somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেলানী হত্যায় এক আমেরিকান পিতার ফরিয়াদ (কপি পেস্ট পোষ্ট)

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের ফেলানী হত্যায় কাঁদছে এক মার্কিন পিতার হৃদয়। তিনি ওই হত্যার ছবি ও রিপোর্ট পড়ার পর আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন। ফেলানীর মাঝে খুঁজেছেন নিজের ১৫ বছরের মেয়েকে। ফেলানির পিতার কষ্টস্রোত ছুঁতে চেষ্টা করেছেন তিনি। তার নাম ফ্রাঙ্ক ডোমেনিকো সাইপ্রায়ান। দ্য গ্যাদারার ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। খোলা এক চিঠিতে তিনি ফেলানী হত্যার বর্বরতা তুলে ধরেছেন। লিখেছেন- আমিও একজন পিতা। একটি পরিবার আছে আমার। সেখানে আছে ১৫ বছরের একটি মেয়ে। সেই মেয়েই আমাকে ফেলানীর পিতার সঙ্গে আবেগের বন্ধনে বেঁধে ফেলেছে। তাই আমি নীরব থাকতে পারি না। আমাকে কথা বলতেই হবে- বলতে হবে ভারতের ইতিহাসে ফেলানীকে হত্যা এক দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়। একটি সন্তানের পিতা সব সন্তানের পিতা। সেই সূত্রে বাংলাদেশের প্রতিটি ছেলে, প্রতিটি মেয়ে শিশু আমার সন্তান। তিনি লিখেছেন- আমি জানি না, ফেলানীর পিতা ধনী না গরিব অথবা তিনি তার মেয়ের জন্য কি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আমি শুধু জানি একটিমাত্র বর্বর ঘটনা তার জীবনের সব সংগ্রাম, সব ভালবাসা এবং সচেতনতা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি জানি আমার এই দূরের বন্ধু যখন জীবিকার সন্ধান শেষ করে বাসায় ফেরেন তখন তার ছোট্ট মেয়ের কোমল হাতের স্পর্শ পান না আর। আর তা তাকে মনে করিয়ে দেয়, এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে দেবশিশুর মতো নিষ্পাপ মেয়েকে রক্ষা করার শক্তি তার ছিল না। ‘এ লেটার টু ইন্ডিয়া’ শিরোনামে লেখা ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন- আমাদের আমেরিকানদের মাথায় এক-একটি দেশ সম্পর্কে এক-এক রকম ভাবমূর্তি কাজ করে। আমাদের অনেকেই ভারতকে গান্ধীর দেশ মনে করেন। শান্তির দেশ মনে করেন। বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয়দের যেসব নিরপরাধ বাংলাদেশীকে বিশেষ করে ফেলানীকে হত্যা করার কথা আমি যতজনকে বলেছি তারা ব্যথিত হয়েছেন। ভারত সম্পর্কে আমরা আমেরিকানরা যে ধারণা পোষণ করি এ ঘটনা তার প্রতিচ্ছবি নয়। আমি জানি, বাংলাদেশ ও ভারত এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। ভারত দু’-এক মাসের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু তা কোন নিহতকে জীবিত করে দিতে পারবে না। মানবাধিকারে মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে, যখন তা হয় প্রতিবেশী দু’টি রাষ্ট্র তখন উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার দরকার পড়ে না। যারা সীমান্তে এমন হত্যাকাণ্ডে মদত দেয় ও যারা সংঘটিত করে তাদের এ কাজ নিঃসন্দেহে অপরাধ কর্মকাণ্ড, যারা এমন কাজ করে এবং যারা করায় তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত। নিরপরাধ নিহত শিশুদের