বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা মানব পরিবারে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস অতীতের চেয়ে বর্তমানে অধিকতর জরুরি হয়ে পড়েছে।কারণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত মানুষকে ধ্বংস করে ফেলছে। খবরের কাগজে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো যদি আংশিকভাবেও সত্য হয়,তবে আমাদের নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের সমাজ মানসিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সুস্থ নেই,আমরা স্বস্তিতে নেই,আমারা শান্তিতে নেই। জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন কাঠামো গড়ে তুলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও মানুষের পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠছে না, মানুষ ক্রমেই পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সন্ত্রাস সহিংসতা, চুরি- ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ ইত্যাদির কারণে আমরা সবাই শঙ্কিত, আতঙ্কিত। আমরা রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারিনা।জানমালের নিরাপত্তার অভাব তো আছেই, উপরন্তু আমাদের মানসম্মান নিয়ে বাঁচার নিশ্চয়তারও অনেক অভাব আছে।
সমাজের নেতৃবর্গ,সরকার, পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চেষ্টার ত্রুটি করছে না, তথাপি পরিস্থিতি যেন দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। সমাজে মিথ্যাচার, ঘুষ দুর্নীতি আগাছা পরগাছার মতো বিস্তার লাভ করছে।অপরদিকে আনুষ্ঠানিক ধর্মগুরুদের প্রচার- প্রচারণাও শেষ নেই। নীতিকথা ও ধর্মকথার প্রচার খুব জোরেশোরে চলছে, ধর্মীয় পুস্তক পুস্তিকায় বাজার ছেয়ে গেছে, তথাপি মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ জাগ্রত হচ্ছে না, সমাজ রূপান্তরের প্রক্রিয়া ভালোর দিকে যাচ্ছেনা। রাস্তাঘাটে যখন দেখতে পাই অসংখ্য কলঙ্কসার ভিখেরি, ফুটপাতে শায়িত বা ঘুমন্ত নেশাগ্রস্ত যুবক-যুবতী, পুষ্টিহীনতার শিকার রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে শুয়ে থাকা অসংখ্য ছিন্নমূল অসহায় নারী ও শিশু, তখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে- এদের ভবিষ্যত কী? এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? সমাজ নয় কি? আমরা নই কি?
অথচ টেলিভিশনের পর্দায় সবকিছুই যেন ঠিকঠাক, দেশ যেন ইতোমধ্যেই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে।
এতসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি?
হয়তো জ্ঞানী গুণীরা এই বিষয়ে নানান ধরনের মতামত/পরামর্শ ব্যক্ত করে গেছেন ঠিকই , কিন্তু আমরা কতটুকুই বা শ্রদ্ধা রাখি তাদের পরামর্শের প্রতি?