somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখক, হতেই কি চান?

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি জানি আপনি লেখক হতে চান। লেখক, নাকি জনপ্রিয় লেখক? নাকি বিশ্বখ্যাত লেখক? আপনার মনই হয়তো ভালো জানে। ফেসবুকে আমার বন্ধুসংখ্যা প্রায় ২২০০। এর মধ্যে ২০০০ জনই লেখক। তারা লিখছে, অনবরত। কারো কারো একদিনেই একটি মহাকাব্য হয়ে যায় প্রায় এক লক্ষ চরণ সংবলিত। রুদ্ধশ্বাস ঘন ঘন পোস্ট। একসাথে অন্তত দশটি গ্রুপে। তাদের পোস্টের নোটিফিশনে আমার নিজের জন্য প্রয়োজনীয় নোটিফিকেশনই চোখে পড়ে না। তবুও আমি কবি হতে ইচ্ছুক বা লেখক হতে ইচ্ছুক এমন কাউকেই রিফিউজ করিনা বন্ধু হতে, কারণ ইচ্ছাটা মন্দ নয়। সৃষ্টিশীল ও নিষ্পাপ ইচ্ছা। নিজের বলার মত কিছু কথা সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা। তাই কারো মনেই কষ্ট দিই না। কারণ সবারই রবীন্দ্রনাথ হওয়ার অধিকার আছে, আমার মতই।

লেখক হতে চাই! খুব রঙিন একটা স্বপ্ন! হুমায়ুন আহমেদের মত জনপ্রিয়তা হবে আমার, জীবনানন্দের মত বনলতা সেনের কবিতাই ছেয়ে যাবে একুশের মেলা। আহ্‌ ! ভাবতেই গা ছমছম করে উঠে। সত্যিই যদি......................। লেখক হতে হলে স্বপ্ন পুড়তে হয়। লেগে থাকতে হয়। এ পর্যন্ত ছ’ টা জাতীয় দৈনিকে আমি গত এক বছর ধরে লেখা পাঠাচ্ছি, কিন্তু ছাপানো হয়নি। আমি মনে করি, সে লেখাগুলো ছাপানোর যোগ্যই হয়নি বোধহয়। কিন্তু আবার পাঠাবো। আমি জানি জে কে রাউলিং এর কথা। কত নোংরা ভাবেই না প্রথমে প্রকাশকরা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। অস্বীকার করেছিল তার বই ছাপতে। ওরকম বই ছাপলে নাকি লোকসান গুণতে হবে তাদের। আর তার পরে? সেটি সবাই জানে।

লিখতে হলে ধৈর্য্য আপনাকে রাখতেই হবে, নদীর মত। জর্জ বার্নাডশ প্রথম তিন বছরে যা লিখেছিলেন তা নাকি কেজি দরেই বিক্রি করে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছিলেন। অদ্ভুত! তাই না? হয়তো এখন, যখন তখন টাকা থাকলে রঙিন মলাটে আপনার লেখা বইও বের হবে। দু একজন আপনাকে বাহবাও দিবে। কিন্তু লেখক মনে হয় হয়ে উঠে হবেনা আপনার। কারণ এমন লেখক এখন চালের ব্যবসায়ীরাও হচ্ছে। আমি সবাইকে বলছি না, বিশেষ করে যারা একেবারেই আমার মত নবীন লেখক বা কবি-তাদেরকেই বলছি। অবশ্য বড় কোন কবি বা লেখক যদি আপনার লেখা পড়ে বলে – তোমার লেখা পড়ে আমি পুলকিত হলাম। তাহলে টাকা দিয়েও এখনই বই বের করতে পারেন। তখন দেরী করাটাই হবে বোকামি। তবে আমার কাছে মনে হয় কি জানেন? যতক্ষণ পর্যন্ত অজান্তে নিজের লেখা নিজেই পড়ে না বলব – আহা! কী গভীর আর আবেগতাড়িত একটা লেখা পড়লাম! লেখকটা কে? একটু দেখি তো? – ঠিক তখনই নিজের একটা বই বের করা দরকার। বাসে উঠলাম, সিটে বসলাম, সামনের সিটে বসা মেয়েটিকে নিয়ে স্মার্টফোনে কবিতা লিখলাম –

মেঘ কালো, তবু অত কালো নয়
কয়লার কালো, কাঁকের কালো,
সেই যে তোমার কেশের মানানসই!

আবার বাস থেকে নামলেন, আরেকটা মেয়েকে হেঁটে যেতে দেখলেন। আবার আরেকটা কবিতা লিখলেন। পোস্ট দিলেন। কমেন্ট বক্সে ঢেউয়ের পরে ভূমিকম্প শুরু হল। কেউ একজন লিখেই ফেলল কমেন্টে – “আর পারছি না! এবার আপনার কবিতা থামান। হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।” আপনি বা আমি পরিষ্কার বুঝে ফেললাম-এতদিনে কবি হওয়ার স্বপ্ন আমার পূরণ হতে চলল বুঝি!