মধ্যে ফেলানীই প্রথম নয়। ফেলানীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফ্রাঙ্ক ডোমেনিকো সাইপ্রায়ান ওই লেখায় একটি কবিতা যুক্ত করেছেন, যা মহাত্মা গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এতে তিনি এক পিতার অন্তরে ক্ষরণকে তুলে ধরেছেন মর্মস্পর্শী। তিনি লিখেছেন- বাংলাদেশ একটি বর্ণময় ও শক্তির দেশ। সেখানে সড়কের চিহ্ন-প্রতীকগুলো রঙিন। বিজ্ঞাপনগুলো রঙিন। আমাদের গাড়িগুলো রঙিন। এমনকি গ্যাস স্টেশনগুলো রঙিন। বাংলাদেশে নির্বাচনের সময়কার ছবিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মতো। সেখানে সবাই উজ্জ্বল। বাহারি পোশাক পরা। তিনি লিখেছেন- কবিতাটি পড়ে আমার সম্পাদক জানতে চেয়েছিলেন- আমার কি আরও কিছু বলার আছে কবিতায়। কয়েক বছর আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা ১৩ বছর বয়সী এক শিশুকে হত্যা করে। সমপ্রতি ১৫ বছর বয়সী ফেলানীকে মেরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। এসব নিয়ে আমি অনেকটা কাজ করেছি, রিপোর্ট পড়েছি। কিন্তু আমার সম্পাদকের প্রশ্নের জবাব দেয়ার ভাষা ছিল না আমার। আমার ছোট মেয়ের বয়স ১৫ বছর। আমার ছোট ছেলের বয়স ১৩ বছর। আমার জীবনে তারাই সব। তারাই আমার জীবনের রঙ। এ রঙে আমি নতুন করে সাজি। আমি জানি প্রতিটি মা-বাবাই তার সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগে থাকেন। জাতীয়তা, ধর্ম, বর্ণ, দল, সামাজিক শ্রেণী সবকিছুর উপরে থাকে মা হওয়ার আনন্দ, বাবা হওয়ার আনন্দ। এই একটি শক্তিই আপনার জীবনকে পাল্টে দিতে পারে। এটা সর্বজনীন এক পরিচয়ের সূচক। বিশ্বে আমরা যারা পিতা আছি, সাধারণ দৃষ্টিতে আমরা সবাই ভাই। তিনি লিখেছেন- আমি কল্পনা করি একজন বাংলাদেশী পিতার কথা, যিনি তার মেয়েকে সুন্দর করে সাজিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে যান। মেয়েকে বিয়ে দেন অন্য দেশের কোন পাত্রের কাছে। আমার কল্পনায় আসে, তখন ওই পিতার বুক কি কষ্টে ফেটে যায়। সাজানো, বেড়ে ওঠা মেয়ের দিকে তাকিয়ে তার কষ্টের যেন শেষ থাকে না। তারপর তুলে দেন জামাতার হাতে। কিন্তু একটি সীমান্তের কারণে ওই পিতা তার মেয়ের নতুন পরিবার, পরে নাতির মুখ দেখতে পারেন না। আমি কল্পনা করি ফেলানীর পিতার মেয়ের শৈশব। তাকে নিয়ে সংগ্রাম। তাকে নিয়ে স্বপ্ন। মেয়ের ভাল চেয়ে তিনি যে প্রার্থনা করতেন সব সময়। আমরা যারা পিতা সন্তান কত বড় হচ্ছে তা আমাদের মাথায় থাকে না। আমরা তাদেরকে সাত বছরের শিশু ভাবতে ভালবাসি। আমি ১০ বছর বয়সী এক কিশোরীর নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করি। ওই সন্তানও তার পিতার হাতকে নিরাপত্তার অবলম্বন মনে করে শক্ত করে ধরে রাখে। প্রতিটি পিতার মনের প্রার্থনা কি তা আমরা জানি। কিন্তু যখন কাঁটাতারের ওপর সন্তানের লাশ ওভাবে পড়ে থাকার বীভৎস দৃশ্য দেখি- তখন আমি এক পিতৃত্বকে দেখি, যিনি তার ১৫ বছর বয়সী মেয়ের নিরাপত্তা, সুখী দেখতে অপেক্ষায় থাকেন। এসব বর্ণনায় আমার সত্যিই কোন ভাষা নেই।
সুএ
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×