somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ নীল, না নীলা ?

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আচ্ছা নীলা, তোমার নাম ‘নীলা’ ই হল কেন?
বাবা রেখেছে তাই। বাবার নীল রঙ নাকি খুবই পছন্দের ছিল।
কোন্‌ নীল?
সে আবার কেমন প্রশ্ন? আকাশের নীল, সাগরের জলের নীল।
শুধু এই দুটো নীলের জন্যেই?
ভারি মুশকিল হল তো? মানুষ কি দুনিয়ার সব নীল গণনা করে তার মেয়ের নাম নীলা রাখবে নাকি?
তা জানিনে, তবে তোমার নামের বিশেষত্বটা তো একটু গভীরভাবেই তোমার জানা থাকলে ভাল হত।
তুমি তো আমার স্বামী, তুমিই বল দেখি দুই একটা নীলের নাম।
বলব? মন খারাপ করবে না তো?
কেন? তুমি কি ভয়ংকর কিছু বলবে নাকি?
না, স্বাভাবিক কিছুই বলব, কিন্তু তুমি যদি ভয়ংকরভাবে নিয়ে নাও। অনেক সময় মানুষের নিয়ে নেওয়ার মধ্যে থেকেই যে অনেক কিছুই ঘটে যায়! ধরো, প্রথম যেদিন তুমি আমার রুমে গিয়েছিলে, সেদিন দিয়াশলাই দেখে তুমি ভেবেই নিয়েছিলে যে, আমি সিগারেট খাই। কিন্তু আমি তো ওটা শুধু মোমবাতি, কয়েল আর গ্যাস স্টোভ জ্বালানোর জন্যই ব্যবহার করতাম। ম্যাচ জিনিসটা কিন্তু স্বাভাবিকই ছিল বা আরো খোলাসা করে বললে গেলে, নিরপেক্ষই ছিল। তুমি ওটাকে নিজের মত করে নিয়েছিলে, একটা ধারণা বানিয়ে নিয়েছিলে।
তার মানে আমি কি সবসময় নেগেটিভ ধারণাই করি?
না, সেটাও বলিনি। বলেছি নিরপেক্ষ হও আগে। তারপর তলিয়ে দেখো, যতগুলো পার্শ্ব আছে সবদিক থেকে। আপনা আপনি তখন পজেটিভ – নেগেটিভ বের হয়ে আসবে।
আচ্ছা যাও, তাই হলাম। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। এবার বল একটা নীলের নাম।
চরম বিষধর সাপের কামড়ে আহত মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের মুখেও কিন্তু নীল রঙ ভেসে উঠে! একটা অদ্ভুত নীল! তাকিয়ে থাকতে সাহস হয় না।
আমি কি তবে গোখরাও হতে পারি? আমার বিষে কে নীলাভ হবে তাহলে? তুমি ?
এই যে, তুমি কিন্তু কথার বরখেলাফ করছ। নিরপেক্ষ থাকছ না।
স্বাক্ষর, কে বলেছে তোমায় - মানুষ নিরপেক্ষ হতে পারে কখনো। কখনোই পারে না। মানুষ সবচাইতে পক্ষপাতিত্ব করে নিজের প্রতি, তারপর প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি। এজন্য সে সারা দুনিয়াকে ঠকায়, স্বজনপ্রীতি করে।
আমরাও করছি অনবরত, না?
হুম, স্বাক্ষর।
দেখো নীলা, বিছানায় অর্ণব কত সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে, মুখটা কত নিষ্পাপ সুন্দর! আচ্ছা নীলা, তুমি তো অর্নবের মা, আমার জীবনসঙ্গিনী। ধরো, তুমি একটি দানা পেলে খাওয়ানোর জন্য সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে, যে দানা ভাগ-জোখ করা যাবে না। যে খাবে সেই বাঁচবে, অপরজন চলে যাবে। কাকে খাওয়াবে?
আমি যে গণিতে বরাবরই কাঁচা, স্বাক্ষর।
জীবনের গণিত এড়িয়ে সামনে এগোনো যায় না নীলা। কষতেই হয়, চাও বা না চাও। ভুল হলে শূন্য, সামনে তখন আরো জটিল গণিত এসে উপস্থিত হয়।
শোনো স্বাক্ষর, সন্তান, স্বামী, এদেরকে ভালোবাসার কোন পরিমাপক, সংজ্ঞা, বিশেষণ নেই। আর ওই তো আমার জগত জুড়ে একজন।
সত্যিই তাই? ওকে ভালোবাসার কোন সংজ্ঞা নেই? ওর কিছু একটা হলেই আমাদেরই সজ্ঞাহীন হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, না?
হুম।
আমার কেন জানি মনে হয়, আমার আরো সন্তান আছে, নীলা।
সে কেমন কথা গো? সেটা আবার কীভাবে?
গাঁয়ে। আরো দুটো সন্তান। বাবা আর মা।
হু।
কেমন হুম? বাবা-মা শুধু হু’ই, নীলা?
না, তা নয়। আমি তোমার কথায় সায় দিলাম , তাই হু বললাম।
সায় কিন্তু মানুষ অনেক সময় উদাসীনভাবেও দেয়। যেন সে আছে, তবে অতটা তীব্র ভাবে নয়।
তুমি কি বলছ, আমি বাবা-মা’র জন্য ভাবি না। আমি তাদের জন্য কিছু করি না।
বাবা-মা রাতে কী খেয়েছ - খোঁজ নিয়েছ আজ?
না, আমি তো এক সপ্তাহ পরপর তাদের খোঁজ নেই। আর তুমিও তো নিয়মিত খোঁজ নাও না? দু’ দিন পরপর নাও।
সে জন্যেই তো বলছি।, তুমি পারতে? আমি পারতাম? ঠিক এক সপ্তাহ পরপর আমার এই অর্নবের খোঁজ করতে নিতে যে – সে খেয়েছে কিনা।
ও আর বাবা-মা এক হল?
আলাদা হল কীভাবে?
ও ছোট, আর বাবা-মা পূর্ণবয়স্ক। হাটা-চলা তো বেশ করতেই পারে এখনও। তাদের আর কোন ভবিষ্যত নেই সামনে। আর ওর সামনে কত ভবিষ্যত। ওকে মানুষ করতে হবে, ও কত বড় হবে!
তোমার দুটো সন্তান যদি থাকত, একটি যদি জন্মান্ধ হত, সাথে পঙ্গুও হত, তার সাথে বধির আর বোবা হত – যার কোন ভবিষ্যত নেই – তার সাথেও কি তুমি এটাই করতে নীলা?
কী বলছ তুমি? সেও আমার সন্তানই হত, অর্ণবের মতই! দুটোর শরীরেই তো তোমার আমার রক্ত! দুটোই যে নাড়ি ছেড়া ধন হত!
ঠিক সেই ভাবেই বাবা-মা আমার সন্তান নীলা। তাদের শরীরের রক্ত আমার শরীরে। এটাকে উল্টাও, তাহলে হবে আমার রক্ত তাদের শরীরে। তাদের শরীরের রক্ত আর অর্ণবের শরীরের রক্তের মিলনস্থল আমার দেহের রক্ত। ওরা সবাই আমার রক্ত! ওরা সবাই যে আমার সন্তান, নীলা!
জীবনে সবাইকে একসাথে সুখী করা যায় না, স্বাক্ষর।
হুম, ঠিকই বলেছ নীলা, আমার সকল সন্তান আর তোমাকেও তো একসাথে সুখী করতে পারব না কখনোই। তবে কি জান? সকল সন্তানকে একসাথে ভালবাসা যায়, আদর করা যায়, দু’ হাতের বিশাল বন্ধনে জড়িয়ে রাখা যায়!
মোবাইলটা নিয়ে স্বাক্ষর বিছানার কাছে গেল। ঝুকে পড়ে ঘুমন্ত অর্ণবের গালে একটা চুম্বন এঁকে দিল। এরপর মোবাইলে ডায়াল করল একটি নাম্বার যাকে সকালেও একবার ফোন করেছিল। রিসিভ হতেই সে বলল, মা! কেমন আছ? রাতে কী খেয়েছ আজ তোমরা?
কীরে বাপ, আজ যে আবার তুই ফোন কর্‌লি? কী হয়েছে রে বাবা? বউমার সাথে কিছু হয়েছে, বাবা?
কিছু না মা।
সে ফোনে কথা বলতে বলতে নীলার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবে, তুমি নীল, না নীলা?



নীল, না নীলা?

ফেরদৌস আলম
------

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:২৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×