এক ডাকাত নির্জন মরুদ্যানে নিরীহ পথচারীর প্রতিক্ষায়।
প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে তার চোখের সামনে ঘটতে থাকা একটি ঘটনার প্রতি তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
একটি বুলবুলি পাকা খেঁজুর ঠোঁটে নিয়ে বার বার একটি গাছের কোটরে আসা যাওয়া করছে ।
এত খেঁজুর পাখিটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ?
কৌতুহলী ডাকাত সর্ন্তপণে পাখিটাকে অনুসরণ করে আবিষ্কার করে গাছের কোটরে একটি অন্ধ সাপ ।
সাপটি হা করে আছে আর বুলবুলি পাখিটা একটি একটি করে খেঁজুর এনে অন্ধ সাপের মুখে তুলে দিচ্ছে।
হৃদয় চক্ষু খুলে যায় ডাকাতের।
যে আল্লাহ্ অন্ধ সাপকে পাখির মাধ্যমে রিজিক পৌছাতে পারেন সে আল্লাহ্ র বান্দা হয়ে আমাকে কেন ডাকাতি করে রিজিক যোগাতে হবে ?
হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম ছিলেন দুনিয়ার তাবৎ মানব দানব পশু পাখির রাজা ।
তিনি একবার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর সব প্রজাকে একবেলা দাওয়াত খাওয়াবেন।
দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতির পর ডাক পড়লো সব প্রজার , মানব দানব পশু পাখি হাঙ্গর কুমির সবাই হাজির।
সব খাবার এক জায়গায় জড়ো করা।
হুকুম এলো খাবার পরিবেশন করা হোক।
তো হুকুম পাওয়া মাত্র সাগর পারে জড়ো করে রাখা সব খাবার বিশাল এক তিমি এক গ্রাসেই গলাধকরণ করে ফেললো।
এদিকে সবাই বিষ্ময়ে বিমূঢ় ।
এতো এতো মানব দানব পশু পাখি কেউ এখনো খায়নি অথচ তিমির এক গ্রাসেই সব শেষ।
তিমির জবান খুলে গেল -
আমার আল্লাহ্ আমাকে এমন খাবার দিনে দু'বার খাওয়ান ।
বিশ্বে প্রাণীর সংখ্যা কত ? নেটে সার্চ দিতেই প্রথম তথ্যটা এরকম-
মে বি ফ্রম টু মিলিয়ন টু এস ম্যানি এস ফিফটি মিলিয়ন কাইন্ডস অব এনিমেলস এলাইব টুডে ...
সর্ব নিম্নটাই ধরলাম ।বিশ লক্ষ প্রজাতি এখন বিশ্বে বাস করে । প্রতিটি প্রজাতির সংখ্যা কত ? কল্পনা করা যায় ?
মানুষেরটাই ধরি । এ মূহুর্তে পৃথিবীর জনসংখ্যা কম বেশি সাতশত চল্লিশ কোটি ।
একজন মানুষের দৈনিক খাদ্য চাহিদা কত কেজি?
একটি হাতির দৈনিক খাদ্য চাহিদা কত মন?
একটি তিমির দৈনিক খাদ্য চাহিদা কত টন?
একটি পিপড়া কি খেয়ে বাঁচে ?
বিশ লক্ষ প্রজাতির দৈনিক খাদ্য চাহিদা কত টন ? বিশ লক্ষ প্রজাতি দৈনিক কত পদের খাবার খায় ?
প্রশ্নগুলো একবার নিজেকে করে দেখুনতো ?
