somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোতিষীর মৃত্যুদণ্ড পাওয়াই উচিত!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জটলা পাকা মানুষগুলির মধ্যমনি চুলে জটপাকা ঐ তেজস্বী বৃদ্ধটার জন্য পিশাচের মত রক্ত-ক্ষুধা ছাড়া আপাতত মস্তিস্ক আর কিছুই বিবেচনা করতে পারছেনা । খুনটা হবেই; মানে করতে হবেই ! বিকল্প নেই, হবেও না আর । যে অপরাধ তাতে মৃত্যুদণ্ডই তার প্রাপ্য এবং তা পুরোপুরি ন্যায্য । কী হবে এই খুনটা হলে ? পাল্টা মৃতুদণ্ড ! হাসি পায় এই নিস্তব্ধ রাতে । সে হাসির প্রতিধ্বনি কেমন ভুতুরে হয়ে উড়িয়ে দেয় নিশাচর কিছু বাঁদরকে ! পাল্টা মৃতুদণ্ড তো তার অনেক আগেই হয়ে গেছে । এখন সেই আমি জীবন্মৃত ! শুধু মাত্র ঐ গণকটার জন্যেই । যার গোঁফের কারণে ঠোট দুটোই ঠিকমত দেখা যায়না সে আবার অন্যের ভবিষ্যত কীভাবে দেখে এটাও একটা রহস্য । ওর বোঝা উচিত ছিল এই হাতটা দেখে তার বিদ্যের বাহাদুরি দেখানো খানিক সময়ের জন্য চেপে যাওয়াই ভাল হবে-অন্তত একটা অপমৃত্যুর হাত থেকে বাচতে । বাড়িতে কে কে থাকতে পারে ওর ? তাদের অসহায়ত্ব কি খুব চরম ? বুড়োর নিজেরই এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল যে তার অবর্তমানে এরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে । অন্তত আমার হাত দেখার পরে ভবিষ্যদ্বাণী করার আগ মুহুর্তে বিশেষভাবে আরেকবার ভাবাই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ । ওর পরিবার নিয়ে চিন্তা করে লাভটা কী-পৃথিবী কারো জন্যেই তো কখনোই থেমে থাকেনি আর থাকবেও না । গতি একটা হবে ।

যখন মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলাম, তখনই তো একবার সেই তো বলেছিল – বালক, তুমি স্ট্যান্ড তো করবেই ! আমার মেধা-তরবারির ঝলকানি মনে হয় একটা খোপ থেকে বেরিয়ে এসে এমনভাবে তাকে শাসিয়ে দিয়েছিল যে, সে নিমিষেই বুঝে গিয়েছিল । সেই কল্পিত তরবারিটাই আজ তার মৃত্য পরোয়ানা জারি করা দেবদূত ! আমি স্ট্যান্ড করলামই বটে ! প্রায়ই তার জটপাকা চুলগুলো ভেসে আসতো মনের চিত্রাকাশে । যে এতকিছুর খবর বলে দিতে পারে সে তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনা কেন । অন্তত চুলের জটতো ছাড়াতে তো পারবে ! নাকি করেনা ইচ্ছা করেই । সেই ইচ্ছাটা জন্মেই বা কোথা থেকে ? নিজেকে সুন্দর দেখতে কে না চায় ? আর স্বেচ্ছায় অবয়বে কালিমা লেপন ! অবাককরা কাণ্ড ! ছেড়া কাপড়, তালি দেয়া ঝুলি, জটাচুল, অনবরত উদোম রাখা বিশ্রী রকমের নোংরা পা, দিনের পর দিনের গোসল না করা আরো ..... ওয়াক থু ! না, খুনটা করলেই কেবল এর একটা বিহিত হবে ।
