somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভণ্ডপীরের আকীদা-বিশ্বাসের সারনির্যাস

০৯ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক. পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম জরুরী নয়-
দেওয়ানবাগী বলেন, সকল ধর্মের লোকই নাজাত পাবে। মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয়। আরো বলেন,“যে কোনো ধর্মের লোক তার নিজস্ব অবস্থায় থেকে যদি এক আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে তার বিধানমতে নিজেকে পরিচালিত করতে পারে, তাহলে সে নামধারী মুসলমানের চেয়েও উত্তম”। (আল্লাহ কোন পথে পৃ: ১৩,২৫)
এর প্রমাণস্বরূপ তিনি বলেন, “ভিন্ন ধর্মের অনুসারী আমার এক মুরিদকে তার ধর্ম থেকে অযিফা, আমলের নিয়ম দিয়েছি, তা পালন করে সে নবীজীর সাথে মুসাফাহা করতে সক্ষম হয়েছে। তার হৃদয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ আসে এবং ভালোমন্দ বাতলায়ে তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করে” । (মানতের নির্দেশিকা পৃ:৩১)
মন্তব্য-এ আকীদাটি সুস্পষ্ট কুফুরী। কুরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ৬২নং আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা করে খৃষ্টানদের আকীদামত নিজের মতবাদ প্রমাণ করেছে। আকীদাটি সূরা আলে ইমরানের ১৯ এবং ৮৫নং আয়াতসহ বহু আয়াত ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিপরীত। এ কারণেই বাংলাদেশের সবগুলো ভণ্ডপীরের দরবারে অমুসলিমদের সমাগম ও আনাগোনা দেখা যায়।
“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর এ ব্যাপারে আকীদা হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ছাড়া পরকালে মুক্তি বা জান্নাতে পৌঁছা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। (সূরা আলে ইমরান -৮৫)
খ. জরুরীয়াতে দীনের অস্বীকার
অনেক ভণ্ডপীর বিশেষকরে দেওয়ানবাগী কুরআন ও হাদীসের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত এমন কিছু বিষয়ের অস্বীকার করে, যা অমান্য করলে ঈমান থাকে না।
যেমন:
১. বেহেশ্তের হুর বলতে মানুষের আত্মা বা নফসকে বুঝায়।
২. আত্মার চিরস্থায়ী যন্ত্রণাদায়ক অবস্থাকে জাহান্নাম বুঝায়।
৩. সূফী সাধকগণের দৃষ্টিতে মানুষের হাশর পৃথিবীর বুকে সংগঠিত হয়। প্রকৃত পক্ষে মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির দেহের কোন ক্রিয়া থাকে না।
৪. পুলসিরাত পাড়ি বলতে জন্ম থেকে মৃত্যু পযর্ন্ত ঈমানের উপর অটল থাকা।
৫. তাদের আকীদা হলো, আল্লাহ ও জিবরাঈল এক ও অভিন্ন। (সূত্র: আত্মার বাণী)
উক্ত বিষয়গুলোর ভ্রান্তব্যাখ্যা করে তারা এ গুলোর হাকীকতকে অস্বীকার করে। অথচ এগুলো জরুরীয়াতে দীন, যা রাসূলের সুন্নাহ ও জামাআতে সাহাবা কর্তৃক বিশ্লেষিত। সর্বস্তরের মুসলমান এগুলো বিশ্বাস করে।
গ. পীর সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি ভণ্ডপীরদের আরেকটি প্রধান বিভ্রান্তি হচ্ছে,
পীর সম্বন্ধে অতিরঞ্জিত ধারণা।
যেমন আটরশি পীর বলেন, আমার পীর শাহ্ এনায়েতপুরী মৃত্যুকালে আমাকে
বলেছিলেন, “বাবা তোর ভালো, মন্দ উভয়টিই আমার হাতে রইল”।
(সূত্র: নসীহত খ: ৩ পৃ:১১১)
১. আটরশির আকীদা পীর পরকালে মুরিদদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে সক্ষম।
২. আটরশির উক্তি: পীর দুনিয়াতে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে মুরিদকে রক্ষা করতে সক্ষম।
৩. উরস সম্পর্কে বাড়াবাড়ি তাদের অন্যতম ভ্রান্তি। আটরশি সাহেব এনায়েতপুরীর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, “উরস শরীফ কাযা করলে পরবর্তী এক বছরের জন্য বহু দুর্ভোগ পোহাতে হবে, উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে”। অথচ উরস সহীহ হাদীস দ্বারা নাজায়েয ও হারাম বলে সাব্যস্ত। ইসলামে এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
