হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সাথে একবার এক অবিশ্বাসী আল্লাহর অস্থিত্ব নিয়ে বিতর্ক করছিল । বক্তব্যের এক পর্যায়ে হযরত আলী অবিশ্বাসীকে বললেন-ধরে নিলাম তোমার কথাই সত্য( নাউযুবিল্লাহ ),আল্লাহ নেই;কিয়ামত-দোযখ-বেহেশত সবই মিথ্যা। তোমার কথা সত্য হলে আমিও বাঁচলাম, তুমিও বাঁচলে। যেহেতু দুনিয়াতেই সব শেষ ; হিসেব কিতেবের ল্যাটা চুকে গেল মৃত্যুর সাথে সাথেই।
আর যদি আমার কথাই সত্য হয় - যদি মৃত্যুর পরে আবার ফিরিয়ে আনা হয় আমাকে, যদি হিসেব চাওয়া হয় দুনিয়াবি জিন্দেগির;তাহলে আমি বাঁচলাম ,কিন্তু তোমার বাঁচার উপায় কি ?
মায় য়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লা লাহু, ওয়ামায় য়ুদলিলহু ফালা হাদিয়া লাহু ...
আল্লাহ যাকে পথ দেখান কেউ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারেনা ,যার নসিবে বিপথগামিতা আছে তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না । এটা আল্লাহর বিধান । এখানে বিদ্যা অচল, যুক্তি ক্রিয়াহীন।
আমার আপনার দুনিয়ায় আগমণ প্রক্রিয়াটা ভাবুন একবার ।
ইন্না খালাকনাল ইনসানা মিন নুতফাতিন আম শাযিন -নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র বিন্দু থেকে(দাহর:০২)।
এটা আল্লাহর ইচ্ছা। এখানে বিদ্যা অচল, যুক্তি অচল।
কেউ একজন আষ্ফালন করছিল - জান আমি কে?
ক্ষমতাধর বলে কথা। সবাই লা জওয়াব।
ঠোঁট কাটা একজন বললেন- হাঁ, আমি জানি আপনি কে ;
আপনি আপনার বাবার প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে আপনার মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে তার পেটে ঢুকেছেন । ওখানে প্রায় নয় মাস অখাদ্য খেয়েছেন । তারপর আপনার মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে দুনিয়ার আলো বাতাসে এসেছেন ।
আপনি বিছানায় হেগে মুতে একাকার হয়ে কান্নাকাটি করে অসহায়ভাবে বিছানায় শুয়ে থেকেছেন, আপনার বাবা মা বা কেউ একজন এসে আপনাকে পরিস্কার করে দেওয়ার পর আপনি বাবু সেজেছেন আবার। আপনি বড় হয়েছেন বড়দের ছায়ায়; আপনার বিদ্যা হয়েছে ; বুদ্ধি হয়েছে;আপনি নামজাদা হয়েছেন ; মানুষ হয়েছেন এবং সাহেব সেজে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন আপনি কি না কি হয়ে গেছেন।কিন্তু আপনি এখনো পেটে বহন করছেন মলমূত্র । প্রতিদিন আপনার মলমূত্র আপনি নিজেই পরিষ্কার করেন ; আপনার অপারগতায় কেউ ওসব পরিষ্কার করার দায়িত্ব পেলে নাক মুখ চেপে নিতান্ত অনিচ্ছায় কাজটা করবে -যত টাকাই আপনি দিননা কেন । আপনি যতই ক্ষমতাধর হোন না কেন মৃত্যুর হাত থেকে আপনার নিষ্কৃতি নেই । এবং আপনার মৃত্যুর পর আপনার আপনজনরা আপনার লাশটা আদর করে ঘরে রেখে দেবেনা, গ্রামের কোণায় কবরস্থানে রেখে আসবে; সেটাও ভাগ্যের ব্যাপার- কেউ কেউ তো বাঘ-হাঙ্গর-কুমিরের পেটেও যায়।
ক্ষমতাধর আর কথা বাড়ান নি।
... ওয়ামা উতিতুম মিনাল ইলমি ইল্লা কালিলা-তোমাদেরকে কোন জ্ঞানই দেওয়া হয়নি, যৎসামান্য ব্যতীত ...( বনী ইসরাঈল:৮৫)এটাও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা; যেখানে যুক্তি তর্ক অকেজো ।
