somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের কালপঞ্জি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা আন্দোলনের কালপঞ্জি


২১ মার্চ ১৯৪৮ রমনা রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের বলে দিতে চাই যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়।’ শ্রোতাদের মধ্যে প্রতিবাদী গুঞ্জন ওঠে।
২৪ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কার্জন হলে) বিশেষ সমাবর্তন উত্সবে জিন্নাহ আবার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করেন। আবদুল মতিনসহ অন্য ছাত্ররা ‘নো, নো’ বলে প্রতিবাদ করেন।
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা-সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধিরা জিন্নাহর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাতে তীব্র বাগিবতণ্ডা হয়।
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে এবং সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সমর্থনে সব শিক্ষায়তনে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ দিবস পালন। ২১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে ‘জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল’ নিষিদ্ধ।
সন্ধ্যায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির বৈঠকে ‘১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না’ তা নিয়ে পর্যালোচনার পর ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সকাল সাতটা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে রাস্তায় পুলিশ বাহিনীর অবস্থান গ্রহণ।
নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে (বর্তমান মেডিকেল কলেজের ভেতরে) স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জমায়েত শুরু।
গাজীউল হকের সভাপতিত্বে বেলা ১১টার কাছাকাছি সময়ে আমতলায় ছাত্রসভা আরম্ভ। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রের মত অনুসারে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জনের একেকটি দলে বিভক্ত হয়ে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরোনো মাত্র পুলিশ হামলা চালায়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সারা দুপুর চলতে থাকে এ দক্ষযজ্ঞ।
বিকেল তিনটা ১০ মিনিটে ছাত্রদের ওপর পুলিশ দুই দফায় ২৭ রাউন্ড গুলি চালায়। ২১ জন হতাহত হন। শহীদ হন কমপক্ষে চারজন—এমএ দ্বিতীয় পর্বের ছাত্র আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও রফিকউদ্দীন; পরে আবদুস সালাম নামে আরও একজন মারা যান।
মেডিকেল কলেজ হোস্টেল থেকে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। মেডিকেল কলেজের ছাত্র গোলাম মাওলাকে সর্বদলীয় কমিটির অস্থায়ী আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়।
আইনসভায় প্রতিবাদী বক্তৃতা দিয়ে মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ কক্ষ ত্যাগ করেন। তাঁর সঙ্গে অধিবেশন বর্জন করেন আরও কয়েকজন পরিষদ সদস্য।
সন্ধ্যা নাগাদ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে।
রাজশাহীতে রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতের বেলা গঠিত হয় দেশের প্রথম শহীদ মিনার।
২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ হরতাল। আগের রাতের ছাত্রবৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকালে মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে ভাষাশহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বস্তরের প্রায় ৩০ হাজার লোক এ জানাজায় অংশ নেয়। জানাজার পর যুবনেতা ইমাদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। জমায়েত থেকে গণবিক্ষোভ স্ফুরিত হয়ে ওঠে। তপ্ত হয়ে পড়ে সারা শহর। ট্রেনসহ সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের পাশাপাশি রাস্তায় নামানো হয় ইপিআর সদস্যদের। ঢাকার নানা স্থানে জনতার ওপর পুলিশ-ইপিআর হামলা চালায়। গুলিতে শফিউর রহমান, রিকশাচালক আবদুল আউয়াল, কিশোর অহিউল্লাহসহ অজ্ঞাতসংখ্যক লোক শহীদ হন।
উত্তেজিত ঢাকার আদি বাসিন্দারা মর্নিং নিউজ পত্রিকার ছাপাখানা জুবিলি প্রেসে আগুন লাগিয়ে দেয়।
পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদ থেকে আজাদ-সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিনের পদত্যাগ। অবস্থা বেগতিক দেখে আইনসভায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে সুপারিশ-প্রস্তাব গ্রহণ।
১৪৪ ধারার পাশাপাশি রাত ১০টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
সকালে রাজশাহীতে দেশের প্রথম শহীদ মিনারটি পুলিশ গুঁড়িয়ে দেয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ হরতাল। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে জনতার ঢল। সবার কালো ব্যাজ ধারণ। বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা। দেশে সর্বত্র পূর্ণ হরতাল পালিত।
বেলা দুইটায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রায় চার হাজার লোকের অংশগ্রহণে ভাষাশহীদদের গায়েবানা জানাজা। বিকেলে সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এ কে ফজলুল হকের একাত্মতা প্রকাশ।
মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের কাছে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা এক রাতের মধ্যে ঢাকার প্রথম শহীদ মিনার গড়ে তোলেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ হরতাল। মেডিকেল কলেজের শহীদ মিনারটি অনানুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা।
২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ হরতাল।
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পুলিশ জননিরাপত্তা আইনে শিক্ষক ও ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে থাকে। ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পি সি চক্রবর্তী, মোজাফ্ফর আহমদ, মুনীর চৌধুরী এবং জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক অজিত গুহকে।
সকালে আবুল কালাম শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল কলেজের শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। বিকেলে পুলিশ এসে শহীদ মিনারটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। ছাত্রদের হলত্যাগে বাধ্য করা হয়। পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কিছু নেতা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রাদেশিক প্রস্তাব গণপরিষদে গৃহীত হওয়ার সব চেষ্টা চালানো হবে, বিচারপতির মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
৭ এপ্রিল ১৯৫২ একুশে ফেব্রুয়ারিতে গুলিবিদ্ধ আবদুস সালাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ অত্যন্ত আবেগঘনভাবে প্রথম শহীদ দিবস পালন। ছাত্ররা মেডিকেল কলেজের বিলুপ্ত স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় কালো কাপড় ও কাগজ দিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার বানায়। কার্জন হলেও আরেকটি প্রতীকী শহীদ মিনার বানানো হয়। সূচনা ঘটে প্রভাতফেরির।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সরকারিভাবে প্রথম শহীদ দিবস পালন। একুশের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা। কথা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার চাপে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী ও শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে বাধ্য হন।
১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বলে ঘোষণা করে।

Click This Link
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×