নিজের ঠিকানায় চিঠি!
প্রিয় নিজ,
নিজের চাইতে প্রিয় কেউ হয়না। তুমি তো জান, খুব ভালো করে জান। মানুষ অপরের কাছ থেকে প্রথমত কী চায় ? ভালোবাসা চায়, কেন চায়, জানো ? নিজের জন্য। সবাই ভালোবাসা চায় – নিজের জন্যেই। সবাই চাই তাকে কেউ না কেউ বা সবাই অসধারণভাবে ভালোবাসুক। সে ভালোবাসার মধ্যে এতটুকু খাদ যেন না থাকে। তাহলে এবার বলতো, মানুষের নিজের চাইতে প্রিয় আর কেইবা আছে। যদি কারো থাকে, সে সত্যিই মহামানব। আমি বা তুমি মহামানব গোছের কেউ না। ও হ্যা, ভুলেই গেছি বলতে, কেমন আছ? তোমাকে চিঠি লেখার কারণ বহুদিন তোমার সাথে নিবিড়ভাবে মুখোমুখি বসে দুটো কথাই বলা হয়ে উঠেনা। মাঝে মাঝে কান্না আসে! কেন জানো? নিজের সাথে নিজের এই বোঝাপড়ার ঘাটতি দেখে, একজনের মাঝে আরেকজনের বসবাস থাকার পরেও এত আলোকবর্ষের দূরত্ব দেখে! মানুষ শুনলে হয়তো বলবে – ভাব ধরেছে। কেউ বলবে আধ্যাত্মিক কথাবার্তা! তুমি আমার মনের মানুষ, তুমিই আমার নিজ! লালনের কথায়, মনের মানুষের দেখা তো আজও পেলাম না। কত মারাত্মক কথা বলতো? একটা মানুষ এতটা সময় বেঁচে থাকল, তারপরেও নিজের সাথে নিজেরই দেখা হল না, কথা হল না, হল না ঠিকঠাক বোঝাপড়া!
আচ্ছা নিজ, তুমি আসলে কী চাও, বলতো? কীসে তোমার পরম শান্তি? কীসে তুমি সুখ-দুঃখের একদম উর্ধ্বে উঠতে পারবে? জানলে আমার জন্যে সুবিধে হত! তোমার কোন অভিযোগ আছে? তোমার চারপাশের মানুষগুলোর প্রতি? আকাশ, বাতাস, গাছপালা, নদী, পাখি – এদের কারো প্রতি? আচ্ছা, অভিযোগ থেকেও লাভ কী হবে? তোমাকে তো আমিই বুঝি না। সেখানে অন্যে তোমাকে বুঝবে - এটা তো আরো বেশি দুরাশা! তুমি যখন কাঁদ, কান্নার জলের টিপটিপ শব্দ আমার বুকের মাঝে পাহাড়সম হাতুড়ির আঘাতের মত লাগে! আচ্ছা, তুমি কাঁদলেও কি হালকা হতে পার? আমি পারিনা। এত কান্নার কী আছে? কান্না আসবে, আসবেই, এক সময় কান্নাও হয়তো ক্লান্ত হয়ে যাবে! বলবে, আমি অতটা দুঃখ বিলাসী মানুষের চোখের আশ্রয় হয়ে থাকতে পারব না।
তোমাকে একটা ঠুনকো আবদার করতে পারি? আমার কাছে ঠুনকো, তোমার কাছে সবচেয়ে কঠিন! তবুও আজ আমাকে করতেই হচ্ছে। পৃথিবীতে আবেগের কোন জায়গা নেই, মূল্য নেই। যেটা থাকে তার মধ্যে অন্য কিছুও জড়িত থাকে। আমার আবদার একটাই – নিজেকে ভুলে যাও! হ্যা, নিজেকেই ভুলে যাও! অন্যের মত হয়ে যাও, চারপাশে যে অন্যরা থাকে ঘনিষ্ঠ আঁধারের মত-তাদের মত হয়ে যাও। নিজের ইচ্ছা, স্বপ্ন, পছন্দ-অপছন্দ, রাগ-অভিমান, মেলা-মেশা, কথা-বার্তা, অভিনয় –সবই অন্যের মত করে নাও। তোমাকে কেউ বুঝবে না ঠিক, কিন্তু তুমি অন্যের মত হলে – তুমি অন্তত তাদের বুঝতে পারবে। প্রত্যাশা করো না কারো কাছেই। অন্যের প্রত্যাশাই যতটুকু পার, মেটাও। অন্যের চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখ, অন্যের হাত দিয়ে জীবনের যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ করতে শেখো। দেখবে ভুল হলেও ফুল মার্কস পাবে! মানিয়ে নাও, যতটুকু পারো। অন্যদের মত তোমাকেও চলতে শিখতে হবে। নইলে ঘরের কোণায় পচে মরবে, কেউ তোমার গলিত লাশটুকু ডাস্টবিনে ফেলে আসার মত উদারতা দেখাবে না। অন্যের মধ্য দিয়েই নিজের যত্ন নিও।
প্রিয় নিজ, সব অপ্রিয় দাবীগুলোই তোমাকে করে গেলাম, সব রুঢ বাস্তবতার দিকে আহ্বান করে গেলাম। সময় করে ভেবে নিও। ভাবার পরে মেনেও নিও। চিঠি লিখলাম কেন জানো? চিঠিতে হৃদয় যত প্রকম্পিত হয়, অনেক সময় সামনা-সামনিও সেটা হয়ে উঠেনা, যদি মনে জড়তা থাকে, যদি অভিনয়টা জানা না থাকে। আমি তো অভিনয় পারিই না। তুমিও। ভালোবাসা রইলো। তোমার চলার পথে আমায় যদি দরকার পড়ে, ডেকে দিও, আমি চলে আসব।
ইতি
--------------------------
তোমার নিজ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