আমার মালিক এক কথায় উত্তর দিয়ে দিয়েছেন-
ওয়ামা মিন দাব্বাতিন ফিল আরদি ইল্লা আলাল্লাহি রিজকুহা- ভূ পৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন কোন প্রাণী নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ্ র নয়। হুদ-০৬ ।
এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই ।
গল্পটার সাথে শেখ সাদির নাম জড়িয়ে আছে।
তিনি একবার উদোম পায়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন সাথে এ আফসোস নিয়ে- আল্লাহ্ ! তুমি আমাকে এতটা অর্থকষ্টে রেখেছ , একজোড়া জুতো কেনার সামর্থও আমার নেই ।
এরকম ভাবতে ভাবতে কিছুদূর এগুতেই দেখেন একজন খোঁড়া লোকও মসজিদের দিকে চলেছেন ।
বিবেক চক্ষু খুলে যায় তাঁর। কিছুক্ষণ আগে আফসোস করা মুখ দিয়ে বেরোয় শুকরিয়া-
আল্লাহ্ ! তোমাকে ধন্যবাদ; তুমি আমাকে দুটি সুস্থ পা দিয়েছ; দিয়েছ একটি সুস্থ শরীর।
অন্য একজন সুফির কাছে এক অনুরক্ত অভাব নিয়ে অনুযোগ করছিল।
তিনি ভক্তকে বললেন আচ্ছা তোমাকে যদি দশ লাখ টাকা দেওয়া হয়-বিনিময়ে চাওয়া হয় তোমার চোখ দুটি; তুমি কি রাজি হবে ?
প্রশ্নই আসে না ।
আচ্ছা আরো দশ লাখ টাকার বিনিময়ে তুমি কি হাত দুটো দেবে ?
কী বলছেন এসব ?
আরো দশ লাখ টাকা পা দুটোর বিনিময়ে !
হুজুর এসব আবোল তাবোল শুনতে আমি এখানে আসিনি ।
বাছা আমার ! আশে পাশে তাকিয়ে দেখ-অন্ধ,খোঁড়া, প্রতিবন্ধী আদম সন্তানের অভাব নেই ; তুমি যেমন লাখ টাকায়ও তোমার অঙ্গ বেঁচতে রাজি নও তেমনি সে অঙ্গ পাওয়ার জন্য লক্ষ কোটি খরচ করতেও রাজি অনেক আদম সন্তান; তারপরও বলছ তুমি গরিব !
ভক্ত নিশ্চুপ।
একলিটার পানি কিনতে হলে তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা লাগে। স্হান ভেদে আরো বেশি।
একবার ভাবুন তো এ জীবনে যত পানি আপনি ব্যবহার করেছেন বা পান করেছেন সব যদি টাকা দিয়ে কিনতে হতো তাহলে আপনার কত টাকা ব্যয় হতো ?
শ্বাস কষ্টে পতিত রোগী মেডিকেলে গিয়ে যখন শ্বাস বা অক্সিজেন কিনতে টাকা খরচ করেন তখন বুঝতে পারেন কত লক্ষ কোটি টাকার অক্সিজেন তিনি এতদিন বিনামূল্যে ভোগ করেছেন ।
একটু মাথাব্যাথা , একটু জ্বর, হাল্কা ঠাণ্ডা , ছোট্ট একটা হোঁচট কিংবা সামান্য মশার কামড় বুঝিয়ে দেয় সুস্থতা কত বড় সম্পদ- যেটা কিনা আমি আপনি বিনা দরখাস্তে পেয়েছি ।
আমার মালিক কত সুন্দর করেই না বলেছেন-
কুল লাও কানাল বাহরু মিদাদান লিকালিমাতি রাব্বি লানাফিদাল বাহরু কাবলা আন তানফাদা কালিমাতু রাব্বি ওয়ালাও জি-না বিমিছলিহি মাদাদা - বলুন আমার প্রভুর কালিমা(প্রশংসা) লিখার জন্য সমুদ্রেরে সব পানি যদি কালি হয়, নি:শেষ হয়ে যাবে সে সমুদ্র;এমনকি এর সাহায্যার্থে এরূপ আরো সমুদ্র আনা হলেও -১০৯ আল কাহাফ ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৬