বিদ্যার গরমে অনেকেই নিজেকে মহা কিছু ভেবে বসে আছি।জ্ঞান সাগরের বেলাভূমিতে কেবল নুড়ি পাথরই কুড়িয়ে গেলাম - বলেছেন নিউটন; যিনি কিনা এ যাবতকালের অন্যতম বিজ্ঞানী।
হাঁ, আমরা তুচ্ছ নই । জ্ঞান কম হওয়া সত্ত্বেও , শারীরিক গড়নে ছোটখাটো হওয়া সত্ত্বেও, ষাট-সত্তর-আশি-নব্বই এর স্বল্পমেয়াদি জিন্দেগি নিয়ে দুনিয়ায় আসা সত্ত্বেও আমরা সম্মানিত জাতি -
ওয়ালাকাদ কাররামনা বনী আদামা ওয়া হামালনাহুম ফিল বাররে ওয়াল বাহরে ওয়ারাজাক নাহুম মিনাত তাইয়িবাতে ওয়া ফাদ্দালনাহুম আলা কাছিরীম মিম্মান খালাকনা তাফদীলা- আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি; স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দিয়েছি;দিয়েছি পবিত্র রিজিক; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টির অনেক কিছুর উপর ( বনী ইসরাঈল:৭০)।
লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানি তাকবীম , ছুম্মা রাদাদনাহু আসফালা সাফিলীন- আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছি; অত:পর তাকে করেছি হীন থেকে হীনতম (আত ত্বীন:০৪-০৫)।
শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পাওয়া সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্ট মানুষ কেন যেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখতে ইচ্ছুক নয়।
আসল প্রভুকে ভুলে গিয়ে , নকল সব প্রভুর দাসত্বে নিজকে বন্দি করছে মানুষ । আদি অকৃত্রিম দুশমন শয়তানের খপ্পরে পড়ে ভুল রাস্তায় হাটা মানুষ মজে আছে দুনিয়ার মজায় ।
ইন্না হাদায়নাহুস সাবিলা , ইম্মা শাকিরাও ওয়া ইম্মা কাফুরা-নিশ্চয় আমি পথ দেখিয়েছি, এখন সে শোকর গোজার বান্দা হোক কিংবা অস্বীকারকারী হোক ( আদ দাহর:০৩) ।
যালিকাল য়াওমুল হাক্কু ফামান শা আ-ত্তাখাজা ইলা রাব্বিহি মা-আবা-এই দিবস সত্য, যার ইচ্ছা সে তার প্রভুর শরণাপন্ন হোক (আন নাবা:৩৯)।
ভাই আমার! একটু অবসর নিন ব্যস্ততা থেকে।একটিবার নিজেকে নিজের মুখোমুখি করুন। বিশ্বাস করুন পৃথিবীটা আসলেই পান্থশালা । কেন এত হানাহানি?আমার আপনার বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষ একসময় ছিল এই দুনিয়ার আলো হাওয়ায়।তারা এখন কোথায়? আমি আপনিও একদিন থাকবোনা,এটা উলঙ্গ সত্য। যত সাহেব বাবু সেজে থাকি, যতই দণ্ড মুণ্ডের কর্তা হই একদিন মৃত্যুদূত আসবেই।যেহেতু মরতেই হবে তাহলে প্রস্তুতি নিব না কেন?কেন মহাপ্রতারকের খপ্পরে পড়ে নিজের অনন্ত জীবনকে অনন্ত দু:খের জাহান্নামে সঁপে দেব ?
ভাই,আখিরাতের জীবনে নিজের বোঝা নিজকেই বহন করতে হবে । ...ওয়ালা তাজিরু ওয়াজিরাতান বিজরা উখরা ( আনআম :১৬৪)।
ওয়ামায় য়ুতিয়িল্লাহা ওয়া রাসুলাহু ফাকাদ ফা-জা ফাওজাম মুবি-না - যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করলো সে মহা সাফল্য অর্জন করলো( আহযাব:৭১) ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪২