১।
স্বর্গের প্রহরীরা একদিন নেতাকে খবর দিল, জানো! আজ তোমার শহরে নির্বাচন। এই প্রথম শতভাগ ইভিএম এ ভোট হচ্ছে।
নেতা জিজ্ঞেসিলেন, ইভিএম কি?
প্রহরী বল্লেন, আজ্ঞে হুজুর আমি ঠিক জানি না।খবরে শুনছি টিপ দিলেই না ভোট হয়।
নেতা বল্লেন, এক কাজ কর। কাউকে একটু পাঠাও। কি হচ্ছে দেখে আসুক।
প্রহরী বল্লেন, এতে বিপদ আছে। ছাত্রলীগ মাঠ দখল করেছে, কেন্দ্রও দখল করবে বলেছে। হাজার হাজার বিজিবি পুলিশ। এর বাইরে ভারত থেকে যে ভাবে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। অচেনা ভেবে কখন ধরে পিটানি দেয়! তাছাড়া, শুনেছি আগের রাতেই নাকি ভোট অর্ধেক হয়ে যায়!
তা কিভাবে? নেতা জিজ্ঞেস করলেন।
প্রহরী- আগের রাতে নাকি কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেশ ঢুমধাম বিরিয়ানি তেহারি কাচ্ছি মোরগ পোলাও উৎসব হয়, খেয়ে দেয়ে একেকজন কয়েকশ করে ভোট দিয়ে যায়!
বল কি?
আজ্ঞে হ্যাঁ, সেটাই। লোকে লাইলাতুল ভোট, নাম দিয়েছে একে।
আরে ছদ্ম বেশে পাঠাও না কাউকে। হাজার হোক, সেত আমারই গড়া দেশ!
২।
শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন শহরে এসে চাদর মূড়ে কাঁচুমাচু হয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন এক চাচা। উনি জানতেন ঢাকার বায়ুর মানের সূচক ২৪০ থেকে ১৮০'র মধ্যে ঘুরাফেরা করে, কষ্ট হবে ভেবেও নেতার আর্তিতে তিনি এসেছেন। কিন্তু হায়! সেদিন বাতাসের বায়ু মান সূচক ৩৭০ এ পৌঁছেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে। কিন্তু এই লাইন যে এগুচ্ছে না। উনার আগে প্রায় শ'দুয়েক আছে।
ভদ্র লোকেদের কেউ কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়ছেন। উঁকি মেরে পত্রিকার হেডিং গুলো দেখছেন চাচা।
ক। দেশে কোন বেকার নাই, কেউ ইচ্ছা করে বেকার থাকলে ভিন্ন কথা- সংসদে প্রধানমন্ত্রী।
খ। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ জনের একজন ক্ষুদার্থ থাকে- আল জাজিরা।
গ। ১২ বছরে বাজেট বেড়েছে ৬ গুণ, কিন্তু সরকারের শুধু অভ্যন্তরীণ ঋণই বেড়েছে ৫৫ গুণ!
ঘ। খেলাপি ঋণ এর মোট পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা- আইএমএফ।
ঙ। সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে কেন্দ্র পাহারা দিবে আওয়ামীলীগ-কাদের।
চ। সিটি নির্বাচনে পোস্টার থেকেই ২ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য।
ছ। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকা আবারো প্রথম।
জ। মুজিব বর্ষের প্রস্তুতিতে সরকারে ব্যয় ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে!
ঝ। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নেই ফেমা ও ব্রতী। নাম সর্বস্ব পর্যবেক্ষকে ঠাসা মেয়রের ভোট!
হেডলাইন গুলার কোনটার সাথে কোনটার মিল পাচ্ছেন না চাচা, যেন তালগোল লাগছে!