প্রায় বছর তিনেক পরে আবারও দেখা ! হাত দেখালাম । ও বলেছিল, আমি নাকি সীমা ছাড়িয়ে যাব অবাধ্যতায় ; বাবা আর মাকে অসম্মান আর অপমান করার ক্ষেত্রে ! সবগুলো লোম একসাথে খাঁড়া হয়ে গেল, চোখদুটো বেশ বড় বড় হয়ে গেল ! কপালের চামড়া কুঁচকেও গেল আমার ! বলে কী ! অসম্ভব ! মিথ্যা এ সবকিছু । প্রতিদিন বাহির থেকে এসে ধুলি-মাখা ঠোটে যে মাকে চুম্বন করে আদরের পরশ পাই, তার সাথে গলা উঁচিয়ে কখনো আমিই নাকি ........ ! ধুত্তুরি, ভুয়া গনক ! তাহলে স্ট্যান্ড করার ব্যাপারটা ? আরে ওটা আন্দাজে ঢিল মারছে ! মনকে প্রবোধ দিই ! কিন্তু অবচেতন মন যেন দিনের পর দিন ঐ শয়তান গণকটার কথায় সায় দিতে লাগলো । ও কি আসলে গণক নাকি ....... শয়তান ! আরও ভাবলাম, রাতে রুমের লাইট নিভিয়ে দিয়ে, শশ্মানে অমাবস্যায় একা একা বসে । কেন জানি আমার কাছে ধরা দিল – সে আসলে মানুষ নয় , কোনভাবেই নয় । এবং সে আমাকেও রুপান্তরিত করছে একটা আস্ত শয়তানেরই সাগরেদে । কারণে অকারণে মা’র সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করলাম ! তার চাইতে তীক্ষ্ণ তীরের মত বাণ । পক্ষাগাত-গ্রস্ত মা বিছানায় থাকল প্রায় বারটা বছর । অভাবের তাড়নায় নিজে খেয়েও মার কোন খোঁজ নেইনি । আইসক্রিমের ফ্যাক্টরির আয়ে এক হালি সন্তান আর সংসার কলকাতায় কী যে বীভৎস জীবন ! মা’র পেটের চামড়া পিঠের সাথে লেগেই গিয়েছিল শেষ দিকে । প্রথম দিকে একটু একটু খোঁজ নিতাম কিন্তু দেখতাম মনটা তখনও আবেগহীন । মায়ের সাথে কথা বলার সময় দীর্ঘ হলেই আবারো তা মাকে আঘাত করত পাহাড় থেকে বেয়ে আসার মত পাথরের মত ! মাকে ছেড়ে আসলেই ঐ বুড়োটার ভবিষ্যদ্বাণী মনে পরে ! নাকি অবচেতন মন বা বৃদ্ধ তা মায়ের সাথে সাক্ষাতের সময়, কথাবার্তার সময় ঐ ভবিষ্যদ্বাণীটা আমায় দিয়ে প্রতিফলিত করে । শেষে মা যখন ইহলৌকিক জীবন আর ছেলের কুৎসিত আচরণ উভয় থেকে বিদায় নিল তখনই সিদ্ধান্তে আসলাম – জ্যোতিষীর মৃত্যুদণ্ড পাওয়াই উচিত ! ঘন জঙ্গলের যে কুটিরে ওর বসবাস ছিল সাধনার জন্য, ওটাতে যেদিন গেলাম খুন করার জন্য সেদিনও অমাবস্যা ! ভয় ডর নেই যেমন তেমন নিজেই তো অমাবস্যা আমিও তখন ! আমাকে দেখে বুড়ো বলল, তুমিই আমার স্থলাভিষিক্ত !
- মানে ?
- আমিও আমার মাকে এমন করে পৃথিবী থেকে নরপশুর আচরণ করেই বিদায় দিয়েছি !
- আমাকে দিয়ে কেন তা করালে ?
- শয়তানী খায়েশ আমার ! ইচ্ছে পূরণ !
- মরতে যাচ্ছ , জানো ?
- হুম, এভাবে মেরেওছি এক শয়তানকে !
একবার এক খুনি গাড়িতে পাশে বসে গল্প করছিল । চাকুটা গলার নিচ দিয়ে বাম পাশে একটু চাপ দিয়ে চালালেই মৃত্যু নিশ্চিত ! আমিও চালালাম !

পরের দিন মায়ের কবরের পাশে দাড়ালাম । কাঁদলাম , বৃষ্টি নামলো অঝোরে ! মায়ের হাতের শেষ চিঠিতে লেখা পেলাম, “ বাবা, তোর সুস্থতা কামনা করছি, নিজের মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও ! তুই সুস্থ হবিই ! আমার দোয়া ও আশীর্বাদ থাকলো ।” আমি কি তাহলে অসুস্থ ছিলাম ? কতদিন ?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×