কবি বা লেখক হওয়া এতই কি সহজ? টি এস এলিয়টকে নিজের লেখা কবিতা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল পঁচিশ বছর বয়সের এক যুবক। উনি বলেছিল, “তোমার বয়স চল্লিশ হলে আমার কাছে এসো। তখনো যদি তুমি কবিতা লেখ, তাহলে আমার সাথে দেখা করো।” কেন এই কথা বললেন? কারণ ঝোঁকের কবি,লেখক এরকম বয়সে অনেকেই হয়। কিছুকাল পরে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। অপরিপক্কতা, হতাশা, লেখার কৌশল না জেনে লেখা, উদ্দেশ্যহীনভাবে লেখা-ইত্যাদির দরুণ এই তীব্র ঝোক-প্রবণ কবি-লেখকদের অকাল মৃত্যু ঘটে।

সবচেয়ে দরকারি কথাটা হল-যে লেখাগুলো আমরা লিখছি তার আগে আমরা পড়ছিই বা কতটুকু লেখা শেখার জন্য? এক নবীন ঔপন্যাসিকের বাসায় গিয়ে দেখা গেল তার ব্যক্তিগত কোন লাইব্রেরী নেই। ঘরের এক কোণায় যে গোটা বিশেক বই ছিল – সেগুলো শুধু তারই। জিজ্ঞেস করলে বলেছিল, ‘উপন্যাস লিখতে গেলে তো অন্য বই পড়ার কোন প্রয়োজন নেই! আমি তো এমনিতেই একমাসে একটা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারি!’ চিন্তা করুন এবার, কী মর্মান্তিক!

আপনি কি মনে করেন, এই যে অবাক করার মত লেখাগুলো বড় লেখকরা ঠিক এত সহজেই লিখে ফেলেছে? গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কোজ যে উপন্যাসের জন্য মূলত নোবেল পেয়েছিলেন-সেই ‘নিঃসঙ্গতার শতবর্ষ’ লিখতে তিনি সময় নিয়েছিলেন পাক্কা সাত বছর। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ সময় নিয়েছিল তিন বছর। ভালো লেখা দীর্ঘ সময় নেয়, ভাবনার আগ্নেয়গিরি তৈরি করে অনেক গভীরে, সেগুলো শক্তিশালী হতে হতে যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে, তখন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কলমের মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে এবং পাঠকের মনেও বিস্ফোরণ ঘটায় সেই লেখা! একটা ঘটনাকে বহুকৌণিক দিক থেকে দেখতে গেলে একটা নিরবিচ্ছিন্ন লম্বা সময় প্রয়োজন হয়, আর ঘটনাকে বহুকৌণিক দিক থেকে না দেখলে তাকে সাহিত্যের ছাকুনিতে বিশুদ্ধ করে, হৃদয়গ্রাহী করে উপস্থাপন করা যায় না। তাই সময় নিন, ভাবুন, আরো গভীরে যান। একটা লেখা অন্তত সাতবার সম্পাদনা করুন। একটা লাইনও এমনভাবে লিখার চেষ্টা করুন যাতে লাইনটা পড়ার পর পাঠক একটু হলেও ভাবে, কী অসাধারণ কথা! আরেক দিক দিয়ে চোখের পানি গড়িয়ে যাবে নিঃশব্দে!

এখন হতাশার কথা হল - আমাদের দেশের মত সাহিত্য অঙ্গনেও লেখা প্রকাশ বা বই প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা বাণিজ্যিক চাল শুরু হয়ে গেছে, সেই সাথে আছে স্বজনপ্রীতির মতও ব্যাপার-স্যাপার। যার সাথে যার পরিচয় ভালো, তোষামুদি ভালো, তার লেখাই পত্রিকা বা ওয়েবে প্রকাশিত হয়, অন্যদের নয়। কিন্তু সেটিও আমার আপনার জন্য ভালো। কেননা সেটা আমাদের জেদ বাড়াতে সাহায্য করবে, লেখা ভালো করতেও সময়গুলোকে কাজে লাগাবে। আর সকল দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির মধ্যেও কিছু অপ্রতিরোধ্য ভালো লেখাও তো প্রকাশিত হয়। সুতরাং লিখতে থাকুন, যতক্ষণ না লেখা অপ্রতিরোধ্য হয়, পাঠকের হৃদয়ভেদী হয়! আমার এ লেখাটা কারো জন্যেই উপদেশ বা পরামর্শ নয়। শুধু অভিজ্ঞতা বা অনুভূতির একটু ভাগাভাগি করে নেয়া বৈকি!

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×