ঘ. বুজুর্গ হলে ইবাদত লাগে না
সুরেশ্বরী, চন্দ্রপুরীসহ বহু ভন্ডপীরের মারাত্মক বিভ্রান্তির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কোনো লোক বুজুর্গ হলে তার আর ইবাদত লাগে না। চন্দ্রপাড়া পীরের ‘হাক্কুল ইয়াকিন’ ২৯ নং পৃষ্ঠায় আছে, “ কোনো লোক যখন মাকামে ছুদুর, নশোর, নূরী, কুরবে মাকিনের মাকাম অতিক্রম করিয়া নফসীর মোকামে গিয়ে পৌঁছে, তখন তাহার কোনো ইবাদত থাকে না, এমনকি তখন ইবাদত করলে কুফুরী হবে। তারা এ ভ্রান্ত আকীদার পক্ষে দলীলস্বরূপ واعبد ربك حتي يأتيك اليقين এ আয়াত পেশ করে। যার অর্থ ইয়াকিন আসা পর্যন্ত তোমার প্রভুর ইবাদত কর। (সূরা-হির্জ-৯৯) এখানে ‘ইয়াকিন’ শব্দটিকে তারা মাআরেফত অর্জন হওয়া দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। অথচ সুন্নাতে রাসূল স. ও সাহাবা তাবেঈনসহ সকল “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” এব্যপারে একমত যে, উক্ত আয়াতে ‘ইয়াকিন’ শব্দটি মৃত্যু অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদত কর। এ কারণেই সুরেশ্বরীরা ‘মাসিক সুরেশ্বর’-এ লিখে “যারা আল্লাহর একাত্মবাদের সাথে মিশে গেছে, তাদের নিকট ফরজ বলতে কিছুই নেই। তাদের ক্ষেত্রে যাহেরী শরীয়তের কোনো বালাই থাকে না। তারা যাহেরী শরীয়তের খেলাফ কাজ-কর্ম করেন। পোশাক-আষাক খাদ্য-দ্রব্য,বাসস্থান-অবস্থান কোন ব্যাপারেই তাদের শরীয়তের পাবন্দী দেখা যায় না। অথচ তাদের মধ্যেই অধিকাংশ গাউছ-কুতুব, আবদাল আখইয়ার হয়ে থাকেন”। (সূত্র : তাসাওফ তত্ত্ব-১৬৮)
ঙ. রাসূল আর আল্লাহর মধ্যে ব্যবধান নেই
দেওয়ানবাগী, চন্দ্রপুরী, মাইজভান্ডারীসহ অনেক ভণ্ডপীরের বিভ্রান্তিকর আকীদা হচ্ছে, আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুরেশ্বরী তার “সিররে হক জামে’নূর” নামক গ্রন্থে লিখেছেন: আহাদ ও আহমাদ এর মীমের মধ্যে পার্থক্য কেবল হামদ ও নাতের জন্য” (সূত্র: মাসিক সুরেশ্বর)
এ আকীদা মূলতঃ ’وحدةالوجودসর্বেশ্বরবাদ দর্শনের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে আবি®কৃত। এ আকীদা সম্পূর্ণ র্শিক।এ দর্শনেই খৃষ্টানরা বিশ্বাসী। যেমন, আল্লাহ ঈসা আ.এর মধ্যে প্রবেশ (হুলল) করার আকীদা পোষণ করে থাকে। অথচ “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর আকীদা হলো, আল্লাহর সত্ত্বা কারো সত্ত্বার মধ্যে মিশ্রিত বা প্রবেশ করে না। তার সত্ত্বার মধ্যেও কেউ মিশ্রিত বা একীভূত হতে পারেনা।
সারকথা-
কয়েকটি ভ্রান্ত আকীদার সামান্যকিছু রূপ পেশ করা হল । এগুলো শরয়ী দলীল-প্রমাণ দ্বারা খণ্ডন করার সুযোগ এ ক্ষুদ্র প্রবন্ধে নেই। বিষয়গুলো শুধু একারণেই উল্লেখ করা হলো যে, এসব মতবাদ বিশ্বাসের ভ্রান্তি বুঝার জন্য বহু দলীল প্রমাণের প্রয়োজন নেই। সাধারণ মুসলমান যে স্স্থ্যু মস্তিস্কের অধিকারী, একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারবে এগুলো বিধর্মীদের মনগড়া মতবাদ। যা মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস করার জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর তার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে মুসলমান নামক কিছু মূর্খ ভণ্ডপীর। পথভ্রষ্ট হচ্ছে তাদের দ্বারা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ সরলপ্রাণ মুসলিম জনতা। এরা সবই বাহাত্তর দলের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এসব আকীদা রাসূল স. এর সুন্নাত ও জামা‘আতে সাহাবার মাপকাঠিতে পড়ে না; বরং বহু ক্ষেত্রে ন্যূনতম মুমিন থাকাও সম্ভব নয়। অর্থাৎ এসব আকীদা পোষণকারী “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” হওয়া দুরের কথা মুসলমানের গণ্ডিতে থাকতে পারে কি না তাও প্রশ্নবিদ্ধ।

লিখেছেন-
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×