এই দলীয় সন্ত্রাস ও দলীয় ভাবে সংঘঠিত রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে লালিত অপরাধের লাগামটানাই গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা ও নাগরিক নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১৩- গ্রাম থেকে মাদক নির্মূল। গ্রাম পর্যায়ে মাদকের সাপ্লাই চেইনকে স্থায়ীভাবে ভেঙে দেয়া।
১৪- গ্রামীণ ট্রান্সপর্টেশনের নিরাপত্তায় আন্তঃ বিভাগীয় এবং আন্তঃ বিভাগীয় সড়ক গুলোতে ধীরগতির লেইন চাই
১৫- গ্রামীণ ট্রান্সপর্টেশন সুবিধায় স্কুল গামী বাচ্চাদের সাইকেল ঋণ চাই
১৬- গ্রামের বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগ, স্কুল ড্রেস ও শিক্ষা উপকরণ দেয়া যাই।
১৭- স্কুল ঝরে পড়া রোধে অন্তত গ্রামীণ স্কুলে ফ্রি ও মানসম্পন্ন টিফিন দেয়া চাই।
দুরদর্শী ও টেকসই গ্রাম উন্নয়নে বহুবিধ করণীয় আছে, ফাঁকা বুলি নয়, চাই বোধগম্য পরিকল্পনা ও তার দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্পন্ন বাস্তবায়ন।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কথা মনে আছে? এই প্রকল্পে বেছে বেছে ক্ষমতাবলয় সংশ্লিষ্ট তৃণমূলের কর্মীদের ঋণের টাকা বিরতণ এবং তা গায়েব করা ছাড়া কোন আশাব্যঞ্জক অর্জন আসেনি। প্রথম আলোর একটা রিপোর্ট আছে এই প্রকল্প নিয়ে, সেখানে বলা হয়েছিল "অর্ধেক তোমার, অর্ধেক আমার!"। বিচ্ছন্নভাবে দু-একজন সাফল্য পেয়েছেন হয়ত! এই প্রকল্পের কোন ফলো আপ এবং দায়বদ্ধতা ছিল না। এটা একটা লুটের প্রকল্প ছিল যা কৃষক তৈরি করেনি, বরং করেছে লাঠি চাপাতি ও রড বাহিনী। গ্রাম উন্নয়নের নামে এইধরনের লুটের প্রকল্প আমরা আর চাই না, সে যত আকর্ষনীয় নামেই আসুক না কেন!
আমার গ্রাম কখনই যেন শহর না হয়ে উঠে। আমরা গ্রামকে শহুরে বস্তি করতে চাই না, গ্রামকে সুজলা সুফলা রাখতে চাই। নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন গ্রামই চাই আমরা। বস্তির শহর চাই না, প্রাণ ও পরিবেশের সুরক্ষা চাই, কৃষি সুরক্ষা চাই ।
গ্রামের মানুষের জীবনমানের বোধগম্য ও টেকসই উন্নয়ন এবং গ্রামীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য ঠিক যে যে ভবিষ্যত মূখী ও টেকসই পরিকল্পনা এখনও অনুপস্থিত সেই সেবা ও তার অবকাঠামো ডিজাইন ও পরিকল্পনা গুলো; প্রাণ-পরিবেশ- কৃষি সেবা ও সেবা ব্যবস্থাপনার আধুনিক যেসব দিক এখনো গ্রামে অনুপস্থিত, সেগুলোর যাচাই বাছাই কেন্দ্রিক নতুন সুচনা দরকার। এইসব সেবা গ্রামে সুচনা করার উদ্যোগ নেয়া দরকার দেশীয় জীবন ধারা, প্রয়োজনীয়তা এবং প্রাণ ও পরিবেশ বান্ধব রেখে। যেহেতু এই সেবা সমূহ ঠিক শহুরে সেবার মত নয়, তাই বাছবিচার হীন ভাবে গ্রাম নগরীকরনের বিপক্ষেই চিন্তাশীল কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
কবি বলেছেন "দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য লও এ নগর"।