ভোটের লাইন এগুচ্ছে না, ইতিমধ্যেই শুনা গেল ভোট সাময়িক বন্ধ, ফের শুরু হতে দেরি হবে। পাশ থেকে পতাকা ধারী ছেলেরা বলছে, ভোট হয়ে গেছে চলে যান। ধীরে ধীরে দুপুর ঘনিয়ে বিকেল প্রায়, লাইনের জট কমে আসছে। কিন্তু লাইনের মুখ গুলো যেন ঘুরে ফিরে একই।
৩।
সন্ধ্যা প্রায়।ইভিএম নামক মেশিনটায় ডিস্টার্ব দেখা দিয়েছিল। পরে ঠিকও হল! খুব ভোরে এসেও কেন্দ্রে ঢুকতে সন্ধ্যা লেগে গেল, কিছুক্ষণ পরেই ভোট শেষ হবে। কিন্তু চাচাকে যে ভোট খানি দিতেই হবে! নিজের ভোট নিজে দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।
কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে চাচা অবাক! এখানে বহু লোক, কারো কোন ব্যস্ততা নেই। সবাই চা কফি পানে আর খোশ গল্পে মত্ত। বুথ গুলো ফাঁকা। তথাপি লাইন কেন এগুলো না, চাচা এটা ভেবেই পাচ্ছেন না!
একজন জিজ্ঞেস করলো, আপনার স্লিপ কই। চাচা তার অনুলিপি করা একটা ভোটার আইডি এগিয়ে বল্লো এই নিন, একজন কিছু না দেখেই বল্লো আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে, আগে আসলেন না কেন?
চাচা বল্লেন,ইভিএমে তা কি করে হয়? কথা কাটিকাটি শুরু হলে কেউ একজন এসে বল্লেন, উনাকে ছেড়ে দাও। বুথে এগিয়ে দাও।
ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ হচ্ছে না বলে পাশ থেকে একজন বল্লেন, এখানে টিপ দিন। বল্লেন, আমাকে আমার ভোট দিতে দিন।
রাগত স্বরে পতাকাবাহী প্রিজাইডিং অফিসার বল্লেন, আপনি যেমন ভোট চান সেরকম ভোট দিতে হলে আগে কয়েটা রাজাকার প্রজন্মকে খতম করে পরেই তা করতে হবে!
এরমধ্যেই একজন কিছু একটা করে পাশ থেকেই বাটন টিপে দিলেন। কথা না বাড়িয়ে চাচা, ফিরলেন।
৪।
কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের কেউ নেই, কয়েকজন পুলিশ শুধু। ওরা ক্লান্ত। কিছু পতাকাধারী ছেলে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে, নেতা নেত্রী গোছের লোকেরা আসছে। বেরিয়ে আসতেই এক পুলিশ এগিয়ে এলো, এত দেরিতে আপনি এখানে কি করছেন? চাচা বললেন, বাবা ভোট টা দিতে এসেছিলুম!
ভোট দিতে এসেছিলুম!! হতভাগা কোথাকার!! তোমার, চাদরের ভিতর কি? খোল তোমার পুটুলি! চ্যাংদোলা করে পুলিশ উঠিয়ে নিল টহল পিকাপের পিছন্টায়।
শহরের শেষ প্রান্তের এক চিপায় এসে ভ্যান থামলো। এতক্ষণ ধরে ওরা হাতের তালুতে ঘষে কিছু একটা বানাচ্ছিল। একজন সুখটান দিতেই বলে উঠলো, সারাদিনের ডিউটি শেষে এসব ভালো লাগে না, উনাকে ছেড়ে দে। অফিসার ভদ্র ভাষায়- শুনেন চাচা, এই সব ভোট ফোটে আর কখনো আসবেন না। এবার মানে মানে ছেড়ে দিচ্ছি।
৫।
চাচা হেঁটে চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। সবাই গাঁজায় বুদ, দুর্গন্ধে সয়লাব চারদিক। দুর থেকে মিছিলের জয় ধ্বনি আসছে। একজন বলে উঠলো, চাঁদরে মোড়া চাচাকে কোথায় জানি খুব দেখেছি। অন্যজন বললেন, আরে তাইতো! আগে বললি না কেন!
পুলিশের কথা চাচার পৌঁছল!
*******************
"আমি মুজিব!"
"মেয়ের শহরে মেয়রের ভোট দেখতে এসেছিলাম!"
*******************
বলে কি??? আওয়াজ শুনতেই, রাস্তার দিকে অবাক চোখে একযোগে তাকায় পুলিশ সবাই।
দুর থেকে ভেসে আসছে, মিছিলের ধ্বনি! কিন্তু কোথাও কেউ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৮